Skip to content

জীবনের বাঁক বদল

বদলে যাওয়া সময়ে বদলে যায় জীবনের প্রায়োরিটি। বদলে যায় জীবনের পরতে পরতে জড়ানো সমস্যার আদল।

সেই আদি যুগে জীবনে সমস্যা ছিল একটাই-কালকে কি শিকার পাব?

হাজার বছরের পথচলায়, সেই একই হোমোসেপিয়েনের জীবনে আজকে সমস্যা আর দুঃশ্চিন্তার ধরন বড্ড গোলমেলে-

নারী: বাচ্চা হচ্ছে না।

পুরুষ: চাকরি হচ্ছে না।

নারী: পুরুষ বশিভূত হচ্ছে না।

পুরুষ: স্ত্রী মনের মতো না।

নারী: জামাইয়ের চরিত্র ভাল না।

পুরুষ: বউ বড্ড ঘ্যান ঘ্যান করে।

নারী: মোবাইলের এমবি থাকে না।

পুরুষ: মোবাইলের মডেল ভাল না।

নারী: লকডাউন, শপিংয়ে যাওয়া যায় না।

পুরুষ: লকডাউন, কতদিন বান্ধবীদের সাথে দেখা হয় না।

নারী: ফ্যান, ফলোয়ার কমে যাচ্ছে।

পুরুষ: TRP কমে যাচ্ছে।

নারী: স্বামীর ইনবক্স নিয়ে চিন্তিত।

পুরুষ: ইনবক্সের গোপনীয়তা নিয়ে চিন্তিত।

নারী: সাবেক বন্ধুদের সাথে নতুন পরিচয় নিয়ে সংসারে অশান্তি।

পুরুষ: এক্স এর সাথে নতুন করে হওয়া আশনাই নিয়ে বউয়ের সাথে ভেজাল।

নারী: বোনদের জামাইদের অনেক প্রতিপত্তি। নিজের জামাই মধ্যবিত্ত।

পুরুষ: বন্ধুদের সবার প্লট, ফ্ল্যাট হয়ে গেছে, নিজের কবে হবে।

নারী: পাশের বাসার ৫৪ ইঞ্চি টিভিটা বুকে জ্বালা ধরাচ্ছে।

পুরুষ: রফিকের সিইও হওয়াটা খুব জলুনী দিচ্ছে।

নারী: ইদের শপিংটা মনমতো হল না।

পুরুষ: গুচির ঘড়িটা একটুর জন্য কিনতে পারলাম না।

সময় বদলায়, দিন বদলায়, বদলায় মানুষের মন। বদলায় মনের চিন্তা।

জীবনে ক্লান্তি আসে।

কাক ভোরে একদিন জেগে দেখি,

জীবনের ভার বড্ড দুর্বহ লাগে।

দীর্ঘ পথচলার অবসাদ,

পূর্ণ সত্ত্বায় দেহ, মন, সময়ের সবটা জুড়ে জাগে।

ক্লান্ত লাগে।

আমার এক বন্ধু। দেড় যুগের কর্মজীবন। দেড় যুগের পথচলায় কর্মজীবনে ইর্ষনীয় উন্নতির শেষে যখন এখন পৌছে গেছে একদম চুড়ায়, তখন একদিন তিনি আমাকে বললেন, আনুষ্ঠানিক এই কর্মজীবন ছেড়ে দেব। মানে, দশটা-পাঁচটা অফিস আর নয়।

>কেন? এত চমৎকার চাকরি কেউ ছাড়ে? এত ইর্ষনীয় একটা স্ট্যাটাস?

> ক্লান্ত লাগে। আর টানতে পারি না। বিশ্রাম চাই। ছুটি চাই।  নিজস্ব সময় চাই।

আমি তবু পেশাদারী স্বভাবমতো ওনাকে নানাভাবে মূলস্রোতে থাকার প্ররোচনা দিই, ইনিয়ে বিনিয়ে।

তবে, কখনো কখনো ভাবি, সত্যিই তো! এই তীব্র প্রতিযোগীতার চারপাশের সাথে লড়াই করতে করতে, টিকে থাকার, সফলতার চাবীটা হাতে পাবার রেসে দৌড়তে দৌড়তে সত্যিই তো আমিও ক্লান্ত।

রেসের উত্তেজনায় সেই ক্লান্তিকে তো কখনো পাত্তা দেয়া হয়নি। খেয়ালও করা হয়নি সেভাবে।

জীবনকে সাজাতে, জীবনকে বাঁচাতে এ কেমন জীবনভূক মরণ দৌড় আমাদের?

ভক্ষণ, পিন্ধন আর শরীরের রসায়ন-এই তিনের দায় ও দায়ীত্বের বোঝার ক্রমাগত আঞ্জাম দিতে দিতে, প্রতিযোগীতার বাজারে সামান্য একটু স্থান করে নিতে কত কত কত প্রচেষ্টা, কত স্নায়ুক্ষয়ী সংগ্রাম!

আর কত? আর কত?

জীবন সত্যিই তো ক্লান্ত। জীবনের সবচেয়ে প্রাইম টাইমটা স্রেফ জীবন সাজাতে ও বাঁচাতেই মাটি করে দেবার এই ভুল ইঁদুর দৌড়ের স্রোতে কেউ যদি সাহস করে জীবনটাকে ফিরে নতুন রকম করে ভাববার, সাজাবার সাহস করে, সে নিশ্চয়ই এক অভিনব মানব।

অভিনন্দন এমন সব সাহসীরা। এই কামানা-পাকানা- খানা-পাখানা’র অর্থহীন যাত্রার মাঝে সাহসী জীবনবোধ সময় শেষের আগেই অনুধাবনের কৃতিত্বে।

আমরা আরামপ্রিয় ও স্টাটাসপ্রিয়রা বরং এত সব কিছুতে কান না দিয়ে ছুটতে থাকি নতুন একটা সপ্তাহের ব্যস্ত শিডিউলে।

অমুক ফাইলটা, তমুক প্রোজেক্টটা, সেই মিটিংটা, সেই ডিলটা-এসবের মধ্যে আর একটু পরেই ডুবে যাব।

ছয়টি দিন,

২৪/৭ চাপ,

২৪/৭ দুশ্চিন্তা,

২৪/৭ চিন্তাকে এনগেজ করে রাখা।

বাধ্য। পেটের দায়।

তবু আজকাল ক্লান্ত লাগে। পালাতে ইচ্ছে করে। পালানো হয় না। দারিদ্র, ক্ষুধা, হেরে যাবার ভয়, ‍সামাজিক অবনমনের ভয় এসে চুপ করিয়ে দেয়। থামিয়ে দেয় রোববারের সকালে এক চিলতে হঠাৎ ‍বৃষ্টির মতো মনে জাগা জীবনবোধকে।

এই ভয়ই সারাক্ষণ ভুলিয়ে রাখে, হঠাৎ হঠাৎ মনে পরে যাওয়া সত্যিকারের জীবনবোধটাকে, যে বলে, ”তুই এই কেঁচোর মতো খেয়ে-পরে মরার জন্য আসিসনি। তুই এই জীবনের নোস। তুই অন্য কিছু হতে এসেছিলিস।”

#priorityoflife #humanlife #tiredoflife #fatigue #socialmediadomination #socialmediamanipulation #socialmediadestruction #socialmediahype #socialmediaaholic #socialmediatrial #moralpolicing

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *