Skip to content

ফ্রেশার ও বেকারদের হতাশার বিপরীতে বাস্তবতার পাঠ: একজন ফ্রেশার এর জন্য প্রস্তুতি নেবার বিষদ পরিকল্পনা

পাঠ-১: আমার বেকার জীবনের ডায়েরী

সাধারনত হতাশাবাদী বা বায়াজড কথা আমি বলি না। আজ একটা বলব। অত্যন্ত হতাশ হয়েই বলব।

বাংলাদেশে নাকি ২৬ লাখ বেকার। বেকারদের জন্য আমি সত্যি সত্যি ব্যক্তিগত কষ্ট অনুভব করি। তাদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা করে। কিন্তু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

কেন পারি না-তার একটা বড় কারন কী, জানেন? প্রার্থীদের চাওয়া আর বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য।

একটা তিক্ত সত্যি কথা বলি? বাংলাদেশে ভাল কাজ করার বহুত হ্যাপা। মানুষ ভাল কাজের মূল্য দেয় না। ইনটেনশন খোঁজে।

আমি নিজে আমার বেকার জীবনের কথা মনে করলে আজও শিউরে উঠি। সঠিক বেঠিক বহুত রকমের চেষ্টা চাকরী পেতে করেছি। কোনো ধরনের সম্ভাব্য পজিশন বাদ দিইনি যেটা নাগালে পেয়েছি। তখনকার দিনে ভাইবার, লিংকডইন, ফেসবুক কিছুই ছিল না। তখনকার সময়ে চাকরীর উমেদারী কত টাফ ছিল সেটা ভেবে দেখুন।

দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। সামান্য সহযোগীতা পাইনি। সামান্যতমও না। ও স্যরি। আমার বন্ধু হিরা আমাকে তার শার্ট ধার দিয়েছিল প্রথম চাকরী যেটাতে ঢুকি সেটার ভাইবাতে যাবার জন্য আর বন্ধু বাবু দিয়েছিল প্রবল সাহস। আমি বাংলাদেশের বেকারদের তীব্র মানসিক কষ্ট’র ধরনটা হৃদয় দিয়ে জানি। বেকার জীবনের গ্লানি কিভাবে একজন তরতাজা তরুণকে শেষ করে দেয়-তা আমি আজও ফিল করি।

আমি ভুলিনি সেই দুঃসহ দিনগুলোর কথা। বেকার জীবনের সবচেয়ে বড় যন্ত্রনা হল অনিশ্চয়তা আর শূন্যতার দহন। আর জেনে রাখুন, চাকরী পাবার সর্বোচ্চ তীব্রতম প্রয়োজন বলে যদি কিছু থাকে আমার সেটাই ছিল। মাস্টার্স হবার পরে পাগলের মতো যেকোনো রকম একটি চাকরী পেতে মরিয়া হয়ে উঠি। সেই সময় ঠিক কী কী ধরনের চাকরীর চেষ্টা করেছি তার আর ডিটেইল দিলাম না। শুধু বলি, ওগুলো অনেকে ভাবতেও পারবেন না। হ্যা, শুধু বিসিএস বা সরকারী চাকরীর কোনো চেষ্টাও করিনি-ওটা কখনো করব না বলে। কারন আমি চাকরীর মধ্যে দিয়ে কাজ করতে চেয়েছি, শুধু চাকরী করতে চাইনি।

আমার মনে আছে, প্রথম একটি চাকরী প্রায় হয়ে গেল ‘এরেনা মাল্টিমিডিয়া’ নামে একটা আইটি কোম্পানীতে। মার্কেটিং অফিসার।

যেদিন কনফার্ম হবে, সেদিন এমডি (একজন সহৃদয় লেডি) আমাকে নিয়ে বসলেন। আমি আমার সর্বোচ্চ ভাল শার্টটি পড়ে গেছি যেটি মূলত একটি ক্যাজুয়াল শার্ট। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আমাকে বললেন, আপনি কেন ক্যাজুয়াল শার্ট পড়ে এসেছেন? আমি তাকে সত্যিটা বললাম যে, আমার এর চেয়ে ভাল শার্ট আর নেই। তিনি হেসে দিলেন। বললেন, “মার্কেটিং জব। আজকের পর আর নির্জলা সত্যি কথা বলবেন না।”

তারপর তিনি আমাকে মার্কেটিং এর কাজের ভবিষ্যত, আমার মাস্টার্স কিভাবে ব্যাহত হবে, কতটা সময় যাবে, আমার ক্যারিয়ার কিভাবে ভাবা উচিৎ, আরেকটু সময় নেয়া উচিৎ-সব ডিটেইল নিজে বললেন। তারপর বললেন, তবুও যদি আপনি জয়েন করতে চান, তবে করতে পারেন। তখনকার দিনে মানে ২০০৩ সালে বেতন ৮০০০। আমি শেষ পর্যন্ত জয়েন করিনি। মাস্টার্স শেষের আগে চাকরী জয়েন করব না বলে। তবে ওই ভদ্রমহিলার ব্যবহার আমার আজও মনে আছে। গ্রেট লেডি।

৯৩ টি সিভি ড্রপ করার পরে ৬৩ তম টির ফিডব্যাকে জব পাই। বিন্দুমাত্র লবিং, মামা খালু, ঘুষ কিচ্ছু দিইনি। তবে আমি জানি, নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করেছিলাম জব পাবার যোগ্যতা অর্জন করতে। আমি খুব দুঃখিত যদি আপনি বুঝে থাকেন, এই গল্প ফেঁদে বসার উদ্দেশ্য হল নিজেকে খুব বিরাট কেউ প্রমান করা। না, আমি সত্যিই বিরাট কেউ হতে পারিনি যদিও আমার সমসাময়িক বন্ধুরা ধারনাতীতভাবে অত্যন্ত উঁচু স্ট্যাটাসে পৌছে গেছেন।

মুশকিল হল, আজকালকার দিনে চাকরীপ্রার্থীদের একটা বড় অংশ চাকরী পাবার জন্য যতটা ঘাম ঝরাচ্ছেন, দৌড়ঝাপ করছেন, ফেসবুকে চাকরী না থাকার হতাশায় ঘন্টায় ঘন্টায় দিস্তা দিস্তা হতাশার স্টাটাস দিচ্ছেন, তার কিয়দাংশ যদি চাকরী পাবার জন্য যে যে প্রস্তুতি দরকার-সেটা অর্জনের পেছনে দিতেন তবে তাদের জন্য কাজটা অনেক সহজ হত। কিন্তু হতাশার বিষয় হল, তারা তার ধারেকাছে দিয়েও যান না। প্রমান চান? আমি ভুড়ি ভুড়ি উদাহরন দিতে পারব। এক ভদ্রলোক যোগাযোগ করলেন জবের ব্যাপারে। আমি তাকে বেশ কিছু প্রস্তুতির কথা বললাম। তিনি মেসেজ রিপ্লাই না করে সাইন আউট করলেন। দিন বিশেক পরে আবার মেসেজ, “ভাই, আমার চাকরীর কিছু হল?” আমি তাকে তার প্রস্তুতির কথা আবার জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি কোনো উত্তর দিলেন না।

আবার দিন বিশেক পরে, “ভাইয়া,………….।”

ছোট্ট একটা ঘটনা বলি। গত ১৫ দিন আমি ধারাবাহিকভাবে লিংকডইন ও ফেবুতে চাকরীর প্রস্তুতির উপরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে একটা বড় আর্টিকেল শেয়ার করলাম। পাঠক সংখ্যা ৭, ৮, ১২, ২৯, ৩৪, ২১ বা তার ধারেকাছে। বলতে পারেন, আপনার মতো পাতি লেখকের লেখা কেন মানুষ পড়বে? ওকে। কিন্তু সমস্যা হল, আমার কাছে চাকরীর ব্যাপারে মতামত বা হেল্প চান-তাদের সংখ্যাটাও ওই ২১ বা ৩৪ এর চেয়ে ৩ গুন। তারাও বেশিরভাগ পড়েননি। তো পড়তেই যদি না চান, যোগ্যতা বাড়বে কেন? আমি জানি, এমনকি এই লেখাটাই পড়বেন মাত্র ২৮ জন।

আর বিভিন্ন ইন্টারভিউতে কী যে ভয়ানক অযোগ্যতার প্রমান পাই তাতো বিভিন্ন লেখায় অনেকবার বলেছি। চাকরীপ্রার্থীরা সবচেয়ে কমোন কীরকম হেল্প চান বলি। তারা বেশিরভাগ চান তাদের সিভিটা আমাদের কাছে প্রিজার্ভড থাকবে। আমরা বিভিন্ন অফিসে আমাদের পরিচীতদের কাছে তাদের কোনো সুযোগ আছে কিনা-সেটা খুঁজব আর সিভি রেফার করব।

সেটা করা যেত যদি প্রার্থীর সংখ্যাটা ২-৪-৬ জন হত। সংখ্যাটা যখন ১০০, তখন যদি সেটা করতে চাই তবে আমার নিজের চাকরী, কাজ বাদ দিয়ে সোস্যাল লিংকিং করেই কাটাতে হবে। আমি তাদের বলি, বরং আমি আপনাদের যোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করি, নিজেরা এপ্লাই করুন-আমি হয়তো লবি করব। কিন্তু বেশিরভাগই সেই রাস্তায় হাঁটেন না। তারা বিরক্ত হন। মনে মনে বলেন, চাকরী দিতে পারেন না, খালি বকবক আর উপদেশ।

কিন্তু এত হতাশার মধ্যে আশার আলো দেখান আবার অনেকেই। আমি দু’জনকে অন্তত জানি যারা আমাকে চেনে বছরখানিক। গত ৬ মাসে অন্তত ২০ বার মেসেজ বিনিময় হয়েছে বিভিন্ন প্রস্তুতি, কেস রিজলভ, কুয়েরী, প্রিপারেশন নিয়ে। প্রবল উৎসাহে তারা প্রিপারেশনের সবক নেয়। তাদের একজন অলরেডি একটা জবে ঢুকে পড়েছে। একজন গ্রাজুয়েট ছাত্র, ফাইনাল ইয়ারে। এখনি সে মুভ শুরু করেছে নিজে কিভাবে প্রস্তুত হবে তাই নিয়ে। প্রায়ই মেসেজ করে বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে। ভাল লাগে, উৎসাহ লাগে এদের দেখে।

আর আমার স্বজাতিদের নিয়ে একটু বলি। নানা সংগ্রামের পরে কর্পোরেটে যায়গা করে নিয়ে অতঃপর এখন বিশাল কর্পোরেট পার্সন হয়ে গেছেন। অতীতের কষ্ট যেমন ভুলেছেন তেমনি ভুলেছেন অতীতের কষ্টের শিক্ষা। বেকাররা নানাভাবে এ্রপোচ করেন, অনুনয় করেন, হয়তো কিছুটা তোষামোদও করেন। তাদের মন গলে না। বেকারদের কষ্ট নিয়ে তারা একরকম হিংসাত্মক তৃপ্তি পান মনে হয়। নিজেদের সংগ্রামী সময়ের কথা মনে করে প্রতিশোধ অনুভব করেন।

ইন্টারভিউ ডাকেন, আলতু ফালতু কোশ্চেন করে ক্যান্ডিডেটকে ভাগান, নিজেদের মর্জিমাফিক প্রার্থীদের ভাগ্য মাপেন। কারো চাকরীর হেল্পের জন্য ফোন করলে যন্ত্রের মতো করে আন্তরিকতাহীন গলায় কথা বলেন। চিপায় চাপায় কোনো অপর্চুনিটি ওপেন হলে নিজের শালা, সমন্ধি, কাজিনের জন্য ঝাপিয়ে পড়েন। আমি নিজে এসবের সাক্ষি। হ্যা, জান লড়িয়ে দিচ্ছেন, এমনও বহুত আছেন। আমি কখনোই জেনারেলাইজ করাতে বিশ্বাস করি না।

এন্ড রেজাল্ট একই। দেশে সেই ২৬ লাখ বেকার বেকারই থাকেন।

১৭ কোটি সন্তানের হে বঙ্গজননী!

রেখেছ ২৬ লক্ষকে বেকার করে

চাকরী দেবার উপায় করো নি।

রেখেছ চাকরীপ্রার্থী করে

চাকরী পাবার যোগ্য করো নি।

(হয়তো কেউ কেউ ইতিমধ্যে আমাকে গালাগাল শুরু করেছেন। ”ব্যাটা, পারলে চাকরী দাও। এত কথা কেন?”, “আপনি নিজে কয়জনরে চাকরী দিয়েছেন?”, “পারলে চাকরী দেন নাহয় চুপ থাকেন”, “খালি বকবক”-নানা গালি হয়তো মুখে আসছে।

কী করব বলুন?

মনে যা আসে, তাই করুন।

পাঠ-২: চাকরি আর প্রার্থীর দৃষ্টিভঙ্গিতে যোজন যোজন দূরত্ব

চারপাশ জুড়ে কেবল হতাশা আর হতাশা। হাহাকার, আহাজারি।

চাকরি নেই। চাকরি নেই। চাকরি নেই।

ফ্রেশারদের কেউ নেয় না, নেয় না, নেয় না।

সত্যি কথা। কোনো সন্দেহ নেই। তবে আংশিক।

হেড ও চাকরি-দুটোই খোঁজার সাথে নিজে জড়িত বিধায়, অন্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের হেড হান্টিং কাজের ট্র্যাক রাখতে হয়।

তো, বিগত ৯০ দিনের অভিজ্ঞতা যদি বলি, একটি বিরাট সংখ্যক প্রতিষ্ঠান কিছু কিছু এক্সক্লূসিভ ও ব্যতিক্রমী ধরনের পজিশনে হেড হান্ট করেছেন। একজনকেও পান নাই নেবার মতো। কী রকম ছিল ওই হান্ট?

১. ফ্যাবরিক টেকনোলজিস্ট

২. বিজনেস এনালিস্ট

৩. স্যাম্পল রুম ম্যানেজার

৪. ফ্যাশন ডিজাইনার কাম ব্র্যান্ড ম্যানেজার

৫. ইআরপি এ্যাডমিনিসট্রেটর

৬. সোশ্যাল মিডিয়া ব্র্যান্ডিং এক্সপার্ট

৬. সেফটি ইঞ্জিনিয়ার

কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু কিছু পজিশনের বিপরীতে ক্যান্ডিডেটই মেলেনি। যেমন:-গার্মেন্টসের জন্য একজন ফ্যাবরিক টেকনোলজিস্ট, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, একজন এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার বা একজন ক্যাড মাস্টার পাওয়া রীতিমতো ভাগ্যের ব্যপার।

আবার, ফ্রেশারদের নাকি কেউ চাকরি দেয় না। তারা কই যাবেন?

ধরুন, আজকে যদি আমি নিচের বিজ্ঞাপনের মতো একটি বিজ্ঞাপন দিই, কে কে তার সুযোগ নিতে আগ্রহী হবেন?

[আমরা কিছু জিনিয়াস ফ্রেশার খুঁজছি। যাদের পজিশন, বিভাগ ও পড়াশোনা হবে এমন-

ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনী (ভবিষ্যত প্রোডাকশন অফিসার)-সুইং/ফিনিশিং/কাটিং/ওয়াশ/কোয়ালিটি-বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা বিএসসি ইন আইপিই। যেখানে এই মুহূর্তে প্রায় অশিক্ষিত (কিন্তু দক্ষ) সুপারভাইজার/লাইন কন্ট্রোলাররা কাজ করেন।

কতজন আগ্রহ দেখাবেন?

কিংবা ধরুন, খুঁজছি ১০ জন ব্র্যান্ড নিউ ফ্রেশার, যাদের নেয়া হবে কোম্পানীর ৫ বছরের পরের ভবিষ্যত লিডার হিসেবে। যারা ৫ বছর ১০ টি বিভাগে ঘুরে ঘুরে কাজ করবেন আর ৫ বছর পরে তাদেরকে ওই ১০ টি বিভাগের বস হিসেবে সেটল করা হবে।

ধরুন, ক্রাইটেরিয়া সেট করা হল-প্রার্থীদেরকে-

আইটি ও টেকনোলজিতে সুপার হতে হবে।

প্রচন্ড ডেডিকেশন, পরিশ্রম ও সময় দিতে হবে।

ইংরেজিতে নো কমপ্রোমাইজড হতে হবে।

আইকিউ তে ৭৫% স্কোর করতে হবে।

ফ্রেশারদের অন্য যেসব ট্যালেন্ট কোম্পানীগুলো যাঁচাই করে, সবগুলোতে তুখোড় পরীক্ষায় পাস করে ঢুকতে হবে।

তার বিনিময়ে, তুখোড় ক্যারিয়ারিজম নিশ্চিত করা হবে।

কতজন আসবেন? আর কতজন আসবার পরে ৫ বছর থাকবেন?

আই হ্যাভ ডাউট। বাট ইয়েস, আই মেই বি রং।

পাঠ-৩: জব নিয়ে ফ্রেশারদের নানারকম অনুযোগ ও তার প্রতিউত্তর

একজন দায়বদ্ধ সোস্যাল এ্যানিমেল হিসেবে আমি প্রায়ই অনলাইনে (ফেসবুক/মেসেঞ্জার/লিংকডইন) চাকরীর বিজ্ঞাপন দিই, ক্যারিয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন লেখা লিখি। বিভিন্ন রকম পাঠক তো থাকেই। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ বিশেষত চাকরী প্রার্থী ফ্রেশাররা প্রায়ই অভিযোগ/অনুযোগ করেন, আমরা এমপ্লয়াররা/সিনিয়র প্রোফেশনালরা কেন ফ্রেশারদের জন্য কিছুই করি না, কেন আমরা এত এত জব ওপেনিং দিই যা শুধুই অভিজ্ঞদের জন্য?

