Skip to content

আইনের চোরাগলি ও এইচ.আর বাস্তবায়ন

  • by

আইনের শীতকাল ও গরমকাল:

আমার একজন আইনজ্ঞ সুহৃদ আছেন। শ্রম আইনের বিদঘুঁটে জটিলতার কারনে প্রায়ই আমি তার কাছে আইনী ব্যাখ্যার জন্য হাত পাতি। তার সাথে আমার সবচেয়ে বেশি যে তর্কটা হয়, সেটা হল, আইনের তাত্বিক আইনগত দিক বনাম আইনের নৈতিক মানদন্ডের দিক।

আপনি কি জানেন?

বাংলাদেশে কাগজে কলমে, মানে রাজকীয় ও রাজ্য আইনে, কয়েকটি আইন সত্যি সত্যিই এখনো আছে?

১. টেলিভিশন বা রেডিও কিনতে হলে আগে লাইসেন্স নিতে হবে। এই বিধান কিন্তু অফিশিয়ালী রহিত হয়নি। তার মানে কার্যকর।

২. সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ঠেলাগাড়ির নিচে যদি চাপা পড়েন, তাহলে আপনাকে উল্টো জরিমানা দিতে হবে ওই গাড়ির মালিককে। (এটা বলবত আছে কিনা জানি না। তবে ঠেলাগাড়ি যেহেতু ভারতীয় টাটা আর এইসার এসে খেয়ে দিয়েছে, তাই মনে চাইলেও আর ঠেলাগাড়ির নিচে পড়া সম্ভব না।)

৩. অফিশিয়াল সিক্রেসী এ্যাকটো। যদিও আইনখানা বানানো হয়েছিল রাজকীয় কত্তারা যাতে তাদের হেফাজতে থাকা তথ্য ও নথি গোপনে বেঁচে না দেয়-সেজন্য। কলিকালে সেটা এখনও কার্যকর ও ভ্যালিড আইন-যেহেতু বাতিল হয়নি কখনো। ফলাফল-তার চরিত্তির বদলেছে। এখন তার চরিত্র হল-কেউ যদি কত্তাদের গোপন আকামের গোপন নথি ম্যানেজ করতে পারে, তার ওপর ওই আইন বলবৎ হবে। চুরি করবেন-আপনার নামে মামলা হবে, পরের দিন জামিন। চুরির খবর প্রকাশ করবেন, আপনার নামে মামলা হবে, জামিন অযোগ্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এটাই আইনের মজা।

যদিও, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বলে এই যুগে বঙ্গদেশে আর কিছু আছে কিনা-তা জানি না। ঘরের বউয়ের সাথে রাত গভীরে যেসব পিরিতের কথা হয় ফিসফিস করে, আমি নিশ্চিত, সেসবও আজকাল রেকর্ড হয়। তায় আবার রাষ্ট্রীয় গোপন নথি।

ফুহ। তবে, যাই বলেন, আইন কিন্তু আছে।

৪. সংক্রামক মহামারি ও ব্যাধি নিয়ে আইন আছে। রহিত হয়নি যেহেতু। ফলাফল-দেশের ১৯ কোটি আদম গায়ে ফু দিয়ে মাস্তি করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু, পঁচা শামুকে যেমন পা কাটে, তেমনি, আপনি একদিন রাস্তার মধ্যে মাস্ক ১ সেকেন্ড খুলে পিচিক করে পানের পিক ফেললেন। পড়বি তো পর মালির ঘাড়ে। জৈনক MP3 ইউনিয়ন কত্তা যদি তা দেখতে পায়, আপনাকে শ্রীঘরের ভাত খাওয়াতে তিনি অথরাইজড।

৫. দেশের বিভিন্ন রাজকীয় অফিসে কয়েক হাজার কোটি টাকার গাড়ি কেনা হয়। আবার কয়েক হাজার কোটি টাকার পুরোনো গাড়ি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। একটি সংগঠন ওই পুরোনো গাড়ি রিপেয়ার ও রিনোভেট করে এ্যানটিক ভ্যালু যোগ করে অন্তত ১৫০০ কোটি টাকা বাঁচানোর একটা পন্থা বের করে প্রস্তাব দিয়েছে। রাজকীয় আইনে পুরোনো গাড়ি রেনোভেট করার বিধান লেখা নেই এবং বাইরের লোককে ফপরদালালী করার বিধান ও সুরাহা নেই বলে, ওই গাড়ি তাদেরকে ধরতে দেয়া হবে না-সাফ বলে দেয়া হয়েছে গাড়ির মোহাফেজখানা হতে।

ঠিক যেমন, অনেক লজ্জা লজ্জা করার পরে বার্মিজ মগ সিপাহসালার মংচংভং অবশেষে লজ্জার মাথা খেয়ে, নথ খসিয়ে বলে দিয়েছেন-

আমরা রোহিঙ্গাদের নিতে পারব না। আমাদের আইন তা সাপোর্ট করে না। আইনে না হলে কী আর করা? বেআইনি কাজ করতে তো আর কাউকে বাধ্য করা যায় না।

 বাংলা ব্যাংকের ৮০০ কোটি ফিলিপিনে গেলো। রিজাল ব্যাংক খেয়ে দিল। ফিলিপিন সব জানে, বোঝে। কিন্তু ফেরত দিতে পারবে না। কেন? ওই যে, আইনে নেই।

 লাইসেন্সের নাই বাইসেন্স:

পুলিশকে নিয়ে একটা ফাতরা গপ্প প্রচলিত আছে, যে, পুলিশে ধরলে টাকা খাবার আর কোনো রাস্তা বের করতে না পারলে বলে, পিঠটা চুলকায়া দে।

বাঙাল মুলকের ফেসবুক আকাশের জাগ্রত চেতনা বাঙালদেরও এরকম এটা খাসলত আছে, তা হল, কোনো ব্যাটা বেটির আর কোনো দোষ ধরতে না পারলে, তখন লালসালুর মজিদের রাস্তা ধরে বলবে-

”ওই বেটির বুকে ওড়না নাই কেন?” আর ব্যাটা হলে, “ওই ব্যাটা বউরে পর্দা করায় না কেন?”

ড্রিমি আপা বা মিজ তুষ্টি রাস্তায় বাইক শো করে বরের বাড়িতে গায়ে হলুদে হাজির হওয়ায় পশ্চাৎদেশের মতো চিরবিভক্ত বঙ্গ ফেসবুক সমাজ। যারা ড্রিমিকে ধুয়ে দেবার সমর্থক, তারা যখন দেখল, ড্রিমি গার্লের মোটর শো কে খুব জোর ধোলাই দেয়া যাচ্ছে না, তখন আরেকটা মোক্ষম ফুটো বের হল। সেটা কী?

ড্রিমী আপু হেলমেট পরেনি কেন?

আইন ভেঙেছে। না না না না, গোলাম হোসেন, আইন ভাঙা চলবে না কিছুতেই। এদেশ আইনের শাসনের তীর্থস্থান।

হেলমেটের কাহিনীটা আবিষ্কার হবার পরে ফেসবুকে পড়ে আমি আর আমার বউ হাসতে হাসতে হাসতে হাসতে হাসতে হাঁসাহাঁসি হয়ে যাবার যোগাড়।

Mr. Rayhanul Mithul Islam এর একটি ক্লাসিক একটু পড়ে নিতে পারেন এই ফাঁকে: https://www.facebook.com/rayhanul.m.islam/posts/10157672212988176

তা মিয়া ভাইয়েরা, আমার একটা প্রশ্ন হল, বাইক চালাতে হলে হেলমেট পরতেই হবে কেন?

বলবেন, ওটাই আইন। আমি সেই আইনটার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছি। বাইক চালাতে হলে হেলমেট পরতে হবেই কেন? হেলমেট না পরলে কি বাইক এ্যাক্সিডেন্ট হয়? হয় না।

হেলমেট না পরলে বরং চালক নিজে অনিরাপদ আর তার মৃত্যুঝুঁকি বেশি। তা, কেউ যদি নিজেই নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়, তাকে আটকাতে আইন থাকতে হবে কেন? আর যদি বাইক চালকের হেলমেট এতটাই ফরজ ওয়াজিব হয়ে থাকে, তাহলে রিক্সাওয়ালা আর সাইকেলওয়ালার হেলমেট কেন আইনে বাধ্যতামূলক না?

আর এত কথা শুনেও যদি আপনার পুরুষত্বজনিত হিংসা (মাইয়া মানুষ হইয়া ডাট করে বাইকে কেন গেল সেই ক্ষোভে) অবদমিত না হয়, তাহলে আরেকটা বলি। রাস্তার সবচেয়ে নিরাপদ বাহন হওয়া স্বত্ত্বেও প্রাইভেট কারের সিট বেল্ট থাকে আর সেটা পরা বাধ্যতামূলক আইন।

অথচ রাস্তায় সবচেয়ে বিপজ্জনক বাহন ট্রাক আর বাসে সিট বেল্ট থাকার কোনো আইন নেই কেন এই মগের মুলকে?

রাস্তায় চলাচলকারী বাস, ট্রাক, স্কুটার, ব্যক্তিগত যান্ত্রিক যানের জন্য চালককে চালনা দক্ষতার অনুমোদনপত্র (লাইসেন্স) নিতে হয়। আজব ঘটনা হল, রিক্সার জন্য রিক্সাচালকের নয়, রিক্সাটির লাইসেন্স নিতে হয়। লাইসেন্স কি রিক্সার দরকার? নাকি রিক্সাওয়ালার? সুনিয়ন্ত্রনযোগ্য যান্ত্রিক যান চালাতে যদি চালককে দক্ষতা প্রমান সাপেক্ষে লাইসেন্স নেবার বাধ্যবাধকতা দেয়া থাকে, তাহলে কূনিয়ন্ত্রণযোগ্য রিক্সা (যেটা আবার যান্ত্রিক শকটের ফাঁকে ফাঁকেই চলে) রাস্তায় চালাতে চালকের দক্ষতা নিশ্চিত করে লাইসেন্স না দিয়ে রিক্সা নামক জড় পদার্থটাকে লাইসেন্স দেয়া কেন?

বাসাবাড়িতে টেলিভিশন চালাতে হলে লাইসেন্স নেবার একটি আইন দেশে ছিল। সেই আইন কিন্তু রহিত হয়নি। যেকোনো দিন সরকারী ‘মেধাবী’ কর্মকর্তারা এসে আপনার বাসায় হানা দেবার সবরকম কর্তৃত্ব কিন্তু এখনো রাখেন।

অচীরেই ঢাকা শহরে ঢুকতে ও এখানে বসবাস করতে হলে লাইসেন্স নেবার বাধ্যবাধকতা চাপানো লাগতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত এই নগরে বৃষ্টির মতো মানুষ আসছে। তাদেরকে একটি সুনিয়ন্ত্রিত নাগরিক শৃঙ্খলায় আনতে হলে লাইসেন্স দেবার বিকল্প কি কিছু আছে? লাইসেন্স না থাকলে, চকচকে টাইলস বসানো ফুটপাতে জলবিয়োগকারী জাগ্রত জনতাকে আপনি থামাবেন কী করে?

আরও শুনবেন?

এই বঙ্গদেশে টিভি রাখতে হলে লাইসেন্স থাকতে হবে-এটাই আইন। কিন্তু আপনি বাড়িতে আস্ত একটা কামান রাখেন, গোলা রাখেন, লাইসেন্স লাগবে না।

আপনি একটা হরিণ পালবেন, লাইসেন্স নিতে হবে, আইন। কিন্তু আপনি যদি একটা শার্ক পালেন, লাইসেন্স লাগবে না।

আবার বনের পাখি পাললে লাইসেন্স লাগবে-সেটাই আইন। কিন্তু পরিবেশ ও বন মন্ত্রী যখন কাঁটাবনে গিয়ে পাখির প্রতি দরদ দেখিয়ে লকডাউনেও ওদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে প্রশংসিত হন, তখন কেউ বলে না, মন্ত্রীজ্বি, আইনে তো পাখি পালাই নিষেধ। আপনি কেন শুধু তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে খালাস হলেন, কেন আপনি ওসব পাখি সিজ করে উড়িয়ে দিলেন না?

অবশ্য ঢাকার দাক্ষিণাত্যের মেয়র সাব কোন মচ্ছবে যেন বাজেরিগর পাখি উড়িয়ে আবার মহা সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। কারন ওই বাজেরিগর আকাশে ছাড়ামাত্র কাউয়ায় খেয়ে ফেলে। তবে কেউ কিন্তু প্রশ্ন করেনি, মেয়র সাব, বাজেরিগর বুনো প্রাণী আর বঙ্গদেশের আইনে বুনো প্রাণী পালা বেআইনী।

বলি কি, আইন নিয়ে বেশি মাতামাতি বা বেশি কচলাকচলি না করাই ভাল।

যাহোক। আজকে আইনের কচকচানি আর না।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রোফেসর আরমান ভাই আজ একটা দুঃখের পোস্ট দিয়েছেন। গতকালও আরেকজন সম্মানিত ভিসি মহোদয়ের (এই মহোদয় কথাটা কে আবিষ্কার করেছে জানি না) দুঃখবোধ শুনলাম-ক্লাস না করিয়ে বেতন নিতে সঙ্কোচ জানিয়ে।

কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে না?

দেশের প্রতিটি ইঞ্চি খুলে গেছে। খুলতে খুলতে নগরের নটির পরনের ত্যানা হতে শুরু করে রাষ্ট্রের শরমের ঘোমটা সব খুলেছে। পাড়া মহল্লার বিড়ির দোকান হতে ক্যাসিনো-সব খোলা। কিন্তু, ইশকুল খুললে করোনায় ধরবে।

আমি তার বিরোধিতা করছি না। চলুক। শ্রীলংকা টাকা দিয়ে ফুটানী করবেন-করুন।

কিন্তু, আমি যুক্তিটা মিলাতে পারছি না। সমস্যাটা সেখানে।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। কেন? খুললে করোনা হবে।

তা মশাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মচারী-এনারা কি বিগত ১৪ মাস ধরে ঘরের কোণে এতেকাফে আছেন?

নাকি তারা সবাই সাড়ে বত্রিশ ভাজার মতো মস্তিতেই আছেন? শুধু ক্লাসে গেলেই করোনা হবে?

অবশ্যি, খুলেই বা কী এমন হাতিঘোড়া হবে? না খুলে কী লসই বা? ওখানে কি পড়াশোনা নামের কোনো হাতি আজকাল হয়? তাতে খুললেই বা কী, বন্ধ করলেই বা কী?

আইন মানা ও মানানোর দিক হতে এগিয়ে আছে-এমন একটি দেশ ব্রিটেন। সেখানকার সংবিধানই নাকি অলিখিত। বাংলাদেশের মতো লিখিত সংবিধান না, যেই সংবিধান মতিঝিল বা পল্টনের ফুটপাতে গড়াগড়ি খায় (এতটাই সহজলভ্য ও সহজগম্য) কিন্তু তাকে মাত্র ৪৮ বছরে দফায় দফায় সার্জারি করা যায়।

যদিও বলা হয় অলিখিত, কিন্তু, আমার বিশ্বাস, ওই ’অলিখিত’ শব্দটি আসলে হবে, অ-সংকলিত। মানে, সংবিধান হিসেবে একক কোনো সংকলিত বই বা টেক্সট নেই। ব্রিটেনের সংবিধান অসংখ্য প্রচলিত আইন, প্রথা, আদালতের রায়, পর্যবেক্ষন, ঐতিহাসিক ঘটনা, প্রতিক্রিয়া, সামাজিক অনুশাসন ইত্যাদির আলাদা আলাদা সংগ্রহের সমষ্টি।

এমন একটি দেশ, যেখানে যুগ যুগ ধরে কঠোরভাবে নানা সাংবিধানিক আইন ও রাজনীতির চর্চা সংক্রান্ত আইন অঘোষিতভাবে সব পক্ষই নিবিড়ভাবে পালন করে আসছে, সেখানেও খন্ডকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস এসে রাণীকে আইনী মারপ্যাঁচে ফেলে সংসদ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত অনুমোদন নিয়ে ফেলেছিলেন।

ব্রিটেনের মহাস্বাধীন ও মহাশক্তিশালী আদালত সেই অনুমোদনকে সম্প্রতি অবৈধ ঘোষনা করেছে। আইনের এই হল মজা। বিশেষত ব্রিটেনে। এইটুকু পড়ে আপনি যদি ভেবে থাকেন, বাহ, কত চমৎকার ও নিয়মতান্ত্রীক দেশ। তাহলে ভুল করবেন।

এই ব্রিটেনই বুশ নামক এক ফাজিলের ধান্দাবাজ ইরাক যুদ্ধে অত্যন্ত অন্যায্যভাবে জড়িয়েছিল। ঠিক কোন আইন বলে বিশ্বের একটি দেশ আরেকটি দেশের গণতন্ত্র উদ্ধারে কিংবা তার হাতে থাকা ব্যপক বিদ্ধংসী অস্ত্র ধ্বংসে তার ওপর দলবল নিয়ে হামলা করতে পারে, সেটা আবার সংসদ নামক খোয়াড়ের বৈধ অনুমতি নিয়ে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারেন।

ইন্দোনেশিয়ায় সম্প্রতি একটি আইন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তা হল, বিবাহ বহির্ভূত শারিরীক সম্পর্ক নিয়ে। যা এই আইনে অবৈধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই খবরে যথারীতি বঙ্গবাসী জাগ্রত জনতা দুই ফাঁক (ভাগ) হয়ে গেছেন। কেউ একে “ইন্দো খেলাফতের” নয়াজাগরন হিসেবে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশেও এমন আইন করার জোর দাবী জানাচ্ছেন। রেফারেন্স হিসেবে তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে আংশিক উল্লেখ করে ব্যবহার করছে। সেটা হল, প্রধানমন্ত্রী কোনো এক ভাষণে বলেছিলেন, দেশে “কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধি কোনো আইন প্রনয়ন হবে না।”

যাহোক, ইন্দোনেশিয়ার এই সম্ভবনাময় খেলাফতকরণে যদি কেউ উদ্বেলিত হয়ে থাকেন, তবে তার আরও জানা দরকার, এই ইন্দোনেশিয়াতেই বালি নামে স্বপ্নের এক দ্বীপ আছে। সেখানে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে বিদেশী পর্যটকরা আসেন। আর তারা এর পরে ওই দ্বীপে যাবার আগে বিয়ে করে তারপর অবকাশ যাপনে যাবেন কিনা-সেটা অবশ্য ওই আইনে বলা নেই। আর ওই দ্বীপে রঙিন পানি, জুয়া, আর যৌনকর্মী সরবরাহের যে ব্যবসা আছে, যার জন্য পর্যটকরা ওখানে ভীড় করেন, সেই ব্যবসা হালাল হবে কিনা-সেটা আইনে নেই।

আন্তর্জাতিক আইন নামে একরকম হাস্যকর আইন নাকি আছে। যার বলে এক দেশ আরেক দেশকে গিলে ফেলতে পারবে না। যার দাপটে বাংলাদেশ তার কারখানায় বাচ্চাদের কাজ করাতে পারবে না। যার বলে আফগানিস্তান তার দেশে তালেবানদের ক্ষমতায় যেতে দিতে পারবে না।

সেই একই হাস্যকর আন্তর্জাতিক আইনের কারনেই নাকি বাংলাদেশ নামক একটি গরীব ও সমস্যাগ্রস্থ দেশ ১১ লাখ বাড়তি রোহিঙ্গাকে সামর্থ না থাকা স্বত্বেও ঘরে নিয়েছে। খাওয়াচ্ছে, পড়াচ্ছে, আর এখন উল্টো চাটি খাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইনের ভয়ে বাংলাদেশ ওই ১১ লাখকে দেশ হতে বের করে দিতে পারবে না।

কিন্তু ওই আন্তর্জাতিক আইনে আবার এটা নেই, একটি দেশ তার ১১ লাখ লোককে প্ল্যান করে, সিস্টেম করে বন্দুকের মুখে আরেক দেশে পাচার করে দিয়ে নিজের সীমানা ‘ছোটলোক’ মুক্ত করতে পারবে না। বা করলে, দুনিয়ার তাবৎ দেশ বুশের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে।

আবার ঠিকই যখন হিটলার তার দেশ ও বিদেশ হতে ’ছোটজাত’ ইহুদীদের মেরে সাফ করে দিতে ব্যস্ত হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বিশ্ব তার বিচার করেছিল। আফটার অল, মানবতা ও আন্তর্জাতিক মুরব্বী বলে একটা বিষয় আছে তো।

ভারতকে বলা হয় “বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ”। হাস্যকর। সম্প্রতি ভারত খুব ’আইনী’ পথে তার সংবিধান সংশোধন করে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার রহিত করে ’আইনগত’ভাবে কাশ্মীরকে দুটি সাধারন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছে। আইনের কোনো বাত্যয় হয়নি। কারন সিংহভাগ সাংসদ এতে সম্মতি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি (পুতুল) তাতে অনুমোদন দিয়েছেন। এই পর্যন্ত সব ঠিক আছে।

মুশকীল হল, এই নিয়ে প্রত্যাশিতভাবেই রীট হয়েছে। কথা হল, ভারতের সাথে সেই ৪৭ সালে কাশ্মীর নামক স্বাধীন একটি দেশ যোগ দিয়েছিলই এই শর্তে, যে, তারা চিরকাল তাদের আলাদা ‘কাশ্মীর’ পরিচয় বহাল রাখতে পারবেন। তারা সেই ৩৭০ এর বদৌলতে ভারতীয় ইউনিয়নে ‘কাশ্মীর’ নামে পরিচীত হবে। তারা মোট কথা দিল্লী, গুজরাট বা ভূপালের মতো ভারত নয়। তারা কাশ্মীর ভারত। তো, যেই মৌলিক শর্তে একটি স্বাধীন দেশ কারো ইউনিয়নে যোগ দেয়, সেই ইউনিয়ন ৭০ বছর পরে তাকে দেয়া সেই শর্ত একা একা বাতিল করতে পারে কিনা-সেটাই এখন প্রশ্ন।

যদিও সেই ৪৭ সালেও রাজা হরিচরন (না গরুচরন) তার জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে ভারতীয় ইউনিয়নে যোগ দেননি, তবু, আজকে তাদের বিশেষ অধিকার (কাশ্মীর ভারত) রদ করে তাদের রাতারাতি বিশুদ্ধ ভারতীয় বানানোর একতরফা সিদ্ধান্ত নেবার সময়ও কাশ্মীরি জনগনের গণভোট নেয়া হয়নি। ৪৭ সালেও তারা ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা, আজও।

এ যেন সেই দাসযুগের মতো। যখন আইন মেনে বড় কর্তারা একজন স্বাধীন মানুষকে দাস হিসেবে কিনে ফেলতেন। ওই দাসের কোনো অধিকারের বালাই নেই। সেউ প্রশ্ন করার নেই, “আমাকে বিক্রীর অধিকার তোমাকে কে দিল?” আজ ভারত যদি সেটা পারে, তাহলে ইংল্যান্ডও বলতে পারে, “আমরাও সেই ৪৭ সালে করা ভারত স্বাধীনতা আইন” বাতিল করলাম। ভারত বলে আজ হতে কোনো দেশ নেই। ওটা আজ হতে আবার ব্রিটেন। সংসদে আইন পাশ করেই সেটা আইনগতভাবে করা হবে। কেমন হবে?

নৈতিকতা ও ন্যায্যতা বিষয় দুটি আসলে খুবই আপেক্ষিক, প্রান্তিক, ক্ষণস্থায়ী।

মোদি নামক একজন দাঙ্গাবাজ, বর্ণবাদী ও খুনিকে ভারত তো নিজের রাষ্ট্রনেতা করেইছে। গোটা পৃথিবীর সব রাষ্ট্র তার পদধূলী নিতে ত্রস্তব্যস্তে ঝাপিয়ে পড়েছে। ইতিহাস বড় ঠুনকো। পৃথিবীর স্মৃতিশক্তি বড্ড ক্ষীণ।

১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে যখন গুলির মুখে সীমান্তে পাঠিয়ে দিল মায়ানমার, গোটা পৃথিবী তাদের জন্য চোখের জল ফেলল। বাংলাদেশকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করল তাদের আশ্রয় দিতে। অনুরোধটা ছিল, “দয়া করে ওদের আপাতত আশ্রয় দিন। আমরা দেখব।” ব্যাস। আজ আর কেউ সেই প্রতিশ্রুতি ভুলেও মনে করে না। বাংলাদেশ দায়ে পড়েছে ভালমানুষি দেখাতে গিয়ে।

রোহিঙ্গাদের এই দেশে আশ্রয় দেয়ায় তাদের মূলত মুসলিম পরিচয়ের ভিত্তিতে দেশের একটি ফেসবুক জাগ্রত জনতা গোষ্ঠী ব্যাপক শোকরগোজার। চীন রোহিঙ্গাদের বার্মায় ফেরাতে বাধ্য না করায় এই জাগ্রত জনতা মনে হয় কিঞ্চিত চীনের ওপরও খুশি। চীনের বাদশাহকে পারলে তারা খলিফা মানতে পারলে বাঁচে। শত হোক, আমাদের মুসলিম ভাই রোহিঙ্গা। যেমন পাকিরা আমাদের ধর্ষন করেও বলত, আমরা তো ভাই ভাই,। তাই তাই।

যাহোক, এই একই চীন আবার উঁইঘুর জাতিগোষ্ঠীর ওপর যখন নিপীড়ন করে, তখন এই জাগ্রত জনতা চীনা বাদশাহকে খলিফা না ধোঁপা ভাবে, জানি না। ১১ লাখ রোহিঙ্গা অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে বার্মা ফেরত।যাবে-এমন দূরাশা যাদের মনে এখনও ভাসে, তাদের জন্য একটা ছোট্ট ধাঁধাঁ। ৯০ দশকে আসা ৪ লাখ রোহিঙ্গা যদি গত ৩০ বছরেও দেশে ফেরত না গিয়ে থাকে, ১০ লাখ বেহারি যদি গত ৪৮ বছরেও দেশে।ফেরত না গিয়ে থাকে, তাহলে এই নতুন ৭ লাখ রোহিঙ্গা কোন যাদুবলে বার্মা যাবে? দুনিয়াতে শরনার্থী ফেরত যাবার বা দেবার রেকর্ড মনে হয় কেবল ১৯৭১ এ আমাদের করা। আর কোনোটা আছে কি?

আই ছিহ ছিহ কিংবা আঁইছি যেঁ এর আদালতের রায়ের পরে, এইতো এই এই তো রোহিঙ্গারা গেল বলে-এমন উত্তেজিত হয়ে থাকলে থামুন। বার্মা কোন কালে এদের গোণায় ধরেছে?

ইরাক নামে একটা গোটা দেশকে তামা বানিয়ে দেয়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে কেউ জিজ্ঞেস করে না, তোমরা যেহেতু স্বীকারই করেছ, তোমরা নাকি ভুলে ইরাক আক্রমন করেছিলে, তাহলে ক্ষতিপূরন অন্তত দাও। উত্তর কোরিয়া ও ইরান যাতে পারমানবিক বোমা না বানাতে পারে, তার জন্য গোটা পৃথিবী এই দুই দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নিজেদের ফরজ দায় পালন করছে। গোটা পৃথিবীকে পারমানবিক বোমামুক্ত করার নৈতিক দায় যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু কেউ জাতিসংঘ বা যুক্তরাষ্ট্রকে জিজ্ঞেস করে না, ভাই তোমাদের তাহলে পারমানবিক বোমা কেন আছে? তোমার থাকতে পারলে ইরানের কেন নয়? ইজরেলের থাকতে পারলে উত্তর কোরিয়ার কেন নয়?

যুক্তরাষ্ট্রের পাগল রাজা আইন করবেন, অমুক সালের পর হতে যারা আম্রিকায় আছে, তারা ভুয়া আমেরিকান। হ্যা, তিনি সংসদে আইন করেই সেটা করবেন। তবে কেউ তাকে প্রশ্ন করতে পারবে না, তা জনাব, আপনি যে সালে এসেছেন, সেই সাল হতে শুরু হবে না কেন?

অমুক দেশের হাতে (ইরান/উত্তর কোরিয়া) পারমানবিক অস্ত্র থাকা আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী। সুতরাং তার ঘাড়ে ধরো। হামলা করো। যদিও একই অস্ত্র চীন, জার্মান, রাশিয়া কিংবা ভারত পাকিস্তানের হাতে থাকা আবার বিশ্বের জন্য নিরাপদ। ইরাক কুয়েতকে আক্রমণ করল। অবৈধ, সুতরাং সাঙ্গপাঙ্গ ও ব্রিটেনের মতো চামচা নিয়ে হামলে পড়ো। আইনী বৈধতা দেবার জন্য জাতিসংঘ আছে।

তবে সৌদি আরব যদি ইয়েমেনে হামলা করে, সেটা অবৈধ নয়।

আসলে এত্তবড় গপ্প লিখে ফেললাম যে কারনে, সেটা হল, বাংলাদেশে এইচআরে কাজ করা আমরা শ্রম আইন, শ্রম আইন বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি।

আমি বলি কি, আইন নিয়ে আসলে তখুনি বেশি ঘাঁটাঘাঁটি হয়, যখন আমরা আইনের ফোঁকর দিয়ে চলতে চাই। (হয়তো আমি ভুল)। ভাই ও বোনেরা, আইন আসলে সার্বিক বিচারে এক হাস্যকর কিন্তু নৈবর্তনমূলক আধুনিক শোষণের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।

একটি কল্পিত উদাহরন বলি তবে।

 ধরুন, একজন ধর্ষক একজন নারী বা পুরুষকে তার নির্জন গৃহে ধর্ষনে উদ্যত হল। উক্ত নারী বা পুরুষ ধর্ষণ অবশ্যম্ভাবী জেনে হাতের কাছে থাকা একটি ছুরি দিয়ে উক্ত ধর্ষনোদ্যত (খেয়াল করুন, ধর্ষক নয়, ধর্ষনোদ্যত) মানুষটিকে মেরে ফেলল। এই ঘটনাতে কার কী বিচার হবে? উক্ত আক্রান্ত খুব সহজেই খুনের অপরাধে জেলে যাবে বা ফাঁসিতে ঝুলবে।

 কারন সে মানুষ খুন করেছে। ধর্ষন যেহেতু হয়নি, সে ওই হামলাকারীর কোনো দোষ প্রমান করতে পারবে না। পরন্তু সে যদি আলামত/প্রমান রাখার জন্য হামলাকারীকে তাকে ধর্ষন করতে দিত, তাহলে সে আবার প্রমান করতে পারত না, যে, সে স্বেচ্ছায় তার সাথে শারীরিক সংসর্গ করেনি। আহ, আইন।

আইনের মারপ্যাঁচ শোষিতকে যতটা সুরক্ষা দেয়, তার চেয়ে  বেশি কাজ করে শোষকের হাতিয়ার হয়ে। আর আইনের ইতিহাস বলে, সে ক্ষমতাসীনের একক মর্জিকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আইনের নিজের বৈধতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে যুগে যুগে। নানা পথে।

গান্ধিজীর আইন অমান্য আন্দোলন ও আমাদের আইন মানার নৈতিকতা:

প্রথমেই বলে রাখি, আমি কোনো বিশেষ রাষ্ট্র, সিস্টেম, কর্তৃপক্ষ বা ইন্সটিটিউশন নিয়ে এই লেখাটি লিখিনি। কোনো আইনজ্ঞ যদি লেখাটি পড়েন আর একটু বিশ্লেষনাত্মক মন্তব্য করেন বা তথ্যগত বা জ্ঞানগত ত্রূটি ধরিয়ে দেন, খুশি হব। আমি আবারও বলছি, স্রেফ আমার ব্যক্তিগত কৌতুহল মেটাতে লেখা। আমার লেখা খুবই ইন জেনারেল ও এ্যাবসট্রাক্ট। আমি একজন প্রাকটিসিং HR প্রোফেশনাল। অর্থ ও সময়াভাবে বাড়তি LLB বা LLM করা হয়নি। শ্রম আইনকে আমি আমার HR বাইবেল মনে করি না। আইনের প্রয়োগকে আমার কোর HR Role বলেও মনে করি না।

আমার মতে, আমার টীমের প্রধানতম কাজ হল, একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানপাওয়ারকে রিসোর্সে পরিণত করতে আর সেই রিসোর্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরন ও হিউম্যানের সবরকম প্রতিমূল্যায়ন নিশ্চিত করতে যা যা লাগে-তা নিশ্চিত করা।

যাহোক, আইনজ্ঞ নই বিধায় আমার লেখাটিতে তথ্যগত ভুল থাকতে পারে। আমার বক্তব্য নিয়েও প্রচুর দ্বিমত থাকতেই পারে। দ্বিমত বা তথ্যগত ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন। আর দয়া করে, ইস্যুর বাইরে কোনো অযাচিত মন্তব্য করবেন না।

শুনেছি, একবার গান্ধিজী আইন অমান্য আন্দোলন করেছিলেন। সেটাকে আমি কোনো রেফারেন্স হিসেবে দাড় করাতে চাই না। তবে ওই আন্দোলনের একটা ভিডিও বোধহয় দেখেছিলাম। যেখানে গোড়া সাহেব পুলিশ ও বাঙাল পুলিশ রাস্তার একটা স্থানে দড়ি ও বাঁশ দিয়ে বেড়িকেড দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আন্দোলনকারীরা দড়ির ওপাড়ে দাড়িয়ে।

তো অহিংস আন্দোলনকারীরা চকিতে কেউ কেউ পুলিশের ওই বাঁশের বেড়িকেডের উপর লাফ দিয়ে ওপাড়ে চলে যাচ্ছে। গিয়ে পুলিশকে হা ডু ডু দেখাচ্ছে কিছুক্ষন। গিয়ে দেখাতে চাচ্ছে, তারা পুলিশকে অমান্য করছে। তাদের হুকুম ও আইনকে ডিঙোচ্ছে। পুলিশ আবার তাদের চ্যাংদোলা করে এপাড়ে ছুড়ে মারছে। আইন ভাঙার বোধহয় নিরীহতম উদাহরন।

আইন আদালত নিয়ে আমার কোনো ধারনা নেই। আন্দাজ হতে একটি কথা বলছি। সারা বিশ্বব্যাপী একটা নর্মস হল, আদালতে বিচার শেষে রায় না হওয়াতক বিচারাধীন বিষয় বা ব্যক্তিকে নিয়ে দোষী বা নির্দোষ-কোনো মন্তব্য করা নাকি অন্যায়।

তো এখন, গোলাম আযম যে বিচার শেষ না হয়েই পটল তুলল, তো এই ভয়ঙ্কর অসভ্য রাজাকার খুনিটাকে আমরা কি রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী বলতে পারব না-ওই যুক্তিতে? যেখানে জানি, বদমাশটা ঘোষিত রাজাকার ও তাদের নেতা?

আবার যেকোনো দেশের কথা ধরুন, আদালতের বিচার ব্যবস্থা, (আমার জানামতে, আমার ভুলও হতে পারে) যেভাবে কাজ করে, তা হল, প্রথমে কেস হয়, পুলিশ তদন্ত করে চার্জশীট দেয়, তারপর দুই পক্ষের লজিক উপস্থাপন ও দুই পক্ষের সাক্ষীদের জেরা হয়, বাদি ও বিবাদীদের জেরা, যুক্তিখন্ডন ও আত্নপক্ষ ব্যাখ্যার ব্যবস্থা থাকে। তারপর বিচারক রায় দেবেন।

তো এই পুরো প্রক্রিয়া যেভাবে সাজানো, তাকে বলা হয়, পারফেক্ট ও নিরপেক্ষ একটি ব্যবস্থা, যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, আদালতের বা বিচারকদের তো রায় দিতে হবে তাদের সামনে উপস্থাপিত তথ্য, প্রমান, লজিক, লজিক খন্ডন, সাক্ষির কারিশমা, তাদের বয়ান, ফ্যাক্টস, ফিগারস, আলামত-এসবের ভিত্তিতে। তো এতসব করে শেষতক যত রায় হয়, আপনার কি মনে হয়, ১০০ ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকৃত অপরাধীটি দোষী হয় আর ফরিয়াদী বা নির্দোষ খালাস পায়?

অপরাধীকে অপরাধী রায় দিতে তো বিচারককে তার সামনে উপস্থাপিত বিষয়াবলি ও বস্তুসমূহের উপর ভর করতে হয়। তো, এটাও কি বলা চলে, বিশ্বব্যাপী আদালত ও তৎসম্পর্কিত বিচার প্রক্রিয়াতে প্রতিদিন যাদের অপরাধী করে সাজা দেয়া হয়, ফাঁসি হয়, আর যাদের নিরপরাধ বলে খালাশ দেয়া হয়, তারা সত্যিই তাই? আমি ঘুষ বা প্রভাব খাটিয়ে রায় বদলানো বা প্রভাবিত করার দিকটা নিয়ে কথা বলছি না।

বলছি, যেই সিস্টেমে অপরাধ প্রমান বা অপ্রমানের বিচারের পথ সৃজিত হয়েছে, সেটাতে ন্যায় ও অন্যায় নিশ্চিত হয়েছে না বলে, এটাকে কি অন্যভাবেও বলা যায়, যে, ”প্রাপ্ত তথ্য, বিশ্লেষন ও ধারনার ভিত্তিতে রায় হল অমুক দোষী, অমুক নির্দোষ” অর্থাৎ ন্যায় ও অন্যায়ের বিচারটি স্রেফ আপেক্ষিক?

তবে হ্যা, আমি সেই ছোটবেলায় দেখা “The Dark Justice” সিরিজের পুনরাবৃত্তিও করতে বলছি না।

পৃথিবীতে লিগ্যাল কিন্তু আনইথিক্যাল এবং ইলিগ্যাল কিন্তু এথিক্যাল এরকম বিপরীতধর্মী কিছু ধন্দ্ব আছে। অনেক বিষয় আছে যা লিগ্যাল কিন্তু আনএথিক্যাল।

যেমন:-’৯০ এর দশক জুড়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় মানুষের আন্দোলন দমাতে পুলিশ গুলি ছুড়েছে, মানুষ মরেছে। পুলিশ রাষ্ট্রীয় কর্মচারী হিসেবে তার উর্দ্ধতনের আদেশে গুলি করেছে। ওই কাজটা তার জন্য লিগ্যাল কিন্তু আনএথিক্যাল। আবার অনেক কাজ ইলিগ্যাল কিন্তু এথিক্যাল। একজন পথশিশু ক্ষুধার জ্বালায় সব দ্বার হতে বিতাড়িত হয়ে দোকান হতে একটি বনরুটি চুরি করল। এটি ইলিগ্যাল কিন্তু ইথিক্যাল।

এবার একটি বৃহত্তর পারসপেকটিভ বলি। অবিভক্ত বাংলা চিরকাল স্বাধীন ভূখন্ড হিসেবে বিদ্যমান ছিল। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এসে কূটকৌশলে জোর করে এই দেশ দখল করে আর তার রাজা হয়ে বসে। বিষয়টি ছিল ইলিগ্যাল। এই স্বাধীনতা হরণের দুশো বছর পরে বাংলা তথা বৃহত্তর ভারতের জনগন বিদ্রোহী হয় আর দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু করে।

বৃটিষ শাসকরা তখন ফরমাল ও বৈধ (কিন্তু বৃহত্তর প্রেক্ষিতে অবৈধ) সরকার। তো এই ফরমালি বৈধ কিন্তু বাস্তবে অবৈধ শাসক এই যৌক্তিক ও ন্যায্য আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষনা করল। যারা আন্দোলনে জড়িত ছিল, সবাইকে রাষ্ট্রদোহী ঘোষনা করা হল। তো তখনকার প্রেক্ষিতে বিপ্লবী দেশপ্রেমিকরা ছিল বিদ্রোহী ও বেআইনী। বাঙালী পুলিশই বাঙালী বিপ্লবীদের দমনে কাজ করত। সেই বাঙালী পুলিশদের জন্য বিষয়টা ছিল “লিগ্যাল” আর বিদ্রোহীদের জন্য এই আন্দোলন ইলিগ্যাল কিন্তু ইথিক্যাল।

ক্ষুদিরামকে রাষ্ট্র বিরোধীতার জন্য বিচারক ফাঁসি দেয়। বিচারকের আইনের দৃষ্টিতে সেটা লিগ্যাল, কিন্তু সার্বিক দৃষ্টিতে এই ফাঁসি আনইথিক্যাল। আমি যা বলতে চাই, তা হল, রাষ্ট্র, আইন ও বিচার ব্যবস্থা নিজেই যখন আইনানুগ পথে না হাঁটে, যখন আইন প্রনীতই হয় অবৈধ উপায়ে, যখন আইন প্রণীত হয় অনধিকার পথে, যখন আইন প্রণেতা ও প্রয়োগকর্তা নিজেই হন অন্যায্য ও অবৈধ, যখন আইনটি প্রণীত ও প্রয়োগ হয় অসম ও অন্যায্যভাবে, তখন সেই আইনের প্রয়োগ কি অবৈধ নয়? সেই আইন ভাঙার নৈতিক অধিকার কি সবার তৈরী হয়ে যায় না?

আমি আইন অমান্য করার পক্ষে বলছি না। অমান্য করতে বলছি না।

আমি প্রায়শই আমার আইনজ্ঞ সুহৃদ এবং সাসটেইনেবিলিটি সুহৃদদের সাথে আইন নিয়ে ফ্রেন্ডলি ঝগড়া করি। তাকে আইনের অসারতা নিয়ে কথা শোনাই। আইন ও নৈতিকতা নিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ বলি। আমি নিজেও মানুষটা আইন বিষয়টার প্রতি অকূন্ঠ শ্রদ্ধা দেখাই না। প্রাতিষ্ঠানিক আইন ও প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে আমার হাজার হাজার ক্ষোভ। যাহোক। আজ সেসব কথা নয়।

ছোট্ট একটা কথা। সরকার বাহাদুর বিভিন্ন বিষয়ে কর ধার্য করে থাকেন। সব মিলিয়ে দেশে মনে হয়, এমন কোনো বস্তু আর বাকি নেই, যার ওপর কর বসেনি। কর দিতে দিতে ফতুর। যদিও জানি না, একবার আয়কর দিলে, তারপর সেই করপবিত্র আয় দিয়ে একটা আইট্টা কলা কিনলে কেন আবার কর দিতে হবে? এক মরাকে কতবার জানাজা দেয়া যায়?

যাহোক, আজকে কর নিয়ে বলব না। বলব, আইন ও বিধান মেনে চলার দায় ও অসারতা নিয়ে।

দুপুর নাগাদ মিরপুরে এক দফা প্রবল বর্ষণ হল। সেই বর্ষণের মধ্যে ভাবলাম, মানুষ কম থাকবে, যাই দরকারী একটা কাজ সেরে আসি। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে আমাকে বহনকারী চার চাকার শকটটি চালক সাহেব একটি বাজারের সামনের রাস্তায় সামনে পিছে দুটো চটপটি আর সান্ডার তেলের ভ্রাম্যমান ভ্যানের মাঝখানে কায়দা করে রাখল। গিয়েছি মশাড়ি কিনতে। ডেঙ্গুতে কিছুতেই মরা চলবে না। ও মা! ডেঙ্গু হতে রেহাই পেতে গিয়ে বঙ্গদেশের সদাশয় পুলিশের হাতে ধরা। কী হয়েছে? না, তেমন কিছুই না।

রাস্তায় পার্কিং এর অপরাধে জরিমানা করেছেন দারোগা বাবু। শত হলেও ইদের মৌসুম। আমি শুধু তাকে জিজ্ঞেস করলাম, দাদা, আমার শকটের সামনে আর পিছনে দুটো ভ্যান গাড়ি স্থায়ীভাবে রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছে। আর আমার শকটটি ১৫ মিনিটের জন্য অস্থায়ীভাবে তাদের মাঝে রাখলাম, তাও প্রবল বৃষ্টির মধ্যে, কোথায় নো পার্কিং বিজ্ঞপ্তিও নেই। তাহলে কেন জরিমানা?

দারোগা বাবু একরকম অর্থপূর্ন দৃষ্টিতে তাকালেন। যার অর্থ হল, দাদা, বোঝেনই তো, ইদের মৌসুম, মহান আল্লহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য গরুর মাংস খেতে হবে তো। গরু কিনতে তো পয়সা লাগে, তাই না? আমি স্পিকার হয়ে জরিমানা দিলাম। নিজের গাধামোকে অভিশাপ দিলাম। হায় সেলুকাস! একই স্থানে কয়েক সপ্তাহ আগে গিয়েছিলাম। যন্ত্রশকট রাখতে গেলে দুইজন জাগ্রত জনতা এসে বাঁধা দিলেন। আমি ভাবলাম, বাহ, দেশতো কত্ত কত্ত কিউট ও নিয়মতান্ত্রীক হয়ে গেছে। মানুষ স্বেচ্ছাসেবক হয়ে রাস্তার নিয়ম বলবত করছে। বাহ।

ওমা! পরে দেখি, তারা রাস্তায় বসানো তাদের দোকানের বিক্রী বাট্টা বাধাগ্রস্থ হওয়া আটকাতে আমার শকটকে বিতাড়িত করছেন। অপদার্থ ও স্পিকার হয়ে আমি তবু জানতে চাইলাম, রাস্তায় দোকান বসানো গেলে আমার শকটটি কিছুক্ষণ রাখতে কেন বাঁধা? তারা দুজনই আমাকে বললেন, আপনি ’আনলিগ্যাল’ কথা বলছেন। দোকান বসানোর জন্য মার্কেট কর্তৃপক্ষ মাসিক চাঁদা নিয়ে তারপর অনুমতি দিয়েছে। তারা দোকান বসাবে। আপনি গাড়ি রাখতে পারবেন না। আমি স্পিকার হয়ে গেলাম। কেন আমি এই মহান যুক্তিটি নিজে জানতাম না।

বাসার কাছে একটি চায়ের দোকানে প্রায়ই আমরা দুই সমাজ বঞ্চিত নর নারী মালাই চা খেতে যাই। একদিন গিয়েছি। আমাদের বহনকারী যান্ত্রিক শকটটি চায়ের দোকানের সামনে দাড় করাতেই লাঠি হাতে একটি অপুষ্ট বালক ছুটে এলো। কী হয়েছে? ডিসি অফিস হতে নিষেধ আছে, এই রাস্তায় গাড়ি দাড়ানো যাবে না। আর ওই বালক ও তার রেস্তোরা মালিক হল বাংলাদেশের বিবেক এবং আইনের একমাত্র বৈধ রক্ষক। মুশকীল হল, রেস্তোরাটির প্রায় পচাত্তর ভাগ ফুটপাতেই তার কার্যক্রম চালাচ্ছে। আর তাদের সামনের প্রায় তিনশো গজ যায়গা আগত চা-খোরদের বাইক দিয়ে পুরোপুরি বন্ধ। শুধু গাড়ি দাড়ানো যাবে না। বাহ! আইন ভঙ্গের প্রবণতা মানুষের সহজাত ও আদি স্বভাবের অংশ। তার ওপর, হ্যা, আমরা বাঙালিরা অপরাধপ্রবণও।

#সবাই১না অবশ্যই। তারপরও বলব, আমাদের ভেতরে আইন না মানা ও অপরাধ প্রবণতার জন্মের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হল আমাদের আইন প্রণেতা ও প্রয়োগকারীরা। এই যে, এই দেশে মানুষ সামান্য ৫ টাকা পেশাব করার টাকাও মেরে দিয়ে সটকে পড়তে চায়, এই যে মাসুল না দেবার, কর না দেবার প্রবণতা, তার জন্য প্রধানত দায়ী কর গ্রহিতা ও করের টাকা নয়ছয় করে গিলে খাওয়া কর্তারা। একেকজন রাজকীয় কর্তা আর রাজনৈতিক কর্তা আর সেই সাথে তাদের লুটেরা সাঙ্গপাঙ্গরা যে হারে টাকা লুটবার সামান্য ছিটেফোঁটা খবর লিক হয়, তা হতেই আন্দাজ হয়ে যায়, যে, মানুষের টাকা কোথায় কীভাবে যাচ্ছে। একজন রিক্সাওয়ালা তার রক্ত পানি করা টাকা হতে অতি অতি সামান্য যে ডিফল্ট ট্যাক্স রাষ্ট্রকে দেয়, সেটা যখন কোনো ইতর কর্তার ছেলের ছাগল কিনতে ব্যায় হয়ে যায়, একজন বেশ্যার রাত শ্রমের টাকা ব্যাংকে রাখার পরে যখন সেই অতি কষ্টের টাকা ভূতে খেয়ে মোটা হয়, তখন আর কারোরই ট্যাক্স দেবার, আইন মানার ইচ্ছেটা বেঁচে থাকে না। এর পর হতে কাউকে আইন না মানার জন্য ভর্ৎসনা করার আগে বিষয়টা একটু মনে রাখলে সবার ভাল।

বাংলাদেশের মানুষ কেন নিত্য দিন কোনো আইন মানতে চায় না, তা নিয়ে আমাদের বহু বহু অভিযোগ। কিন্তু আরেকটি দিক হতে দেখলে, আমাদের আইন না মানার মতো খাসলতের জন্য সরকার, সরকারী ব্যবস্থাপনা, রাজনীতি ও সবকিছুতে রাজনৈতিক দৃর্বৃত্তায়নই দায়ী। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন আমাদেরকে একটি উদাসীন, বেপরোয়া, আত্মকেন্দ্রীক, স্বার্থপর, সুবিধাবাদী ও ভীরু জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে। তাহলে এর থেকে আর কী আশা করবেন?

একদিন বসুন্ধরা সিটি গিয়েছি। না না, ওটার উল্টোপাশে ডিসকাউন্টের জুতো বিক্রী হয়। সেটা কিনতে। ধারে একখানা চার চাকার বাহন নিয়ে গিয়েছি। ড্রাইভার ভুলে বসুন্ধরার পার্কিং লটের রাস্তায় না ঢুকে ভুল পথে আসায় সে আবার বহদূর ঘুরে জ্যাম ঠেলে এসে আবার সঠিক পথে ঢুকে সিটির বেসমেন্টে পার্কিং করল। আইন মানলাম।

বের হবার সময় দেখি, সিটি হতে বের হয়েই বড় রাস্তায় ভয়ানক ব্যস্ত সড়কে দেদারসে গাড়ি দাড় করিয়ে রাখা। পার্কিং নিষিদ্ধ স্থানে। একটা দুটো নয়, সাধারন গাড়ি নয়, দামী দামী ফোর হুইলার। পুলিশের কিছুই যায় আসে না। আইনের নাগরিক আমি স্পিকার হলাম। আরেকদিন গেলাম হাতিরঝিল। যথারীতে মাইলখানেক দূরে বাহন পার্ক করা হল। যেহেতু হাতিরঝিলে খুব কমই পার্কিং এলাকা। তার উপর হাতিরঝিলে যত্রতত্র পার্কিং নিষেধ। নিয়ম মেনে বহুদূরে গাড়ি রেখে গরমে নেয়ে হেঁটে গেলাম।

যথাস্থানে গিয়ে দেখি, হাতিরঝিলের ব্যস্ত রাস্তায় গন্ডায়গন্ডায় গাড়ি পার্ক করা। নিয়মের চরম পরাকাষ্ঠা। ধানমন্ডি যাব। সিটি কলেজের মোড় হতে গাড়ি ইউটার্ন করবে কিনা-ড্রাইভার জানতে চাইল। আমি নিজেও জানি না। কোনো সাইন নেই। তারওপর ঢাকার রাস্তার নিয়ম, গাড়িঘোড়ার নিয়ম জানি না। কারন গাড়ির নিয়ম জানার কোনো উপলক্ষ্য নেই। তো সামনে দিয়ে একটা ফোর হুইলার ইউটার্ন নিলো। তার দেখোদেখি আমরাও। সার্জেন্ট আমারটাকে ধরে ৪২০ টাকা জরিমানা করল। ১০০ বার বললাম, আমরা জানতাম না। সাইন ছিল না। কে শোনে। ৪২০ টাকা দেবার সময় দেখলাম, অন্তত ডজনখানেক এসইউভি ইউটার্ন নিল। নো জরিমানা। এরকম আর কতগুলো বলব?

কেন আমরা আইন মানি না, বা মানতে চাই না-আশা করি বোঝানো গেল। আমাদের নৈতিকতার কোমর ভাঙা হয় রোজ, প্রতিক্ষণে। চতুর্পাশে হাজারটা অনিয়ম, দূর্নীতি দেখে যারা গালি দেন, তারা আজ হতে একটু ভেবে দেবেন, যে, কে এই অন্যায়ের দোর খুলে দিয়েছে? কেন মানুষগুলো এরকম নির্লিপ্ত।

[আইন ভাঙা বা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়াকে তবু সমর্থন করি না। শুধু মানুষের গণহারে হাল ছেড়ে দেবার বা নিজেকে পঙ্কিলে নামাবার মোটিভেশন কোথা হতে আসছে-তা বললাম।]

আমি বলছি, আইন, আইনী প্রয়োগ ও প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে দাড়ানোটা যে সবসময়ই একচেটিয়াভাবে অবৈধ না, অন্তত নৈতিকতার মানদন্ডে অন্যায় না-সেটা। আমার ধারনা, বাংলাদেশে সেক্টরভিত্তিক ও ইস্যুভিত্তিক আইনের সংখ্যা বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে অনেক বেশি। এদেশে বোধহয় কলার খোসা রাস্তায় ফেললে কোন আইনে বিচার হবে-সেই আইনও আছে। কাউকে মুখ ভেঙচালে কীভাবে বিচার হবে-তারও আইন আছে। কিন্তু মজার বিষয় হল, আইনের প্রয়োগ, আইনের সাম্যাবস্থা আর আইনের শাসন এই সুপ্রচুর আইনের দেশেই বোধহয় সব থেকে কম। এ পর্যন্ত লেখাটি সার্বিক ছিল।

আইনের মানবিক স্বরুপ:

এবার আসুন, একটা সেক্টরাল ফ্যাক্ট নিয়ে খোঁচাখুঁচি করি।

গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রম আইনের প্রয়োগ একশোভাগ হয়না-এরকম একপেশে সমালোচনা করার মতো প্রচুর লোক বাংলাদেশে আছেন। বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরের তথাকথিত হিতৈষী বলে পরিচীত অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিও ঢালাওভাবে প্রায়ই এই অভিযোগ করে থাকেন। আইন আমরা মানি-তা প্রমান করা আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। মানতে বাধ্য হবার মতো কতটা নৈতিক দায় আমাদের আছে-সেটা নিয়েই আমার প্রশ্ন। বাংলাদেশে অসংখ্য আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিল্প সেক্টর আছে।

গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য বিশেষ কোনো আইন নেই। সাধারন শ্রম আইনই আমাদের জন্য রাষ্ট্রীয় আইন। যদিও বাংলাদেশের অন্য যেকোনো সেক্টরের সাথে আমাদের মৌলিক ও বুনিয়াদি পার্থক্য এবং ভিন্ন বাস্তবতা রয়েছে। মুশকীল হল, এই সবেধন নীলমনি আইনটিও প্রণীত হয়েছে খুব অদ্ভূৎ অবয়বে। বাংলাদেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী (এবং সম্ভবত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও আছে), একটি আইন প্রণীত হয়ে তা অনুমোদনের আগে একটি গণশুনানী হবার বিধান আছে। এই আইনটির সেই আনুষ্ঠানিক ’গণশুনানী’ হয়েছে কি? নাকি জাস্ট বানাতে হবে, বানিয়ে দেয়া হয়েছে?

আইনটির একটা বড় অংশে অনুসরন করা হয়েছে পুরোনো বিদ্যমান আইন ও অন্যদেশের স্ট্যান্ডার্ড। একটি বিশেষায়িত সেক্টর গার্মেন্টস এর সাথে এই আইনের প্রচুর স্থানে অসামঞ্জস্যতা আছে। বাস্তবতার সাথে মিল নেই অনেক কিছুতে। সর্বোপরি, আমার কাছে মনে হয়, রাষ্ট্রকে আইন প্রণয়নের সময় মাথায় রাখা উচিৎ, এই আইনটির প্রয়োগযোগ্যতা আর বাস্তবভিত্তিতা এবং; অবশ্যই এই আইনটির সকল স্টেকহোল্ডারদের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য সুবিধা নিশ্চিত করা। সেই দিকটি কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই আইনটিতে-তা নিয়ে আমার বেশ কিছু বক্তব্য আছে। এই আইনটি প্রণয়ন, অনুমোদনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা যারা কারখানা পর্যায়ে আইনটির সত্যিকারের বাস্তবায়নের কাজ করব, অর্থাৎ-এই সেক্টরের এইচআর, এ্যাডমিন, কমপ্লায়েন্স, ওয়েলফেয়ার, সিএ্যান্ডবি, মেডিক্যাল, প্রোডাকশন বিভাগ-এদের প্রান্তিক ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সাথে কতটা আলোচনা হয়েছে বা তাদের মতামত কতটা নেয়া বা প্রতিফলিত হয়েছে-তা নিয়ে কথা আছে বিস্তর।

তো এত এত কল আউট নিয়ে অস্তিত্বশীল একটি আইন হুবহু মানার নৈতিক দায় আমাদের কতটা? আর এতকিছুর পরে, আমরা একটি সেক্টর হিসেবে রাষ্ট্র ও তার আইনি ব্যবস্থা হতে কতটা সুযোগ ও সুরক্ষা পেয়ে থাকি, যে আমাদের জন্য প্রণীত আইন হুবহু মানতে আমরা বাধ্য থাকব?

সেক্টর হিসেবে আমরা যেমন আইন মানব বলে কাম্য হয়, তেমনি আমাদের অর্থাৎ এই সেক্টরটির সবরকম প্রাপ্য আইনী অধিকার ও প্রিভিলেজটুকুও তো সেক্টরের পাওনা। সেটা কি এই সেক্টর পাচ্ছে? পুরো রাষ্ট্রের সব সেক্টর কি তাদের জন্য বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে পালন করছে?

আইন ও আইনী প্রতিষ্ঠানগুলো কি তাদের সেই আইন মানতে বাধ্য করতে চেষ্টা করছে? রাষ্ট্র ও আইন নিজেই কি আমাদের আইন ভাঙতে বাধ্য করছে না? আপনি হয়তো ভাবছেন, আমি শিল্প উদ্যোক্তাদের আইন ভাঙার পক্ষে সাফাই গাইছি। কিংবা আইন ভাঙার উষ্কানী দিচ্ছি। নাহ, ভুলেও সেই ভ্রমে মজবেন না। আমি এই রাষ্ট্রের একজন সুনাগরিক আর এই সেক্টরের একজন স্টেকহোল্ডার। আইন মেনেই সবকিছু করার পক্ষে আমি।

কিন্তু অবাস্তব, আবেগী, অনুকরনকৃত, পশ্চাতপদ, নন-বিজনেস ফ্রেন্ডলী, আরোপিত, অবিবেচনাপ্রসূত আইন যদি প্রণীত হয় আর তা চাপিয়ে দেয়া হয়, সেই আইন কতটা সত্যিই বাস্তবায়ন হবে? আর তার বাস্তবায়ন সত্যিই কতটা কল্যান বয়ে আনবে? আইন বাস্তবায়নে ইঁদুর-বিড়াল খেলার রাস্তাটা তো এর জন্মের সময়ই খুলে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশের এইচআর ও কমপ্লায়েন্স খাতে শ্রম আইন নিয়ে তীব্র এক ধরনের অবসেশনের মতো আছে। আমি যদি ভুল না করে থাকি, যতটা চোখে পড়ে, তাতে, শ্রম আইন নিয়ে এইচআর প্রফেশনালদের যতটা মাতামাতি দেখি, ততটা এইচআরের অন্যান্য দিকে দেখি না। যাহোক, আমার ভুলও হতে পারে।

ভাল কথা, বাংলাদেশের গারমেন্ট সেক্টরে কর্মরত সাসটেইনেবিলিটির সোশ্যাল চ্যাপ্টারে যারা আছেন, তাদের একটা বড় অংশই আন্তরিক ও শক্তভাবে মনে মনে বিপ্লবী চেতনা ধারন করেন, এবং বিশ্বাস করেন, সব গারমেন্ট ও গারমেন্ট মালিক চোর, লুটেরা, তস্কর, শোষক, গরীবের দুশমন। এনাদের সার্বিক কাজে, কথায় তাই শ্রেনীসংগ্রামের আগুন ঝরে, সবকিছুতেই গারমেন্ট ও তার মালিক (এমনকি বড় বড় অফিসারদেরও) অহরহ লুটেরা ও শোষকের তকমা দেবার একটা প্রবণতা দেখি।

আজকের কথা তা নিয়ে নয়। কথা হল, আমাদের ধন্বন্তরি আইনগুলোর ভাষাগত বিশ্রি জটিলতা, অসঙ্গতি, আত্ম-দ্বন্দ্ব ও প্র্রায়োগিক অবাস্তবতা নিয়ে। মাঝে মধ্যেই আমি শ্রম আইন ২০০৬ এর প্র্রায়োগিক নানা জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন করি। নানা রকম মতামত পাই। আজ অবশ্য শ্রম আইন না, আইন নিয়েই কথা বলছি।

’আইন’-এই শব্দটি মানুষের ভাল করতে পারে, যদি সেটার যথাযথ ও মানবিক প্রয়োগ হয়।

বাংলাদেশের অডিটরদের নিয়ে অসুবিধা হল, তারা আইনকে ত্রিশুলের মতো ব্যবহার করতে চান। এর ফলে তারা আইনের বই হাতে নিয়ে মানুষের মঙ্গলের যুদ্ধ করেন। মুশকীল হল, আইন জগতের কোনো দেশেই ব্যাবসা ও এইচ.আরকে মানবিকভাবে সার্ভ করতে অক্ষম।

অডিটর (এবং তাদের ফ্যক্টরি কাউন্টারপার্ট, মানে সাসটেইনেবিলিটির বিপ্লবী কর্মীরা) আইনের প্রতিটি লাইনকে মাত্রাতিরিক্ত লিটারালি নিয়ে সেটাকে বাইবেলের আয়াতের মতো প্রয়োগ করতে চান। এত বাধে গোল। আইনকে যদি ওনারা মানবিক করে তুলতে চেষ্টা করতেন, তাহলে ভাল হত।

আইনের সাথে ঐতিহ্যগতভাবে আরেকটা জিনিস ওৎপ্রোতভাবে জড়িত ও দরকার, সেটা হল ইথিকস ও কনটেক্সট। ওনারা সেটাও ইগনোর করেন। সেই সাথে, ওনারা ডিফল্ট, একটা প্রিজুডিস মাথায় নিয়ে কাজ করেন, সেটা হল, সব ব্যাবসায়ী ও সব ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান চোর। এরা সারাক্ষনই চুরির ধান্দায় আছে।

এসব কারনে এঁরা ইংরেজি ও বাংলার অতি ক্ষুদ্র তারতম্যকেও বিশাল অসঙ্গতি মার্ক করে যেনতেনভাবে কারখানাকে একটা কলঙ্ক দিতে পারলে বাঁচে।

আপনাদের অবগতির জন্য এরকম একটা উদাহরন হতে পারে ‘যাবজ্জীবন’ কথাটা। এর মানে কী হবে, তা নিয়ে রীতিমতো আমাদের হাইয়েস্ট কোর্ট দীর্ঘ শ্রমঘন্টা ব্যায় করেছেন।

এইচ.আর এর উৎকর্ষে আইনের মারপ্যাঁচ:

পৃথিবীতে নিয়ম, নর্মস ও আইনের বেঁড়ি কেন উদ্ভাবন করা হয়েছিল জানেন? একটি দিক হল-মানুষকে ডিসিপ্লিনড রাখতে। তবে আরেকটি অনুচ্চারিত দিক ছিল-মানুষকে ডমিনেট করতে।

শাসন, বারন, চোখ রাঙানি, আইন, নর্মস, প্রোটোকল-একটি ওয়ার্কফোর্সকে নিয়ন্ত্রণ করতে কাজে দেয় ঠিকই। তবে নিয়মের অতিরিক্ত কড়াকড়ি মানুষের ইনোভেশন, স্বতঃস্ফূর্ততা, সৃষ্টিশীলতা কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে একটি প্রতিষ্ঠান যদি তার কর্মপরিবেশে নিয়ম ও নর্মসকে ক্রমাগত আপডেট না করে, তাহলে সেখানে গ্রোথ নেমে যেতে বাধ্য।

বাংলাদেশে ‘আইন’ খুব বিচিত্র একটি জিনিস। এর উৎস, প্রেক্ষিত, পটভূমি, প্রয়োগ ও ফেয়ারনেস এক মশকরার নাম। তো, এহেন বাংলাদেশে একটি বিশেষ সেক্টরে ‘আইন’ রীতিমতো পবিত্র বাইবেলের স্তবক বা ফরমানের মতো একটি মহান জিনিস। যে সেক্টরে সবার মুখে ও মনের ন্যারেটিভ হল, আইন ভাঙা ও মন্দীর ভাঙা এক কথা। যদিও মানসিকভাবে এই দেশের মানুষ আইন মানার পাত্র না। যতটা মানে, সেটা কেবল লাঠির ভয়ে।

তো, এই সেক্টরের একটি বিশেষ আইন আছে। মূলত শ্রম অধিকার, নিয়োগ নীতি, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধানের আইন এটা। এই আইন নিয়ে বিস্তর মারামারি হয় এখানে। ভুলে ভরা ও গোঁজামিলে ঠাসা এই আইন সেক্টরের অল্পবিস্তর ভালাই করলেও, জটিলতা ও পঙ্কিলতা কমাতে পারেনি। বরং, আইন ও আইনের বড়ি বেচে ভাত কাপড়ের যোগানের রাস্তাটা খুলেছে অনেকের। জল যত ঘোলা থাকে, তত বেশি প্রাণীর লাভ হয়।

তো, এই বিশেষ সেক্টরের মানুষেরা আইনকে বাইবেলের মতো নিয়েছে। এক চুল এদিক সেদিক হতে পারবে না। কিন্তু, মশকরাটা হল, এই সেক্টরের HR প্রফেশনালরাও যখন ‘আইন’ ‘আইন’ করেন, তখন ফরজে আইনে ঝামেলা লাগে। এইচ.আর প্রফেশনালরা ভুলে যান, যে, তাদের যে প্রধান ফোকাস-পিপল, সেই পিপল ম্যানেজমেন্টে আইনের ভূমিকা হল স্রেফ একটা প্রাথমিক বাউন্ডারি লাইন মাত্র।

পিপল ম্যানেজমেন্ট ও ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্টে আইন কোনো ডিটারমিন্যান্ট না, স্রেফ ইনফ্লুয়েন্সার ও সেফগার্ড মাত্র। বিজনেস অর্গানাইজেশনে পিপল ফার্স্ট নীতির ভিত্তিতে এইচ.আর ডিরেকট করতে হয়। আইন সেখানে মূখ্য না, ন্যুনতম মাত্র। সেখানে মূখ্য হল পিপলস চয়েজ, পিপলস সেন্টিমেন্ট, পিপলস থটস, পিপলস পারসেপশন, পিপলস সাইকলোজি। পিপল সেন্ট্রিক, লেবার ইনটেনসিভ, ম্যানুফ্যাকচারিং বেজড বিজনেসে আইন কখনোই বিজনেস ফ্রেন্ডলি পিপল ম্যানেজমেন্টের নিয়ামক হয় না। বিজনেসে আইনের চেয়ে বিজনেস ইনসাইট ও ইনটারেস্ট এবং পিপল পারসেপশন ও মাস সেন্টিমেন্টই ডিটারমিন্যান্ট হতে হবে।

(সম্ভবত) একজন তূর্কী মনিষী বলেছিলেন, “যদি তোমাদের জুমার নামাজের কাতারের পেছনের সারিতে শিশুদের হাসি, চিৎকার ও দুষ্টুমির গোলমাল না শোনা যায়, তাহলে অনুমান করে নিতে পারো, যে, কোথাও একটা সমস্যা বড় হচ্ছে।”

ওয়ার্কপ্লেসে হায়ার করবার সময় বেস্ট ফিট কর্মীকে নিন। নেবার পরে তাকে একটি স্বাধীন, মুক্ত, স্বতঃস্ফূর্ত, নিঃসংকোচ পরিবেশ দিন। তাকে কথা বলতে দিন। তাকে হাসতে দিন। তাকে নিজেকে প্রকাশ করতে দিন।তার সত্যিকারের ভেতরের সত্তাটাকে উপভোগ করতে দিন। তাকে সময় দিন। তাকে শিখতে ও বুঝতে সময় দিন। তাকে তার করণীয় নিজেই উপলব্ধি করে নেবার মতো রেসিলিয়েন্স দিন।

পদে পদে তাকে বেঁড়ি পরাতে গেলে, শাসন বারনে বাঁধতে গেলে, হাজারটা প্রোটোকল চাপিয়ে দিলে তাদের মধ্যে ওনারশিপ, ক্রিয়েটিভিটি, এনগেজমেন্ট, কোয়ালিটি, ডেডিকেশন মরে যাবে। সে একদিন পিটর হাঁস হয়ে যাবে।

নিজেও হাসুন। অন্যকেও হাসান। হাসি বিশ্বজয় করতে পারে।

হাঁসি বলে হাঁসা,

হাঁসা বলে হাঁসি,

এই নিয়ে হাঁসা হাঁসি,

করে হাসাহাসি।

জানি প্রচুর হাস্যরস ও টিটকারী, ট্রল হতে পারে এবারের কথাটি বলবার পরে। সেই ঝুঁকি নিয়েই বলছি।

একসময়ে যথেষ্ট যৌক্তিক থাকলেও ২০১৮ সালের বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন/বাতিল, কিংবা; পাশাপাশি পুরুষ ও বয়স্ক নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন, কিংবা প্রথম আইনটিতে পুরুষকেও সংযুক্ত করা উচিৎ। কারন, ওই আইনটি তার জন্মলগ্ন হতেই ত্রূটিযুক্ত, প্রতিহিংসাত্মক, মাত্রাতিরিক্ত কঠোর। যতটা সত্যিকারের নির্যাতন ও সহিংসতায় রক্ষাকবচ হিসেবে কাজে লেগেছে তার বহুগুন, শতকরা প্রায় ৯০ ভাগই ব্যবহার হয়েছে ভুলক্ষেত্রে ও হয়রানিতে। সামান্য ডিভোর্স দেয়ার পরই স্ত্রী স্বামীকে হয়রানি ও দেখে নিতে মামলা করে দিয়েছে।

আর একবার মামলা হওয়াই যথেষ্ট। তার মেরিট, প্রকৃত দোষী, বিচার, ন্যায়বিচার এতসব তো বহু পড়ে, মামলা হওয়ামাত্র আসামীর (আসলে ভিকটিম’র) জীবন তেজপাতা করে দেবে পুলিশ ও আইন। দেশে হত্যা মামলাতেও জামিন হয়, অথচ নির্যাতনের মামলায় জামিনের ব্যবস্থা রাখা হয় না। দারুন। এবং; শিশু অপরাধের আইনী বয়সসীমা ১৮ হতে কমিয়ে ১২ তে আনা উচিত। আইন যখন বানানো হয়, তখন ১৮ তে পোলাপান নাক টিপলে দুধ বেরোত। আর এখন বয়স ১০ হলেই নাক টিপলে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, ভালগার কনটেন্ট আর পাকনামি ঝড়ে পড়ে। তাই অল্প বয়সেই এখন ক্রাইম করার মতো কাবেলিয়াত তৈরী হয়। ১৯৮০ সালের একজন ১২ বছর বয়সী বালক/বালিকা আর ২০১৮ সালের বাংলাদেশের ১২ বছরের একজন বালক/বালিকার পরিপক্কতা ও মানসিক গঠনের মাত্রায় অনেক তফাত।

 #MotivationToFollowLaw #LawaltyToLaw #ObeyingLaw #ViolationOfLaw #ObligationToLaw #LegalAspect #Disobedience #Unloyal #License #Eligibility #Validity #Contradiction #RMGSector #Garment #ViolenceAgainstWomen #Alteration #Ammendment #FreedomOfChoice #EployeeFreedom #Ressilience #LawVSPeopleManagement #HR&Law

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *