Skip to content

মব জাস্টিসের নামে মবোক্রেসির বাড়বাড়ন্তের ভূখন্ডে পপুলার মেজরিটির চাপতত্বের পাঠ; বাকস্বাধীনতার নয়া সংজ্ঞায়ন এবং পরিসংখ্যানের যাদুকরী উন্নয়ন সঙ্গীতের মূলকে গণতন্ত্রের হোমাগ্নিতে স্নাত আমাদের মনমানসে প্রাইভেসিবোধের পরিপক্কতা

”তুমি কি রোজা”-এই প্রশ্নটি কেউ কি কাউকে করেন? কেন জিজ্ঞেস করছি সেটা পরবর্তিতে বলব। সময় হোক। ক্রমশ প্রকাশ্য।

একবার আমেরিকান, বৃটিষ ও বাঙালী পুলিশের মধ্যে তর্ক হচ্ছিল, যে, কে সবচেয়ে ইফিশিয়েন্ট। ঠিক হল একটা হরিণকে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হবে। যে দেশের পুলিশ সবচেয়ে দ্রূত সেই হরিণটিকে ধরে আনতে পারবে সে হবে সবচেয়ে ইফিশিয়েন্ট।

আমেরিকান পুলিশ এফবিআই, সিআইএ, এপাচি কপ্টার-সমস্ত শক্তি লাগিয়েও হরিণকে আর ধরতে পারল না। ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলো। এবার বৃটিষ পুলিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সব কারিশমা নিয়েও হরিণকে ধরতে ব্যর্থ হয়ে ফেরত এলো।

বাঙালী পেটমোটা বেতো পুলিশ হাতে বেতের লাঠি নিয়ে দুলে দুলে রওনা হল। ঘন্টাখানিক পর সে একটা বাঘকে সেই বেতের ডান্ডা দিয়ে পেটাতে পেটাতে নিয়ে এলো। বাঘ বেদম প্রহারে আধমরা। সেই অবস্থায় তাকে ঘাড়ের কাছে লাঠি ধরে পুলিশ বলছে,

”সত্যি করে বল। একটুও মিথ্যা বলবি না। তুই কি সেই হরিণটা না?”

বাঘ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলছে, “বস, খোদার কিরা, বিশ্বাস করেন, আমিই আপনাদের সেই ছেড়ে দেয়া হরিণ।” আপনি যদি সূক্ষ্ণ হিউমার ধরতে না পারেন, কষ্ট পাবেন না। আমিও পারি না। এই জোকটার মর্মার্থ আরও সহজ করে বলে দেবার দরকার পড়বার কথা না।

রঙ্গে ভরা বঙ্গদেশের অতি শীঘ্রই ’ছাড়োনা’ মুক্তির পথে অব্যহত দুর্বার গতিতে ধাবমানতার সাথে এই গল্পের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। খোদার কিরা। আপনি যদি তবুও কোনো সংযোগ খুঁজে বসে থাকেন, আপনি মানুষটা নিতান্তই হাফ বদ। (মূল লেখাটির সূত্রপাত করোনাকালে।)

সত্য দু’রকম হয়। একটা ধরন হল ইটচাপা দেয়া ঘাসের মতো। যতক্ষণ ইটটা যথাস্থানে আছে, ততক্ষণ ঘাসগুলোকে সবুজ, সজীব মনে হবে। এর মধ্যে মিথ্যাও কিছু নেই। কিন্তু, ইটখানা সরালেই দেখা যাবে, যে, ঘাসগুলো আসলে আর সবুজ নেই, সাদা হয়ে গেছে। এবং, সেটাই সত্য। সত্যিকারের সত্য জানতে হলে আপনাকে ভিন্নচোখে ভিন্নরূপে দেখবার চেষ্টা ও ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

আপনি যদি বীজগণিত আর স্ট্যাটিসটিকসে তুখোড় হন, তাহলে আপনার বয়স আপনার বাপের বয়সের থেকে বেশি, কিংবা পৃথিবীর চেয়ে সূর্যের আয়তন ছোট, কিংবা ধরেন, বাংলাদেশ সত্যি সত্যিই খ্যানাডার চেয়ে ধনী-সেটা হাতে+কলমে দেখিয়ে দেয়া কোনো ব্যাপারই না। লাগবেন বাজি? আমি দুয়েকটা দেখাই।

একটা সরল রেখাকে না কেটে, না মুছে, না দাগিয়ে ছোট করে দিতে হবে। কীভাবে করবেন? সিম্পল। ওটার নিচ দিয়ে আরেকটা বড় রেখা টেনে দিন। ওটা ছোট হয়ে যাবে।

দেশে রোজ লোক মরছে পারোনায়? কষ্ট হচ্ছে? কষ্ট হলেই ট্রাম্পল্যান্ডে দেড় লাখ মরার খবর স্নরন করুন। দেশে মরার হার তুচ্ছ মনে হবে।

বাল্যবিবাহের সংখ্যা কমানোর ইনডেক্সে কিছুতেই সাফল্য লাভ করতে পারছেন না। সহজ প্রেসক্রিপশন আছে। বাল্যবিবাহ গণ্য হবার বয়সটা ১৮ বছর হতে ৫ বছর কমিয়ে ১৩ করে দিন। রাতারাতি বাল্যবিবাহের পরিসংখ্যান কমে যাবে।

’মরোনা’য় সুস্থতার হার বাড়ছে না? বটিকা আছে। সুস্থতার সংজ্ঞা বদলে দিন। ব্যাস। রাতারাতি ৫ হাজার লোক সুস্থ হবে রোজ।

’মারোনা’য় আক্রান্তের হার কমানো যাচ্ছে না। টেস্ট দিন দিন কমিয়ে দিন। আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন কমে যাবে। অবস্থা এমন হবে, যে, সুস্থ হবার জন্য তখন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আমার বাপের বাড়ি বাগেরহাটে একটা এলাকা আছে, যাত্রাপুর। গল্পটা যাত্রাপুরের।

বহু আগে সেই যাত্রাপুরের ওপর দিয়ে বাগেরহাট-খুলনা ট্রেন লাইন নির্মানের তোড়জোড় শুরু হল। জমি মাপজোক হচ্ছে। এক বুড়ির বাড়ি পড়েছে একোয়ারের ভিতর।

তো ক্ষতিপূরণের হিসাব নিকাশ করতে সার্ভেয়ার তার কাছে জিজ্ঞেস করল, তা বুড়ি, তোমার জমিতে ঘর আছে? বুড়ি বলল, আছে। কী রকম ঘর? বুড়ি বলতে গেল, “দো চালা”-মানে শন দিয়ে ছাওয়া দুই চালের কাঁচা ঘর। বুড়ির দাঁত নেই।

তার ফোকলা মুখে বলা সেই “দো-চালা”কে সার্ভেয়ার শুনল “দো-তলা”। সেটাই সে টুকে নিয়ে গেল। ক্ষতিপুরণ পাবার দিন বুড়ি তার সেই ‘দো-চালা” কাঁচা ঘরের ক্ষতিপুরণ পেল ‘দো-তলা” পাকা ঘরের। এটা হল কথার মারপ্যাঁচ আর শোনার অক্ষমতা কিংবা ট্রান্সলেট করবার ক্ষমতা নিয়ে বানানো আষাঢ়ে আজগাই গপ্প।

বিশ্বাস হল না? ওহ বস, তাহলে আপনার জন্য ‘গণ পরিবহন” ও ‘পণ্য পরিবহন’ এর গপ্পটা বরাদ্দ রইল। ওটা নিশ্চই বিশ্বাস হবে।

এমপিথ্রি হাফেজরা যখন কাতারে কাতারে রাজকীয় কর্মচারীর পদ অলংকৃত করতে থাকেন, তখনতো এমন গণ ও পণ্য বিভ্রাট হবেই। আসলে ওটা প্রিন্টিং মিসটেকও ছিল না। আপনাদের কানে সমস্যা। পণ্যই বলেছে। আপনারা শুনেছিলেন গণ। ভুল আপনারা করবেন, দায় অন্যকে দেবে, তা হবে না, তা হবে না।

সুতরাং করোনাকালীন প্রতিটি ইদে সামাজিক দূরত্বের মাম্মি-ড্যাডিকে শতবার রেপ করে করোনার আশির্বাদ দেশব্যাপী বারবার বিতরণ হয়েছে। কিন্তু, তাতে কিন্তু থেমে থাকেনি, হঠাৎ হঠাৎ মফস্বলের এক শহরে সামাজিক দূরত্ব ভঙ্গ করায় জরিমানার অভিযান। ঠিক যেমন, আপনাদের এত রকম টিটকারী সত্বেও থেমে থাকে নি ছ্যাচড়া ‘কর্নেল’ ওয়াহেদকে ধরার অভিযান।

তবে খোদার শুকরিয়া, বহুকাল পরে বঙ্গদেশ একজন জীবন্ত সিরাজদ্দৌলাকে দেখতে পেয়েছে। সিরাজদ্দৌলা যুদ্ধে হেরে তার রাজ্যপাট রেখে নৌকায় করে পালানোর সময় ভগবান গোলায় ধরা পড়েন। স্বঘোষিত কর্ণেল ওয়াহেদ চোরাও ইছামতি নদী দিয়ে নৌকায় করে পালানোর সময় ধরা পড়ে। সেই দিক হতে সে নিজেকে একটু নবাব নবাব ভাবতেই পারে। কী তেলেসমাতি গো গোলাম হোসেন। ৫০ টি মামলার আসামী এই দেশে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়, টকশো করে, রাজকীয় কত্তিপক্ককে ঘোল খাওয়ায়।

অনেক আগে শুনেছিলাম, এক বাটপার নাকি প্যারিসের আইফেল টাওয়ার দুই দুইবার বেঁচে দিয়েছিল। ’মেজর’ ওয়াহেদ বোধহয় তার ওস্তাদই হবেন। তবে মিয়া ভাইয়েরা, জাতীয় করোনা হিরো ওয়াহেদ সাবরে এই বিশাল আয়োজন করে ধরা আর আমাদের উল্লাসের স্থায়ীত্ব যতটাই হোক, বেশি মাতিয়েন না গো। বিশ্ব সংসার তোলপাড় করে ধরে আনা আসামীকে চমৎকার করে জামিন দিয়ে দেয়ার মতো ফোকড় এদেশের সিস্টেমে তো নতুন না।

এই দেশ হল সেই দেশ, যেখানে ’ধরোনা’র তীব্র সংক্রমণের সময়ে ভর্তি করার জন্য হাসপাতালে রোগী পাওয়া যেত না। কী তামশা! আচ্ছা, আমাকে কি কেউ বলতে পারবেন, বাংলাদেশের সমস্ত হাসপাতালের নামের আগে ‘তিনশো, পাঁচশো, চারশো, আড়াইশো শয্যা বিশিষ্ট অমুক হাসপাতাল” কথাটা কেন লেখা থাকে? এটাতো হাসপাতাল, হোটেল বা ব্রোথেল তো না, যে কতটা শয্যা আছে তার ওপর এর রেটিং হবে।

তবে তেলেসমাতি আপনারাও কম দেখান না। প্রকাশ্য মিডিয়ায় ড. সাবরিনাকে নিয়ে প্রতারনার পাপের কারনে তীব্র বিষোদগার, বিচারের গণদাবী। আবার সেই একই পোস্টে ক্ষণপতনা বাঙালী পুরুষ ও নারীদের Racial, sexual, abusive তীব্রতম নোংরা মন্তব্য। মিসেস সাবরিনার বিচার দাবী করতে বা তার স্বরুপ উন্মোচন করতে কি তার আপাতঃ বিষ্ফোরক ছবি তার প্রোফাইল হতে সংগ্রহ করে সেটা পোস্টে দেয়াটা খুব জরুরী?

বুঝতে পারছি না, বাঙালী জাগ্রত মর্দে মুমীনরা মিসেস সাবরিনার প্রতারনা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন? নাকি তার উদ্দাম প্রোফাইল নিয়ে বেশি কামোন্মত্ত?

কয়েকজনকে দেখেছিলাম মন্তব্য করতে, ডাক্তার মানুষ এত হর্নি ছবি তোলে কী মনে করে? তা মিয়া সাব, ডাক্তার হতে গেলে কি তবে তাকে নপুংসক হতে হবে?

একবার এক লোক চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছে। তাকে ইন্টারভিউয়ার জিজ্ঞেস করলেন, তা আপনি আপনার আগের চাকরিটা কেন ছাড়লেন? প্রার্থী বলল, “স্যার, আমার আগের অফিস নিজেদের নতুন ঠিকানায় শিফট হয়েছে। কিন্তু আমি সেই নতুন ঠিকানাটা কোথায়, তা জানতাম না।” আমরা আসলে আমাদের লুঙ্গি হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু, কোথায় হারিয়েছি তা জানি না।

ঢঙ্গে ভরা বঙ্গদেশে যদি আপনি এরপরও ’পারোনা’ মুক্তির স্বপ্নে বিভোর থাকেন, আর এই গপ্পের সাথে বঙ্গদেশের ’ছাড়োনা’র গর্তে চিরভূক্তির কোনো দূরতম সংযোগও খোঁজেন, তাহলে আপনি হাফ না, পুরোই বদনা।

শ্রোতার ট্রান্সলেশন নিয়ে যখন খোঁচাটা দিলামই, তখন আরেকটু বলি। পৃথিবীতে বিখ্যাত বক্তা প্রচুর আছেন। কিন্তু বিখ্যাত শ্রোতার সংখ্যা খুব বিরল। যতটা না বলবেন তার থেকে বেশি আগে শুনুন। শ্রোতা হিসেবে বিখ্যাত হওয়া সহজ কারন কমপিটিশন কম।

আর সত্যিটা যদি জানতে চান তবে সত্যি বলার পরিবেশ বানান সবার আগে। সত্যি বলার সৎ সাহস করার আত্মবিশ্বাস তৈরী করুন সহকর্মী ও অধস্তনদের মাঝে। মুক্তচিন্তা করার সবরকম সাপোর্ট ও নির্ভয়তা তৈরী করুন আগে।

তবেই আপনার সহকর্মী, অধস্তন, টীমমেটদের কাছ হতে সত্য তথ্য ও সত্য ঘটনাটা বের করে আনতে পারবেন। যদি তা না করে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মানে ভয়ের পরিবেশ বহাল রেখে সত্যিটা জানতে চান, তবে যেটা পাবেন তা হল, ফ্যাব্রিকেটেড সত্যি। সত্যি সত্যি না।

আপনি যদি চান আপনার কাছের মানুষ বা পরিবারের মানুষেরা; অথবা, আপনার প্রতিষ্ঠান যদি হঠাৎ একদিন সিদ্ধান্ত নেয় এবং সবার কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে যে অফিসের সবাইকে সত্যি বলার চর্চা করতে হবে এবং একদমই মিথ্যা কথা বলা যাবে না;

তখন আপনি/আপনারা দুটো কাজ করতে পারেন: –

১. আপনারা একটা লাই ডিটেকশন মেশিন বা রোবট বা সিস্টেম ইনষ্টল করতে পারেন। যাতে করে যে কেউ মিথ্যা কথা বলবে সেটা সাথে সাথে ধরা পড়ে যাবে। আবার মিথ্যা বলার জন্য বিশাল রকম শাস্তির ব্যবস্থা আগে হতেই করে রাখবেন। ফলে কেউ আর ভয়ে মিথ্যা কথা বলবে না।

২. কিন্তু, এক নম্বর পথ, মানে সবথেকে সস্তা, সহজ অথচ হাবিজাবি পথটায় না হেঁটে তারও আগে আপনাকে আরেকটা কাজ করতে হবে। বরং বলব, দ্বিতীয় কাজটা বা পথটায় হাঁটলেই বরং বেশি কাজ হবে। সেটা কী?

সেটা হল, আপনার প্রতিষ্ঠানের জেনেটার হতে ডিরেক্টর, এন্ট্রি হতে এক্সিট-সবার জন্য সত্যি বলবার মতো সৎ ও সহায়ক পরিবেশ ও আস্থা তৈরী করুন। সত্যি কথা বললে যে সেটাকে মূল্য দেয়া হবে, পুরস্কৃত করা হবে, সত্যিকে প্যাট্রোনাইজ করা হবে-সার্বিকভাবে সত্যি বলবার নির্মল পরিবেশ আগে তৈরী করুন। অন্যথায় জীবনেও মিথ্যা হতে মুক্তি নেই।

আমরা সবাই সত্যি চাই। কিন্তু, বাস্তবতা হল, সত্য’র মুখোমুখি হতে ভয় পাই। সত্যকে ঘৃনা করি। আমরা অনেকটা যাকে বলে পপুলার সত্যিটাকেই সত্যি বলে বিশ্বাস করতে চাই, বা, বিশ্বাস করতে বাধ্য করতে চাই। মেজরিটির কাছে যেটার ন্যারেটিভ যা, মেজরিটির অদৃশ্য হাত যেই ন্যারেটিভ তৈরী করে দেবে, সেটাকেই বিশ্বাস করে নিজের বিশ্বাস হিসেবে সেটাকে সামনে রাখতে চাই। এটা হল পপুলার মেজরিটির অদৃশ্য বায়াস।

অত্যন্ত আতঙ্কজনক হারে বাংলাদেশে যে কটি দুবৃত্তায়ন আগ্রাসী গতিতে বাড়ছে তার একটা হল মাইনরিটি বিশ্বাসের উপর মেজরিটির নির্যাতন, পরমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা আর পরচর্চা। টকশোতে ভদ্র বিতর্ক একপর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয়ার ঘটনাতো বেশ কটি ঘটে গেল এদেশে। অন্যের মত, দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনাকে সহজ ও স্বাভাবিকভাবে সম্মান দেখানোর সংস্কৃতি ধীরে ধীরে এদেশ হতে উঠে যাচ্ছে। যেটা থাকছে সেটা হল হিংস্রভাবে নিজের মতামত উগ্রের মতো জাহির ও প্রতিষ্টা করার নগ্ন প্রচেষ্টা।

একইসাথে আরেকটা দস্যুবৃত্তি এদেশে বাজার পাচ্ছে-মেজরিটি ফ্যাক্টর। সমাজের মেজরিটি পোরশন যেটা ভাবে, যেটা বিশ্বাস করে, যেটা মনে ধারন করে-সেটাকে অন্যদের বিশ্বাসের উপর চাপিয়ে দেয়ার লেজিটিমেসি সর্বত্র। মেজরিটি যেটাকে ঠিক মনে করবে সেটাই ঠিক, মেজরিটি ঠিক করে দেবে আপনি কী খাবেন, কী পড়বেন, কী সিনেমা দেখবেন, কী দেখবেন না। আপনি কোনটাকে সমর্থন করবেন, কোনটাকে ঘৃনা করবেন-সবই হতে হবে মেজরিটির মতের বা বিশ্বাসের সাথে মিল রেখে। তা না করলে আপনি সমাজহারা, সমাজবিরোধী কিংবা খ্যাত। মেজরিটির দৃষ্টিভঙ্গির সাথে না মিললেই সে আপনাকে চোখ রাঙাবে।

মেজরিটি’র এই চাপ শুধু প্রকাশ্যে নয়। অদৃশ্য কিংবা ভার্চুয়াল প্রেশারও দেয় মেজরিটি।

কোথাও একজন মানুষ কোনো একটা (আপাতদৃষ্টিতে) অন্যায় কিছু করল। মেজরিটি যাকে ক্রিমিনাল বলবে আর যাকে তারা ভিকটিম মনে করবে-কোনো প্রশ্ন ছাড়াই আপনাকে প্রকাশ্য বা অদৃশ্য চাপ দেয়া হবে তাদেরকেই ক্রিমিনাল ও ভিকটিম হিসেবে বিশ্বাস করতে।

পুলিশের একজন প্রাক্তন সুপার হিরোর স্ত্রীর খুনকে কেন্দ্র করে প্রথমে পপুলার মেজরিটির চাপে উক্ত পুলিশ কর্তার হিরো ও দুস্থের তকমা পাওয়া আবার দু’দিন পরেই তারই আবার ভিলেন বনে যাওয়ার উদাহরন আছেই।  মেজরিটি যদি মনে করে, ভাস্কর্য ভাঙ্গা পাপ-আপনাকে সেটা নতশীরে মেনে নিতে হবে যে হ্যা পাপ।

কিংবা মেজরিটি যদি ভাস্কর্য ভাঙ্গাকে শুভ কাজ মনে করে-আপনাকে বাধ্য হতে হবে সেটা স্বীকার করতে। ক্রীকেটার মুশফিকের বাবাকে কোনো একটা মামলায় আসামি করা হয়েছে। টিভি, মিডিয়াতে এই ঘটনাটির যেকোনো খবর পরিবেশিত হয় “মুশফিকের বাবা” এই ট্যাগলাইনে। তার বাবা যদি কিছু করে থাকেন সেটা তার নিজের পরিচয়ে। “মুশফিকের বাবা” এই ট্যাগলাইন দেয়া হয় ওই মেজরিটির সেন্টিমেন্ট ড্র করতে।

আপনি মেজরিটির মতের বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন কি মরেছেন। আপনাকে সোস্যাল মিডিয়াতে এমনকি কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তিগত ফোনে পর্যন্ত আপনাকে ধুয়ে দেবে এমনকি প্রাণের হুমকি পর্যন্ত পেতে পারেন।

সংখ্যাগুরু “সমাজের” বিপরীতে চলতে চাইলেই খুন হয়ে যাবেন। আপনাকে অবশ্যই সমাজের বাধ্যগত, গুনমুগ্ধ হয়ে সবার মতো চলতে হবেই।

নিজের মতো চলার কোনো অধিকার আপনার নেই। সমাজের খাবেন, সমাজের পরবেন আর থাকবেন নিজের মতো-তা কি হয়? ”সমাজের” একটা দায়ীত্ব আছে না? একদল মানুষ সমাজকে এক কাতারে দাড় করানো একটা ”মহান” দায়ীত্ব কাঁধে নিয়েছে। আমরা সবাই তাকে চাই বা না চাই তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। কিছু ব্যতিক্রমী ছাড়া আমাদের সমাজটা এমনই পঁচে গেছে।

একটা শোনা গল্প, সত্য নাও হতে পারে।

গ্যালিলিও যখন আবিষ্কার ও প্রচার করা শুরু করেন যে সূর্য স্থীর এবং পৃথিবী তার চারিদিকে ঘোরে তখন সমাজপতি ও যাজকরা নিজেদের কর্তৃত্ব হারানোর ভয়ে তাকে ধরে এনে প্রাণদন্ডের ভয় দেখিয়ে তাকে প্রকাশ্য জনসভায় বলতে বাধ্য করে যে,”না, আমি ভুল বলেছি। পৃথিবী স্থীর, সূর্য তার চারিদিকে ঘোরে।”

তখনকার দিনে যাজক ও তাদের বশংবদ রাজা প্রচার করত যে পৃথিবী স্থীর, সূর্য তার চারিদিকে ঘোরে।তো গ্যালিলিও প্রাণ বাচানোর জন্য এটা ঘোষনা করলেও মুক্তি পেয়ে মাটিতে পা দিয়ে জোরে ৩বার পদাঘাত করে ফিসফিস করে বললেন, “তবুও আমি বলব, সূর্য স্থীর, পৃথিবী ঘোরে”।

যদি গল্পটা মিথ্যাও হয়, তবু বিষয় হল-নতুন এবং আমাদের নিজেদের অজানা বিষয়কে আমরা সহজভাবে নিতে পারিনা। মেজরিটি মানে ধর্মীয় বা জনসংখ্যাগত মেজরিটি নয়। আমি মেজরিটি বোঝাচ্ছি সংখ্যাগুরু বিশ্বাসকে, দৃষ্টিভঙ্গিকে। বাঙালী চিরটাকালই জাজমেন্টাল ছিল। খুব সহজেই সে অন্যের সম্পর্কে নিজের এপ্রোচ বদলে ফেলে। মানুষকে মেপে ফেলে এক দেখাতেই। জানেন কিনা জানি না, এদেশে এটা রীতিমতো গর্বের কথা হল-

“আমি মুখ দেখেই পেটের খবর বলে দিতে পারি” যেটা জাজমেন্টাল মেন্টালিটির চরম নিদর্শন।

এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষের, পরনিন্দা আর পরের ঘরের চৌহদ্দিতে উঁকি মারার ঐতিহ্য বেশ পুরোনো।

বাঙালীর পরচর্চা ও প্রাইভেসি চিন্তার একটা নমুনা বলি।

লোকাল বাসে উঠেছেন। একহাতে বাসের হ্যান্ডেল ধরা। হেলপার ভাড়া চাইতে আপনি একহাতে কোনমতে মানিব্যাগ খুলে টাকা বের করবেন। পাশের তিনজন যাত্রী খুব আগ্রহ করে আপনার মানিব্যাগের হা করে থাকা কম্পার্টমেন্টের ভেতরে নজর বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করবেন, ওখানে কত টাকা আছে। আহ বাঙাল বাঙালী!

আমার এক শত্রু-বন্ধু রিজভান আমার একটা লেখায় একবার ঠিক একই রকম প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন,

“প্রশ্ন: ইসলামের প্রচার ও প্রসারে আপনার ভূমিকা কী? উত্তর: আমি সাকিব আল হাসানের ছবিতে তার বউকে বোরকা পড়তে কমেন্ট করেছি। ধর্মের ব্যবহারটা এমন হয়ে গেছে, মানুষ মনে করে, কোন এক ফাঁকে কিছু মিছু বলতে পারলেই ব্যাপক সোয়াব আদায় হয়ে গেল।”

প্রাইভেসি কি-সেটা এখনো আমাদের পরিবারে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষালয়েও চর্চা শুরু হয়নি। তো সমাজের প্রান্তিক গোষ্ঠির মন মানসে সেটার অস্তিত্ব খোঁজা নেহাত পাগলামি। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চিলের পেছনে ছোটার সংস্কৃতি।

যেকোনো মিডিয়ামে একটা কথা কেউ বলল, বিকৃত করে বা কিঞ্চিত মিথ্যা মিশিয়ে। ব্যাস, পুরো সোসাইটি সেটাকে মুহুর্তে নানান নিজস্ব রঙ মিশিয়ে ফলাও করবে। সত্যি মিথ্যের ধার কেউ ধারবে না। আমাদের এই পরচর্চার চাপা আগুনে আরো ঘি ঢেলেছে হাতের তালুতে চলে আসা মিডিয়া। পথ চলতে, বাসের জানালায় রাস্তা দেখতে দেখতে, বাজারে দরদাম করতে করতে মানুষ তার হাতের তালুতে ধরে রাখা ট্যাব বা মোবাইল সোয়াইপ করে যেকোনো পোষ্ট, কিছু বুঝুক না বুঝুক শেয়ার করে দিচ্ছে।

উৎস যাচাই নেই, সত্যাসত্য বিচার নেই, এমন একটা বিষয় আদৌ ঘটা সম্ভব কিনা, এমন একটা ইস্যু শেয়ার করা উচিৎ কিনা  তার বিন্দুমাত্র বাছবিচার না করেই ছড়িয়ে দিচ্ছে নেটওয়ার্কে। মিডিয়াও এই চিলে কান নেয়ার বিদ্যাকে বাতাস দিচ্ছে-ভাইরাল নামক একটা চোস্ত নাম দিয়ে। কন্টেন্টের সত্যাসত্য কিংবা জিস্ট কিছু আছে কিনা-সেই বিচারের ধারে কাছে না গিয়েই কন্টেন্ট ভাইরাল হল কিনা-এটাই মিডিয়ার আলোচ্য বিষয়। কেউ একটা হাঁচি দিয়েছেন-সেটাও ভাইরাল হচ্ছে আবার ট্রাম্প ৪০ বছর আগে কোনো রমনীর হাত ধরেছিলেন তাও ভাইরাল। চিঁকামারা মিডিয়ার বাড়বাড়ন্ত দেখে আমাদের তথাকথিত মেইনস্ট্রিম মিডিয়াও কাছা মেরে নেমে পড়েছেন এই ভাইরাল হবার দৌড়ে।

ভাইরাল মানেই মেজরিটি। মেজরিটিকে রিচ করতে পারলেই সাফল্য-এই মন্ত্র আষ্টেপৃষ্টে আমাদের গিলানো হচ্ছে অষ্টপ্রহর।

দেশে যখন সবাই ক্লিন শেভ হত তখন কেউ হালকা দাড়ি রাখলে তাকে বলা হত খ্যাত। এখন আবার চাপ দাড়ি রাখা যখন মেজরিটির ফ্যাশন তখন আপনি ক্লিন শেভ হবেন-মেজরিটি আপনাকে ডাকবে মাকুন্দা।

পপুলার মেজরিটি আমাদের খাওয়া, পড়া, পোশাক, চিন্তাকে আমাদের অজান্তেই নিয়ন্ত্রন করে। কোনো পোশাক কেনার সময় এমনকি আমরা চিন্তা করি-এখন কোনটা বাজারে চলছে। নিজস্বতাকে বিসর্জন দিয়ে মেজরিটির মনোসন্তুষ্টি আমাদের যাবতীয় জীবনাচরনের আরাধ্য হয়ে উঠেছে। আপনি যদি এখনো এই লম্বা লেখাটা পঠনরত থাকেন তাহলে একটু শুরুর চর্বিত চর্বন আবার করি।

লেখার শুরুতে একটা কথা বলেছিলাম। ”তুমি কি রোজা আছ”-এই প্রশ্নটা আমরা রোজার দিনে অবলীলায় করি। করার আগেও ভাবি না, পরেও ভাবিনা যে, এই প্রশ্নটি বা এইরকম প্রশ্ন একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি মারার শামিল।

রোজার দিনে এই প্রশ্ন করলে অপ্রয়োজনীয়ভাবে একজন মানুষকে মিথ্যা বলায় প্ররোচিত করা হয়। কেন মিথ্যা বলা হবে? ওই যে, মেজরিটির চাপ। মেজরিটির অদৃশ্য চাপ ব্যক্তিকে মেজরিটির সাথে তাল মিলাতে বাধ্য করে।

(প্রাসঙ্গিক হওয়ায় নিচের কথাগুলো ধার করলাম জনাব জব্বার হোসেন-লেখক; সদস্য-ফেমিনিস্ট ডটকম, যুক্তরাষ্ট্র; পরিচালক : বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন; সম্পাদক : সাপ্তাহিক কাগজ ও মিডিয়াওয়াচ এর লেখা হতে।)

”আমাদের মধ্যে আধুনিকতা নেই। চিন্তায় নেই, চর্চায় নেই, জীবন যাপনে নেই। উদারতা? সুদূর পরাহত। আমরা মুখে ‘মুক্ত চিন্তা’ বলি। কিন্তু ভেতরে ধারণ করি না। ধার করা শব্দগুলো বলতে ভালোবাসি আমরা। সংকীর্ণতা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শিরা উপশিরায়, মস্তিষ্কে, মজ্জায়। চিন্তার দৈন্যতা পিছু ছাড়ে না, যতই শহরে বাস করি। যে শহরেই যাই। আমরা তথাকথিত আধুনিক। পোশাকে স্যুট, টাই, কোট, ব্লেজার, সু। কেউ ফুলস্লিভ, স্লিভলেস কেউ। দামি সেলফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ। লেটেস্ট মডেলের গাড়ি, ক্যাপসুল লিফট, কন্ডোমিনিয়াম, সিমপ্লেক্স, ডুপ্লেক্স। আউটিং, ট্রাভেলিং। কিন্তু ভেতরের চিন্তা গান্ধা, রদ্দি। ভেতরে এক গুহা অন্ধকার নিয়ে বসবাস আমাদের। পোশাকে সভ্য হলেও আদতে অসভ্য। বিকৃত। আধুনিকতা তো কোনও এক্সটার্নাল বিষয় নয়, ইনটার্নাল। আধুনিকতা থাকে মস্তিষ্কে, মগজে, চিন্তায়। আমরা প্রগতিশীল বলে মনে করি নিজেদের, অথচ অমূলকভাবে অন্যকে হেয় করা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, হয়রানি করা, অপদস্থ করা, বিব্রত করা, তামাশা করা, কী করে প্রগতিশীলতা হয়, বরং কখনোই তা প্রগতিশীলতা নয়। প্রগতি মানুষকে সম্মান করতে বলে, মানবিক হতে বলে, বলে না তুমি হেনস্থা কর অন্যকে।”

গণমাধ্যমে বহুল চর্চিত একটি কৌতুক বলি।

কে যেন একবার উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইদি আমিনকে (অন্য কেউও হতে পারে।) ফ্রিডম অব স্পিচের বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিল। তিনি বললেন,

“I assure you about your freedom of speech. But I can’t guarantee about the freedom after speech.”

বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আমাদের সদাজাগ্রত বিবেকের বিপরীতে আমরা নিজেরা নিজেদের ঘরে বা জীবনে কতটা গণতন্ত্র চর্চা করি? পরমত সহিষ্ণুতা আমাদের কতটা আছে? সোস্যাল মিডিয়া বিশেষত ফেসবুক এমনকি প্রগতির ধজ্বাধারী হিসেবে পরিচীতি পাওয়া “ব্লগ” কিংবা টিভি টকশোতে? আমি তো দেখি, সবখানেই মাইটি কিংবা মেজরিটির রক্তচক্ষু।

আমরা আসলে গণতান্ত্রীক না, গণতন্ত্রকামী। সেটা অনেকটা ওই ধর্ষকামীতার মতো। আমাদের বাংলাদেশে হাটে, মাঠে, ঘাটে, টিভিতে, পত্রিকাতে, ফেসবুকে সর্বত্রই গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার জন্য হাপিত্যেষ। গণতন্ত্র সবার প্রাণের দাবী। গণতন্ত্রের দাবীতে সবাই সোচ্চার। পরিবারে নারী এবং নিরবে হলেও এখনকার পরিবারে পুরুষরাও (স্বীকার করে না কেউই) নিজেদের ব্যক্তিগত অধিকার, নিজস্ব চিন্তার স্বাধীনতা, নিজের মতো চলার মুক্ত পরিবেশ, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সবকিছু করা বা দেখার স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার।

ব্যক্তির সামান্য স্বাধীনতায় হাত দিলেই গেল গেল রব। নিরবতা নাকি ফ্যাসিবাদের ভাষা। এই গণতন্ত্রের দোহাই দিয়েই বুশ ইরাক বা লিবিয়ার মতো একটা ধনী দেশকে রাস্তার ফকিরে পরিণত করেছে। কানাডা, আম্রিকা ও আরো আরো পশ্চিমা, উত্তরা, দক্ষিণা ভদ্দর ও উন্নত দ্যাশ সমূহের গণতন্ত্র, দানবাধিকার, সুশীল বাণী, উপদেশ ও নিদান শুনলে হাসব না কাঁদব বুঝি না।

বাংলাদেশ হতে যাওয়া জৈনক ব্যক্তিকে ট্রুডোর খ্যানাডা তাদের দেশে ঢুকতে দেয় নাই। সুশীলতার দোহাই দিয়ে। তারা বঙ্গবন্ধুর খুনীকে ঠিকই রাষ্ট্রীয় মেহমান করে রেখেছে। এবং তাকে ফেরত দেবে না-বলে দিয়েছে।

হাসি পায়।

গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মুক্তমত, মানবতা, আইন, ন্যায্যতা-এই টার্মগুলোর কেতাবী সংজ্ঞা থাকলেও মূলত এগুলোর প্রকৃত স্বরুপ ও সংজ্ঞায়নের বাস্তবতা হল, মেজরিটি, মাইটি, কাল্ট ও আপারহ্যন্ড সত্তার ইচ্ছা।

মেজরিটি যা বলবে,

মাইটি যা চাইবে, যেভাবে চাইবে,

কাল্ট ও আপারহ্যন্ড যেমনটা দেখাবে-সেটাই হল গণতন্ত্র, মানবতা, মুক্তমত, উদারতা, আইন ও ন্যায্যতা।

একটি হিংস্র ও সন্ত্রাসী জনগোষ্ঠী। ইতিহাসের চলমান পাতায় হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে আরেকটি বিদ্যমান জনগোষ্ঠীর বসতভূমিতে হাঁটুগেড়ে বসে সেই অব্দি সেই বিদ্যমান জনগোষ্ঠীসহ আশপাশের প্রতিবেশীদের তো বটেই, গোটা পৃথিবীর শান্তিকামী, মানবতাবাদী, উদার, ন্যায্যতাকামী মানুষের ওপর অন্যায়, অবিচার, জবরদখল, সন্ত্রাস, লুট ও খুনের হোলি খেলে চলেছে ৮০টি বছর ধরে।

একটা গোটা পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষের চোখের সামনে।

বুক চিতিয়ে। জাতিসংঘ নামের একটি ইতর, নপুংষক, ধান্দাবাজ সংগঠনকে কাঁচকলা দেখিয়ে।

ঘোষনা দিয়ে, সব নিয়ম, নীতি, আন্তর্জাতিক আইন, অনুরোধ, উপরোধ, প্রতিবাদ, লজ্জা, সংকোচ-সব কিছুকে ছুড়ে ফেলে ১টি বছরে হাজার পঞ্চাশেক বেসামরিক মানুষকে কখনো পিপড়ার মতো, কখনো তুলার মতো উড়িয়ে মেরে ফেলেছে। শিশু, নারী, হাসপাতাল, লঙ্গরখানা, আশ্রয়কেন্দ্র, উপাসনালয়, স্কুল, আন্তর্জাতিক অফিস-কিছু বাদ নেই।

কেই আটকাতে পারছে না। বস্তুত কেউ আটকাচ্ছে না। কারন, ওই বিপন্ন বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে বাঁচালে কারো স্বার্থ নেই। জ্বি, প্যালেস্টিনিয়ান ’মানুষ’রা পৃথিবীকে কোনো স্বার্থ দিতে সক্ষম না।

এত কিছুর পরও এটা গণহত্যা হবে না। বিচার কেউ চাইবে না। কেউ করবে না। কেউ করতে পারবে না। এত কিছুর পর, একজন প্যালেস্টিনিয়ান তেল আবিবের রাস্তায় গুলতি দিয়ে পাথর ছুড়ে যদি একজন খুনে দখলদার সৈন্যকে আহত করে, তাহলে সেটি হবে সন্ত্রাসী হামলা। আসলেই। বিদ্যমান নাটকীয় আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি সেটাকে সন্ত্রাসী কাজ বলে নিন্দা ও বিচার করবার রায় দেবে।

আবার এই পৃথিবীতেই আরেকটি জনগোষ্ঠী ও তাদের রাষ্ট্র অত্যন্ত, অত্যন্ত নিকৃষ্টতার পরিচয় দিয়ে সেই দখলদার ও খুনি জনগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রটিকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে তাদের সব হত্যার নির্লজ্জ প্রকাশ্য সমর্থন ও উল্লাস প্রকাশ করে অহরহ। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের দাবীদার রাষ্ট্রটির ১৫০ কোটি মানুষ এই গণহত্যাকে গর্বের সাথে সমর্থন করে। যার সপক্ষে ১টি তুচ্ছতম যুক্তিও নেই। এরপরও তাদেরকে বিশ্বজুড়ে মহান রাষ্ট্র, বৃহত্তম গণতন্ত্র বলতে হবে। সেটাই নিয়ম।

এত কিছুর পরে জগতে মানবতা ও মানবাধিকার বিক্রীর জন্য হাজার হাজার আন্তর্জাতিক সংগঠন তাদের মানবতার দামী মেকি বটিকা বিক্রী করবে। তাদের অত্যন্ত ব্যয়বহুল কর্মীরা আয়েশের সাথে বিলাসবহুল লটবহর ভোগ করতে করতে সারা পৃথিবীতে মানবতার সবক ও তাবিজ বিক্রী করে যাবে। আমাদেরও সেই সবক মুখস্ত করে পরীক্ষায় লিখে বি.সি.এস পাস করে রাষ্ট্রীয় দাস হতে হবে।

জ্বি, আত্মরক্ষার নামে গণহত্যা জায়েজ করা সেই সন্ত্রাসী খুনে জনগোষ্ঠীটির নাম ই-জ-রা-য়ে-ল।প্যালেস্টাইনে ঘটতে থাকা কুৎসিত ও মর্মান্তিক গণহত্যায় দাঁত কেলিয়ে হাসা বৃহত্তম রেসিস্ট ও ধর্মান্ধ গনগোষ্ঠীটির নাম ভা-রা-ত।

আর প্যালেস্টাইনের বিপন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর চলা এথনিক ক্লিনজিংয়ের প্রতিবাদে জুতা চুরি করে প্রতিবাদ জানানো পৃথিবীর সবচাইতে দ্বিচারী, বর্ণচোরা, ভন্ড, চৌর্যমনোঃবৃত্তির শুকর জনগোষ্ঠীর নামটা শরমে বললাম না।

নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের ওপর যে কোনো হামলাকে জায়েজ করবার যে কোনো যুক্তিই আসলে কু-যুক্তি।

আম্রিকা দানবাধিকারের দোহাইতে বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তাদের ওপর ব্যান দেয়। আবার মুদির ভাইকে নিয়ে চা ও খায়। গণতন্ত্রের দোহাইতে গণতন্ত্র মাহফিলে দাওয়াত দেয় না, ব্যান দেয়। আম্রিকার গণতান্ত্রীক চেহারা, দানবাধিকার নিয়ে তার নিজের চরিত্র দেখলে হাসি পায়।

দুনিয়ার যে কোনো কোণায় যে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রকে যে কোনো ছুতায় হামলা ও নিহত করার অধিকার যাদের আছে বলে বিশ্বাস করে, ওসামা বিনকে যারা বিনা বিচারে খুন করে আরেক দেশে বিনানুমতিতে ঢুকে, যেই আম্রিকা তার দ্যাশে আশ্রিত বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত দেয় না, সে আবার তাদের প্যানট খুলে নেয়া জুলিয়ানকে ঠিকই ধরিয়ে আনে।

তারা যখন গণতন্ত্র ও দানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, হাসির দমকে পশ্চাতবায়ু নির্গত হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যখন ইরানের শীর্ষ জেনারেল সুলেমানীকে, কিংবা ইজরেল যখন ইরানী বিজ্ঞানীকে গোপন মিশনে হত্যা করার আদেশ দেয়, সেটার নাম আত্মরক্ষা ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের বৈশ্বিক দায়বোধের হালাল বাস্তবায়ন।

সৌদি আরবের বাদশাহ (হবু) যখন তার নিজের নাগরিককে হত্যা করার আদেশ দেয়, তার নাম মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেআইনী কাজ।

উভয় পক্ষকে আবার যে নিরবে চেটে শুধু খাশোগজির হত্যার তদন্ত ও বিচারের জন্য উদ্যোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করে, তার নাম জাতিসংঘ।

তারা যখন গণতন্ত্র ও দানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, হাসির দমকে পশ্চাতবায়ু নির্গত হয়ে যায়।

এসব দেখে দ্বিগুন উৎসাহে যে নিজের যত অকামের আরো নতুন ফন্দী আঁটে, তার নাম রাষ্ট্র।

রাষ্ট্র ও জনগণ নামক পাঁঠাকে বলি দিয়ে যে আবার কাঁঠাল খায়, তার নাম ‘স্যারক্যার’।

স্যারক্যারকে নিজ নিজ পশ্চাৎদেশে আবাদ করার অধিকার প্রদানের নাম ‘ভুট’, আর নেই ভুট যারা দেয়, তার নাম ‘জানেমান’।

‘ছারখার’ এর অকামে নিরুপায় হয়ে যখন জানেমানরা আবার রুখে দাড়ায়, সেটার নাম ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’।

রাষ্ট্রদ্রোহী জানেমানদের সাইজ করার জন্য আবার স্যারক্যার যখন কুত্তা লেলিয়ে দেয়, তার নাম সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও জানেমানদের সুরক্ষার দায়বোধ।

এভাবেই বিশ্ব হতে দ্যাশ-সর্বত্রই চক্রাকারে ধাবিত হয় আইন ও ন্যায়ের উত্থানরহিত ঝান্ডা।

কৃষ্ণ করলে লীলা,

কেষ্টা বেটা করলে লীলাখেলা।

আমার চোখে গণতন্ত্র, আমার কাছে গণতন্ত্র, আমার নিজস্ব দর্শনে গণতন্ত্র হল-

আমি যা বিশ্বাস করি, আমি যেভাবে চিন্তা করি, আমার কাছে যেটা যেমন, সেই বিশ্বাস ও ভাবনাকে নিজের মধ্যে ধারণের মুক্ত অধিকার, চাই সেটি যেমনই, বা যা-ই হোক। একইসাথে, আমার সেই বিশ্বাস, চিন্তা, ভাবনা বদলাতে বাধ্য হবার, কিংবা আমি যা বিশ্বাস করি না-তা বিশ্বাস করে নেবার দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান চাপ বিহীন পরিবেশ; এবং অবশ্যই, আমার সেই বিশ্বাস, ভাবনা ও চয়েজকে নির্ভয়ে প্রকাশ (এবং নিজের চৌহদ্দিতে পালনের) অধিকার ও পরিবেশ।

গণতন্ত্র নিয়ে দুটো সত্যি আছে।

এক-গণতন্ত্র হল সবচেয়ে দুর্বল ও মূর্খ ব্যবস্থা।

দুই-গণতন্ত্র হল বেস্ট এভেলেবল।

মানে হল, এই দুটো সত্যকে মাথায় রেখেই চলতে হবে আপনাকে। যেহেতু এখনো কোনো বিকল্প হাতে নেই। হ্যা, বিকল্প আছে। সেটা অনেক ব্যয়বহুল। সেটা হল নিয়মিত গণঅভ্যত্থান ও আত্মদান। অবশ্য আরেকটা দীর্ঘমেয়াদী পথও আছে। খুব সরু। সেটা হল, ধীরে হলেও সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠান তৈরী, জনগণকে তৈরী।

আর স্বাধীনতা হল-একজন ব্যক্তি মানুষের একান্ত নিজস্ব ইচ্ছা, অনুভূতি, বোধ, বিবেচনা, চয়েজ, টেস্ট, চাহিদা অনুযায়ী নিজের ডিসকোর্স নির্ধারনের এবং নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবায়নের ও উপভোগ করবার এ্যাবসলুট ও এক্সক্লুসিভ অধিকার;যেই উপভোগ ও প্রতিপালন অন্য একজন ব্যক্তি মানুষ বা মানুষদের একই রকম অধিকার উপভোগে বাধা হয়ে দাড়ায় না। আশা করছি বোঝাতে পেরেছি।

আপনার যেমন বিশ্বাস করবার, সেই বিশ্বাস প্রকাশ করবার ও সেই অনুযায়ী নিজের জীবন চালাবার পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার আছে, যে, সূর্য পূর্বদিকে ওঠে;

ঠিক তেমনি দুনিয়ার বাকি যে কারো বিশ্বাস করবার, বিশ্বাস প্রকাশ করবার ও সেই অনুযায়ী চলবার পূর্ণ অধিকার ও স্বাধীনতা আছে, যে, সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে না। মেজরিটি হওয়া কোনো কিছুর অথেনটিসিটি ও এপ্রোপ্রিয়েশনের ডিফলট নিশ্চয়তা দেয় না। আরেকজনের কী বিশ্বাস করা, ভাবা ও জানা উচিত-সেটা আপনি বলে দেবার, নির্ধারন করে দেবার কেউ নন। যাস্ট কেউ নন। সেই বিষয়টা যা নিয়েই হোক।

আপনি বড়জোর কাউকে যুক্তি দিতে পারেন। দ্যাটস এনাফ। সেটাও তিনি চাইলে পরে। গায়ে পড়ে না। আই রিপিট, কেউ যদি বিশ্বাস করেন যে, সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে না-তাকে চেপে ধরার, ট্রল করার, হুমকি দেবার, হামলা করবার কোনো বৈধ অধিকার আপনার নেই। যাস্ট নেই।

কুকুর, বিড়াল, পেঁচার প্রপস নিয়ে রাস্তায় কতক্ষণ রোদের মধ্যে ভাজা ভাজা হওয়াকে আপনার ফালতু মনে হতেই পারে। আবার, কারো কাছে সেই অর্থহীন কাজকেই পরম শান্তির মনে হতে পারে। এই যে, আপনি তার কাজটা করেন না-তিনি কি আপনাকে কখনো বলেছেন, আপনি বেকুব, এমন মজার জিনিস এনজয় করছেন না। বা, আপনি অপদার্থ? বলছেন না। কিন্তু, আপনি ঠিকই তার কাজকে সারাক্ষণ অপদার্থের কাজ বলে গালি দিচ্ছেন। এটা ব্যক্তি স্বাধীনতার লঙ্ঘন। বিশেষত, একটা কাজ যখন বিশাল একটা জনগোষ্ঠী পালন করে, তাদের সেই কাজকে আপনি চট করেই ফালতু, ধর্মহীনতা, পাগলের কাজ বলে ট্রল করতে পারেন না।

অন্যের মতামত, চয়েজ, টেস্ট, বিবেচনা ও সিলেকশনকে পারস্পরিক সম্মান দেবার শিক্ষা সভ্যতা আমাদের শিখিয়েছে। এরকম অনেক মৌলিক বিষয়ের ওপরই সভ্যতা দাড়িয়ে আছে।

ঘোলা জলে মাছ শিকার-কথাটাকে আমরা নেগেটিভ অর্থে ব্যবহার করি। তবে ভেবে দেখেছেন ঘোলা জলে মাছ শিকার ব্যপারটা খুবই জনপ্রিয়।কিভাবে?

 অধিকাংশ মানুষের পক্ষে জল ঘোলা থাকলেই সুবিধা। কেন? কারন যারা অসৎ ও অদক্ষ তাদের জন্য তো পোয়াবারো (স্বার্থ হাসিল করা সহজ)। যারা অসৎ কিন্তু দক্ষ তাদের জন্যও ভাল (দক্ষতা দিয়ে অসৎ স্বার্থ বাগানো সহজ)। যারা সৎ কিন্তু অদক্ষ তাদের জন্যও ভাল (তাদের অদক্ষতাকে সততার মুখোশে ঢেকে বেঁচে যাওয়া সহজ)। শুধু যারা সৎ ও দ্ক্ষ তাদের জন্য ঘোলা জল খারাপ। তবে এরা সংখ্যায় কম আর বাকি ৩টা ধরন সিংহভাগ। তাই অধিকাংশ লোক যেটা পছন্দ করে বা সমর্থন করে সেটাইতো সত্যি ও সঠিক হয় তাইনা?

পৃথিবীতে মাস পিপল ও এনটিটিকে পরিচালনার যত পদ্ধতি ও আচার প্রচলিত আছে, গণতন্ত্র তার মধ্যে একটি। গণতন্ত্রকে বলা হয় দুর্বলের ও মূর্খের শাসন। এরপরও, এখন তক এটিই পৃথিবীর হাতে থাকা সবচেয়ে ভাল বিকল্প। মানে, গণতন্ত্র বেস্ট বা পারফেক্ট না, বেস্ট এভেলেবল। তবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে মূখ্যত গণতন্ত্র মানেই ভোটের গণতন্ত্র। ভোট হল কি হল না, ভোট দেয়া গেল কি গেল না-তার ওপরই এই তৃতীয় বিশ্বের আমজনতা ও জামজনতার গনতন্ত্রের সুখস্বপ্ন নির্ভর করে। কিছু বছর পর পর ভোট নিয়ে উন্মাদনা তাই এখানে গণতন্ত্রের মূখ্য উৎসব।

ভোটের গণতন্ত্র’র পরিহাস নিয়ে একটা গ্রাম্য গল্প বলি।

বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেই “ফচ করে না” বলে একটা কথা প্রচলিত আছে যার মাধ্যমে ব্যাঙ্গাত্মক বা তাচ্ছিল্যভরে বোঝানো হয় ‘কাজ হবে না’। তো, এক গ্রামে একবার চেয়ারম্যান ইলেকশন। এক প্রার্থী গ্রামের বাজারের চায়ের দোকানে অর্ডার দিয়ে রেখেছে যেই আসবে তাকে তার তরফ হতে ফ্রি লেমোনেড খাওয়াবে। তখনকার দিন দোকানে সোডা ওয়াটার লেমনেড ছিল যেটার বোতল খুললেই ‘ফচচচচচচ’ করে একটা জোরে শব্দ হয়ে ভিতরের তরল উদগীরন হত। তো গ্রামের মানুষ ফ্রি লেমোনেড খেয়ে তো ব্যপক মজা। তার মধ্যে আবার নতুন ঝাঁঝালো স্বাদ।

ওই প্রার্থীর জনপ্রিয়তার পারদ হু হু করে বাড়তে লাগল। গ্রামে নাম ছড়িয়ে গেল, ফচ ক্যান্ডিডেট। তো ইলেকশনে সেই ফচ ক্যান্ডিডেট বিপুল ভোটে জিতলেন, চেয়ারম্যান হলেন। ভোটের পরে একদিন গ্রামের হাটে আবার লোকজন বসেছে। তারা সেই ফচ পানি চাইলেন। দোকানদার তাদের নর্মাল পানির বোতল খুলে দিলেন। লোকজন দেখে এখন আর বোতল খুললে ফচ শব্দ হয় না আর খেতেও তো সেই ইলেকশনের আগের মতো লাগে না।

তারা দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল, লেমুনেড ওইরাম কেন লাগে না?

দোকানদার বলল, “দাদা,ইলেকশনের পর আর ফচ করে না।”

বাঙালীর অবস্থাও ওরকম। তবু বাঙালী গণতন্ত্র নামক তাবিজ গলায় ধারন করে আর ফচ পানির আশায় থাকে। হা প্লেটো, হা এরিস্টোটল, হা লিংকন।

বঙ্গীয় ফেসবুক বা বঙ্গসবুক আকাশ হতে অর্জিত একটি রাজনৈতিক পাঠ এই সুযোাগে বলি আপনাদের। বাংলাদেশে দুটি রাজনৈতিক দল আছে-একটি হল আম্লীগ, আর আরেকটি হল, এ্যান্টি-আম্লীগ বা বিম্পিলীগ। সামাজিক মানুষ হতে হলে আপনাকে যেকোনো একটা দলে যোগ দিতেই হবে। তো বঙ্গসবুক আকাশে চোখ কান পাতলে যেই তীব্র মাত্রায় রাজনৈতিক সচেতনতা [আসলে অক্ষম ও সুবিধাবাদী বিপ্লবীদের চিকনি চামেলি বিক্ষোভ] চোখে পড়ে, তার কিছু কামসূত্র, মানে যোগসূত্র ও প্রবণতাসূত্র পেলাম।

এঁরা নিজেদের পরিচয় দেন গণতন্ত্র প্রণয়ী। দ্যাশে ভোটের অধিকার না থাকায় এঁরা রাতে ঘুমাতে পারেন না। একটা ‘সেইরাম’ ভোট হলেই দেশটা স্বর্গে চলে যেত-এমনটাই ভাব। সেই ক্ষোভ ও দেশপ্রেম এঁরা বঙ্গসবুকে ঢেলে দেয়। সরকার যাই করুক, এঁরা পত্তম আলু, বিবিসি আর বিডিনিউজের পেজের নিচে তা নিয়ে আলু চটকাবেই। অনেকটা বউয়ের সাথে না পেরে কাজের মেয়ের ওপর ঝম্প দেবার মতো।

এই সুবিধাবাদী গোষ্ঠীকে আম্লীগ বা বিম্পি তথা সরকার যদি আজকে মাগনা ৫০০ পিস স্বর্গের টিকিটও এনে দেয়, এঁরা বলবে, ওইডা ইন্ডিয়ান স্বর্গের, ওর মধ্যে খালি লাল গ্যান্দা গাছ আছে। ৭০ টা হুর নাই। ওইডা মানি না। যাহোক। ইন্ডিয়ার নায়িকাদের অবশ্য তাদের ভাল লাগে। অথবা, ওই হুর পাকিস্তানের, ওই গেলমান বার্মার। ওই শরাব চায়নারটা আরো ভাল ছিল-ইত্যাদি।

ফেসবুকে সরকারকে যতই গালাগাল করুক, দিন শেষে পূর্বাচল বা পদ্মা পাড়ের একখানা প্লট কিন্তু আবার সরকারের হতে বাগাতেই হবে। ফেসবুকে বা টকশো-তে রক্তচক্ষু করে গরম গরম বক্তৃতা দিয়ে পদ-পোস্ট-ডিল বাগানোর পর কুঁই কুঁই করা বিপ্লবের মঞ্চায়ন এই বিপ্লবী দেশের মঞ্চে বেশ মজাই লাগে। ভোটের অধিকারকামী (সমকামী বলিনি, খিয়াল করে কিন্তু) এক জাতি আমরা। আমাদেরকে একদল সুবিধাবাদী ও ধান্দিবাদী (গান্ধিবাদীর বিপরীত) গণতান্ত্রীক বিপ্লবী শিখিয়েছেন, ভোটই হল বিপ্লব, ব্যালটই হল বিপ্লবের হিরন্ময় হাতিয়ার। ফেসবুকে ভোটের অধিকার চেয়ে ম্যাৎকার করা ও সরকারের পিন্ডি চটকানো মহাত্মনদের

আমার একটা প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছে করে। ধরুন, এই শুককুর বার (যার হালের ক্রেজি নেম জুম্মা মোবারক) বঙ্গদেশে একটি পুত, পবিত্র, বিশুদ্ধ, সহিহ ইলেকশন হল আর তাতে যেকোনো একটি নতুন দল ও সরকার মসনদে বসল। তার পরে, দেশে ঠিক কী কী বা কোন কোন মহান বিপ্লবটা ঘটে যাবে? দেশ কি মদীনা সনদে চলা শুরু করে দেবে? চালের দাম কি ৯ টাকা হবে? রানা প্লাজার মালিকের কি ফাঁসি হবে? সাগর-রুনীর খুনিরা কি শাস্তি পাবে? অথবা, বলুন, দেশে কি ব্লাসফেমী আইন চালু হবে?

আমিতো মনে করি, এঁরা প্রতিদিন যেই সুশীলজনিত কোষ্ঠকাঠিন্যতে টাট্টিখানায় ঘন্টাখানিক সংগ্রাম করেন, সেই রুটীনেও বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না। বিপ্লব তো বহুত দূর। ভোট দিয়ে আপনারা করবেনটা কী? ভোট নিয়ে বাঙালী এত সিনিক কেন? বাঙালী কি বোঝে না সেই পুরোনো শিক্ষা-”ভোটের পরে ফচ করে না।” [আমার কোনো রাজনীতি বা দল প্রীতি নেই।

করোনার বাড়াবাড়ির সময়ে এক পৌরসভা নির্বাচনের প্রহসন নাট্যস্থ হবার টিভি নিউজে দেখলাম, একজন অশিতিপর বৃদ্ধা লাঠি ভর করে, দুই সন্তানের কাঁধে ভর দিয়ে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠছেন ভোট দিতে। এই বাঙালীর এত তেল, এত রাজনৈতিক সচেতনতা। করোনার সেই ভয়াবহ সময়ে একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধা কীভাবে ভোটকেন্দ্রে যাবার বিবেক করেন আর তার সন্তানরাই বা তাদের মাকে কীভাবে বাড়ির বাইরে যেতে দেন সেটা ভেবে কুলকিনারা না পেয়ে এই প্রশ্নটি আমার মনে জাগে।]

বঙ্গদেশে গণতন্ত্র আছে কি নেই-এই নিয়ে প্রচুর হা পিত্যেষ বর্ষণ হতে দেখি প্রতিনিয়ত। আমার জানতে ইচ্ছে করে, নিজ বাড়িতে, পরিবারে, অফিসে, ডিপার্টমেন্টে নিজে যদি গণতন্ত্র চর্চা না করি, তবে রাষ্ট্রে গণতন্ত্র নিয়ে আহাজারি করার মুখ থাকে কিনা? “আমার ধারণা, বাঙালি কখনো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে নি। সে সবসময় ‘নিজে স্বৈরাচার হওয়ার অধিকার’ নিশ্চিত করতে চেয়েছে।” -মহিউদ্দিন মোহাম্মদ

পরিবারের বা প্রতিষ্ঠানের-যেখানেই আমি কর্তা হই, আমি যদি স্বৈরাচারীর মতো সিদ্ধান্ত নিতে অভ্যস্ত হই। আমার জানতে ইচ্ছে করে, আমি কি রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রীক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলার নৈতিক অধিকার হারাই না?

গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় পরিহাস হল, একটি বাঘ বা সিংহ, যে কিনা বনের রাজা, সে যদি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে এবং কিরা কসম কেটে বনে তার সমস্ত প্রজাদের ডেকে সুন্দর করে বুঝিয়েও বলে, যে, আজ হতে তোমরা স্বাধীন ও গণতান্ত্রীক, তোমরা আমাকে ভয় পাবে না, আর আমার সামনে নির্ভয়ে নিজের মতামত ও কথা বলবে, লাগলে বাইবেল ছুঁয়েও এই প্রতিশ্রুতি দেয়;

তারপরও প্রজাদের কেউই স্বাধীন অনুভব করতে পারবে না, তার সামনে সত্য ও ন্যায্য কথা বলার সাহস দেখাবে না। কারণ, যুগ যুগান্তরের অভিজ্ঞতা তাদের শিখিয়েছে, যে,

It’s never an opportunity, rather, it’s a trap.

আর সে কারনেই মানুষ গণতন্ত্রী, বিপ্লবী, রাজনীতিক, আমলাদের বিশ্বাস করে না এক ফোঁটাও।

একবার, একটা প্লেন ক্রাশ করল এ্যামাজনে। সেই প্লেনে যাত্রী ছিল সে দেশের রাজনীতিকরা। তো, রেসকিউ টি পৌছে দেখল, গ্রামবাসী তাদেরকে কবরস্থ করে ফিরছে।

”তাদের মধ্যে কেউ কি জীবিত ছিল না, সবাইই কি মারা গিয়েছিলেন?”-রেসকিউ টিমের এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রামবাসী বলল,

”তাদের কেউ কেই অবশ্য কবরস্থ করার সময় বলছিল, যে, তারা জীবিত। তবে যেহেতু তারা সবাই ছিল রাজনীতিক, তাই আমরা তাদের কথা বিশ্বাস করিনি।” রাজনীতিকরা হলেন সেই বিরল প্রাণী, যারা তাদের নিজেদের কথাগুলো বলবার সময় কখনো বলতে পারে না, এটা আমার কথা। বরং, তাদেরকে আজীবনই অন্যের নামে নিজের বয়ান চালাতে হয়, সেই অন্যটার নাম হল ‘জনগন’।

#democracy #efficiency #honest #popularmajority #popularitypressure #mobjustice #mobtrial #mobocracy #privacy #gossip #Bangali #scandal #hype #imageaholic #halftruth #freedomofspeech #freedomofopinion #personalfreedom #fearfreetruth #BDpolice #government #mockeryofstatistics #fear #liberty #corona #pronunciation #perversion #manipulation #humanerror #fraud #covid19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *