অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে………………না, রবীদার সাথে আমি সামান্য দ্বিমত।
অন্যায় যে সহে, তারও চেয়ে আমার কাছে বড় পাপী মনে হয় তাকে, যে অন্যায়কে লেজিটিমেট করে। মানে, অন্যায়টাকেই বৈধতা দেয়। আপনার ভিন্নমত থাকতেই পারে। তবে আমার মতে, দেশের পড়াশোনার সার্বিক গুনাগুন (জ্ঞান+বুদ্ধিমত্তা+বোধ) বহু আগেই গোল্লায় গিয়েছে। অন্তত এটুকু বলতে পারি, যে, একাডেমি হতে যা বের হচ্ছে তা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রির পানি গরম হচ্ছে না। যারা বিদেশী কর্মীদের রমরমা নিয়ে জেহাদ করেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ হল, অদূর ভবিষ্যতে পিওন, চাপরাশি, ক্লিনার, মেসেঞ্জারও বিদেশ হতে আমদানি করতে হতে পারে। জব মার্কেট ও ইন্ডাস্ট্রি হল প্রবাহিত জলের মতো। সে যেখানে তার স্বার্থ, যেখানে কদর, সেখানেই যাবে। সে তার মতো করে পথ খুঁজে নেবে।
যা বলছিলাম, কিছু না জানাকেও হয়তো মেনে নেয়া যায়, কিন্তু, এখন শুরু হয়েছে না জানাকে হালালাইজ করবার আবদার। না পারাকে বৈধতা ও যৌক্তিক প্রমাণের বায়না। অবশ্য এই দৌড়ে শুধু ব্যক্তি নয়, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান-সবাইই আছেন। ইংরেজিতে দুর্বল? নিজের নামও বানান করে লিখতে পারে না? আরেহ, ইংরেজি তো জ্ঞান না, স্রেফ একটা ভাষা। ইংরেজির জন্য কি বায়ান্ন এসেছিল? প্রার্থী টেক ফ্রেন্ডলী না? আরেহ, এইসব ছাতামাতা জানার কী দরকার? এইগুলোই তো দেশটাকে খেলো। প্রার্থী নেটওয়ার্ক ও সোশ্যালাইজেশনে জিরো? আরেহ, সারাদিন কাজ করে, পড়াশোনা করে এসব করবার সময় থাকে? আপনাদের যত বাহানা। বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রেটিংয়ে নেই? আরেহ ধূর, ওসব রেটিং সব ভূয়া। রাষ্ট্র দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে? আরেহ, ওগুলো সব পচ্চিমাদের
পোরপাগ্যান্দা। ছেলে পরীক্ষায় ফেইল করেছে? আরেহ, মাস্টাররা সব পাশশিয়ালটি করে। মেয়ে বিয়ে না করে প্রেগন্যান্ট? আরেহ, আজকাল তো এটাই ট্রেন্ড, দেখেন না জরিমনি, রালিয়া খাট কী সুন্দর মা হয়েছে? স্বামী পরকীয়া করে ধরা পড়েছে? আরেহ, পুরুষ মানুষ তো অমন একটু করবেই। ব্যাংক লুট হয়ে গেছে? আরেহ, ওই ক’টা টাকা আমাদের ‘ছ্যাপেও’ লাগে না। বারবার অযোগ্যতার জন্য চাকরি হচ্ছে না? আরেহ, এইছাড়গুলো সব বদ, কঠিন করে প্রশ্ন করে। সব নিজের শোমোন্দিরে চাকরি দেবার ধান্দা।
এক ভদ্রলোক অনুযোগ করেছেন, ”আপনাদের চাকরিযোগ্যতা মূল্যায়নের পদ্ধতি বিসিএসের চেয়েও কঠিন।” আমি তাকে প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম, যে, তা আপনি আমাদের একটি পারফেক্ট পদ্ধতি বানিয়ে দিন না। চাকরির বিজ্ঞাপন দেব। আমার মতো বিশাল ও বিস্তারিত বিজ্ঞাপন দেবার মতো ভ্যাবলামো কেউ করে কিনা জানি না। (হয়তো করে, আমি জানি না।) দশজন কমেন্টে ঘেঁউ করবেই, “আপনারা একই বিজ্ঞাপন বারবার কেন দ্যান?” ভাবুন, বিজ্ঞাপন কতবার দেব-সেটাও পাবলিক ডিসিশন।
বিজ্ঞাপন দিই, ১.৫ বছর অভিজ্ঞতা লাগবে। পাবলিক গুঁতো দেয়, “কেন, কেন, কেন ফ্রেশার নেবেন না? কেন দেড় বছরই লাগবে, ১ বছর হলে কী এমন অসুবিধা? আমার ৫ বছর, আমাকে কেন নেবেন না?” ইত্যাদি ইত্যাদি। রিজিউম সর্টিং বাদ দিয়ে প্রশ্নের বানের উত্তর দিতে দিন যায়।
একবার বিজ্ঞাপন দিয়েছি, “প্রার্থীর বয়স সর্বোচ্চ ৩৫ হতে হবে।” এক মহাজন প্রশ্ন করেছেন, “আপনারা কি কর্মী খুঁজছেন, নাকি জামাই?” ফেসবুকের বঙ্গ আকাশটা মজাই মজা। এক মহাত্মন সেদিন কমপ্লেইন করলেন, “আপনাদের সব নিয়ম মেনে আবেদন করেছিলাম। ডাকেননি।” আমি তাকে বিস্তারিত বলতে বললাম। শেষ তক দেখি, আমি চেয়েছি একটা বিভাগে ১.৫ বছর অভিজ্ঞতা। তিনি একই ইন্ডাস্ট্রিতে অন্য বিভাগে কাজ করেছেন। সেটাকেই পুঁজি করেছেন। আর, কেউ কেউ তো সরাসরি বলেই বসেছেন অনেকবার, এত ইন্টারভিউ করবার দরকার কী? ইন্টারভিউ ভাল হলেই কি প্রার্থী ভাল কর্মী হয়? কাজ দিয়ে দেখুন পারে কিনা।”
আমার এনাদের বলতে ইচ্ছে করে, বিয়ে করতে এত দেখার দরকার কী? বিয়ে করে নিন। ভাল না হলে আবার করবেন। আবার করবেন। বরিশালের মানুষ তাদের ভাষায় একটি শব্দ ব্যবহার করে, ’চেউগরাইন্না’। অর্থ হল, বিদ্রুপ, উপহাস, অপমান; ওই যে, যাকে হালের চোস্ত ভাষায় ট্রল বলে। বাঙাল (বা আবাঙালরা) নিজে কিছু পারুক আর না পারুক, ‘চেউগরাইতে’ ঠিকই পারে। আর সবচেয়ে ভাল পারে, নিজে না পেরে অন্যের কাজ, অর্জন বা ভুল নিয়ে লাফাতে। এই চেউরানো জাতটার কারণেই এই দেশে আইনস্টাইন, স্টিফ জবস, পিকাসো, শাকিরা, মেসিরা জন্মায় না, জন্মালেও আতুড়ে মরে যায়।
চেউগরানোর ধরন শুনবেন? চাকরির বিজ্ঞাপন দেবেন? লাখ খানিক হেটার জুটে যাবে। বিজ্ঞাপনের হাজার ভুল আর কোম্পানী ও বিজ্ঞাপনদাতা ব্যক্তির অসঙ্গতি খুঁজে বের করে গুষ্টি উদ্ধার করে দেবে। কারন একটাই, তার মনমতো কিছু একটা নেই। এমনকি, সে হয়তো হিস্টিরিয়ার ছাত্র, চাকরিতে কেন ’কেমিশটিরি’ চাওয়া হয়েছে-সেজন্যও ট্রল। চাকরির অফারড বেতন কম কেন, ইন্টারভিউ’র প্রশ্ন এত কঠিন কেন, অমুক সাবজেক্ট চান কেন, তমুক অভিজ্ঞতা চান কেন, সমুক যোগ্যতার দরকারটা কী-হাজারটা বিদ্রুপ।