কেন আমরা খালি অভিজ্ঞতা অভিজ্ঞতা করি? নতুনদের চান্স না দিলে তাদের অভিজ্ঞতা আসবে কী করে-ইত্যাদি। আমি প্রায় সবসময়ই এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হই। উত্তর দেবার, লজিক দেবার চেষ্টা করি।

এবার চিন্তুা করলাম, সবগুলো যুক্তিকে একত্র করে ফ্রেশারদের জন্য লিখি। মনে রাখবেন, লেখাটি শুধুমাত্র ফ্রেশারদের অনুযোগের উত্তর। এমপ্লয়ার বা সিনিয়র প্রোফেশনালদের দোষ আজকে বলব না। কারন সেগুলো আপনারা প্রচুর বলেছেন। তাই নতুন করে ওগুলোর আলোচনা করব না। আজ বলব, বিপরীত দিকটা। তাতে হয়তো তাদের চাকরীর বাজার প্রসারিত হবে না।

কিন্তু তাদের ভুল ধারনা ভাঙবে, কিছুটা হলেও তাদের হতাশা ও উদ্বেগটা কমবে। এবং অবশ্যই নিয়োগদাতা ও নিয়োগপ্রার্থীদের মধ্যেকার দূরত্ব কিছুটা হলেও কমবে।

আসুন দেখি, কয়েকটি প্রশ্নের জবাব খুঁজি।

১. কেন এমপ্লয়াররা ফ্রেশারদের জব দিতে চান না? কারন আছে ফ্রেশারদের জব দিতে না চাইবার পেছনে। যেমন:-

১.ক.

আমি নিজে এর ভুক্তভোগী। চাকরী দিয়ে, শিখিয়ে পড়িয়ে যখন রেডি করি, তারা ১ দিনের নোটিশ দিয়ে চাকরী ছেড়ে চলে যান। আমার নিজের সাহায্য করা প্রায় সব ফ্রেশারের ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতা এমন। গত মাসেই একজন ফ্রেশার যিনি ৯ মাস জব করেছেন, তিনি এইচআরে গিয়ে বলেছেন, তার বাবা মুমূর্ষূ অবস্থা। দ্রুত ইন্ডিয়া নিতে হবে। তিনি কাল হতে আর আসবেন না। কোম্পানী তাকে ১ মাস চিকিৎসা করে জয়েন করতে বলল। তিনি তাও পারবেন না। অগত্যা তাকে ছেড়ে দেয়া হল। ৩ দিন পরে জানা গেল, সব ভুয়া। তিনি আরেকটা কোম্পানীতে মাত্র ৫ হাজার টাকা বেশি বেতনের জন্য এই নাটক করেছেন। আপনি বলবেন, আপনি এমন করবেন না। কিন্তু বিগত ৫ বছরের অভিজ্ঞতা একই। তাহলে কীভাবে এমপ্লয়ার আস্থা রাখবেন নতুন করে?

১.খ.

অতিরিক্ত আশা। ফ্রেশার যদি এই আক্রার বাজারে ২৫ হাজার টাকা স্টার্টিং স্যালারি আর প্রথম দুই বছরে স্যালারী রেঞ্জ ৮০ হাজারে যেতে হবে-দাবী করেন, কী করতে পারি? সব চাক্ষুস অভিজ্ঞতা বলছি।

১.গ.

একজন এমপ্লয়ার এরপরেও সাহস করে, সামাজিক দায়বদ্ধতা হতে ফ্রেশার নিয়োগ করলেন। প্রার্থী ১ বছর পরেই কাজ শিখে এসে সেই এমপ্লয়ারকে যখন বলেন, আমাকে অমুক প্রতিষ্ঠান ৫০ হাজারে অফার করেছে। আমাকে ৫০ হাজার স্যালারী না দিলে থাকব না-তখন স্বাভাবিকভাবেই ফ্রেশার নিয়োগে উৎসাহ হারাবেন নিয়োগদাতা। আপনি বলবেন, সবাই এক না। একের দোষে অন্যরা কেন ভুগবে? এখন নিয়োগদাতাতো আপনার মনের স্ক্যান করে দেখতে পারবেন না। আর এই কুঅভ্যাসটি যখন মাত্রাছাড়া পরিমানে হয়, তখন সেটাকেই তো ট্রেন্ড হিসেবে দেখা হবে-তাই না?

১.ঘ.

আমি নিজে দেখেছি, মাসের বেতন পেয়ে কোনোরকম রিজাইন না দিয়ে ফ্রেশার এন্ট্রি চাকরীজীবিরা অন্য জবে জয়েন করতে। আপনি বলবেন, আপনারা এমন কিছু নিশ্চই করেন যে জন্য তারা চলে যেতে বাধ্য হয়। তো ভাই, আপনি সবরকম কথাই যদি নিজের ফেভারে চান, তবে কী করে হবে? যত অসুবিধা হোক, আপনি রিজাইন দিয়ে যেতে পারবেন না-এমন গজব কি নাজিল হয়েছে দেশে?

১.ঙ.

সবচেয়ে মারাত্মক কারন হল, যোগ্যতা। বিগত প্রায় ৭/৮ বছর ধরে দেশের শিক্ষার মান ভয়ানক রকমভাবে রসাতলে গেছে। শিক্ষার মূল লক্ষ্য (মানুষকে মানুষ করা) তো বহু আগেই মারা গেছে। বাকি ছিল অন্তত একাডেমিক শিক্ষা হতে অন্তত কলম পিষে খাবার মতো মানুষ সৃষ্টি করা (কোনো রকম মানবিক গুনাবলি না থাকলেও চলত)। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর সেটাও পারছে না বা করছে না। একাডেমিক পরীক্ষা পাশ করে বের হয়ে তারা সামান্য কলম ধরার মতো অবস্থায়ও নেই। (অবশ্যই সবাই না। মেধাবী মানুষ এখনো আছে।)

আমি বলছি, জেনারেল সিচুয়েশনের কথা। আমার একাধিক লেখায় আমি উদাহরনসহ বলেছি, কী ভয়ঙ্কর অযোগ্য লোকজন আমাদের কাছে আসছে ইন্টারভিউতে আর আমরা লোকের ক্রাইসিসে ভুগছি। চাকরী নিয়ে ঘুরছি, কিন্তু লোক পাচ্ছি না। সেগুলো আর রিপিট করছি না। সুতরাং, এখন যারা ফ্রেশার হিসেবে বের হচ্ছেন, তাদের প্রতি ইন জেনারেল, এমপ্লয়ারদের এলার্জি, অনাগ্রহ তো স্বাভাবিক, তাই না?

২. তাই বলে, ফ্রেশার জব কি হচ্ছে না দেশে?

সবার আগে আপনি আপনার ভুল ধারনা হতে বাইরে বেরিয়ে আসুন। “ফ্রেশারদের জব দিই না” বা ”দেয় না” এটি খুব বায়াজড ও একপেশে একটি মিথ্যা। লজিক দিয়ে বোঝাই।

প্রতিবছর দেশে নতুন করে প্রায় ৭ লক্ষ গ্রাজুয়েট চাকরীর বাজারে প্রবেশ করে। সরকারী চাকরী বছরে গড়ে সৃষ্টি হয় ২ থেকে ৩ হাজার (আনুমানিক)। তাহলে বাকি ৬ লক্ষ ৯৭ হাজার গ্রাজুয়েট বেসরকারী চাকরীর উমেদার হয়। (খুব সামান্য কিছু ছেলেমেয়ে বিদেশে পাড়ি জমায় বা নিজের ব্যবসা শুরু করে)। তো ধরে নিলাম, দেশের কোনো নিয়োগকর্তা একজন ফ্রেশারকেও জব দেয় না। তাহলে প্রতিবছর দেশে ৬ লক্ষ ৯৭ হাজার বেকার সৃষ্টি হত। আর তাতে করে বেকারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে কয়েক কোটি হয়ে যেত না, আর সেটা দিনকে দিন বিশাল হত না?

কিন্তু জানেন কি, দেশে গ্রাজুয়েট বেকার ২৬ লক্ষ। তার মানে গড়ে ৪ বছরের গ্রাজুয়েট ফ্রেশারের মোট সংখ্যার সমান দেশে বেকার আছে। তাহলে স্বাধীনতার পর হতে বিগত ৪৬ বছরে বা অন্তত বিগত ২০ বছরের মধ্যে মাত্র ৪ বছরের সৃষ্ট গ্রাজুয়েটদের বেকার থাকার হিসাব মিলল। বাকি ১৬ বছরের গ্রাজুয়েটরা তবে কোথায় গেল? তারাও যদি বেকার থাকত, তাহলেই তো দেশে বেকারের সংখ্যা দাড়াত ১৬ বছর X ৭ লক্ষ = ১ কোটি ৩২ লাখ। তা না হয়ে সেটা কেন ২৬ লক্ষ আছে? আছে, কারন ফ্রেশারদের জব হচ্ছে। সবাই বেকার থাকছে না। তার মানে ফ্রেশারদেরও জব হচ্ছে। হয়তো সবার নয়, তবে হচ্ছে।

ফ্রেশারদের জব কেন হচ্ছে না? কেন আমাদের অধিকাংশ বিজ্ঞাপনে আমরা অভিজ্ঞ লোক চাই? কেন নতুনদের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ আমরা দিতে পারি না?

আপনাকে মানতেই হবে, যেকারনেই হোক, দেশে চাকরীর বাজারের মার্জিনাল গ্রোথতো হচ্ছেই না, বরং দিন দিন আনুপাতিক হারে সংকুচিত হচ্ছে। এবং আমার ও আরো অনেক প্রাজ্ঞ ক্যারিয়ার এ্যানালাইজারদের ধারনা, সেটা আরো সংকুচিত হয়ে যাবে। তো এমন বাস্তবতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নতুন জব কম সৃষ্টি হচ্ছে। এর একটি ডোমিনো এফেক্ট হচ্ছে জব মার্কেটে। নতুন জব সৃষ্টি হচ্ছে না>পুরোনোরা জব ছাড়ছেন কম>পজিশন খালি হচ্ছে কম। তারপরে আবার যেগুলো খালি হচ্ছে তার বেশিরভাগই সিনিয়র টেকনিক্যাল পজিশনে। ফলে ওই খালি হওয়া পজিশনে ফ্রেশারদের নেয়া সম্ভব হয় না।

৩. আপনারা যদি একটু মন দিয়ে খেয়াল করেন, দেখবেন, জব সার্কুলারগুলোতে বিজ্ঞাপিত পদগুলোর একটা বড় অংশই সিনিয়র পজিশনের। কোনো কোনোটি টেকনিক্যাল ও ডিসিশন মেকিং লেভেলের। প্রায়ই ফ্রেশাররা এবং তাদের সহানুভবরা বলেন, নতুন লোককে একটু শিখিয়ে নিলেই তো তারা সব কাজ করতে পারে। এটি খুব খেলো একটি কথা হয়ে গেল না? ৫ বছর জব করে একজন মানুষ যেই দক্ষতা অর্জন করেন, তিনি সেই জব ছাড়লে যেই ভ্যাকান্ট পজিশন তৈরী হয়, সেখানে একজন ফ্রেশার নিয়ে তাকে ৩ মাসে সেই সমান দক্ষ করে তোলা সম্ভব?

৪. যেমন ধরুন, আমি প্রায়ই বিজ্ঞাপন দেখি, জিএম-ওয়াশ-গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে। আবেদন করেন ফ্রেশার। আপনি কি জানেন, একজন সুদক্ষ এমনকি আধাদক্ষ ওয়াশ টেকনিশিয়ান তৈরীতে ঠিক কতটা সময়, শ্রম, নিবেদন, এনার্জি দিতে হয়? সব কাজই কয়েক দিনে শিখিয়ে নিলে করতে পারবে- এই ভুল ধারনা কীভাবে হল আমাদের? জাস্ট ভাবুনতো, একটি ওয়াশ প্ল্যান্ট কিংবা একটি পাওয়ার প্ল্যান্টের সুপার টেকনিক্যাল জব কি একজন ফ্রেশারের হাতে দিয়ে দিতে পারবে একজন মালিক?

৫. আরেকটা লজিক বলি, দেশের বাজারে ২৬ লক্ষ গ্রাজুয়েট বেকার, মোট বেকার কিন্তু আরো বেশি (৪ কোটি ২০ লক্ষ)। ধরে নিলাম, এই ২৬ লক্ষ বেকারের সবাই ফ্রেশার। এক গার্মেন্টস সেক্টরেই কর্মীর ঘাটতি ১০ লক্ষ। অথচ কেউ গার্মেন্টসে যাবে না। বিদেশে গিয়ে থালাবাসন ধোবে, তবু দেশে মেশিন চালাবে না। তাদের একটাই কথা, “লেখাপড়া শিখেছি কি শ্রমিক হতে?” আরে ভাই, গরীব দেশে বাবুগীরি জব কোথা হতে আসবে? আর এই আমরাই তো আমেরিকায় ডিভিতে গিয়ে থালাবাসন মাজি। ভাবতে পারেন, আমাদের ২৬ লক্ষ গ্রাজুয়েট হতে ১০ লক্ষ যদি গার্মেন্টসের ঘাটতি শ্রমিকের যায়গাটা নিত, কী ভিষন পরিবর্তন এসে যেত সেক্টরটাতে? ভাবুন একবার? যেই পরিবেশ খারাপের অভিযোগে আমরা গার্মেন্টসে যাই না, আমরা সাহস করে গেলে সেক্টরটাই বদলে যেত। আমরা সবাই খুঁজি, বানিয়ে দেয়া বাগান, মরুর বুকে বাগান করে নিতে কেউ চাই না।

আরে ভাই, বেকার থাকার চেয়েও কি গার্মেন্টসের চাকরী খারাপ?

ফ্রেশার বেকাররা আমাকে বলেন, যেকোনো জব দিন, করব। আমি একবার পিয়নের জন্য দু’দিন লোক খুঁজলাম-১৫,০০০ বেতন। কেউ রাজি না। একবার একটা চমৎকার কোম্পানীর মার্কেটিং বিভাগের জন্য ফ্রেশার খুঁজলাম-বেতন ২০,০০০। ৩ জন আবেদন করেছে।

৬. ফ্রেশারদের জব না হবার বা না দেবার আরো কিছু কারন বলি-

৬.ক.টেবিল চেয়ার এসি রুম কেন্দ্রীক জব করার প্রবণতা

৬.খ.শুরুতেই বিরাট স্যালারীর প্রত্যাশা

৬.গ.ট্রেনিং শেষ হলেই অন্যত্র জব নিয়ে চলে যাওয়া। মালিকের ইনভেস্টমেন্টকে কোনো প্রতিদান না দিয়ে।

৬.ঘ.যোগ্যতা না বাড়িয়ে শুধু শুধু জব মার্কেটে ভীড় করা।

৬.ঙ.জব মার্কেটের সাথে সামঞ্জস্যহীন বা গতানুগতিক বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করে চাকরীর বাজারে জব খোঁজা। আপনি মনে করুন, পড়াশোনা করেছেন, বিশ্ব ঐতিহ্য নিয়ে। বাংলাদেশের মতো গরীব দেশে ওই বিষয়ের চাকরী কয়টা সৃষ্টি হবে বছরে? সারাদেশে সবাই বিবিএ গ্রাজুয়েট। তার আবার মানের অবস্থা ভয়াবহ।

তো, কখনো হিসাব করেছেন? বছরে কতজন বিবিএ হোল্ডারদের জব সৃষ্টি হয়? আপনি ভুল সাবজেক্টে পড়াশোনা করলে তার দায় তো ব্যবসায়ীদের না। আর ধরেন, দেশে চাকরী আছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের। সেখানে কি আমি একজন জনপ্রশাসনে গ্রাজুয়েশন করাকে নেব?

তাহলে উপায়? উপায় আছে বলেই তো ফ্রেশারদের জব হচ্ছে। সবাই তো তা নাহলে বেকার থাকত।

হচ্ছে বলেই বেকারের সংখ্যা ৭ লক্ষ করে বাড়ছে না। আমরা কীভাবে ম্যানেজ করি জানেন, আমরা তবুও প্রতিবছর কিছু ফ্রেশার নিই। ফ্রেশারদের নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকার পরও, আমার প্রতিষ্ঠানে নানা কারনেই প্রতিবছর গড়ে ২০-৩০ জন নিই। তাদেরকে বিভিন্ন বিভাগে পুলের//কোটার বাইরে নিয়োগ দিই। তারপর তারা রেডি হয়ে গেলে তাদের বিভিন্ন জুনিয়র পজিশনে কাজে লাগাই।

কখনো কখনো এমনও করি, একটি সিনিয়র পোস্ট খালি হলে ভিতর হতে একজন জুনিয়রকে সেই পজিশনে দিই। তারপর একজন ফ্রেশার নিয়ে সেই জুনিয়রের কাজ শিখতে লাগিয়ে দিই। ঠিক এই পদ্ধতিতেই বেশিরভাগ ফ্রেশারদের ভাগ্য সচল থাকে। কিন্তু ভেবে দেখুন, এমন নিবিড় ম্যানেজমেন্ট করা নিশ্চই খুব সহজ কাজ না। আর পুলের অতিরিক্ত লোক প্রতিপালনের ক্ষমতা ও লজিস্টিকস কয়টি প্রতিষ্ঠানের আছে?

তাছাড়া, ফ্রেশার নিয়ে তাকে শেখানোর মতো সক্ষমতাই বা কয়টা প্রতিষ্ঠানের থাকে? যেখানে তাকে প্রতিটি মানুষ হিসাব করে নিতে হয়? একজন ব্যস্ত কর্মী নিজের কাজের ফাঁকে কতটা সময় পাবেন নতুনকে শিখাতে? নিশ্চই এখন আবার বলবেন না, কেন আমরা প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে একটা করে ট্রেনিং সেন্টার রাখি না? ভাই, যারা ব্যবসা করতে নেমেছেন, তারাতো নিজের মতো করে ব্যবসাটা করবেন। আমাদের মতো করে সব করবেন কি?

আমার লেখাটি পড়ে আপনি হয়তো এখুনি কিছু প্রতিউত্তর দিতে বসে গেলেন? কিংবা কিছু রূঢ় উত্তর দিতে, মনে মনে গালি দিচ্ছেন কিংবা কমপক্ষে কিছু ত্যানা কমেন্ট করতে।

তার আগে একই বিষয়ে আপনি আমার আরো কয়েকটি লেখা আগে পড়ে নিন। যেকোনো বিষয়ের আপেক্ষিক কিছু দিক থাকে। আর থাকে একজন লেখক/প্রোফেশনালকে দীর্ঘমেয়াদে বিচার করা। আমার লেখা ও কাজকে সার্বিকভাবে দেখুন। শুধু একটি লেখা পড়েই কোনো এজাম্পশনে চলে আসবেন না। আগে লেখাগুলোও পড়ুন। তারপর আমার পোস্টমর্টেম করুন। কোনো আপত্তি নেই।

[এটা কোনো একাডেমিক রিসার্চমূলক লেখা নয় বিধায় তথ্যগত বিভ্রাট থাকতে পারে।]

পাঠ-৪: ফ্রেশারদের চাকরীর বাজার: কিছু ভ্রান্তি বিলাস ((ক্যারিয়ার কথন-বাংলার প্রকাশন-বইমেলা ২০১৯)

কর্পোরেট জগতে পরিচীতি তৈরী হওয়ার সুবাদে আর এইচআরে কাজ করার সুবাদে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে ইন্টার‌্যাক্ট করার সুযোগ হয়। কখনো ফোনে, কখনো সামনাসামনি, কখনো মেসেঞ্জারে, কখনো ভাইবার বা ফেসবুক ওয়ালে।

কখনো তারা সরাসরি প্রশ্ন বা মন্তব্য করেন কখনো প্রফেশনাল পোষ্টে কমেন্ট করেন। নিজে একজন প্রফেশনাল হবার কারনে লেখালেখির একটা বড় অংশই থাকে ক্যারিয়ার রিলেটেড। মানুষ অবসর সময়ে গান শোনে, সিরিয়াল দেখে, আড্ডা দেয়, আইপিএল দেখে। কেউ কেউ আবার বাসার খাটে শুয়ে নিজের অপত্ত পোলাপানের সাথে রোমশ বুক উন্মুক্ত করে খালি গায়ের সেলফী পোস্ট করে।

আমি নিজের ব্যক্তিগত সময়টাতে লেখালেখি করি কারন ওটাই আমার প্যাশন। ওটা করেই সময় কাটাই। এখন ব্যাক্তিগত সময়ে লেখালেখি করে সেটা আবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোষ্ট করা নিশ্চই গুনাহের কাজ নয়?

চাকরীর বাজারে আমাদের ফ্রেশার ক্যান্ডিডেটরা প্রায়ই মন্তব্য বা অনুযোগ করেন, আমরা ক্যারিয়ার রিলেটেড এত পোষ্ট দিই অথচ তারা একটা সুযোগ পান না, তাদের কাছে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় অথচ প্রথম চান্সটি না পেলে তারা অভিজ্ঞতা কোথায় পাবেন, সব চাকরীতে অভিজ্ঞতা চাইলে তারা কোথায় জব পাবেন ইত্যাদি। আমি তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, বাংলাদেশের যেকোনো সরকারী চাকরীতো বাই ডিফল্ট ফ্রেশারদেরই দেয়া হয়।

আপনারা হয়তো জানেন না, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রতিমাসে হাজার হাজার ফ্রেশার চাকরীতে ঢোকেন। ভাই, সিম্পল ম্যাথ, ফ্রেশার যদি কেউ নাই নিত, তবে প্রতিবছর দেশে বেকারের সংখ্যাটাতো বিন্দুমাত্র কমত না। কেউ না কেউ তো তাদের নিচ্ছে ঠিকই। সমস্যা হল, চাকরীদাতা আর চাকরীপ্রার্থীর মধ্যে ব্যাটে বলে হচ্ছে না।

আর ফ্রেশাররা যে অনুযোগ করেন যে, কোম্পানীগুলো কেন ফ্রেশার নেয়না তার একটা যৌক্তিক উত্তর আছে। ভাইয়েরা, প্রাইভেট কোম্পানীগুলো সরকারের মতো সামাজিক কর্তব্য পালন করতে পারবেন না। সেটা তাদের কাজও না।

তাদের কাজ হল ব্যবসা। সেটা রক্ষা করে তবেই যাবতীয় সামাজিক কর্তব্য। হ্যা, ইস্যু হল, ব্যবসা করার ভিতর দিয়েই তারা সামাজিক দায়ীত্ব পালন করতে পারেন এবং তারা সেটা করছেনও। কী করতে পারেন তারা? উত্তর হল, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে আর সোস্যাল মার্কেটে মানি ফ্লো সৃষ্টি করে। কথা হল, আপনাদের দাবী মোতাবেক যদি কোনো কোম্পানী ফ্রেশার নিয়োগ না দিয়ে থাকে তবে বছরে ৭ লক্ষ ফ্রেশার বেকার সৃষ্টি হত। তাহলে বিগত ৪৫ বছরে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা কত হত? সেই ৭২ সালে যারা ডিগ্রী করেছেন তারা আজও বেকার থাকতেন। আছেন কি তারা?

আর তাছাড়া একজন উদ্যোক্তা তার প্রতিষ্ঠানে কেমন কর্মী নিয়োগ করবেন সেটা তার স্বাধীনতা। ব্যবসার স্বার্থে তার যেমন মানুষ দরকার তেমনই তো নেবেন। তবে কিছু কালপ্রিট আছে যারা ফ্রেশারদের স্বার্থ রক্ষার নামে তাদেরকে বিক্ষুদ্ধ করে তুলছে এই বলে যে, নিয়োগদাতারা ফ্রেশারদের কেন বেশি বেশি নেন না।

বিপ্লবী কথা বলে তারা আপনাদের বিক্ষুদ্ধই শুধু করতে পারবে। বিপ্লব চাইলে পল্টনে যেতে হবে। চাকরী করতে হলে বাস্তববাদী হতে হবে। আসল সমস্যাটা হল, ব্যাটে বলে হচ্ছে না। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান প্রতিমাসে বিরাট সংখ্যায় ফ্রেশার নিয়োগ করেন। আমার নিজের প্রতিষ্ঠানও। হয়তো আপনি সেটার সুযোগ নিতে পারেন না নানা কারনে।

ফ্রেশার সহসা কেন নিতে চায়না প্রাইভেট কোম্পানী সেটা জানেন? আস্থার অভাব আর দক্ষতার অভাব। বিশ্বস্ততার অভাব মানে হল, আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখি ফ্রেশারদের একটা অংশ চাকরীতে ঢোকার পর একটু অভিজ্ঞতা (৬ মাস-১ বছর) হলেই বড় বেতনের হাতছানিতে চলে যান। অযুহাত দেন যে, এখানে ভবিষ্যত নেই, কাজের পরিবেশ নেই, বেতন কম ইত্যাদি। ভাই, আপনি এসব কিছু জেনেই তো ঢুকেছেন তাহলে আজ এ প্রশ্ন কেন?

আর আপনার নিয়োগদাতা আপনাকে ফ্রেশার হওয়া স্বত্বেও নিয়েছেন, তার কৃতজ্ঞতাস্বরুপও তো আপনার একটা দায়বোধ থাকে। নিয়োগদাতা তার পেছনে যে অর্থ, সময়, এনার্জি ও অপর্চুনিটি ইনভেষ্ট করেন তার কিছুমাত্র রিটার্ন (ROI) পাবার আগেই এমনকি ভদ্রতাসূচক রিজাইনটাও না দিয়ে অনেকে চলে যান। কিছু কিছু অবিবেচকের এই কুঅভ্যাসটি বাকিদের জন্য পথটি রুদ্ধ করে দিচ্ছে।

আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেখানে প্রতিটি টাকারই (ROI) হিসেব করে চলতে হয় সেখানে একজন নিয়োগদাতা তো চাইবেনই তার একজন কর্মী প্রথম দিন না হোক, দ্বিতীয় দিন হতে তার টেকনিক্যাল ডিউটি শুরু করুক। তাতে করে তার কাজ জানা অভিজ্ঞ লোক হলেই তো বেটার তাই না? ভেবে দেখুন, চাকরী বাকরী না পেয়ে আপনি একটা কল সেন্টার দিলেন। সেখানে কাদের নিয়োগ দিতে চাইবেন? একদম আনকোড়া নতুন মানুষ যাদেরকে আপনার কাজ শেখাতে হবে নাকি বিনা কষ্টে আপনি কাজ জানা লোক নেবেন? না আমাকে মালিকদের দালাল ভাববেন না। আমি শুধু ভিতরকার রিয়েল চিত্রটা বললাম। আপনি নিয়োগকর্তাদের এই নীতির সাথে দ্বিমত হতে পারেন, রাগ করতে পারেন। তাতে কী এসে যায়? সমস্যার তাতে কি পরিবর্তন হবে।

কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, চাকরী না করলে অভিজ্ঞতা কোথায় পাব?

সংক্ষেপে শেষ করার স্বার্থে বলি, অভিজ্ঞতার জন্য প্রথমেই মাল্টিন্যাশনাল না খুঁজে যেখানে পারেন ঢুকে পড়ুন, সেটা যদি আপনার দৃষ্টিতে থার্ড ক্লাস কোম্পানীও হয়। কাজ শিখুন, অভিজ্ঞতা অর্জন করুন, চ্যালেঞ্জ নিতে শিখুন, কর্পোরেট কালচারে, লোড নিতে অভ্যস্ত হোন। ৩টি বছর যেতে দিন। তারপর অন্যত্র এপ্লাই করুন। যারা বলবেন, সেই থার্ড ক্লাসেও তো ডাক পাচ্ছিনা।

তাদের বলছি, চাকরীর অভিজ্ঞাতা যদি নাও নিতে পারেন তবে আরো কিছু কাজ করে নিজের সিভি ভারি করা সম্ভব যেগুলোকে আমরা মূল্য দিই ইন্টারভিউতে-ফ্রিল্যান্স আউটসোর্স করুন। বলবেন বেকারদের ইন্টারনেট বিল দেবার পয়সা কে দেবে? ভাই, ঢাকার অনেকগুলো স্পটে ফ্রি ওয়াইফাই আছে। ওখানে গিয়ে পড়ে থাকতে তো বলতে পারি না।

তবে আপনি চাইলে নিশ্চই একটা রাস্তা বেরোবে। পত্রিকায় লিখুন, ইন্টার্নশীপ করুন, পার্ট টাইম করুন, এলাকায় একটা ছোট সংগঠন করে যেকোনো ফ্রি কাজ করুন, সোসাল সংগঠনে যুক্ত হোন, কিছু না পারলে যেকোনো সংগঠনে ভলান্টিয়ার হোন, গ্রূপ ফরম করে খরচবিহীন সোস্যাল ওয়ার্ক করুন, পথশিশুদের জন্য ফান্ড রেইজিং বা স্কুল করুন, লো এন্ডের কনজুমার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের মার্কেটিং এর কাজ করুন, ব্লগ লিখুন, ওয়েবসাইট বানানোর কাজ করুন, ডাটা এন্ট্রির কাজ নিন, কোটিং এ ক্লাস নিন।

’ফ্রেশার গ্রাজুয়েট’ বলে আদতেই কিছু নেই।

বিশ্বাস না হলে, আরও একবার বলছি, শুনুন।

আমি মনে করি, ফ্রেশার গ্রাজুয়েট বলে আসলেই কিছু হওয়া সম্ভব না।

কী রকম সেটা?

বয়স যখন ৫, তখন আপনি ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছিলেন। বয়স যখন ২১, তখন ১০+২+৪+১ টি ক্লাস শেষ করে আপনার মাস্টার্স শেষ।

মোট ১৬-১৭ বছর আপনি একাডেমিতে। একাডেমিতে যুক্ত থাকা মানে ওই সময়ে আপনি কমবেশি অসংখ্য ঘটনা, সৃষ্টি, বিনাশ, কার্যক্রম, কর্মসূচী, অভিজ্ঞতা, বাস্তবতা, পরিস্থিতি, দর্শন, শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ, পরীক্ষণ, দায়ীত্ব ও অর্জনের ভিতর দিয়ে গেছেন। একাডেমিক্যালী ও পারসোনালী।

এখন ওই ১৬ টি বছরের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, দক্ষতা, অবদান ও অর্জনকে যদি আপনি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা যেকোনো ধরণের ক্যারিয়ার অপরচুনিটির ডিমান্ড ও রিয়েলিটি বিপরীতে সুচারুভাবে ভ্যালু এ্যাডিশন হিসেবে ট্যাগ ও কানেক্ট করতে পারেন, তাহলে আপনি ফ্রেশার কীভাবে হন?

আপনি ফ্রেশার ছিলেন ক্লাস ওয়ানে ভর্তির সময়। আর কখনো আপনি ফ্রেশার নন। হ্যা, যদি আপনি ওই যে, যেটা বললাম, সেটা করতে সক্ষম হন, তাহলেই। অন্যথায় নয়।

এর পরেও যদি বিষয়টা বুঝতে চান, আমাকে ফোন করবেন। বুঝিয়ে দেব।

এর পরেও যদি বোদ্ধারা বিষয়টার সাথে একমত না হন, ফোন করবেন। কিছুক্ষণ বকবক করব।

হয় আপনি বুঝবেন, না হয় আমি ভুল-সেটি অন্তত বুঝব।

ওয়েল, এরপর কেউ কেউ বলবে, আপনি এত জ্ঞান দিচ্ছেন কারন আপনি এখন সুবিধাজনক স্থানে আছেন তাই। ভাইয়েরা, যে কয়টা বললাম ওর সবকটা নাহোক, বেশিরভাগই আমি বেকার থাকাবস্থায় করে তবেই বলছি। আর এখনো যদি বেকায়দার পড়ি, আমি ঢাকার রাস্তায় বাদাম বেঁচতেও রাজি আছি।

শেষ করছি তিনটি রসকসহীন বাক্য দিয়ে-ইগো বাদ দিন, সিরিয়াস ও কমিটেড হোন, তুচ্ছাতিতুচ্ছ সুযোগও কাজে লাগান। আর হ্যা, নিজের যোগ্যতার সবগুলো তীর প্রস্তুত রাখুন।

পুনশ্চ: আমি নিজে খুব বড় মাপের প্রফেশনাল বা ক্যারিয়ার এডভাইজার নই। তবু নতুনদের সাহায্যার্থে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে চাই। ক্যারিয়ার সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্ন, যেকোনো পরামর্শ, জিজ্ঞাসা, তথ্যসাহায্য আমাকে লিখতে পারেন। আমি সবজান্তা না হতে পারি তবে বেশকিছু এক্সপার্ট বন্ধু আছেন আমার।

তাদের সাথে আপনাদের ট্যাগতো করে দিতে পারব। সরাসরি আমাকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে লিখুন।

সবশেষে একটা সেল্ফ টেস্টিমনি দিই? সমাজ সেবার জন্য কিংবা সোস্যাল/কর্পোরেট ডেভেলপমেন্টের জন্য অনেকেই অনেক কিছু করেন। জরুরী নয় যে আপনি যেটা করছেন আমাকে সেটাই করতে পারতে হবে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই ইন্ট্রোভার্ট মানুষ। আর পেশাগত উন্নয়ন কিংবা বেকারদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা আছে কিন্তু সামর্থ সীমিত। অন্যদের মতো অনেক কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই নানা কারনে।

আমার একটাই যোগ্যতা সেটা হল লেখালেখি। আমার শুভাকাঙ্খি ও সমাজসেবারত ভাইয়েরা, আমি এই এতটুুকুই পারি-নিজের অভিজ্ঞতাকে লিখে শেয়ার করতে। আমি জানি আপনি অনেক কিছুই করছেন সমাজের জন্য। আমি যাস্ট আপনাকে হেল্প করছি। কারন আমার সাধ্য এতটুকুই। আমি আমার নিজ কর্মস্থলে কতটুকু আধুনিকায়ন করতে পেরেছি

(এত যে বকবক করি তাই কেউ কেউ জানতে চান, তাদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা) তার উত্তরে বলব, আমরা যাস্ট চাকরী করি। চাকরীস্থলের উন্নয়ন শুধু আমার একার স্বপ্ন মোতাবেক তো হবে না। আমি যা চাই সব নিশ্চই সে রকম হবে না। টপ ম্যানেজমেন্টের ভিশনই ওখানে শেষ কথা।

পাঠ-৫: যোগ্যতা, দক্ষতা ও চাকরির বাজারের প্যারাডক্স

আমাদের জব মার্কেটের সদস্যদের যোগ্যতা, যোগ্যতা বৃদ্ধির পদ্ধতিগত ও তাত্ত্বিক ধারনা এবং চাকরির বাজারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমার কিছু লেখা একত্রে একস্থানে দিলাম। প্রতিটিই প্রতিটির সাথে সংযুক্ত বিধায় একত্রে করে রাখলাম। যারা বিষয়গুলো নিয়ে পড়তে বা জানতে আগ্রহী, তারা পড়ে দেখতে পারেন।

নবীণ কিংবা ফ্রেশারদেরকে নানা বিদ্যায় ঘাঘু হতে, experience রপ্ত করতে, নানা ধরনের স্মার্টনেস হাসিল করতে আমরা উপদেশ দিই।

তাদের নানা অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলি ঠিকই। কিন্তু আজ একটি অন্য দিক দেখাই।

বাজারে থাকা ৪.৮ কোটি বেকারের আনুমানিক ৮০% ই গ্রাম বা মফস্বল হতে পড়াশোনা করে আসা, অন্তত ভিত্তিটুকু তো অবশ্যই।

৪.৮ কোটির আনুমানিক ৮০% ই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন সরকারী কলেজে মফস্বলে বা গ্রামে থেকে স্নাতক করা। আপনি কি জানেন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের কী শেখানো হয়? কতটা হয়?

