এই প্রশ্নটির দু’রকম উত্তর দেয়া যায়।
প্রথমত; আপনি যদি ইতিমধ্যেই HRM বিষয়ে পড়াশোনা করছেন বা করে ফেলেছেন এমন হন, কিংবা যে বিষয়েই পড়ে থাকুন, আপনার একমাত্র প্যাশন আপনি এইচআরে ক্যারিয়ার গড়বেন, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য উত্তর হল, এইচআরের উপর ফাউন্ডেশন ট্রেইনীংগুলো যদি আপনি করে ফেলেন বা MBA/PGD করে রাখেন, তাহলে জব মার্কেটের অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে এইচআরের ইন্টারভিউতে আপনার প্রোফাইলটি সবদিক হতে এগিয়ে থাকবে। বিশেষত নানা কারনেই এমপ্লয়াররা তাদের ক্যানডিডেট সিলেকশনে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রী ও বাড়তি ক্রেডেনশিয়াল থাকাকে প্রেফারেন্স দেন। এমনকি সেটি ফ্রেশারদের ক্ষেত্রেও। কোনো কোনো এমপ্লয়ার এটিকে ম্যানডেটরিও করে দেন। পাশাপাশি আপনার এইচআরের ওপর মৌলিক জ্ঞান ইন্টারভিউ দিতে যাবার সময় অন্যদের চেয়ে বেশি থাকবে যারা কোনো কোর্স করেনি। অন্য প্রফেশনাল ট্র্যাকেও একই কথা।
দ্বিতীয়ত; আপনি যদি HRM এর ছাত্র হন কিন্তু আপনার ডেসপারেট প্যাশন এইচআর নয়, কিংবা একজন অন্য বিষয়ের ছাত্র তবে হালকা পাতলা এইচআরে কাজ করার আগ্রহ আছে কিংবা এইচআরের প্রোফেশনাল নন কিন্তু হালকা ইচ্ছা আছে এইচআরে সুইচ করার, আপনার জন্য সেক্ষেত্রে ভাল হবে, আগে এইচআরে জব নিন। তারপর চাকরীতে সেটেল করার পরে স্তর ও প্রয়োজন অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কোর্স করুন। একথা কেন বলছি? বলছি এজন্য যে, বাংলাদেশে সাবজেক্টের সাথে মিল রেখে চাকরী পাওয়াটা নিশ্চিৎ না। তাই না জেনে বা চাকরীতে না ঢুকে আগেই এইচআরের স্পেশালাইজ কোর্স করে বসে না থেকে ওই সময়টাতে অন্যান্য জেনারেল স্কিল ডেভেলপ করুন। একই কথা অন্য ট্র্যাকের জন্যও প্রযোজ্য। আপনি চাকরি করবেন ও করছেন সাপ্লাই চেইনে। আপনি চাকরি পাবারও আগে যদি একটা নার্সিং সার্টিফিকেট করে ফেলেন, সেটা কী কাজে আসবে? হ্যা, যদি বিশেষ পেশায় যাবার লক্ষ্য স্থির করেন, যেমন পাইলট কোর্স, সেখানে যাবার জন্য ওটা বাধ্যতামূলক হয়, তাহলে করুন। সফট স্কিল কোর্স অবশ্য যে কেউ, যে কোনো সময় করতে পারেন।
নানা কারণেই আমাদেরকে গ্রাজুয়েশনের পর পরই ক্যারিয়ারে ঢুকে যেতে হয়। অনেক বছর পরে নানা কারণে আবার আমরা মাস্টার্স বা পিজিডি করবার জন্য উদ্যোগ নিই। প্রায় ৯৯% ক্ষেত্রেই এই মাস্টার্স কোর্সটি হয়ে থাকে একটি EMBA অর্থাৎ Executive Masters of Business Administration ডিগ্রী।
এছাড়াও, আরো অন্যান্য কারণেও আমরা অনেকেই EMBA করে থাকি। এর বাইরেও অনেকে চাকরির পাশাপাশি গ্রাজুয়েশন চলমান রাখায় EMBA বা BBA তে ক্লাস এটেন্ড করতে পারেন মূল বা কনভেনশনাল কোর্সগুলোর তুলনায় মাত্র ১০-২০%। বড়জোর ২৫%।
তাছাড়া আমরা নিজেরা অনেক সময় ক্যারিয়ার শুরুর আগে বা মাঝে বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে একটি পিজিডি করতে চাই; যতটা না জ্ঞান অর্জন বা দক্ষতা বাড়াবার জন্য, তার চেয়েও বেশি চাকরির বাজারে নিজের দর বাড়াতে।
আমাদের কাছে অনেকেই জানতে চান, তার কি একটি পিজিডি করে নেয়া উচিত? বা, এখন কি একটি পিজিডি থাকলে তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন?
প্রথমে বুঝে নিতে হবে, যে, MBA কিন্তু সত্যিকার অর্থে একটি একাডেমিক ডিগ্রী নয়। এটি মূলত একটি প্রফেশনাল ডিগ্রী। বাংলাদেশে যেকোনো কারনে এটি কার্যত একটি একাডেমিক ডিগ্রীতে রূপান্তরিত হয়েছে, যেটি মূলত বিজনেস ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীদের বি.বি.এর পরের ডিগ্রী তথা পোস্ট গ্রাজুয়েশন বা মাস্টার্স ডিগ্রী হিসেবে পরিগণিত হয়। আবার, নন বিজনেস স্টুডেন্টরাও এটিকে ’এম.বি.এ করা’ বলে মনে করেন। প্রফেশনালরাও এম.বি.এ করেন। যার বি.বি.এ আছে, তার জন্য এটি নিয়মিত মাস্টার্স ডিগ্রী মাত্র, ঠিক যেমন ইতিহাসে বি.এ করবার পরে তিনিও মাস্টার্স ডিগ্রীটা নিয়ে রাখেন। যদিও শিক্ষাবীদরা মনে করেন, গণহারে সবার মাস্টার্স করাটা অপচয় ও অহেতুক। যাহোক, আমাদের রিয়েল এম.বি.এ আর পোস্ট গ্রাজুয়েশনের নিয়মিত এম.বি.এ, আর্টসের ছাত্রের এম.বি.এ আর ১০ বছরের প্রফেশনালের এম.বি.এ-সব মিলে মিশে একাকার। যাই হোক, এটি মূলত প্রফেশনাল ডিগ্রী। যখন একজন প্রফেশনাল ম্যানেজার হবেন, লিডার হবেন বা হবেন হবেন করছেন, তখন তার বিজনেস লিডারশিপ এর জন্য এই ডিগ্রী নিতে হয়।
ঠিক তেমনি পিজিডি। এটি একাডেমিক ডিগ্রী না। প্রফেশনাল ডিগ্রী। মূলত প্রফেশনালদের জন্য এটি। যার অন্তত ৩ বছরের ক্যারিয়ার হয়ে গেছে একটি নির্দিষ্ট ট্র্যাকে। যদিও এদেশে এটা মুড়ি মুড়কির মতো বিক্রী হয়। পাবলিক খায়।
যাহোক, নিয়মিত, অনিয়মিত, বিজনেস ফ্যাকাল্টি, নন-বিজনেস, কর্মরত এক্সেকিউটিভ-সবাই গণহারে এই ডিগ্রীগুলো নিতে থাকায় টিউটোরিয়াল, ইনকোর্স, মিডটার্ম, ইন্টার্নশীপ, এসাইনমেন্ট, থিসিস-সবকিছুতেই দেখা যায় এই EMBA বা যারা চাকরির পাশাপাশি বিবিএ/পিজিডি করেন, তাদেরকে বিশেষভাবে ক্লাস করার ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করতেই হয়।
এর ভিত্তিতে প্রশ্ন উঠতেই পারে:
১. ক্লাস, টিউটোরিয়াল এবং সার্বিকভাবে পুরো কোর্স এ কম্প্রোমাইজ করা এই EMBA বা চাকরির পাশাপাশি বিবিএ/এমবিএ কে এমপ্লয়াররা কতটা মূল্যায়ন করেন? (আমার মতামত যদি এক কথায় জানতে চান, সংক্ষেপে বলব, অবশ্যই গুনগতমান কম হবে। মূল্যায়ন মিশ্র।)
২. কনভেনশনাল বা রেগুলার MBA/BBA/যেকোনো গ্রাজুয়েশন ডিগ্রীর তুলনায় এই EMBA বা গ্রাজুয়েশনগুলো মেইনস্ট্রীম ডিগ্রীর কতটা সমমানের হওয়া সম্ভব? (আমার মতে সম্ভব না।)
৩. এখানে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য একটি টোটকা বলে দেব। সেই টোটকাটি হল একটি আত্মজিজ্ঞাসা-
ক্লাস ও অন্যান্য কারিক্যুলাম,
ফাইনাল এক্সাম,
মিড টার্ম এক্সাম
টিউটোরিয়াল ক্লাস,
টিউটোরিয়াল এক্সাম,
থিসিস অর রিসার্চ পেপার,
রিসার্চ ওয়ার্ক,
প্রজেক্ট ওয়ার্ক,
ফিল্ড স্ট্যাডি,
ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট,
ইন্টার্নশিপ,
ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবরেশন এন্ড নলেজ এক্সচেঞ্জ,
ইন্টার ইউনিভার্সিটি কোলাবরেশন এন্ড নলেজ এক্সচেঞ্জ,
লাইব্রেরি ওয়ার্ক,
ল্যাবরেটরি ওয়ার্ক,
একাডেমিক সেমিনার অ্যান্ড ওয়ার্কশপ (যা মূল কার্যক্রমের বাধ্যতামূলক অংশ),
আর্টিকেল পাবলিকেশন,
ক্যারিয়ার ক্লাবিং
-এগুলো এটেন্ড না করে বা প্রায় এটেন্ড না করেই যদি ডিগ্রীটি পারফেক্টলী অর্জন করা সত্যিই সম্ভব হয়, তাহলে ক্লাস, টিউটোরিয়ালের মতো অপ্রয়োজনীয় সেগমেন্ট কেন রাখা হয়েছে? ক্লাস করতে হয় না, কোনো টিউটোরিয়াল নেই, কোনো মিড কোর্স এক্সাম নেই, কোনো টার্ম পেপারের বালাই নেই। ক্লাস না করে শিক্ষার্থীরা এমনকি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রীও নিয়ে নিচ্ছে। আমি প্রায়শই এমন চাকরি প্রত্যাশীদের সামনে বসার সুযোগ পাই, যারা এমনকি প্রোডাকশন ফ্লোরে চাকরিরত অবস্থায় গ্রাজুয়েশন করছেন। কেউ এম.বি.এ। ক্লাস, পরীক্ষা সবই যেনতেন। কেন করছেন, যদি জিজ্ঞেস করি, তাদের একটাই কথা, পুরোদস্তুর ছাত্র বনে যাওয়া সম্ভব না। চাকরি করতেই হবে। সেই সাথে যদি একটা ডিগ্রী নিয়ে নেয়া যায়। ডিগ্রী ছাড়াও ভাল জবের ডাক আসে না, প্রোমোশন হয় না। এই ডিগ্রী হতে কী পাচ্ছেন-প্রশ্ন করলে মাথা নিচু করে রাখে। কষ্ট হয় তাদের জন্য। যদি মনে হয়, যে, ক্লাস, টিউটোরিয়াল ও অন্যান্য প্রসেস মাস্ট নিডেড, তাহলে সেটা ছাড়া ডিগ্রী কেন দেয়া হচ্ছে বা দিয়ে কী লাভ হচ্ছে?
আগে বলে নিই, বাড়তি ডিগ্রী, বা ধরুন মূল ডিগ্রীই আমাদের কী কাজে আসে? একটি সার্টিফিকেট বা একটি এম.বি.এ আপনাকে কী দেয়? শুধুই কি একটি কাগজ? সামান্য বাড়তি জ্ঞান? নাকি অনেক কিছু? সহজ করে বললে, শিক্ষা, শিক্ষাক্রম, শিক্ষায়তনে গমন ও অবস্থান ও পরিভ্রমন, ডিগ্রী গ্রহন এবং ডিগ্রী গ্রহনের পুরো যাত্রাটা আমাদের কী দেয়? বা, কী দেবার কথা?
১. শিক্ষা গ্রহণের মূল অবজেকটিভ হল মনুষ্যত্ব অর্জন তথা আলোকিত, সুসভ্য, আধুনিক মানুষ হওয়া। যার মাধ্যম হবে শিক্ষার মধ্যে দিয়ে পাওয়া জ্ঞান, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, বোধ, বিশ্বাস, তথ্য, তত্ব, যৌক্তিক চিন্তা ইত্যাদি।
২. শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত থাকা, শিক্ষাক্রমের বিবিধ ধরনের কর্মসূচীতে নিহীত থাকা, শিক্ষাগ্রহণের নানাবিধ পর্যায়ের ভেতর দিয়ে যাওয়া এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্পর্শে থাকা, সহশিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ নানাবিধ ধরনের ব্যক্তিবর্গের সংস্পর্শ থাকা-এই সবকিছু একটি টোটালিটি। শিক্ষা আসলে একটি টোটালিটির নাম। এই টোটালিটির স্পর্শ মানুষকে সচেতন করে, আলোকিত করে, আধুনিক করে, বুদ্ধিমান করে, দক্ষ করে, কর্মমুখী করে, ভবিষ্যতমুখী করে, চিন্তাশীল করে।
৩. শিক্ষিত হবার সরাসরি লক্ষ্য যদিও এটা নয়, তবুও শিক্ষার উপজাত বা বাই-প্রোডাক্ট হল ক্যারিয়ার বা কর্মসংস্থান। সাধারনত যারা শিক্ষিত, তাদের কর্মসংস্থান হবার সম্ভাবনা বেশি। ক্যারিয়ার রিচ হবার সম্ভাবনাও বেশি। তার মানে আবার এই নয়, যে, শিক্ষিত হলেই বেকার থাকতে হবে না, বা, শিক্ষিতরা বাই ডিফল্ট উচ্চ আয়ের কাজ পাবে।
৪. সেই সাথে শিক্ষাক্রমের টোটাল যাত্রা নেটওয়ার্ক গড়ে। শিক্ষায়তন কেন্দ্রীক নেটওয়ার্ক আজীবন আপনাকে সাহায্য করবে। একটি বাড়তি ডিগ্রী মানেই নেটওয়ার্কটাকে আরেকটু বুস্ট করা। সেজন্যই লোকে IBA তে MBA করতে বলে।
তাই, আমি বলব, MBA/PGD/PHD অর্জনের সবথেকে বড় লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হল এগুলো। তবে ৫ নম্বর আরেকটা লাভ হয়। যদিও আমি এটাকে লক্ষ্য বলতে রাজি না। এটা উপজাত এবং খুব সংকীর্ণ উপজাত।
৫. আপনার প্রোফাইল ও পোর্টফলিওর ওজন বৃদ্ধি। শুনতে অস্বস্তিকর ও হাস্যকর হলেও সত্যি, বাড়তি ডিগ্রী ও সার্টিফিকেটকে এই দেশে বাড়তি এমপ্লয়্যাবিলিটি হিসেবে টিট করেন এমপ্লয়াররা। রেজুমেতে ভুড়ি ভুড়ি ডিগ্রী আপনার রেজুমের ওজন বাড়িয়ে দেয়। বাড়তি ডাক পেতে, ইন্টারভিউতে সমীহ পেতে সাহায্য করে ডিগ্রীর ওজন। কারো কাছে এই ডিগ্রী প্রাপ্তি নেহাতই চাকরির আবেদন করবার ন্যুনতম যোগ্যতা মিট করতে। তলানী যা-ই হোক। সেই সাথে নিজের পায়াভারি হবার আত্মপ্রসাদ তো আছেই। নিখাঁদ জ্ঞান ও দক্ষতার জন্য ডিগ্রী নেন-এমন মানুষ বিরল। এবং, এই লাইনে এখন আর MBA/PGD এসবের কদর নেই, মানুষ এখন PHD’র পেছনে দৌড়াচ্ছে।
অনেকেই জানতে চান, যে, ভাই, অমুক ডিগ্রীটা করতে চাই, তমুক সার্টিফিকেটটা নিতে চাই। ওগুলো করলে কি বিশেষ কোনো লাভ পাব? অনেকে আবার জানতে চান, সমুক ডিগ্রীটা কমুক প্রতিষ্ঠান হতে করলে কি কাজে দেবে তেমন?
-ওয়েল, পড়াশোনা জড়িত আছে-এমন যেকোনো কিছুতে আপনার সবচেয়ে বড় অবজেকটিভ ও পারপাস হওয়া উচিত বিদ্যা ও জ্ঞান। তারপর অন্যসব।
তো, ডিগ্রীটা নিলে বিশেষ কোনো প্রাপ্তি আছে কিনা, এবং, সেটি বিশেষ কোনো উচ্চ মাকাম হতে না নিলে তা জলে যাবে কিনা-এটাই যাদের জিজ্ঞাসা, তাদেরকে আমি আমার মতো একটি উত্তর সবসময় দিই।
সেটা একটা অলরেডি বলেছি। যে, ডিগ্রী বা সার্টিফিকেশনে এনরোল করবার নাম্বার ওয়ান অবজেকটিভ ও এক্সপেকটেড টেক এ্যাওয়ে হওয়া উচিত জ্ঞান।
বাকিটা নিয়ে এবার বলি।
আপনি কোন ডিগ্রী, কত বড় ডিগ্রী, কত বড় ও নামজাদা প্রতিষ্ঠান হতে সার্টিফিকেটটা নিলেন-শুধুমাত্র সেই নাম ও গরমটুকু আপনার ব্র্যান্ডিং ও অপরচুনিটি বাড়াবার কাজে দিলেও দিতে পারে।
আর যদি বলেন, যে, মূল কাজে ও কর্মক্ষেত্রে সেটা কতটা কাজ দেবে-সেই মৌলিক প্রশ্নে বলব, ডিগ্রী বা সার্টিফিকেট অর্জনের চেয়ে অনেক বেশি জরুরী হল, সেটি অর্জন করার মধ্য দিয়ে লব্ধ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতাকে আপনি কতটা সুচারুভাবে ও কার্যকরভাবে ট্রান্সলেট, ট্রান্সমিট ও ট্রান্সফরম করতে পারেন। অন্যথায় সেটা আপনার জেল্লা বাড়ালেও টিম বা প্রতিষ্ঠানের জেল্লা না-ও বাড়াতে পারে।
এবার বলি, ডিগ্রী বা সার্টিফিকেশন কতটা মানসম্মত হওয়া দরকার?
১. আগেই বলে রেখেছি, এই দেশে (আসলে সবদেশেই কমবেশি) খয়রাতি PHD, মারফতি PHD আছে। পান দোকানের ওপরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় হতে মানসম্মত ডিগ্রী পাবার আশা ক্ষীণ। মূলত তাদেরও ধান্দা হল বিজনেস। সার্টিফিকেট বিক্রীর বিজনেস। আবার, তাদের কাস্টমারদেরও চাই একটা কাগজ। জ্ঞান বা যোগ্যতা তাদেরও লক্ষ্য না। একদম সোনায় সোহাগা।
২. মানসম্মত শিক্ষা বা সার্টিফিকেট যদি পেতে হয়, তাহলে ইন্সটিটিউটকে মানসম্মত হতে হবে। সেক্ষেত্রে ওপরে ইন্সটিটিউটের যেসব কার্যক্রম ও উপাদানের নাম নিয়েছি, তার সবগুলো তাদের থাকতে হবে। দেখে নিন, সেগুলো তাদের আছে কিনা।
৩. যেখান হতে ডিগ্রী বা সার্টিফিকেট নেবেন, সেটার বিশ্ব রেটিং কেমন, জাতীয় রেটিং কত, এফিলিয়েশন আছে কিনা, নিয়মিত কনভোকেশন হয় কিনা, খরচ কেমন, ফ্যাক্টাল্টি ও ডিসিপ্লিনগুলো কতটা রিচ বিশেষত ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের কী পরিমান পি.এইচ.ডি হোল্ডার, সাবজেক্টগুলো কতটা আধুনিক, কারিক্যুলাম কতটা ডায়নামিক ও ফ্লেক্সিবল, ক্রেডিট আওয়ার কতটা, তাদের এ্যলামনিদের বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে স্ট্যাডি-এসব বিষয় মানের ওপর প্রভাব ফেলে।
৪. কৃত ডিগ্রী অবশ্যই মানসম্মত হওয়াটা জরুরী। যদি স্রেফ নাম কামানো ও দর বাড়ানোও উদ্দেশ্য হয়, তবুও মানসম্মত হওয়াটা দেখে নিতে হবে। অন্যথায় যেই সামাজিক কদরের আশায় ডিগ্রীটা নেন, সেই সমাজের একটি অংশ অন্তত আলোকিত আছে। তাদের কাছে হাসির পাত্র হবেন। ডিগ্রীর মানে কম্প্রোমাইজ করলে সামাজিক স্বীকৃতির দিকটা পুষিয়ে গেলেও সেই ডিগ্রী যেসব স্থানে বিক্রী করতে পারবেন বা বিনিময় মূল্য পাবেন, তারা এমনিতে খুব ভাল প্রতিষ্ঠান হবে না। সেসব প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পেরে, আপাতত কিছু পেতে পেরে বগল বাজাতেই পারেন, আখেরে ভাল হবার কথা না।
৫. সবচেয়ে বড় কথা, ভাল প্রতিষ্ঠান ও ভাল মানুষের কাছে আপনার ডিগ্রী বা সার্টিফিকেটের লবডঙ্কা কোয়ালিটি ধরা পড়ে যাবে। যখন সত্যি সত্যি ডিগ্রীর এ্যপ্লিকেবিলিটি দরকার হবে-তখন তা পারবেন না। ফেল মারবেন। অপদস্থ হবেন। পৃথিবীতে অনেক বদল এসেছে। কিন্তু, গুনগতমানের প্রশ্নে এখনো মানুষ চুজি। এমপ্লয়াররা টাকা দিলে সেটা তারা জলে ফেলতে রাজি নন। তারা বাজিয়েই দেখে নেবেন। আর যারা বাজান না, তারা ভাল লোক না। এখন বদ লোকের সাথে নিশ্চয়ই আপনি কাজ করতে চান না।
৬. পাড়ার মোড়ের, পান দোকানের, অনলাইনের বায়বীয় প্রতিষ্ঠান হতে পাওয়া সস্তা সার্টিফিকেট বা কেনা সার্টিফিকেট, মায় PHD নামের আগে-পরে লাগিয়ে লাভ নেই। বরং, পড়াশোনা করে, কষ্ট করে ওটা পান। ভাল জিনিসের কদর আজীবন থাকবে। সেই সাথে, মুড়ি মুড়কির মতো সার্টিফিকেট নিয়ে লাভ নেই। ধাপে ধাপে, বাজার যাচাই করে, অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এবং বাজারের সাথে এলাইনড থেকে সার্টিফিকেট নিন। তথাকথিত পীর-মোরশেদদের মতো সুদীর্ঘ টাইটেলের লেজ লিংকডইনে দিলে মানুষ হাসে। নিজেকে হাসির পাত্র বানাতে চাইলে বানান। কে থামায়?
আর ডিগ্রী, সার্টিফিকেট কাজে আসার প্রশ্নে সবচেয়ে প্রনিধানযোগ্য হল, আপনি কোন ডিগ্রী, কত বড় ডিগ্রী, কত বড় ও নামজাদা প্রতিষ্ঠান হতে সার্টিফিকেটটা নিলেন-শুধুমাত্র সেই নাম ও গরমটুকু আপনার ব্র্যান্ডিং ও অপরচুনিটি বাড়াবার কাজে দিলেও দিতে পারে। আর যদি বলেন, যে, মূল কাজে ও কর্মক্ষেত্রে সেটা কতটা কাজ দেবে-সেই মৌলিক প্রশ্নে বলব, ডিগ্রী বা সার্টিফিকেট অর্জনের চেয়ে অনেক বেশি জরুরী হল, সেটি অর্জন করার মধ্য দিয়ে লব্ধ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতাকে আপনি কতটা সুচারুভাবে ও কার্যকরভাবে ট্রান্সলেট, ট্রান্সমিট ও ট্রান্সফরম করতে পারেন। অন্যথায় সেটা আপনার জেল্লা বাড়ালেও টিম বা প্রতিষ্ঠানের জেল্লা না-ও বাড়াতে পারে।
#MBA #PGD #higherdegree #affiliation #certification #academicvalue #academicsystem #howwegrow