গতকাল ইনটার্ন নেবার বিজ্ঞাপন দিয়েছি। কেন সেটা আনপেইড-তার জন্য হাজারখানিক জেহাদিকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। এই জেহাদিরাই ডাক্তারের কাছে মাগনা চিকিৎসা করায়, উকিল বন্ধুকে মাগনা সেবা দিতে বাধ্য করে। মাগনা রাইড নিতে এদের মধুর লাগে। এই বোদ্ধারাই মনে করে, ঘরের বউ ঘরের সব কাজ বুয়ার মতো করতে বাধ্য, কিয়ের টেঁয়া, কিয়ের সম্মান, বেডিরে খাইতে-পত্তে দিই না? এই জেহাদিরা সাকিবকে ক্রিকেট শেখায়। এই জেহাদিরা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের জলপাই টি-শার্ট নিয়ে বিদ্রুপ করে। এই জেহাদিরা টুইটার মালিকের আম্বার হার্ডের সাথে পরকিয়ার প্রতিবাদ করে ফেসবুক স্টাটাস দেয়। স্থান, কাল, পাত্র, আপেক্ষিকতা, প্রেক্ষাপট নিয়ে ভাববার ও উপলব্ধি করবার সামান্যতম যোগ্যতা ও ইচ্ছা না থাকা এই জেহাদিরা ব্যক্তিগতভাবে ভীরু ও সুবিধাবাদি হয়ে থাকে।
এদের যাবতীয় জেহাদ ফেসবুকে। এই টনটনে নীতিবোধের কাপুরুষগুলো নিজ অফিসে বিড়াল হয়ে চললেও, ফেসবুকে অন্যের কোম্পানীর বিষয়ে সিংহ সাজে। এই গ্রুপটাই ফেসবুকে গালি দেবে, “পুলিশ কেন ঘুষ খায়?” ঠিক এরাই আবার ফেসবুকে পোস্ট দেবে, “পুলিশে কোনো বন্ধু আছো? একটু জরুরী দরকার।” যাহোক, এই পোস্টের মাজেজা এসব অন্যায় আবদার এবং অন্যায়কে ন্যায্য প্রমাণে বাঙালীর অপচেষ্টার প্রতিবাদ নয়।
একাডেমি, এমনকি দেশ গেরাম হতে বিদ্যার চর্চা রহিত হবার পরে ‘অবিদ্যা’ আর ‘মূর্খতা’কেই নর্মস প্রমানে ও স্বীকৃতির দাবিকে ডিফেন্ড করাও আমার লক্ষ্য নয়। কেন আপনার ’দিল টুটকে’ আপনার চাকরির আবেদন বারবার বাজেয়াপ্ত হচ্ছে, তা নিয়ে অনেক আগে লিখেছিলাম। আপনি আগ্রহ বোধ করলে কমেন্টে জানান। লিংক দিয়ে দেব। আজকে লিখব, কেন প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে-তার পেছনের কারন নিয়ে। কেন বিজ্ঞাপন রিপিট হয়, কেন বিজ্ঞাপনগুলো (আপনার ধারনামতে) এত বিচিত্র ও খাপছাড়া হয়-সেটা নিয়ে।
১. প্রথমত; আপনাকে জানতে, মানতে ও বুঝতে হবে অনেক কিছু। এবং মেনে নিতে হবে যে, আপনি একজন এইচআর প্রফেশনাল নন, প্রতিষ্ঠান মালিক নন। সুতরাং বিজ্ঞাপনদাতা ওই দুই সত্ত্বার ফিলোসফি ও এপ্রোচ আপনার বোঝার কথা নয়।
২. চাকরির বিজ্ঞাপন কিন্তু একটি বিজ্ঞাপনই। টিভি, ওটিটি, বিলবোর্ড, দেয়াল, পত্রিকা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে যে বিজ্ঞাপন আপনি দেখেন, সেগুলো আপনার কাছে যেমনই মনে হোক, প্রতিটা বিজ্ঞাপনের পেছনের ভাবনাটি কিন্তু বিজ্ঞাপন দাতা যথেষ্ট গবেষনা ও চিন্তা করেই করেন। এই সত্যটুকু মনে রাখুন।
৩. চাকরির বিজ্ঞাপন বা বিজ্ঞপ্তি ডিজাইন ও ড্রাফট করা হয় বিজ্ঞাপনদাতা বা নিয়োগকর্তার ইচ্ছা, ভাবনা, স্বার্থ, কৌশল, প্রয়োজন-এসবকে প্রাধান্য দিয়ে। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে তাদেরকে নানা সময়ে নানা রকম কৌশল নিতে হয়। মূলত এ কারনেই বিজ্ঞাপনে বৈচিত্র থাকে, একই প্রতিষ্ঠানের, এমনকি একই পদের বিজ্ঞাপন দু’বার গেলে দু’রকম হতে পারে। হ্যা, সেই ভিন্নতার ধরনেও একটা ক্লাসিক বা গ্রামার থাকে। সেই বৈচিত্র এমন নয়, যে, আগেরবার ছিল এম.বি.এ লাগবে, পরের বার বলল, ম্যাট্রিক ফেল হলেই হবে।
৪. জব লিংকার, পাবলিক ফিগার, এইচআর প্রফেশনাল অথবা প্রতিষ্ঠান বারবার বিজ্ঞাপন রিপিট করবার মানে (৫-১০% বাদে) এই নয় যে, নাম কামাতে এটা করছেন। অথবা, কোনো নিয়ে নেয়া গাধাকে হালাল করতেই এটা করা হচ্ছে। নানা যৌক্তিক কারনেই রিপিট হয়।
৫. কেন রিপিট হয়-তার হাজারটা কারন থাকতে পারে। কয়েকটা যদি আমি বলি–উপযুক্ত কাউকে আগেরবার পাওয়া যায়নি। -পাওয়া গেলেও প্যাকেজ বা ব্যাকগ্রাউন্ড উপযুক্ত না হওয়ায় বাদ পড়েছেন। -শেষ বিচারে মাত্র একজনকে পাওয়া গেছে কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানেই নিয়ম থাকে, কমপক্ষে দু’জন অলটারনেটিভ থাকতে হবে। -পদ হয়তো ৫টি, প্রার্থী মিলেছে ৪ জন, তখন আবারও একই বিজ্ঞাপন রিপিট হয়। -মাইগ্রেশন হয়। বিশেষত বড় প্রতিষ্ঠানে সামান্য মাইগ্রেশন রেটেও সারাবছর বেশ বড় সংখ্যক মাইগ্রেশন হয়। ফলে একই পদের জন্য বারবার বিজ্ঞাপন আপনার চোখে পড়বে। -ফোর্স মাইগ্রেশন বলে একটা ব্যাপার আছে। একটি প্রতিষ্ঠান যখন রিফর্ম করে, তখন প্রচুর নতুন হায়ারিং দরকার হয়। আর আপনাদের হয়তো জানা আছে, আজকাল একজন কাঙ্খিত মানের প্রার্থী মেলা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
৬. নানা কারনেই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাঙ্খিত স্ট্যান্ডার্ড ও নর্মস ডাউন করতে পারে না। অনেকের সব ভাল থাকে, কিন্তু ইনটারনাল গ্রুমিং ও ট্রেইনিং হয়তো এখনো তত শক্তিশালী নয়। তারা বাজার হতে রেডি লোক নেবার চাপে থাকেন। আর বাজারে রেডি লোক অত্যন্ত স্বল্প এবং ব্যয়বহুল।
৭. অনেক প্রতিষ্ঠানের বাজার মূল্য ও ব্র্যান্ডিং খুব হাই না। তারা অনেক সময়ই যথেষ্ট রেসপন্স পান না। ইল্ড রেশিও ধরে রাখতে যতটা রেপপন্স দরকার, ততটা পান না। এটা হতেই পারে। সবাই তো আর ভাইরাল হন না। আবার, দুঃখজনক হলেও সত্যি, কখনো কখনো সত্যিই এমন হয়, যখন ১টি, হ্যা, ১টিও উপযুক্ত প্রোফাইল পাওয়া যায় না। বিশেষত ক্রূশিয়াল পজিশন হলে। তখন রিপিট করতেই হয়।
৮. এই কারনটি একদমই হাসির। অনেকবারই এটা হতে দেখেছি। সেটা হল, একই বিজ্ঞাপন আপনি হয়তো ফেসবুক এ্যালগরিদমের জন্য বারবার দেখেন। (বা আপনাকে দেখানো হয়।) কিন্তু, আপনি বিজ্ঞাপনের তারিখ তো আর মনে রাখেন না। ফলে আগেরটাকে আবার দেখেই আপনার মনে হয়, আরেহ, এইডা আবার দিছে ক্যাঁ? আরেকটাও হয়। যেসব বিজ্ঞাপন বুস্ট হয়, সেগুলোতে তারিখ শো করে না। ফলে আপনি ঘুরেফিরে বারবার সেটা দেখেন আর ভাবেন, এদের কি আর কাজকাম নেই? এরকম চক্করে পড়েন নি তো?
#unevencriticism #blameoffailure #blamegame #legitimacyofcrime #unevendemand #showingexcuse #lameexcuse #repeatofadvertisement #alibi