সাধারনত পোস্টের ত্যানা পাঠকরা প্যাঁচান। তবে, আমি মাঝে মধ্যে তাদের কষ্ট কমাতে নিজেই ত্যানা কমেন্ট সাথে দিয়ে দিই, যাতে তাদের প্যাঁচাতে সময় নষ্ট বা জীবন কষ্ট না হয়।
এই পোস্টের ত্যানা কমেন্ট হল:
১. ”হালার পো, নিজেরে পোরগতিবাদী দেহাইবার চাও, না?”
২. “হা….র পুলা, তগো লাইগাই দ্যাশটা রসাতলে গেল।”
মূল পোস্ট এবার:
গতকাল আমাদের মহল্লায় যেই টং দোকান হতে আমরা দু’জন নিয়মিত চা খাই এবং অতঃপর হাঁটতে যাই, সেই দোকান ও সংলগ্ন এলাকার বাদবাকি ছোট ছোট পথখাবার দোকানগুলোর স্থানে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে, যার লোকাল নাম ‘জেহাদ’।
কী হয়েছে?
না, বিরাট কিছু না। পথখাবারের (স্ট্রীট ফুড) দোকানের একটার সামনে রোজকার নিয়মেই নানা বয়সী মানুষ খাওয়া, চা-পান, আড্ডা, ’মাইয়া দেহা’, ধান্দা-ইত্যকার কাজে ন্যস্ত ছিল।
রোজকার মতোই, গতকালও একটি দলে একজন বা দু’জন নারী অন্য ছেলেদের সাথে দাড়িয়ে পাশেই সিগারেট ফুঁকছিলেন। ছেলেরাও, মেয়ে দুটিও। (ওহ, মেয়েরা তথাকথিত ’উত্তেজক’ ড্রেস পরিহিত ছিলেন।) বিষয়টা নতুন না। ওই অঞ্চলে খুব একটা অভিনবও না।
তবে কথায় আছে না, সময় খারাপ হলে সাদা লুঙ্গি হতেও রং ওঠে।
গতকাল বোধহয় তাই ছিল।
পাশ দিয়েই হয়তো কোনো জাগ্রত জাতির বিবেক যাচ্ছিলেন। বা হয়তো কোনো ‘আসল পুরুষ’ যাচ্ছিলেন। তিনি ওই ‘উত্তেজক’ ও ‘বেশরম’ নারীদের চ্যালেঞ্জ করে বসেন। নারী ও তার ততোধিক ‘উত্তেজক’ সঙ্গীরা তার পক্ষ নিয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ। সাথে সাথে চারপাশের জাগ্রত জনতা দুই ভাগে ভাগ হয়ে লড়াইয়ে অংশ নেন। (মেয়েদের সপক্ষে ২৫% আর বিপক্ষে ৭৫%।)
ফলাফল, ঘন্টাখানিকের জন্য এলাকার সব দোকানে বেঁচাবিক্রী লাটে। (তবে, খেয়াল করে দেখেছি, স্থানীয় জগদ্বিখ্যাত হাপিশ হোডেল ঠিকই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল।)
কাকতালীয়ভাবে, গতকালই এক সুহৃদের সমধর্মী একটি লেখায় একটা দীর্ঘ কমেন্ট করেছিলাম। রাতেই এই ঘটনা। বুঝলাম না, ইন্সট্যান্ট কারমা বোধহয় একেই বলে। কমেন্টটা কপি করছি।
[তোমার কনসার্ন আসলে কোনটি?
দু’জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক সিগারেট পান করছে বলে?
দু’জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্কুল টাইমে সিগারেট পান করছে বলে?
দু’জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে স্কুল টাইমে সিগারেট পান করছে বলে?
দু’জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে স্কুল টাইমে প্রকাশ্যে সিগারেট পান করছে বলে?
দু’জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক, মেয়ে, স্কুল টাইমে, প্রকাশ্যে, স্কুল ড্রেস পরে সিগারেট পান করছে বলে?
প্রতিটি পারসপেকটিভের বিপরীত দিকটি মিলাও।
প্রাপ্ত বয়স্ক হলে,
স্কুল টাইমে নয়, বাসায় বসে করলে,
মেয়ের জায়গায় ছেলে হলে,
প্রকাশ্যে না হয়ে গোপনে হলেও-ঘটনাটা একই ও অভিন্ন।
ধুমপান একটি অন্যায্য ও অপরাধমূলক প্রবৃত্তি। সেটা মেয়েদের বাবা করলেও। মা করলেও। মেয়েরা করলেও। ছেলেরা করলেও।
এখন তুমি বলতেই পারো, আমাদের আগের দিনের আদব লেহাজ উঠে গেছে, মানুষ ডেসপারেট হয়ে গেছে ইত্যাদি।
ওয়েল, ওইসব আদব লেহাজ ও সামাজিক ট্যাবু নেহাতই ট্যাবু ও সোশ্যাল মিথ। বাস্তবে ওগুলো ন্যায় অন্যায়ের মাপকাঠি নয়। ন্যায় ও অন্যায়ের মাপকাঠির আলোচনা আরো অনেক ইনটেনসিভ, কমপ্রিহেনসিভ ও ইনক্লুসিভ।]
একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে যদি প্রকাশ্য স্থানে ধুমপানের মতো কাজ করতে পারে যা আপনার চোখে সয়ে গেছে, (ব্যক্তিগতভাবে কাজটি আমার খুবই অপছন্দনীয়), তাহলে শুধু মেয়ে হবার কারনে কাজটি অন্য কেউ করতে পারবে না-এই যুক্তিকে আমি অসার মনে করি। ছেলেরা জনসমাগমে বিড়ি ফুঁকলে ও লক্ষ লোকের সামনে রেচনাঙ্গ হতে জলবিসর্জন করলে যদি সেটিকে মান্যতা দেয়া হয়, তাহলে একই কাজ নারী করলে সেটিকে বাঁধা দেবার নৈতিক অধিকার সমাজের থাকে না।
যুগ পাল্টেছে। যুগ পাল্টাবে। যুগের অনেক পরিবর্তন ও বিবর্তনই মানুষ একসেপ্ট করে নিয়েছে। বরং, সেই যুগের অনেক ট্যাবুও মানুষ এখন পূণ্য মনে করে করছে। তাই পরিবর্তনের সাথে এডাপটেড হওয়া আপনার কাছে কাম্য।
সেটি যদি আপনি করতে ব্যর্থ হন, তাহলে, রাস্তাঘাটে অমন ‘বেশরম ও অসামাজিক’ কাজ দেখে মনোঃকষ্ট পাওয়া ও ….নুভূতি আহত হবার দায় ওই করনেওলাদের না, বরং সেটা আপনার মানসিক সীমাবদ্ধতা। হ্যা, নারীর মুক্তি, সমতায়ন, ক্ষমতায়ন, নির্বান-এগুলো শুধুমাত্র পুরুষের অনুকরন করতে পারবার মধ্যে নিহিত নয়। ছেলেরা যা যা করে, যেভাবে করে, সেই সব কিছু আমরা সেভাবেই করব-এটা নারীবাদ ও নারিমুক্তির প্যারামিটার নয়। পুরুষরা আপনাদের জন্য বেঞ্চমার্ক নন।
#taboo #masculinism #domination #ambiguity #womensmoking