গ্রাম ও মফস্বলের কলেজগুলোতে সারা বছরে কতগুলো ক্লাস হয়? শহরেই বা কতটা হয়?গ্রাম ও মফস্বলের, এমনকি বড় বড় শহরের কলেজগুলোতে কতজন ও কোন লেভেলের যোগ্য ও যুগোপযোগী শিক্ষকবৃন্দ আছেন?

ভুরুঙ্গামারীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একজন শিক্ষককে আপডেট রাখার কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যে তিনি আবার তার ছাত্রদেরকে চলমান যুগের উপযোগী করে চাকরি বা ব্যবসার জন্য তৈরী করবেন? ঢাকার চিপাগলিতে থাকা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঠিক কী পড়াশোনা হয়?

আমরা, কর্পোরেটরা যে ধরনের যোগ্যতার মানুষ খুঁজছি, সেটা দেশের কোর্স, কারিক্যুলাম, সিলেবাস, প্রোগ্রাম প্লান, ক্লাস, পরীক্ষা, মূল্যায়ন সিস্টেমে কতটা কভার করা আছে? মূলত ঢাকা কেন্দ্রীক দেশের একমাত্র চাকরীর বাজারে প্রতিদিন, প্রতি ঘন্টায় যে পরিবর্তন আসছে, এখানকার বাস্তবতা কী, এখানে চাকরি পেতে গেলে কীভাবে সুপারম্যান হয়ে উঠতে হচ্ছে-তার ঢেউ গ্রামে, মফস্বলে পৌছাবার কোনো নেটওয়ার্ক তৈরী হয়েছে কি? হয়নি।

খোদ ঢাকা শহরেই কি সবাই, সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো ভাবনা চিন্তায় আছে? বেচারারা না শেখে তাদের একাডেমিক বিষয়, না করে ক্লাস, না আছে পরীক্ষার কোনো স্টান্ডার্ড, না আছে শেখার, জানার কোনো সিনক্রোনাইজড ব্যবস্থা, না আছে কর্পোরেটের সাথে কোনো ইনটার‌্যাকশন। ফেসবুক আসায় আমরা মনে করছি, গোটা বাংলাদেশ বোধহয় কানেক্টেড হয়ে গেল।

আমরা ফেসবুকে দেখে মনে করছি, বাহ, সারাদেশে একটা বিরাট ঢেউ লেগেছে, ট্রেনিং, দক্ষতা, যোগ্যতা, প্রস্তুতিতে। আসলে গোটাটাই লবডঙ্কা। ফেসবুক কেন্দ্রীক গ্রূমিং, কোচিং, হাজার হাজার কী নোট স্পিকারের গ্ল্যামারাস বক্তৃতা, ফেসবুক লাইভ, রেডিও শো, জব ফেয়ার-এই সব কিছুই বড্ড বেশি ঢাকা কেন্দ্রীক।

আমাদের সব রকম আন্তরিক কিংবা ধান্দাবাজি গ্রূমিং ইনিশিয়েটিভের ৯৯% ই ঢাকা কেন্দ্রীক। এমনকি চট্টগ্রামও এই ক্ষেত্রে সেই মফস্বলের মতোই পিছিয়ে।

তার ভিতরে আবার নতুন মড়ক-চাকরী করতে করতে পার্টটাইম টাইপের ডিগ্রী দেয়া। ক্লাস করতে হয় না, কোনো টিউটোরিয়াল নেই, কোনো মিড কোর্স এক্সাম নেই, কোনো টার্ম পেপারের বালাই নেই। ক্লাস না করে শিক্ষার্থীরা এমনকি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রীও নিয়ে নিচ্ছে।

(আমি নিজে ক্লাস ৯ হতে মাস্টার্স-ক্লাস বলতে গেলে ১% করেছি। এখনও হাত কামড়াই সেজন্য। ভাল করে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, গ্রামে গঞ্জে গড়ে ওঠা ধান্দাবাজ মেডিক্যালগুলোতে ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব, প্রাকটিক্যাল না করলেও আজকাল চলে।

দুয়েকটা লেখাতে পড়েছি এমনটা।

তো, একজন এইচএসসি পাশ ছাত্র কোনো ক্লাস না করেও, কোনো শিক্ষকের সহায়তা ছাড়াই ফিজিক্সের মতো বিষয়, এনথ্রোপলজির মতো জটিল ধারনা, ম্যাথের মতো কঠোর বিষয়ও পাশ করে ফেলছে-সে কি তবে সুপারম্যান?

এই যখন অবস্থা, তখন বাজারে আমরা যোগ্য লোক খুঁজতে গলদঘর্ম হতেই থাকব, আর বেকাররা স্যান্ডেলের তলা আর ফেসবুকের এমবি-দুটোই খোয়াতে থাকবে। কাজের কাজ কিচ্ছু হবে না। বেচারাদের কিছু বলতেও পারি না।

তাদের এককভাবে কীই বা করার আছে? তারা এই দেশের সবচেয়ে সুবিধাবাদী শহর ঢাকার অভিশাপের কাছে বন্দী।

#experience #career #fresher #grooming #qualification #competency #interview #coaching #education

চাকরির বিজ্ঞাপন দিলেই নাকি আমরা খালি অভিজ্ঞতা অভিজ্ঞতা করি। অভিজ্ঞতা কী? স্রেফ চাকরিতে থাকার বয়স?

আজকে অভিজ্ঞতার অন্য একটা দিক নিয়ে বলি।প্রতিদিন যতগুলো চাকরির সাক্ষাতকার নিই, তার একটা খুব নিয়মিত প্রশ্ন থাকে, “আপনি চাকরিটি বদল করতে চান কেন?”

[যদিও আধুনিক এইচআরে এই প্রশ্ন অত্যন্ত অবান্তর, তবুও বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বিবেচনায় আজও করি।]

শতকরা ৯৯ জন লোকই আমরা যেটা বুঝে নিতে চাই, সেটির ধারে কাছে দিয়েও যান না। যাহোক, বেশিরভাগই জবাব দেন, কর্মজীবনের (ক্যারিয়ারের) উন্নতির জন্য চাকরি বদল করবেন। তাদের আবার যখন বলি, ক্যারিয়ার কী-বলুন তো। বলতে ব্যর্থ হন।

কারন হল, ক্যারিয়ার মানেই আমরা বুঝি টাকা আর বুড়ো বয়সের ফ্ল্যাট। ক্যারিয়ারের উন্নতি করা বলতে কী বোঝেন-এটা যখন জিজ্ঞেস করি, তখনও সঠিক উত্তর পাই না। একটি বড় সংখ্যক প্রার্থীকেই আমরা পাই, যারা কেন কী করছেন, কেন কী করতে চান-সেটি নিয়ে নিজেও পরিষ্কার না।

একটি অভিজ্ঞতা বলি। একদিন কাছাকাছি সময়ে একজন নবীন পেশাজীবি আর আরেকজন ৩০ বছরের অভিজ্ঞ পেশাজীবির ইন্টারভিউ নিতে বোর্ড নিয়ে বসেছি। নবীনকে জিজ্ঞেস করি, “কেন বদল করবেন চাকরি?”।

”স্যার, ভাল ক্যারিয়ারের জন্য।” তা বর্তমান ক্যারিয়ার হতে আরো ভাল কিছুতে যাবার জন্য কী কী প্রস্তুতি বা নিজের কী কী উন্নতি করেছেন? উত্তর নেই। জেষ্ঠ্য পেশাজীবির সাথে আমরা কথা বলি প্রায় ১ ঘন্টা।

এই একটি ঘন্টায় আমাদের হতাশায় ডোবানোসহ অন্যান্য অভিজ্ঞতা দানের পাশাপাশি যেটা তিনি আমাদের জানতে দিলেন, তা হল, ক্যারিয়ার উন্নতি বলতে তিনি সেই শুরু হতেই ওই নবীনের আজকের কাজটিই করে এসেছেন। তা হল, চাকরি বদল আর বেতন/পদবী উন্নত করে নেয়া। সাথে স্রেফ আর কিছুই না। চাকরি বদলাও আর বেতন/পদবী বাড়াও। এভাবে কেটেছে ৩০ বছর।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য গেছেন। প্রায় সবক্ষেত্রেই নামকাওয়াস্তে, কোথাও তার হতেও অযোগ্য ইন্টারভিউয়ারের হাতে, কখনো স্রেফ কেমন আছেন, কোথায় আছেন, কত চান-এসব প্রশ্নের ভিতর দিয়ে চাকরি হয়ে গেছে আরো ভাল পজিশনে। আর একটা বড় সংখ্যক স্থানেই তিনি লাফাতে পেরেছেন ঘন ঘন স্রেফ “ও, অমুক ভাই পাঠিয়েছে না?

তাহলে তো আর কথাই নেই।

কবে জয়েন করবেন?” এই প্রশ্নই ছিল তার একমাত্র প্রশ্ন।

বিরাট সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ নামের স্রেফ তামাশা হতে দেখেছি। ফলাফল?আজ যা দেখছি। আমরা বছরের পর বছর ক্যারিয়ার উন্নত করি। খোলস বদলানোর মতো করে পদ, পদবী, কোম্পানী, বেতন, গাড়ি, বিদেশ সব হাসিল করতে রূপটা বদলাই। কোম্পানীর দেয়া গাড়িতে করে বড় বড় সভায় সভ্য হিসেবে যোগ দিই, ফেসবুকে চেকিন দিলে হাজার হাজার লাইক।

আমি আপ্লূত হয়ে আরো দ্বিগুন উৎসাহে নতুন নতুন প্রমোশনের খোলস খুঁজি। বিভিন্ন বড়ভাই, মামা ও সংগঠনের লেজুড় ধরে ধরে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠি। তারপর কর্মজীবন ৩০ বছর হবার পরে দেখি, তার শুধু খোলসটাই বদলেছে। তার এই ৩০ বছরে নিজের কোনো উন্নতি হয়নি। না ভিতর হতে, না বাইরে হতে। বরং দিন দিন শুধু নেমেছেন।

কীভাবে?

আপনি যদি একটি চলমান ম্যারাথনে না পিছিয়েও শুধু দাড়িয়ে থাকেন, একসময় দেখবেন, আপনি বাদে সবাই সামনে চলে গেছে। আপনি না পিছিয়েও পিছিয়ে গেলেন। এই ই হচ্ছে। আমরা দিনকে দিন অভিজ্ঞ হচ্ছি। কিন্তু শানিত ও সমৃদ্ধ হচ্ছি না। দিন দিন সিভি ভারী করছি। কিন্তু নিজের জ্ঞান, বুদ্ধি, সক্ষমতা ও দক্ষতার ঝুলি ভারী করছি না। ঝানু অভিজ্ঞকেও আমরা পাই, নিজে যা করছেন, সেটিকেই ব্যখ্যা করতে পারেন না।

শুধু জেষ্ঠ্য হয়েছেন, টীম কাজ করে আার আমি শুধু বিল ও চালান সই করে কারখানা চালাই, কোথাও কোনো ইস্যূ নেই, অডিট পাশ হয়ে যায়, শিপমেন্ট চালু থাকে, ব্যাস, তার মানে দারুন চালাচ্ছি। মালিকও ভাবেন, বাহ, দারুন চলছে-এটা আমার জন্য আসলে আত্মঘাতি হবে।

যে যেখানে যেই পজিশনেই আছেন না কেন, আমার একটি ব্যক্তিগত অনুরোধ, যেই স্টেজেই থাকুন, যেই জবে আছেন, সেটার আদ্যোপান্ত খুব ভাল করে রপ্ত করে নিন। অন বা অফলাইনে নতুন কিছু সারাক্ষণ শিখতে থাকুন।

মনে রাখতে হবে, চাকরি করে গেলেই অভিজ্ঞ হয় না। দক্ষ তো নয়ই। নিজেকে প্রতিদিন একটু করে হলেও উপরে তুলুন। যাতে করে, প্রতিদিনই কেউ না কেউ তার প্রতিষ্ঠানে আপনাকে পেতে চাইবার হাজারটা কারন খুঁজে পায়। বা যাতে করে, আপনি আপনার নিজ প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন আর সেই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আপনাকে দেখে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আপনার সেবা নেবার হাজারটা যুক্তি খুঁজে পায়।

তবে হ্যা, কিচ্ছু না জেনেও এদেশে কনসালট্যান্সি করা যায়। দিব্যি। সে পথে হেঁটে দেখতে পারেন। তবে যখন, কনসালট্যান্সী দিতে গিয়ে অল্পবয়সী চ্যাংড়া ছেলেমেয়েদের কাছে নাকানি চুবানী খাবেন, তখন নাক থাকবে না। বাজারে কিন্তু ঝানু তরুণরাও আজকাল প্রফেশনে প্রচুর আছেন।

অতিসম্প্রতি ফেসবুকে একটা নিউজ ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আমাদের তথাকথিত জিপিএ-৫ ধারীদের সত্যিকারের অবস্থাটা সবাই এতদিন বলাবলি করত, ফিসফিস করত, চুপচাপ কানাকানি করত, অনেকে আমতা আমতা করে পাশ কাটাতো।

এইবার এই সাংবাদিক একবারে লুঙ্গী টান মেরে খুলে জিপিএ-৫ এর দোদুল্যমান সতিত্ব একবারে ঘুঁচিয়ে দিয়েছে। একজন মহান বুদ্ধিজীবি সাংবাদিক আবার বলেছেন, এরকম সাংবাদিকতা নৈতিকতা বিরোধী, এরকম তাদের চেহারা দেখানো ঠিক হয়নি, প্রশ্নগুলি যথাযথ নয়, এসব প্রশ্ন না পারা মানেই তারা লেখাপড়া করেনি-তা ঠিক নয় ইত্যাদি ইত্যাদি।

সেই পুরোনো গল্পের মতো যেখানে নিম্ন বংশীয় চকিদার উচ্চবংশীয় চোরের কলার পাকড়ে ধরে ফেললে পরে সেই চকিদারের শাস্তি হয় যথেষ্ট তমিজের সাথে চোরকে না ধরার অপরাধে।

যাহোক সাংবাদিকতার মান আমার ভাবনার বিষয় নয়। দেশের শিক্ষার মান কেমন-সেটা বলার আমি কেউ নই। আমি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা বা পর্যালোচনা কোনটাই করব না। সেটা বিশেষজ্ঞদের কাজ। আমার এই ভিডিও দেখে আলোড়িত হবার কারণ ভিন্ন।

অনেক দিন আগে একজন তথাকথিত উচ্চ ডিগ্রিধারী গবেটকে নিবিড়ভাবে যথানিয়মে মেধাযাচাই করে তার অন্তঃসারশুন্যতা অনুধাবন করে অতঃপর তাকে অধঃস্তন একটা পদে নিয়োগ করায় তখন আমার এইচ আরে দক্ষতা, আমার মেধা, আন্তরিকতা, উজবুকতা, বুদ্ধিবৃত্তির জোর, আমার সার্বিক বিচক্ষণতা-এসব নিয়ে ব্যপক প্রশ্নের মুখে পড়ি।

ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী একজন বিজ্ঞ লোককে নিম্নশ্রেনীর পদে নিয়োগ করাটাই ছিল এতকিছুর কারন। তিনি সার্টিফিকেটধারী ইঞ্জিনিয়ার-এটাই ছিল তার একমাত্র যোগ্যতা আর আমার একমাত্র ভুল। এমনকি আমিও আমার যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের মধ্যে পড়ি যে সত্যিই আমি উজবুক কিনা।

সাম্প্রতিক জিপিএ-৫ দের নিয়ে নিউজ ভিডিওটি দেখে আমার সেই ক্ষতে এবার একটু হলেও মলম লেগেছে। আর আমি কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস পেলাম যে, না আমি হয়তো ভুল ছিলাম না। সার্টিফিকেট মানেই শিক্ষিত নয়।

নিজেদের একটু নিন্দা করি। এক দশকের মতো হল গার্মেন্টস এইচআর, কোম্পানী এ্যাডমিনিসট্রেশন আর কমপ্লায়েন্স নিয়ে কাজ করি। কোম্পানীর দরকারে প্রতিদিন আমার টীমের কর্মীরা কাতারে কাতারে প্রার্থীদের ইন্টারভিউ করে।

তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই কী যে ভয়ঙ্কর যোগ্যতা! ইন্টারভিউয়ার অফিসার নিজের চুল ছিড়তে পারলে ছিড়ে ফেলত।

আমাদের দুর্ভাগ্য যে এই ট্রেডে দেশের প্রথম সারির মেধারা এখনো কাতারে কাতারে চাকরীর জন্য আসে না। তবে আজ ওসব প্রার্থীদের নিয়ে নয়, ইন্টারভিউয়ার অর্থাৎ এইচআর এর অবস্থা নিয়ে বলব।

বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টস এইচআর-এ্যাডমিন কর্মী (অফিসার হতে ম্যানেজার, এমনকি জিএম পর্যন্ত) ইন্টারভিউ করার সুযোগ (অথবা বলব দুর্যোগ) হয়েছে অনেকবার। (কিছু ব্যতিক্রম বাদে) পিওর এইচআর কিংবা মিক্সড এইচআর এ্যাডমিন কর্মীদের সার্বিক যোগ্যতার বহর দেখে বহুবার ভিড়মি খেয়েছি।

কি ইংরেজি, কি অন্যান্য যোগ্যতা, কি প্রফেশনাল নলেজ, কিংবা স্মার্টনেস-ভয়াবহ অবস্থা। এদের মধ্যে জিএম লেভেলও আছে। ইন্টারভিউ করা ছাড়াও নানান উপলক্ষ্যে নানান মিডিয়ামে টপ লেভেল, বটম লেভেল-নানা পর্যায়ের পিওর এইচআর কিংবা মিক্সড এইচআর এ্যাডমিন কর্মীদের (কিছু ব্যতিক্রম বাদে) যোগ্যতার ভয়াবহ করুন অবস্থা দর্শন করার দুর্ভাগ্য মাঝেমধ্যেই হয়।

এমনও দেখেছি নামকরা কোম্পানী যার নাম দেখে এক কথায় সবাই চেনে-সেখানকার এইচআর বা এ্যাডমিনকে ডেকেছি ইন্টারভিউ করতে বা অন্য কোনো ছুরতে কথা হয়েছে, ইন্টার্যাক্ট হয়েছে কিংবা তার কর্মকান্ড দশ্যনের দুর্ভাগ্য হয়েছে, তেনার যোগ্যতার বহর তথৈবচ। দুর্ভাগ্য হল তেনারাই আবার কোম্পানীর হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য নির্ধারন, ভাগ্য নির্মান, ভাগ্য বদল, যোগ্যতা নির্ণয়, যোগ্যতার মূল্যায়নের মহান দায়ীত্বে আছেন।

ওনাদের প্রজাদের অর্থাৎ কর্মীদের জন্য সমবেদনা বোধ করি। (দয়া করে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। ইন জেনারেল সবার কথা এটা নয়। আর সবাই এক নয়। কঠিন যোগ্য লোকও আছেন যাদের আশির্বাদ পাবার সৌভাগ্যও হয়েছে।)

আমার এইচআর ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ আমি ফেস করেছি, তা হল, যোগ্য কর্মী নিয়োগ করা ও প্রার্থীর যোগ্যতা নিরূপন ও তার পদ্ধতি নির্ধারন। আমি আমার এইচআর জীবনে অসংখ্য সুহৃদের কাছ থেকে এই অপমান/দুর্নাম/বকা/চোখ রাঙানী/ভর্ৎসনা সহ্য করেছি। যার কারন ছিল:-

একজন ইঞ্জিনিয়ার, একজন এমবিএ, একজন মাস্টার্স কিংবা একজন গ্রাজুয়েট ডিগ্রীধারি হওয়া স্বত্বেও ক্যান্ডিডেটের সত্যিকারের যোগ্যতা যাঁচাই করার চেষ্টা, তার রেজাল্ট দেখেই তাকে চাকরী না দিয়ে দেয়া, উচ্চ ডিগ্রীর সার্টিফিকেট থাকা স্বত্ত্বেও কারো কারো ইন্টারভিউতে অযোগ্য প্রমানিত হওয়া, মাস্টার্স হোল্ডার হওয়া মাত্র কেন বিনা বাক্যব্যয়ে চাকরীতে বহাল করি না, ফার্স্ট ক্লাস রেজাল্ট থাকলেও সে অযোগ্য হয়েছে-এমন ঘটনা ঘটা ইত্যাদি।

ফার্স্ট ক্লাস মাস্টার্স হোল্ডার যখন ইন্টারভিউতে ১০০ তে ২০ পেয়েছে, উল্টো ইন্টারভিউইং প্রক্রিয়ার মান ও ইন্টারভিউয়ারের যোগ্যতা ও সততা নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে বহুবার। কিন্তু ডিফেন্ড করতে পারতাম না। কারন এইচআর প্রক্রিয়াটি কাউকে বোঝানো এতটা সহজ না। কেউ বুঝতেও চায় বলে মনে হয় না। আমিই ছাই এই একযুগ পরে সব বুঝি নাকি?

সেখানে নন-এইচআর কাউকে বোঝানো তো আরো কঠিন। বিশেষত মনমতো প্রার্থীর চাকরী না হলে এমনিতেই পাবলিক ক্ষেপে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি এসে কিছু কিছু নিরপেক্ষ তদন্ত, প্রতিবেদন, অনুসন্ধান আমাকে কিছুটা হলেও তৃপ্তি, আত্মবিশ্বাস ও যুদ্ধের রসদ এনে দিচ্ছে। এর আগে জিপিএ-৫ নিয়ে একটা প্রতিবেদন ভাইরাল হয়েছিল।

আমাদের উচ্চ রেজাল্টধারীদের তথাকথিত বিদ্যার বহর নিয়ে আমরা দেখেছিলাম। আমার বন্ধু মাযহার মিলন ও তার টীমের মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত অনুসন্ধান অনুষ্ঠানটি ইদানিং আমাকে খুব শান্তি দিচ্ছে। মনে চায়, ওইসব সমালোচকদের এবার প্রত্যেকটা এপিসোড বসিয়ে দেখাই। বুঝুক তারা,

কেন শুধু সার্টিফিকেট থাকলেই তাকে যোগ্য প্রার্থী বলা যাবে না। দেখুন ভিডিওতে। কীভাবে দেশে ভাল রেজাল্ট পয়দা হয়। হ্যা, সবাই না।

জেনারেলাইজ করবেন না।

এইচআর ইন্টারভিউয়ে একজন ইঞ্জিনিয়ার প্রার্থীকে ইংরেজি অনুবাদ করতে দেয়া হয়েছিল: পরীক্ষায় ভাল ফল হলে আমি তোমাকে খাওয়াবো।

তিনি বললেন এতো কঠিন অনুবাদ তিনি কখনো শুনেন নাই। বাক্যটি সহজ করে দেয়া হল:

আমি তোমাকে খাওয়াবো। তিনি উত্তর দিলেন: I shall eat you.

সমস্যা হল তিনি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। প্রশ্ন হতে পারে আমি হতাশা ছড়াচ্ছি কিনা কিংবা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ করছি কিনা।

না, আমি হতাশা ছড়াচ্ছি না, আমি খুবই আশাবাদী। কারন এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা! আর গোপনীয়তা ভঙ্গ করছি না কারন তার নাম বা বিশ্বঃ নাম বলছি না।

শেয়ার করলাম শুধু একদল জ্ঞানপাপীর একটি ভুল ধারনাকে প্রতিরোধ করতে যারা ভাবেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বা এমবিএ মানেই কোয়ালিফাইড ক্যান্ডিডেট আর

এসব জ্ঞানপাপী এইচআরকে মনে করে চাকরী দেবার কেরানি।

তো আমার একজন সিনিয়র বুদ্ধি দিলেন দেশের শিক্ষার মানের সার্বিক অবস্থার অবনতির সাথে মিলে রেখে আমরা পাশ মার্ক কমিয়ে দিয়ে বা প্রশ্ন আরো সহজ করে প্রার্থীদের কোয়ালিফাইড দেখাতে পারি যেমন: জানতে চাইতে পারি-

”আমি পারি না”-এর ইংরেজি কী? আমি বিশ্বাস করতে চাই তিনি এটা ইয়ার্কি করেই বলেছেন।

কিন্তু সমস্যা হল, আমাদের গার্মেন্টস ট্রেডের সমস্ত স্ট্যান্ডার্ড ফরেন বায়ারের চাহিদানুযায়ী হতে বাধ্য আর তাদের দেশের স্ট্যান্ডার্ডতো ডাউন হয়নি। তারাতো সব হাই স্ট্যান্ডার্ডেই সার্ভিস চাইবে।

তো তাদের হাই স্ট্যান্ডার্ডের সেই কাজ আমাদের মিথ্যাকারের হাই স্ট্যান্ডার্ড (সত্যিকারের লো স্ট্যান্ডার্ড) লোকেরা কী করে করবে? এদের হাতে প্রাইভেট সেক্টরের চেহারা কী দাড়াবে?

আর ধরুন, ডাক্তারী পড়াশোনা অনেক কঠিন বিধায় পোলাপান ফেল করতে শুরু করল আর আমরা তাই বাস্তবতা মেনে নিয়ে ডাক্তারী পড়াশোনা একদম পানির মতো করে দিলাম।

তো তাতে পাশ করা ডাক্তার তো বাড়বে দেশে। কিন্তু সেই ব্যাচের ডাক্তারদের কাছে হার্টের বা আরো স্পর্শকাতর অঙ্গের সার্জারি করাবেন তো?

”এইচআরে সিভি দিলে চাকরী দেয়না” এমন একটা কমোন আক্ষেপ অনেকেরই থাকে।

কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন কেন চাকরী হয়না?

একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী পাবার জন্য মিনিমাম যোগ্যতা যা আমরা চাই প্রার্থীর কাছে: ইংরেজিতে দক্ষতা (average),

কম্পিউটার জ্ঞান, মোটামুটি আইকিউ, সামান্য হিসাব নিকাশ জানা, চলমান জগত সম্পর্কে হালকা খোজ খবর রাখা, স্মার্ট এক্সপোজার।

এতটুকু যোগ্যতা না থাকলে তাকে চাকরী দেয়া সম্ভব কিনা আপনিই বলুন। আর এতটুকু যদি না থাকে তাহলে তাকে দিয়ে কোম্পানী কি কাজ করাবে?

আজকাল অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা চাকরী পাবার জন্য যতটা উদগ্রীব তার সিকিভাগও যদি চাকরীর যোগ্যতা বাড়াবার জন্য হত তবে তাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারত না। লেটস থিংক লজিক্যালি।

আমাদের অনেকেরই ভুল ধারনা আছে, ”মাস্টার্স” পাস বা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ ক্যান্ডিডেট মানেই অবশ্যই কোয়ালিফাইড চাকরীপ্রার্থী এবং ভাল কোনো অফিসার র্যাংকে চাকরী পাবার যোগ্য।

তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি: ”মাস্টার্স” করা চাকরীর যোগ্যতার একটি প্রাথমিক যোগ্যতা যা তাকে প্রাথমিকভাবে আবেদন করার উপযুক্ততা দান করে। ভাল কোম্পানীর এইচআর হলে এর পাশাপাশি তার তিনটি দিক বিবেচনায় নিয়ে তার উপযুক্ততা বিচার করে:

১.একাডেমিকস মানে লেখাপড়ার রেজাল্ট, ভাষাগত দক্ষতা, করেসপনডেন্স স্কিল, লেখার ক্ষমতা ইত্যাদি।

২.ফিজিক্যাল ও মেন্টাল ফিটনেস এবং সার্বিক এক্সপোজার

৩.বুদ্ধিমত্তা, এপিয়ারেন্স, এটিচুড, স্মার্টনেস, তাৎক্ষনিক বুদ্ধি, ব্যবহার ইত্যাদি।

এই তিনটি স্কেলে যোগ্য বিবেচিত হলেই তবেই তাকে অফিসার র্যাংকে চাকরীর জন্য তাকে বিবেচনা করা উচিৎ। বলতে পারেন গার্মেন্টসে এত দেখলে চলে না। ওকে, তাহলে গার্মেন্টসে খুব বেশি ভাল প্রতিদান, ভাল কাজ, ভাল পরিবেশ, কোয়ালিটি সার্ভিস, বছর বছর কোম্পানীর উন্নতি, এ্যওয়ার্ড প্রাপ্তি, সুন্দর সুন্দর মেডেল-এসব আশা করা যাবে না।

পাশ-এই একটিমাত্র গুনকে যারা যোগ্যতা বলে মনে করেন তারা একটু খোঁজ নিন চারপাশে। একটা বিশাল সংখ্যক ”মাস্টার্স” পাশদের কী ভয়ঙ্কর দুর্বল অবস্থা। একেকজন মাস্টার্স পাশের ইন্টারভিউ নিলে শিউরে উঠতে হয়। এরকম মাস্টার্স নিলে কোম্পানীর লালবাতি জ্বলতে সময় লাগবে না।

নামকাওয়াস্তে ডিগ্রী থাকাটাকেই যারা যোগ্যতার মাপকাঠি ভাবেন তাদের জন্য উৎসর্গীকৃত!! একজন ফিন্যান্সে এম বি এ করা চাকরিপ্রার্থীকে সম্প্রতি ইন্টারভিউ করার সুযোগ হয়েছিল। ক্লাস ফোরের স্ট্যান্ডার্ডের (5.3 X 2 =?) এধরনের বেশ কয়েকটি গানিতিক সমস্যার কোনটিই তিনি দীর্ঘ সময় নিয়েও সমাধান করতে পারেননি। কথা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হল YOUNGER ও YOUNGEST এর তফাৎ কি। উত্তর আসল YOUNGER হল পুরুষবাচক শব্দ ও YOUNGEST হল স্ত্রীবাচক শব্দ। হায় সেলুকাস!!

এইচআরে কাজের সুবাদে আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এইচআর প্রাকটিস, এইচআর সিস্টেম আর অসংখ্য প্রোফেশনালের সাথে পরিচয় হয়ে যায়। তার সুবাদে নানারকম ইন্টারেস্টিং বা ডিসগাসটিং তথ্য জানার দুর্ভাগ্য হয়।

তারই একটা বলছি। বাংলাদেশের মধ্যম সারির এমনকি হাই প্রোফাইল অনেক এমএনসি ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড এইচআর বলতে সত্যিকার অর্থে কিছু নেই।

তারপরও যতটুকু আছে, সেটার বদৌলতে বা না থাকাগুলোতে ট্যালেন্টেড মানুষ নিয়োগে তাদের এক হাস্যকর প্রাকটিস আছে। একটা বড় সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বোর্ডে থাকেন নন-এইচআর মানুষেরা যারা নিজেরাই জানে না, কিভাবে ইন্টারভিউ করতে হয়, কিভাবে ট্যালেন্টদের প্রতিষ্ঠানে ইনকর্পোরেট করতে হয়।

ইন্টারভিউ হয় ডাক্তারের। তারা প্রশ্ন করে, “বলতে পারেন, ডক্টরেট ডিগ্রী কী?”-এই টাইপের। এলেবেলে প্রশ্ন করে প্রার্থীকে বিদায় করে। তারপর তাকে বাতিল করে এই বলে,

“ক্যান্ডিডেট স্মার্ট ও শার্প না।”

এইসব বোদ্ধা ইন্টারভিউয়ারের জন্য বড় সংখ্যক প্রতিষ্ঠান যোগ্য ও ট্যালেন্টেড কর্মী একুইজিশন হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

আবার এইচআর আছে। তারা ইন্টারভিউও করেন। দেখা গেছে ইন্টারভিউয়ারের চেয়ে প্রার্থী বেশি কোয়ালিফাইড। ফলে ইন্টারভিউয়ার কাজের প্রশ্ন না করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সময়ক্ষেপনমূলক সংগীতের মতো করে প্রশ্ন করেন।

ফলাফল: ক্যান্ডিডেট বেশি ওভারস্মার্ট।

(বিঃদ্রঃ কখনো জেনারেলাইজ করবেন না। সবাই অবশ্যই এক না। আর আমি নিজেকে খুব একটা কাবেল মনে করিনা। আমি নিজেও শেখার চেষ্টা করছি ওইসব ভুল হতে। তাই অন্যদের জন্য শেয়ার করি।)

কেউ কেউ জানতে চান, চাকরীপ্রার্থীদের সিরিয়াসনেস বলতে আমরা কর্পোরেটরা কী মীন করি?

ওয়েল, একজন প্রার্থী কারো কাছ হতে রেফারেন্স নিয়ে সিভি জমা দিতে এসেছেন সরাসরি এইচআরের ডিরেক্টরের কাছে , পায়ে রূপসা চপ্পল, গায়ে মেটালিকার ছাপ্পাওয়ালা টি-শার্ট, মুখে অবিন্যস্ত দাড়ি, কব্জিতে ৮ টা রাবারের রঙিন ব্রেসলেট। চুইঙ্গাম চিবাতে চিবাতে ডিরেক্টরের সাথে দেখা করলেন।

ডিরেক্টর তাকে ওয়াকইন ইন্টা্রভিউ দিতে বলতে গিয়েও নিরস্ত হলেন।

”আপনি কীরকম জব করতে চান” জিজ্ঞেস করলেন ডিরেক্টর।

“ভাইয়া!!! আমিতো ইঁইঁইঁ (EEE) বিষয়ে এমবিবিএস (জাস্ট কথার কথা) করেছি।

চাকরী শেষ। এবার নিজে ভেবে বের করুন, সিরিয়াসনেস কী?

আমি আমার পরিচীত সবাইকে বলি, যদি চাকরী সংক্রান্ত ব্যাপার হয় তবে কাওরানবাজারে কাঁচাতরকারীর আড়তে কারো কাছে গেলেও পুরো রেডি হয়ে যান। “ভাইয়া” বিষয়টা অফিসে ভুলে যান।

যারা আবার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রে খুব বিশ্বাসী আর অতি আধুনিকমনা, তারা চাকরির ধান্দা বাদ দিন। ফেসবুকে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলুন।

কমিটমেন্ট, কৃতজ্ঞতা, প্রফেশনালিজম, সিরিয়াসনেস, ফোকাসড অ্যাপ্রোচ ও ক্যারিয়ারিস্ট মেন্টালিটির অনুপস্থিতি ও ক্রমাবনতি আমাদের ট্যালেন্ট মার্কেট ও জব মার্কেটকে দিনকে দিন কীভাবে একটা জাহান্নামে পরিণত করছে, এমপ্লয়ার ও এমপ্লয়মেন্ট সিকারকে কীভাবে মুখোমুখি দাড়িয়ে যাওয়া শত্রুতে পরিণত করছে, কীভাবে আমাদের মতো ম্যাচমেকারদের কাজটাকে কুৎসিত জটিলতায় ভরে তুলছে-তার কয়েকটা উদাহরন আগে বলি। বায়াস ফ্রি হয়ে পড়ুন। অতি বিপ্লবী চেতনা তোষকের তলে রেখে পড়ুন। 

১মাসখানিক আগে। কারখানা পর্যায়ে একজন অফিসার কনফার্ম করি। সব ফরমালিটি শেষ করি। তিনি জয়েনের প্রতিশ্রুতি দেন। তার ১৫ দিন পরে, আমরা যখন সব প্রক্রিয়া ক্লোজ করে দিয়েছি, তখন তিনি জানান, তার একজন কাছের মানুষ ক্যানসার আক্রান্ত। তাকে ’বাড়ি হতে চাকরি বদলাতে না করেছে’। আমাদের সময় নষ্ট, কাজ নষ্ট। টাকা নষ্ট। যদিও আমরা পুরোপুরি কনভিন্সড নই, যে, তার দেখানো অযুহাতটি সত্যি।

আমাদের একজন দায়ীত্বশীল নতুন আসা অফিসার। মাস দুয়েক চাকরি হয়ে গেছে। হঠাৎ করে অনুপস্থিত থাকা শুরু করলেন। ডিপার্টমেন্ট ও আমরা মিলে যখন খোঁজ নিলাম, জানালেন, মায়ের রিটায়ারমেন্টের কাগজ প্রসেস করতে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আরও কিছুদিন বাসায় থাকতে হবে। সেদিনই আমরা খোঁজ নিয়ে দেখি, তিনি তার আগের অফিসে আবার গোপন চুক্তিতে জয়েন করে কাজ করছেন। তাদের ও আমাদের-উভয়কেই বরশিতে গেঁথে একসাথে ‍দুটো চাকরি করছেন। ট্রায়াল রানের মতো।

২০২২ সাল। একজন হোয়াইট কলার অফিসার (এইচ.আর) এসে বললেন, বাবা স্ট্রোক করেছেন, তাকে দেখভাল করতে হবে। আর আসতে পারব না। সেদিনই চলে গেলেন। তার ঠিক ২ দিন পরে তিনি আরেকটা কারখানায় জয়েন করে কাজ করা শুরু করেন।

মাস তিনেক আগে। আরেকজন। আমি নিজে বিস্তারিত কথা বলেছি। মাস তিনেক পরেই তিনি আবদার ধরলেন, তিনি আসলে এই সেক্টরে নয়, অন্য সেক্টরেই বেশি আগ্রহী। মোদ্দা কথা, বড় দাঁও এসেছে, চলে যাবেন। তাহলে তিনি কেন এই সেক্টরে এসে আমাদের ৩ মাস সময় ও অর্থ অপচয়ে ফেললেন-তার জবাব নেই।

মাস ছয়েক আগে একজনকে ফ্রেশার হায়ার করি। পাখি পড়া করে তাকে আমাদের প্রত্যাশা, দায়ীত্বের যায়গাগুলো, বাইন্ডিংস-সবকিছু বুঝিয়ে বলার পরে চ্যালেঞ্জ নিতে ও কমিটমেন্ট রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়েন করেন। তার বিবৃত আত্মবিশ্বাস ছিল, তিনি আমাদের একটা অ্যাসেট হয়ে দেখাবেন। ঢোকার পরে ৫ মাস হয়েছে। পুরোটা সময় ডুব মেরে ছিলেন। উন্নয়নের লবডঙ্কা। ৫ মাস পরে সে এসেছেন, বিয়ে করব। চাকরি ছাড়তে চাই। তাকে যখন বলা হল, ছুটি নিন, বিয়ে করুন। তিনি বললেন, আমি নেপালে এংগেজমেন্ট করতে চাই, অনেক দিন ছুটি দরকার। তাছাড়া আমি আমেরিকা যাব। চাকরি করব না।

এই লেখা লিখতে লিখতেই আরেকজন। মিড লেভেল লাইন ম্যানেজার। ৭ দিন ধরে গায়েব। অফিস হতে ফোন করা হল। “স্যার, আমার পরিবার আমাকে জব ছেড়ে দিয়ে বাসায় ডোমেস্টিক দায়ীত্ব পালন করতে বলেছে। আমি আর আসব না।” “তা ভাই, এই সমস্যাটাতো হঠাৎ আসেনি, আপনি তো জানতেন, তাহলে আমাদের আগে বলে তারপর যেতে পারতেন, আমরা একটু প্রস্তুতি নিতে পারতাম।” “আসলে স্যার করা হয়ে ওঠে নাই।” টুট টুট টুট।

অফিস ও কর্মী-উভয়ের তরফেই নানা অসঙ্গতি ও খারাপ-ভাল দিক থাকতে পারে। বাংলাদেশে আমরা কেউই ধোয়া তুলসিপত্র নই। তুই তরফেই নানা অনুযোগ খুঁজলে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে বিশুদ্ধ দুধে ধৌত তুলসিপত্র হওয়া সম্ভবও না। তবে, কখনোই একজনের অপরাধ আরেকজনের অপরাধ করবার অযুহাত হতে পারে না। বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে যদি “আমনেরা যহনতহন মানুষ মাইরে হরেন না?”-এই অযুহাত দেখিয়ে আমিও ‘যহনতহন ভাগি যাইয়াম’-টাইপের বিপ্লব আসলে বিপ্লব না, এটা হল আমার অন্যায়কে হালালাইজ করবার একটা অ্যালিবি মাত্র। আর এই ব্যক্তিগত অ্যালিবি অন্যদের ভাত মারবার ব্যবস্থা করে দেয়।

অপেশাদারীত্ব, অস্থিরতা, প্রতারনা, মিথ্যা, অসততা, ধূর্ততা আলটিমেটলি সফলতা দেয় না।

এমপ্লয়ারদের ভাল মনকে বিষিয়ে দিয়ে কঠোর হবার রাস্তা আমরাই যেন তৈরী করে না দিই। এই আক্রার যুগেও ফ্রিল্যান্স হেড হান্টার অথবা স্বার্থহীন বিরল এইচ.আর প্রফেশনাল যারা ওপেন এমপ্লয়মেন্টকে কোনোভাবে টিকিয়ে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, তাদের কাজটাকে অসম্ভব করে তুললে ক্ষতি কার বেশি-সেটা ভাববেন। প্রাইভেট বিজনেস অর্গানাইজেশন ইজ নট এ্য ক্যাশ কাউ, নট আ মিলকিং কাউ। অ্যান্ড, ইটস নট এ প্লেস ফর পারসোনাল রেভল্যুশন।

মাঝে মাঝে চাকরীপ্রার্থী তরুনরা জানতে চান, আমরা যে সারাক্ষণ যোগ্যতা অর্জনের জন্য কা কা করি, সেই যোগ্যতা বলতে আমরা কী বুঝি?

খুব সংক্ষেপে যদি জানতে চান তবে:

১.ইংরেজি বলা, লেখা, বোঝায় নির্ভূল হতে হবে।

২.আইকিউ প্রাকটিস করুন ভাল গাইড বই হতে।

৩.ফ্রি হ্যান্ড বাংলা ও ইংরেজি প্যারাগ্রাফ লেখার চর্চা করুন।

৪.ম্যাথ প্রাকটিস করুন-ক্লাস ৫/৬ এর বীজগণিত পাটিগণিত।

৫.সংবাদপত্র পড়ুন। পৃথিবীর খোঁজ রাখুন।

৬.ক্রিয়েটিভ ভাবনা করতে শিখুন। ইন্টারভিউতে অনেক প্রশ্ন থাকে যার উত্তর গাইড হতে মুখস্ত করবার সুযোগ নেই। যেমন: নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন, কেন চাকরী করতে চান, এই চাকরীর জন্য নিজেকে কেন বেষ্ট মনে করেন, ক্যারিয়ার প্ল্যান বলুন, নিজের SWOT এনালিসিস বলুন, ক্যারিয়ারের চ্যালেঞ্জ বলুন ইত্যাদি। এই প্রশ্নগুলোর নিজস্ব উত্তর দেবার শক্তি অর্জন করুন। গাইডের শেখানো উত্তর সবাই বলবে। তাতে আপনার বিশেষত্ব থাকবে না।

৭.ইন্টারভিউ কিভাবে ফেস করতে হয় মানে ইন্টারভিউ এটিকেট ও ইন্টারভিউ ট্রিকস-এগুলো ইউটিউব হতে ভিডিও দেখে শিখুন।

৮.নিজের গ্রাজুয়েশন ও মাস্টার্সের সাবজেক্ট এর ব্যাসিক জ্ঞানের চর্চা রাখুন।

৯.টেকনোলজির ব্যবহারে অভ্যস্ত হোন। স্মার্টফোন, ফেসবুক, লিংকডইন ব্যবহারে অভ্যস্ত হোন। ফেসবুকে অন্যের ছবি স্ক্রল না করে ক্যারিয়ারের কাজে আসবে এমন জিনিস দেখুন।

১০.নিজেকে উপস্থাপনের বিদ্যা হাসিল করুন। প্রফেশনাল সিভি বানান।দয়া করে এই বিষয়গুলোতে উন্নতি ঘটান। চাকরী কেউ ঠেকাতে পারবে না।

ক্যারিয়ার প্রত্যাশীরা জানতে চান কিভাবে জবের জন্য প্রস্তুতি নেবেন।

এই লেখাটি যে বড় রাইটআপের অংশ, সেটি আসলে বিশাল, এবং, এই বিশাল লেখাটি পুরোটা মিলে ওই প্রস্তুতির বিষয়ে বিবৃত। তারপরও আমি খুব সংক্ষেপে এখানে একটা কুইক নোটে বলছি, স্পেসিফিক্যালী কী করবেন:

১.সময়োপযোগী একটা সিভি বানান।

২.জীবনে যদি একটি ইন্টারভিউতেও ডাক পান সেখানে যেন আপনার যোগ্যতায় কোনো ফাঁক না থাকে-সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করুন। আপনার যেটাতে পড়াশোনা বা যেটাতে আপনি অভিজ্ঞ সেটার জন্য প্রশ্ন তো করা হবেই, পাশাপাশি ইংরেজি (বলা ও লেখা), কম্পিউটার ব্যবহার, ইন্টারনেট ও মেইলিং, আইকিউ, ছোটখাটো ম্যাথ নিয়ে প্রশ্ন হবেই।

৩.প্রচুর কর্পোরেট পার্সনদের সাথে লিঙ্কড হোন আর নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।

৪.ফেসুবুক, লিঙ্কডইন ও অন্যান্য সকল জব পোর্টালে নিয়ম করে রোজ ব্রাউজ করুন আর এপ্লাই করুন।

৫.বিডিজবসসহ যতোগুলো জব পোর্টাল আছে, ওখানে নিজের প্রোফাইল বানান আর নিয়মিত আপডেট করুন। বিভিন্ন টার্গেট কোম্পানীর সাইটেও নিজের প্রোফাইল বানান।

৬.কিভাবে ইন্টারভিউ ফেস করতে হয় তা নিয়ে ইউটিউবে প্রচুর টিউটোরিয়াল আছে। একজন বন্ধু নিয়ে নিয়মিত প্রাকটিস করুন।

৭.ইন্টারভিউতে কোন প্রশ্নগুলো বেশি হয়, কোন জবে কোন প্রশ্ন হয়, কোন প্রশ্ন’র কী উত্তর হয়-সেগুলো পড়ুন।

৮.নিয়মিত নিজের মেইল চেক করুন।

৯.মোবাইলে/গুগল ড্রাইভে একটি সিভি রাখুন।

১০.ফেসবুক বা লিংকডইন প্রোফাইল হালকা/সস্তা ধরনের কনটেন্ট হতে পরিষ্কার রাখুন।

১১.ক্যারিয়ারের সাথে সরাসরি জড়িত কিংবা যেকোনো জ্ঞান বাড়াবার লেখা প্রচুর পড়ুন। পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

১২.একজন ক্যারিয়ার এ্যাডভাইজারের সাহায্য নিন। সেটি আমিও হতে পারি।

আমি আমার সীমিত যোগ্যতা ও সামর্থ্যে ক্যারিয়ার প্রত্যাশীদের জন্য নিজস্ব পরিসরে সাহায্য করার জন্য CAMP এই গ্রূপটি অপারেট করি। গ্রূপে মেম্বার হয়ে নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করতে পারেন।

পাঠ-৬: তরুণ, শুরু করার আগেই হতাশ কেন? এই অংশটুকুর মূল লেখক: জনাব মুনির হাসান, সূত্র: প্রথম আলো-১১ আগস্ট ২০১৭ সংখ্যা।

কথা হচ্ছিল একটি চাকরি পোর্টালের নির্বাহী কর্তার সঙ্গে। তাঁর সাম্প্রতিক একটা অভিজ্ঞতা তিনি জানালেন। দেশের বেশির ভাগ চাকরি, বিশেষ করে বেসরকারি চাকরি এখন এসব পোর্টালের মাধ্যমে হয়। কোনো কোনো চাকরিদাতা এমনকি এই পোর্টালগুলোর ডেটাবেস থেকে প্রার্থী বাছাই করে সরাসরি ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করে।

তাই চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এসব পোর্টালে জীবনবৃত্তান্ত থাকলে কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। তিনি জানালেন, সম্প্রতি তাঁদের পোর্টালে নতুন এক লাখ ছেলেমেয়ে যুক্ত হয়েছে। যুক্ত হওয়ার জন্য কেবল একটি ই-মেইল আইডি লাগে। এরপর ওই ই-মেইল দিয়ে লগ-ইন করে পোর্টালে নিজের একটা সিভি যোগ করা যায়, ছবি দেওয়া যায় এবং নিয়মিত সেটি হালনাগাদও করা যায়। ওই কর্মকর্তা আক্ষেপ কর বললেন, এক লাখের মধ্যে মাত্র ছয় হাজার তাদের প্রোফাইলটি সম্পূর্ণ করেছে!

 ৯৪ হাজার আর এই কাজটি করেনি। বলা বাহুল্য, ওই পোর্টালে যেসব চাকরিদাতা আছেন, তাঁরা মাত্র ছয় হাজারকেই বিবেচনা করবেন।

আমার মনে পড়ল, মাত্র কদিন আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমার অনুরূপ একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পঠিত বিষয়ের বাস্তব প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে চাকরির বাজার সম্পর্কে ধারণার জন্য তাদের একটি আইসিটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য নির্বাচিত করা হয়। নির্ধারিত দিনে প্রতিষ্ঠানটি তাদের জন্য ব্রিফিং, বিভিন্ন সেকশন ঘুরে দেখাসহ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করলেও নির্ধারিত শিক্ষার্থীদের ৪৫ শতাংশ সেখানে উপস্থিতই হয়নি!

শিক্ষার্থীদের উদাসীনতার এমন প্রকাশ দেখে দুদিন আগে দুটি ঘটনা আমার সামাজিক যোগাযোগ প্রোফাইলে শেয়ার করি। সেখানে আরও ঘটনার কথা জানতে পারি। যেমন ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হয়ে পরবর্তী দিনের জন্য ইন্টারভিউয়ের টাইম ঠিক করে সকাল থেকে ফোন বন্ধ রাখা, আবেদন করে ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্বাচিত হয়ে সেখানে উপস্থিত না হওয়া ইত্যাদি বিষয় সম্ভবত আমাদের তরুণ প্রজন্মের একাংশের অস্থিরতা ও উদাসীনতাকে তুলে ধরেছে।

গত কয়েক দিন এ বিষয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হচ্ছে, দুই কারণে তরুণদের এ মনোভাব গড়ে উঠছে।

একটি হলো ‘হলে হবে না হলে না হবে’—এমন মনোভাব। এ দলের আসলে জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের সঙ্গে সে রকম মোলাকাত হয়নি। অভিভাবকের অর্থে এরই মধ্যে তারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চলে এসেছে এবং দুঃখ-কষ্ট ছাড়াই দিন যাপন করতে পারছে। এদের একটা অংশকে আরও দেখা যায় পড়াশোনায় যথাযথ মনোযোগ না দিয়ে বেদরকারি কাজে বিপুল পরিমাণ সময় অপচয় করতে।

তাদের অনেকেরই ধারণা, চাকরির সময় হলে এমনিতেই সেটা পাওয়া যাবে। শুধু শুধু কষ্ট করার দরকার কী!

তবে, একাংশের সংখ্যাগরিষ্ঠের ধারণা চাকরি-বাকরিসহ কাজকর্ম এখন মামা-চাচা কিংবা বিশেষ তদবির ছাড়া হয় না, হবেও না।

অনেকের ধারণা, এগুলোর ব্যাপারে তাদের কোনো ‘দক্ষতা’ নেই, তাই তাদের চাকরিও হবে না।

মুশকিল হচ্ছে, তাদের কেউ বলছেও না যে বিশেষ করে বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দক্ষতা ও মেধাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কাজকর্ম তুলতে হয় এবং সেটির জন্য তাদের এমন কর্মী দরকার, যাদের এগিয়ে নেওয়া যায়, যাদের দক্ষতাকে শাণিত করা যায়।

গত তিন বছরে একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিয়োগের সময় যুক্ত থাকার সুবাদে আমি এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, নিয়মিতকরণের ঘটনা ছাড়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ‘আগে থেকে ঠিক’ করা প্রার্থী নিয়োগে তৎপরতা দেখায় না। সবাই ভালো কর্মীর সন্ধান করে।

কিন্তু চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের আচরণে কোনো কোনো মানবসম্পদ বিভাগ এতই বিরক্ত হয় যে তারা ‘রেফারেন্স’ প্রার্থী ছাড়া অন্যদের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কারণ, কোনো একটি পদের জন্য একবার বিজ্ঞাপন দেওয়া হলে ক্ষেত্রবিশেষে কয়েক হাজার আবেদন পাওয়া যায়। সেখান থেকে বাছাই করে প্রথমে লিখিত পরীক্ষা, তারপর সাক্ষাৎকারের আয়োজন করাটা যথেষ্ট সময় ও ব্যয়বহুল কর্মকাণ্ড।

তারপর যদি ঘটনা এমন হয় যে ‘২৬ জনের মধ্য মাত্র ৭ জন’ ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হয়, তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটিই প্রশ্নবিদ্ধ ও অর্থহীন হয়ে পড়ে। এ কারণে অনেক মানবসম্পদ বিভাগ ইদানীং রেফারেল প্রার্থীদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে বেশি।

দেশে ৪৭ শতাংশ গ্র্যাজুয়েটের সে অর্থে কর্মসংস্থান নেই। অথচ এরই মধ্যে দেশে প্রায় সাত-আট লাখ বিদেশি কর্মী কাজ করেন। এঁদের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও বেশির ভাগই দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

২০১৬ সালে এই বিদেশি কর্মীরা আমাদের দেশ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে গেছেন, যা দেশীয় টাকায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি! এসব উদ্যোক্তার কাছে জানতে চাইলে তাঁরা একবাক্যে দেশীয় কর্মীদের অদক্ষতা এবং একই সঙ্গে অপেশাদার মনোভাবকে দায়ী করেন।

এসব উদ্যোক্তার এমনতর প্রশ্নের চটজলদি জবাব দেওয়া যায় না। কারণ, আমি একটি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন প্রকৌশলীকে কোনো নোটিশ বা জানান না দিয়ে বিদেশে চলে যেতে দেখেছি। তাঁদের এ আচরণের পর ওই প্রতিষ্ঠান যদি পরবর্তী সময়ে দেশি প্রকৌশলীদের চাকরি দিতে অনীহা দেখায়, তাহলে কি তাদের খুব বেশি দোষ দেওয়া যাবে?

পাঠ-৭: করী সোনার হরিণ নয় তবে আবার মামীর হাতের মোয়াও নয়

#scarsityofjob অভিজ্ঞ চাকরীপ্রার্থী/ফ্রেশার চাকরীপ্রার্থী/ফার্ষ্ট ইয়ার-মাস্টার্স পরীক্ষার্থী।

আমাদের কাছে বিভিন্ন সূত্র হতে প্রার্থীরা আসেন চাকরীর অনুরোধে। আমরাও চেষ্টা করি তাদের সাহায্য করতে। মনে রাখতে হবে, একজন সৎ কর্পোরেট হিসেবে আমাদের কাজ হল প্রার্থীদের সুযোগের সাথে লিংক করিয়ে দেয়া, নিজের যোগ্যতা প্রমানের সুযোগ করে দেয়া। যেকোনো প্রকারে চাকরীতে জয়েন করিয়ে দেয়া নয়। মনে রাখবেন দেশে ২৬ লক্ষ কমপ্লিট বেকার, সাথে আছে চাকরীরত মানুষদের নতুন চাকরী খোঁজার কারনে সৃষ্ট প্রতিযোগীতা। এত টাফ প্রতিযোগীতার মধ্যে আপনাকে যদি একটি চাকরী ম্যানেজ করতে হয় তাহলে ভাবুন, ওই ২৬ লক্ষের মধ্যে আপনাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে আপনাকে নিয়োগদাতা পছন্দ করেন। একেকটি পদের বিপরীতে যখন হাজার খানিক সিভি জমা পড়ে, তখন কি মনে হয় আপনার? কেন বা কী করলে আপনি তাদের মধ্য হতে ইন্টারভিউতে ডাক পাবেন?

প্রতিদিন যখন আমরা ইন্টারভিউ করি, মাঝে মাঝে আমরা নিজেরাই দুঃখ করি প্রার্থীদের দুর্বল যোগ্যতা দেখে। চাকরী আছে, দিতেও চাই অথচ প্রার্থীদের অবস্থা ভয়াবহ। স্বভাবতই চাকরী আর দেয়া হয় না। বেশিরভাগ প্রার্থী কেন বাতিল হয়ে যায় জানেন? অনার্সের শুরু হতে মাস্টার্স-চাকরীর কোনো প্রস্তুতি নেই। বলতে পারেন ওসময়টাতো একাডেমিক পড়াশোনায় মনে দেয়ার কথা। হ্যা, অবশ্যই কিন্তু পাশাপাশি নিজের যোগ্যতা বাড়াবার জন্য ইংরেজি কি শিখতে পারবেন না, সাধারন জ্ঞানের বই পড়া, নভেল পড়া, ম্যাথের চর্চা, ইন্টারভিউ দেবার প্রাকটিস কি একদম নিষেধ? বেশিরভাগ প্রার্থী আমাদের কাছে রিজেক্ট হন শ্রেফ অপ্রস্তুত থাকার কারনে। একজনের সাথে আজ কথা বললাম। নিজেই বললেন, স্যার ফার্ষ্ট ইয়ারের ভর্তির পরে রেজাল্ট পর্যন্ত আর কোনো প্রিপারেশন নিইনি। আমি তাকে বললাম, ৪+১=৫ বছরের গ্যাপ কিভাবে এখন মেকআপ করবেন? ইংরেজি বলা, পড়া, লেখা ও বোঝায় ক্ষমাহীন দুর্বলতায় রিজেক্ট হন বিশাল সংখ্যক প্রার্থী।

তারপরে একটা অংশ রিজেক্ট হন, অত্যন্ত বাজে কোয়ালিটির সিভির কারনেও। প্রার্থীদের একটা অংশ শেষ পরীক্ষাটি দিয়েই এমনকি রেজাল্ট হবার আগেই চাকরীর দরখাস্ত শুরু করেন। অথচ চাকরীর প্রস্তুতির জন্য সামান্য প্রস্তুতি নেবার পেছনে সময় দেন না।  দয়া করে চাকরীর জন্য প্রিপারেশন নিন। কিভাবে? একটি ভাল সিভি বানান, ইংরেজিতে ৪টি লেভেলে দক্ষতা বাড়ান, ইন্টারভিউ ফেস করার চর্চা করুন (লাগলে গ্রূপ প্রাকটিস করুন), আইকিউ বাড়ান, ম্যাথ চর্চা করুন, সাধারন জ্ঞান বাড়ান এবং ক্রিয়েটিভ থিংকিং দক্ষতা বাড়ান। আর হ্যা, ফেসবুকে সারাক্ষন হাবিজাবিতে ব্যস্ত না থেকে নিজের নেটওয়ার্ক বাড়াতে এটাকে কাজে লাগান।

প্রফেশনাল ও কর্পোরেটদের সাথে ফার্ষ্ট ইয়ার হতেই যোগাযোগ সৃষ্টি করুন। ইউটিউবে শুধু ফ্রি মুভি না দেখে ওখান হতে কোয়ালিফিকেশন বাড়ানোর ভিডিও গুলো দেখুন, শিখুন, রেডি হোন। আমার মোদ্দা কথা হল, এমন একটা সত্যিকারের প্রস্তুতিসহ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইন্টারভিউতে আসুন যাতে নিজেই মনে করতে পারেন, “আজ যদি একজন মানুষেরও চাকরী হয় সেটা আমার হবে।” (এই লেখাটা পুরোটা না বুঝেই অনেকে নানা সমালোচনা, টিটকারী, বাজে মন্তব্য, ইস্যুহীন আলাপ শুরু করতে চাইবেন। আগে পোষ্টের উদ্দেশ্যটি বুঝুন, মূল বক্তব্যটি বুঝুন, তারপর বিতর্ক করুন। বিতর্ক করলে যুক্তি দেবেন, দয়া করে নিজের বিশ্বাস চাপিয়ে দেবেন না। অনেকে অনেক ইগোয়িক যুক্তি দেন, ”কেন ইংরেজি শিখব, ইংরেজি জানাই সব না, আগে কাজ দিন পরে যোগ্যতা যাঁচাই করুন, সিভি কোনো যোগ্যতার মাপকাঠি না, এমপ্লয়াররা ভন্ডামী করেন, এমপ্লয়াররা স্বজনপ্রীতি করেন, ফ্রেশাররা অভিজ্ঞতা কোথায় পাবে”-ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ওগুলোর কোনো পাল্টা জবাব দেবনা। কারন এই পোষ্টের উদ্দেশ্য শুধু একটা কথা জানানো-কেন রিজেক্ট হচ্ছেন আর কিসে তা থেকে বেরোতে পারবেন। দয়া করে বিপ্লবী কথাবার্তা বলবেন না। বিপ্লব চাইলে আবার চাকরী খোঁজা কেন?

পুনশ্চ: আমি নিজে খুব বড় মাপের প্রফেশনাল বা ক্যারিয়ার এডভাইজার নই। তবু নতুনদের সাহায্যার্থে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে চাই। ক্যারিয়ার সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্ন, যেকোনো পরামর্শ, জিজ্ঞাসা, তথ্যসাহায্য আমাকে লিখতে পারেন। আমি সবজান্তা না হতে পারি তবে বেশকিছু এক্সপার্ট বন্ধু আছেন আমার। তাদের সাথে আপনাদের ট্যাগতো করে দিতে পারব। সরাসরি আমাকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে লিখুন। কিংবা আমার পেজ Career Circle এও লিখতে পারেন। সময়মতো উত্তর দেব।

পাঠ-৮: চাকরী আছে? চাকরী নেই

প্রায়ই বেকার যুবক, সদ্য পাশ করে বেরোনো গ্রাজুয়েটরা চাকরী চেয়ে মেসেজ পাঠান, মেইলে সিভি পাঠান। এর ওর কাছ হতে ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করেন। নানারকম পরিস্থিতির শিকার চাকরীপ্রার্থীরা নানাভাবে এ্যপ্রোচ করেন। আবার অনেক মানুষ আছেন হয়তো ভালভাবেই জব করে সুন্দর জীবনযাপন করছিলেন। মাঝপথে ভাগ্যের ফেরে নতুন করে পথে নামতে হয়েছে সম্পূর্ণ অজানা এক জগতের সাথে লড়াইয়ে। জীবন যখন সাজিয়ে ফেলেছেন তখনি অজানা অনিশ্চয়তায় নুতন করে স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তানের প্রতিপালনে নতুন করে সঙগ্রামে নামতে হয়। যাদের কাছে জীবনেও সামান্য একটি সিগ্রেটও চাইতে হয়নি তাদের কাছে, সম্পুর্ন নতুন মানুষদের কাছে নতুন করে নিজেকে চেনাতে হয়। আজ আমার লেখা তাদের জন্য মানবিকতা ধার করা নয়। এই দুই ধরনের চাকরীপ্রার্থীরা ঠিক কোথায় আটকে আছেন, কেন আমরা বেশিরভাগ চাকরীজীবিরা অনিশ্চয়তার চোরাগলিতে আটকে আছি, অধিকাংশ চাকরীপ্রার্থী ঠিক কোন ভুলটি সবাই গণহারে করছেন তার উপর আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলব। এটি কোনো ট্রাডিশনাল ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং নয়। এইচআরে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে চাকরীপ্রার্থীদের যেসব ভুল নজরে আসে তার একটা সংকলন।

১. আমাদের সদ্য চাকরীর বাজারে আসা গ্রাজুয়েট বা মাস্টার্স যারা বিভিন্ন প্রখ্যাত বা অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা মাত্র শেষ করলেন বা প্রায় শেষ করে ফেলেছেন, তারা সবচেয়ে বড় যে ভুলটি করেন তা হল, তাদের বদ্ধমূল ভুল ধারনা অর্থাৎ, শুধুমাত্র তার মাস্টার্স ডিগ্রিটিকেই চাকরী পাবার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা। ফলে তারা উচ্চতর পড়াশোনার ৫-৬ টি বছর শুধুমাত্র একাডেমিক ডিগ্রিটি ছাড়া অন্যান্য যোগ্যতা অর্জন বা বাড়ানোর খুব একটা চেষ্টা করেন না। বিধায় ৫-৬ বছর বা তার বেশি সময় একাডেমিতে কাটানোর পরে যখন তারা বের হন, তখন ঝুলিতে শুধু ৪টি ডিগ্রি ছাড়া বাড়তি কোনো রসদ তাদের হাতে থাকে না। আমি বলছি না, আপনি আপনার একাডেমিক পড়াশোনা বাদ দিয়ে চাকরীর জন্য রেডি হোন। না, কখনোই একাডেমিক পড়াশোনায় ফাঁকি দেবেন না। নিজের সাবজেক্টটিকে ভাল করে জানুন। পাশাপাশি একটা সময় বের করুন, ডিগ্রী ব্যাতিত চাকরী পাবার অন্যান্য যোগ্যতা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিতে। প্রতিদিন একটা সময় বরাদ্দ রাখুন।

২.আমাদের ভাল লাগুক বা না লাগুক, চাকরী বাজারের বাস্তবতা হল, ইংরেজিতে আমাদের চাকরীপ্রার্থীদের মারাত্মক রকম দুর্বলতা। কি বলায়, কি লেখায় তাদের অত্যন্ত নড়বড়ে অবস্থা। অনেকে বলবেন, ইংরেজি তো জাস্ট একটি ভাষা, ইংরেজিতো জ্ঞান নয়, নিজের মাতৃভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজি নিয়ে কেন পড়লাম? ভাই, আমি চাকরীর বাজারের বাস্তবতার কথা বলছি। আবেগ বা নৈতিকতা নয়। যিনি বা যেই কোম্পানীরা চাকরী দেবে তারা যদি ইংরেজিতে দক্ষতা খোঁজেন আর আপনি মাতৃভাষার দোহাই দিয়ে অভিমান করে ইংরেজিকে দুরে সরাতে চান-তাহলে কী করার? কী করে ইংরেজিতে দক্ষ হবেন? হাজারটা বুদ্ধি দেয়া সম্ভব। অনেকেই অনেক তরিকা বলতে পারবেন। আমি একটা আপাতত বলি? কমিটমেন্ট আর প্রাকটিস। এদুটোই ৮০% কাজে দেবে। বাকিগুলো মিলে ২০%।

৩.দুঃখজনক হলেও সত্যি, ইংরেজিতে তো বললামই। আমাদের চাকরীপ্রার্থীদের একটা বিরাট সংখ্যক অংশ এমনকি বাংলাতেও ঠিকমতো গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না। বলবেন, এ আবার কেমন কথা, বাঙালী ছেলে, বাংলায় কথা বলতে পারে না-এমন কথাও বিশ্বাস করতে হবে? হ্যা ভাই, বাংলায় কথা বলা আর বাংলায় ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেকে উপস্থাপন করা এক জিনিস নয়। মনে রাখবেন, চাকরীর ইন্টারভিউ মোটা দাগে হল নিজের যোগ্যতাকে নিয়োগদাতার কাছে মার্কেটাইজ করার স্থান। সেখানে নিজের যোগ্যতাকে বিক্রি করা শিখতে হবে।

৪.কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষতার অভাব একটা অমার্জনীয় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে বলে আমার মনে হয়। যদি আপনি কম্পিউটার অপারেশনে দক্ষ না হন তাহলে আজই যা করবার করুন।

৫.সিরিয়াসনেস কতটা আছে একজন চাকরীপ্রার্থীর সেটাও ফ্যাক্টর। মাঝেমধ্যেই আমাদের কাছে চাকরীপ্রার্থীরা আসে কোনোমতে একটা টী-শার্ট বা ক্যাজুয়াল হাওয়াই শার্ট পড়ে, অবিন্যস্ত দাড়ি, কখনো চটি জুতা পড়েই। বহুবার হয়েছে ক্যান্ডিডেট ইন্টারভিউতে এসেছেন কলম ছাড়া। বলতে পারেন জুতা, জামা, দাড়ি যোগ্যতার মাপকাঠি না। ভাই, আমি নিয়োগকর্তাদের চোখে চাকরীপ্রার্থীর কোনদিকগুলো ভুল মনে হয় সেটা বলছি। আপনি যদি নিয়োগকর্তার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপারে দ্বিমত পোষন করেন তাহলে তার কাছে চাকরী চাওয়া কেন? তাছাড়া দেশের চাকরীর বাজারের ন্যাচারই এমন। আপনি তো আর দেশ ও সমাজ পরিবর্তন করতে আসেন নি। মনে রাখবেন, আমি একবারও বলছিনা, এই বিষয়গুলো (যেগুলো আমি বলছি) সেগুলো না থাকা মানেই ব্যক্তি অযোগ্য। যোগ্যতার বহুরকম পারসপেকটিভ আছে। আমি শুধু বলছি চাকরীর ইন্টারভিউ বা চাকরী চেয়ে ব্যর্থ  হবার কিছু সাধারন কারন।

৬.কোনো ইন্টারভিউতেই বোধহয় আলাদা করে বলা হয় না যে সঙ্গে করে সিভি নিয়ে আসবেন যেহেতু কোম্পানী সিভি দেখেই তাকে ডেকেছে। তবু জানবেন এরপরও এককপি সিভি সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। বহুবার হয়েছে ইন্টারভিউয়ার জানতে চেয়েছেন সিভি নিয়ে এসেছেন? ”না স্যার, আনতে হবে তাতো বলেনি”।

৭.বিভিন্ন মিডিয়ামে যেমন মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে চাকরীপ্রার্থীরা নক করেন, মেসেজ দেন। কেউ কেউ নিয়ম করে মাঝেমধ্যেই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসবই ভাল। তবে ভুল কোথায় করেন? ভুলটা হল লেগে না থাকা এবং এ্যাপ্রোচিং। কিভাবে একজন অপরিচীত কর্পোরেট পার্সনকে চাকরীর জন্য এ্যাপ্রোচ করতে হয় সেটা ভেবে করা উচিৎ। মনে রাখতে হবে, তিনি বা তারা অবশ্যম্ভাবিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়ীত্বশীল উঁচু পদে কাজ করছেন। তাদের কিভাবে এ্যাপ্রোচ করলে তারা সেটা পজিটিভলি নেবেন, তাদের সময়ের মূল্য কতটা, তারা কতটা ব্যস্ত থাকেন, আপনাকে কতটা সময় দেবেন সেটা বুঝতে হবে। কাউকে কাউকে দেখি ধুমকেতুর মতো এসে একটা গুড মর্নিং, অতঃপর চাকরীর অনুরোধ, অতঃপর তার কারন ব্যখ্যা। ক্ষণিক চ্যাটের পরেই উধাও। হঠাৎ ৭ দিন পরে আবার নক, খানিক মেসেজিং-উধাও। আবার তার ৩ ঘন্টা পরে নক। রাতের গভীরে নক। নাহ, এভাবে আর যাই হোক, আপনি একজন কর্পোরেট পার্সনকে আপনার জন্য কাজ করাতে পারবেন না। কিভাবে পারবেন সেটা একটু নিজেই ভাবলে পাবেন। তবে সংক্ষেপে বললে বলব সিরিয়াস হোন, সাবধানি হোন, ধারাবাহিক হোন। চাকরি বাগানো একঘন্টার টি-টুয়েন্টি না। এটি একটি দীর্ঘ অভ্যাস, চর্চা, প্রস্তুতি, সম্পর্কের বিষয়। কী ভাষায়, কোন স্টাইলে এ্যাপ্রোচ করছেন সেটি ম্যাটার করে।

৮.চাকরীপ্রার্থীরা মনে করে, শুধু ডিগ্রি থাকলে বা কয়েকটি ছোটখাটো ট্রেনিং থাকলেই যথেষ্ট। অনেকেরতো সেটিও নেই। সেটিই সবচেয়ে বড় ভুল। ঠিক কতটুকু প্রস্তুতি এবং কী কী বাড়তি যোগ্যতা আপনার থাকলে আপনি চাকরীর দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন তার কোনো সীমানা নিজেই টানবেন না। কখনোই আত্মপ্রসাদে ভুগবেন না। তবে হ্যা, কখনোই কনফিডেন্স হারাবেন না। আমি আমার দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর যেই চাকরীতে প্রথম ঢুকি, আমার মনে আছে, আমি যেদিন সেই চাকরীর চুড়ান্ত ভাইভা দিতে যাই, ওয়েটিং রুমে বসে আছি, আমার বন্ধু বাবু আমাকে ফোন করল। বলল, ভয় পাচ্ছেন? আমি স্বীকার করলাম হ্যা, নার্ভাস। বাবু বলল, বুকে সাহস আনুন আর মনে মনে বলুন, “আজ যদি একজনেরও চাকরী হয় সেটা আমার হবে।” বহু কোয়ালিফাইড প্রার্থীকেও দেখেছি নার্ভাসনেসের কারনে কিছুই করতে পারেননি।

৯.আজকাল ইন্টারভিউ ফেস করবার প্রস্তুতি ও নিয়ম সম্পর্কে ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলে এমনকি বাংলায়ও প্রচুর কনটেন্ট, ভিডিও, আর্টিকেল আছে। আমার ধারনা, আমাদের বিশাল সংখ্যক চাকরীপ্রার্থীরা ওগুলো দেখারও দরকার মনে করেন না। আমার ধারনা ভুল হলে আমি খুশি হব। চাকরীপ্রার্থী আসেন যারা একদমই ইন্টারভিউ ফেস করবার জন্য প্রস্তুত নন। যদি ভেবে থাকেন একবারেই মাঠে নেমে ছক্কা হাঁকাবেন তবে ভুল করবেন। দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক ও পরিকল্পিতভাবে রেডি হোন। ও হ্যা, পারলে মক ইন্টারভিউ চর্চা করুন।

১০. ওদিকে স্টিভ জবস, জুকারবার্গ, বিল গেটস ও এদিকে আমাদের রবীন্দ্রনাথ-এনাদের স্কুল ফাঁকি দেয়া বা প্রথাগত একাডেমিক পারফর্ম্যান্সের ঘাটতিকে কেউ কেউ নিজের জীবনের ব্রত বানিয়ে নিয়ে থাকলে ভুল করবেন। স্কুলপালানো আইনস্টাইন হাজার বছরে একজনই পৃথিবীতে আসে। আপনি চেষ্টা করে তাদের মতো হতে পারবেন না। তারা বাই বর্ন অমন। তাই অন্তত চাকরী পাওয়া এবং পাওয়ারও কমপক্ষে ৫ বছর পর পর্যন্ত একাডেমিক বিষয়ের জ্ঞান ধরে রাখুন। এমনও হয়েছে ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞাসা করেছি, পরমানুতে কী কী থাকে। বলতে পারে নি।

১১.কমিউনিকেশানের ব্যর্থতায়ও চাকরীপ্রার্থীরা ভাগ্যতাড়িত হন। বহুবার হয়েছে ক্যান্ডিডেটকে ফোনে ডাকা হয়েছে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তিনি প্রশ্ন করেন-”কোন পদের জন্য ডাকছেন (তিনি আবেদন করেছেন আর তিনিই জানেন না); আমি তো জানি না, আমার বন্ধু বিডিজবসের মধ্যে আমার জন্য সিভি দিয়েছে; বেতন কত দেবেন? ঠিকানাটা মেসেজ করবেন? আমি এখন রাস্তায় আছি, পরে ফোন করেন……..অথবা পুরো বিষয়টি শোনার পর বলেন, ঠিকানাটা আবার বলবেন, ভুলে গেছি।” সাথে সাথে তার চাকরী দেবার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন নিয়োগদাতা। মনে রাখবেন, ফোন কলেই আপনাকে অনেকটা মেপে ফেলবে চাকরীদাতা-অবশ্য যদি স্মার্ট এমপ্লয়ার হয়। চাকরী পেতে হলে সারাক্ষণই সিরিয়াসলি সেটার জন্য প্রস্তুত থাকুন, চেষ্টা করুন। একটি সামান্য বিষয়কেও অবহেলা করবেন না।

১২.শুরুতেই ছক্কা মারার ই্চ্ছা দমন করুন। অনেকেই স্বপ্ন নিয়ে আসেন, প্রথম চাকরীতেই ৫০ হাজার টাকা বেতন হাঁকাবেন, ২ বছরে ম্যানেজার হবেন, এসি রুমের অফিস করবেন, ৯টা ৫টা অফিস করবেন। ক্যারিয়ার বাছুন, চাকরী নয়। অনেকে আবার শুরুতে হুটহাট দুম করে অনেকগুলো চাকরী বদল করে বেতনটা আকাশচুম্বি করে নেন। এতে সাময়িক লাভ হয় বটে। তবে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি। নিয়োগদাতা আপনার সুইচিং মোড দেখে পরবর্তিতে আপনার প্রতি আস্থা হারাবেন। মনে রাখবেন, কোম্পানীগুলো একটু লো কোয়ালিটি হলেও স্টেবল লোক চায়।

১৩.অনেকেই আবার চাকরীতে যেন শিকড় গজিয়ে ফেলেন। হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন প্রতিষ্ঠানে। এখান থেকে কখনো যেতে হতে পারে সেই বিষয়টা ভুলে যান। নিজের আর কোনো রকম ব্যক্তিগত উন্নয়ন ঘটান না (সফট ও হার্ড স্কীলে)। ফলে নিয়োগদাতার মন ঘুরলে তিনি পড়েন অথৈ পাথারে। সবসময় মনে রাখুন, আপনাকে যেকোনো দিন জব ছাড়তে হতে পারে। নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কোয়ালিফিকেশনে সজ্জিত রাখুন। রেডি থাকুন। আর হ্যা, নির্দিষ্ট একটি সেকটরে-নির্দিষ্ট একটি টাইপের কাজে-নির্দিষ্ট একটি ঘরানার চাকরীতে থেকে যাওয়া ভাল নাকি ধরন ও সেকটরে ভেরিয়েশন থাকলে ভাল সেটি আগেই ভাবুন। এক ধরনের কাজে স্পেশালাইজ হলে আপনি সেই কাজে বেশি সম্মান, গুরুত্ব ও বেতন পাবেন। তবে সমস্যা হল সেই সেক্টরটি পড়ে গেলে, আপনি জব হারালে, অন্য ধরনের জবে আপনি চান্স কম পাবেন। আবার নানা ধরনের জবে এক্সপিরিয়েন্স থাকলে অসুবিধা হল কোনোটাতেই আপনি বিশেষজ্ঞ নন। ফলে নির্দিষ্ট কোনো ধরনের নিয়োগদাতা আপনার উপর খুব বেশি আস্থা রাখতে পারেন না।

১৪.অনেকেই হয়তো দ্বিমত হবেন আমার সাথে এই ব্যাপারে যে, আমি মনে করি, একটি এমবিএ করার চেয়ে চাকরীতে ঢোকা বেশি জরুরী। বেশ কয়েক বছর চাকরী করার পরে এমবিএ করাটা বেটার। কারন এমবিএ হল প্রফেশনাল দক্ষতা এবং ম্যানেজারিয়াল যোগ্যতার ডিগ্রি। তাছাড়া এখন বেশিরভাগক্ষেত্রেই এমবিএ হল কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মাস্টার্স ডিগ্রির পরিবর্তিত রূপ। আমি সিওর নই, তবে মনে হয় সেগুলো টোটাল এমবিএ নয় যেটা আইবিএতে পড়ায় বা ভারতের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেয়। তাই আপনার যদি চাকরীর বা প্রতিষ্ঠানে কাজের ব্যাপারই না হল তবে এমবিএ কেন? ওটা তাই গ্রাজুয়েশন করে চাকরীতে ঢুকে থিতু হয়ে পরে করুন। ততদিন বেশ অনেকটা এক্সপিরিয়েন্সও জমা হবে। নিজের টাকায় তখন পড়তে পারবেন। বাবা-মায়ের ওপর চাপও কমবে। এমবিএটা কাজেও লাগাতে পারবেন।

১৫. একটা সাইড টক। গ্রাজুয়েশন করাকালীনই ঠিক করে নিন-সরকারীতে নাকি বেসরকারীতে ক্যারিয়ার গড়বেন। দু’টোর প্রস্তুতি দু’রকম। তাই দ্রুত ঠিক করুন। সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার করতে বেশি পারবেন তাহলে।

১৬.একটা কথা বলি? বলতে পারেন আপনি এত পন্ডিত। আপনি কী এমন হাতিঘোড়া জীবনে হতে পেরেছেন? না ভাই, আমি হাতি বা ঘোড়া কোনোটাই জীবনে হতে পারিনি। ক্যারিয়ারে তেমন সুবিধাও করতে পারিনি। তাহলে এতকিছু আপনাদের কেন বলছি? বলছি এজন্য যে, আমি যদি ভুল করে থাকি সেটা যেন আপনাদের ক্ষেত্রে না হয়।

১৭.শুধু ব্যক্তিগত যোগ্যতা থাকলেই আপনার ভাগ্যের দ্বার খুলবে-এমন নিশ্চিত ধারনা করলে ভুল করবেন। যোগ্যতার পাশাপাশি আপনাকে খুব ভাল নেটওয়ার্ক বজায় রাখতে হবে। প্রফেশনাল সাইট, ক্যারিয়ার কনসালট্যান্ট, সোসাল নেটওয়ার্ক, লিংকডইন, বিডিজবস-সর্বত্র সচেতন ও পরিকল্পিত বিচরন থাকতে হবে।

১৮.যদি টপ-৫ প্রস্তুতি বলতে পারতাম তাহলে বলতাম-উপযুক্ত সিভি না বানানো চাকরীপ্রার্থীদের একটা বড় অংশের শুরুতেই বাদ পড়ার কারন। প্রফেশনাল ও আধুনিক সিভি কেমন হওয়া উচিৎ-সেটার নানান ব্যাখ্যা আছে। আ্মি শুধু বলব, সিভি তথ্যবহুল, সহজ, সংক্ষিপ্ত ও চাকরীর ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা হওয়া উচিৎ। ক্যান্ডিডেটরা মনে করেন একটা দারুন সিভি থাকলে সেটা রেলের কেরানী হতে সচিব পদ-সর্বত্র আবেদন করা যাবে। ভুল। সিভি হতে হবে পোষ্ট বাই পোষ্ট।

১৯.চাকরীটা আপনার জীবনমরণ পণ করে হলেও দরকার-সেটা নিয়োগদাতাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন না। সেটা আপনাকে হেল্প করবে না। ইন্টারভিউয়ারকে নিজের ইমোশন, ব্যক্তিগত বিষয়, চাকরীর ডেসপারেট নিড বোঝানোর রাস্তায় হাটবেন না। ইন্টারভিউয়াররা তাতে গলেন না। বরং স্মার্ট ইন্টারভিউয়ার ও স্মার্ট কোম্পানী হলে এতে আপনার সুযোগ আরো কমবে। তাহলে কী করবেন? তাই বলে আবার এমন ড্যামকেয়ারও হবেন না যাতে মনে হয়, চাকরী না হলে আপনি থোরাই কেয়ার করেন। যাই করেন, ক্যালাস, হ্যাংলা ও ওভারস্মার্ট হবেন না। নিয়োগদাতার সামনে নিজের জীবনের দুঃখের ঝাপি খুলে বসবেন না। বরং নিজের সবগুলো যোগ্যতার তুণীরের তীর মেলে ধরুন।

২০.আপনি সব জানেন বা পারেন-এমনটা প্রমানের চেষ্টা করবেন তো মরবেন। যেটা পারেন না সেটা আন্দাজে বলে বিপদ বাড়াবেন। মনে রাখবেন, স্মার্ট ইন্টারভিউয়ার আপনি কত বেশি বেশি জানেন/পারেন সেটার চেয়ে বেশি দেখতে চান আপনি কতটা স্মার্টলী আপনার জানা বা না জানাকে উপস্থাপন করেন এবং কিভাবে ওগুলোকে ব্যবহার করেন।

২১.ফ্রি হ্যান্ড লিখতে না পারার অমার্জনীয় ব্যর্থতা প্রচুর ক্যান্ডিডেটের ড্রপ হবার কারন হয়। লেখার চর্চা করুন।

২২.নিজের অধিকার নিজে বুঝে নিন। বোর্ডে কত বেতন চান-জিজ্ঞেস করলে দু’রকম শুনি-হয় আসমান সমান অথবা বলে আপনারা যা দেবেন। দু’টোই ভুল। নিজের অধিকার নিজে কনফিডেন্টলী চেয়ে নিন। তবে হ্যা, প্রত্যাশাটি ব্যক্ত করার আগে মার্কেট যাচাই করে যাবেন।

২৩.আজকাল একটা কমোন অভিযোগ করে চাকরী সন্ধানীরা। সিভি চাওয়া হয় কিংবা বিজ্ঞাপন দেয়া হয় অথচ সিভি পাঠালে ডাকে না। কোনো প্রতিষ্ঠান হতে ডাকই পাই না, কী করে যোগ্যতা প্রমান করব। আমি স্বীকার করব ঘটনা অনেকখানি সত্যি। তবে আপনারও কিছু ভুল আছে। ভেবে দেখুন এমন কিনা-ভুল ধরনের প্রতিষ্ঠানে গণহারে আবেদন করেছেন, সিভি উপযুক্ত নয়, সিভি আকর্ষনীয় নয়, আপনার যোগ্যতার সাথে প্রতিষ্ঠানের চাওয়া মেলে না, সিভি পাঠাতে বলেছে কিন্তু আপনার উচিত ছিল সেই মেইলে বা ডাকে সুন্দর একটি কভার লেটারও দেয়া। আর হ্যা, ভাবুন তো, দেশে লক্ষ লক্ষ বেকার। একটি চাকরীর বিজ্ঞাপন দিলে হাজার হাজার দরখাস্ত পড়ে। নিয়োগদাতার পক্ষে কি সম্ভব সব সিভি পড়ে দেখা। সব মেইল চেক করা? নজরে পড়ার সব চেষ্টা তাই করুন। আর হ্যা, টিপিক্যাল মেইল এ্যাপ্রোচ বা বিডিজবসে এ্যাপ্লাই অনলাইন-শুধু এই তরিকায় ভরসা রাখলে ভুল করছেন। নিয়োগদাতাদের কাছে পৌছানোর আরো স্মার্ট রাস্তা খুঁজুন। আপনার

পর্বতসমান যোগ্যতা নিয়ে তো লাভ নেই। কোন নিয়োগদাতা জানে আপনি কোন কোণায় পড়ে আছেন? নিজেকে, নিজের যোগ্যতাকে বলতে গেলে বিক্রি করতে মার্কেটে তুলুন নিজেকে। বলতে পারেন দরকার কী আমার এত এত প্রস্তুতি, সতর্কতা, জান লড়ানোর? আরে ভাই, আমি তো আপনাকে জান লড়াতে বলিনি। এত এত কিছু তখনি করবেন যখন আপনি চাকরীর বাজারের উমেদার হতে চান। আর তা যদি নাই চান, ওয়েল এ্যান্ড গুড। ইনভেস্টর হোন, এন্টারপ্রেনিয়ার হোন, ব্যবসা করুন। একদিন বিরাট ধনী ব্যবসায়ী বনে যাবেন। তখন আপনি ঠিকই এগুলো দেখেই তবেই আপনার প্রতিষ্ঠানে লোক নেবেন। আমি নিজে ব্যবসা করিনি। চাকরগীরি বেছেছি। আপনাদের বলব, বয়স থাকতে ব্যবসা করার কথা ভাবতে পারেন। নিজের ছোট্ট একটি ব্যবসা দারুন একটি চাকরীর চেয়ে শ্রেয়।

পুনশ্চ: যারা নিয়োগদাতা, ইন্টারভিউয়ার, বড় চাকরীতে আছেন তারা যদি এই লেখা পড়েন তাহলে অনুরোধ করব, দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ইন্টারভিউয়াররাও একটু লিবারেল হোন। আর বেকার যুবকরা এমনিতেই প্রচন্ত ফ্রাস্ট্রেশন নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। নার্ভাস থাকেন। চাকরী হবে কিনা-এই আতঙ্কে চাকরীর সুযোগ নষ্ট করেন। সবই এই দেশের করুন বাস্তবতা। ভাবুন, আমরা নিজেরাও একদিন এমন করেই দৌড়েছি। এমন করেই হয়তো আমাকে নিজেকেই একদিন আবার রাস্তায় নামতে হবে চাকরী খুঁজতে। তাই একটু মানবিক হোন। একটু পজিটিভ হোন, লিবারেল হোন। প্রার্থীদের ডাকুন, সিভি চেয়ে না ডাকার মস্করা পরিহার করুন, প্রার্থীদের ভিতরকার যোগ্যতা যাঁচাই করুন। আর হ্যা, নিজের শালা, সমন্ধি, কাজিন, বন্ধুদের শুধু নয়, অন্যদেরও একটু চাকরী করবার সুযোগ দিন।

#careerfrustrationoffreshers #fresherapplicants #preparationoffreshers #realityoffreshers #sympathy #wellwisher #unemployment #interviewreality #qualification #competency #education #skillforjob

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *