একটি প্রতিষ্ঠানের চরিত্র নির্ধারন করে তার মালিক, তার টপ বিজনেস লিডারস এবং তার গণমানুষ বা চাকরিজীবিরা।
ওনাদের যা চরিত্র, যা ভাবনা, বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি, ভিশন, ধরন-ধারন, সেটাই প্রতিষ্ঠানের চরিত্র ও গতিপ্রকৃতি নির্ধারন করে দেয়। ওগুলোই বলে দেয়, যে, প্রতিষ্ঠান কি হায়হায় হবে, নাকি গ্রেইইইইট।
এখন, প্রতিষ্ঠানকে গ্রেইট বা বদল করতে হলে দুটো পথ আছে।
এক লিডারসের চরিত্র বদল বা লিডার বদল। লিডার বা তাদের চরিত্র বদল হলে তাদের অধীনস্থ সারারন কর্মীদের চরিত্র বদলাতে বাধ্য। তখন দুয়ে মিলে প্রতিষ্ঠানের চরিত্র বদল হয়ে যাবে।
আবার, উল্টো হতে, প্রজা বা কর্মীদের বদল বা চরিত্র বদল হলে লিডাররাও বদল হতে বাধ্য হয়। তবে এই পন্থাটা বেশি রক্তক্ষয়ী।
পথ পথিকের জন্ম দেয়।
আবার, পথিকও পথ সৃষ্টি করে।
তাত্বিক ও একাডেমিক আলোচনায়, নেতৃত্ব বা লিডারশিপের অনেকগুলো ধরন রয়েছে। সেসব ধরনকে এক পাশে রেখে, আমার নিজস্ব ভাবনার আলোকে বলব, নেতৃত্বের অন্যতম এক জোড়া অন্যরকম ধরন রয়েছে, যাকে আমার ভাষায় আমি বলি-
-Spiritual leadership &
-Inspirational leadership.
আপনি অনেক সংগঠনেই এদের যে কোনো একটি ধরনকে অতি বাড়াবাড়ি রকম, উৎকট রকম বিদ্যমান দেখবেন। এদের স্বরুপটা নিয়ে আজ একটু বলার চেষ্টা করব। আলোচনাটি প্রথাগত একাডেমিশিয়ানদের কাছে উদ্ভট মনে হতে পারে। তবে, আমি এই লেখা যেহেতু কোনো একাডেমিক জার্নালে কিংবা ক্লাস রুমের ডায়াসে দাড়িয়ে পাঠ করছি না, সেহেতু একটু অপ্রথাগত আলোচনা উন্মুক্ত মাধ্যমে তো করতেই পারি।
Spiritual leadership বা আধ্যাত্মিক নেতা:
এই নেতারা (শুধু রাজনৈতিক নেতা নয়, যে কোনো টিমের নেতা) হন ঠাকুর, দেবতা, পীর সাহেবের মতো।
এই ধরনের নেতা হবেন অধরা। পীর-মাশায়েখ-সুলতান অথবা ঠাকুরের আসনের বিগ্রহের মতো তারা সিংহাসনে আসীন থাকেন। তাদের টিম বা ফলোয়ার বা জুনিয়রদের কাছে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরের মানুষ হিসেবে থাকেন। তাদেরকে শ্রদ্ধা ও ভয়ের মিশেলে একরকম সমীহের সাথে নেয় তাদের অনুসারিরা।
ফলোয়ার বা টিমমেটদের কাছে আউডল এই নেতারা তাদের টিমের সাথে কখনো তাদের ভাই বা বন্ধুর মতো মিশবেন না। তারা থাকেন সাত আসমান সমান দূরত্বে। তাদের চারপাশে মাজারের রেলিংয়ের মতো করে একটা ভয় ও আভিজাত্যের অদৃশ্য বেষ্টনী থাকে। সেই বেষ্টনী পেরিয়ে তাদের কাছে আসার সুযোগ কম থাকে জনতার। রেলিংয়ের ওপাড় হতেই ভক্ত বা জুনিয়ররা তাদের নৈবেদ্য নিবেদন করেন, মালা ছুড়ে দেন, শ্রদ্ধা দেখান, দূর হতে নেতা তাদের আদেশ নির্দেশ দেন, জুনিয়ররা ভয়ের চোখে দেখেন তাদের।
টিম বা অপারেশনের টপ টু বটম কোনো দলের সাথে আন্তরিক ও ঐকান্তিক যোগাযোগটা তাদের হয় না। তিনি কোনো কিছু জানতেও চান না, বুঝতেও না। আদেশ দিয়েই খালাশ। টিমের বাকি সদস্যরা তাদের পীর-পয়গম্বরের মতো ভক্তি করেন, ভয় করেন, মান্য করেন। দূর হতেই তাকে পেন্নাম জানান। সামনে আসার অনুমতি কদাচিৎ দিলেও দুই হাত পশ্চাৎদেশে জড়ো করে বিনয়ে গলে গিয়ে মিঁউ মিঁউ করে কিছু বলার সুযোগ দিলে তবেই বলেন।
এই নেতৃত্ব আসলে দলের কাছে অলিম্পাসের মন্দিরের দেবতার আসনের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ নেতার মতো। এঁদের আমি আধ্যাত্মিক বা Spiritual নেতা বলি।
এই নেতৃত্ব ভাল নাকি খারাপ-সেটা বলা আমার এখনকার উদ্দেশ্য না। শুধু বলছি, যে, এটাও নেতৃত্বের একটা ধরন, আর এতেও কাজ উদ্ধার হয়। দুর্মূখেরা বলেন, বাংলাদেশে নাকি এ ধরনের নেতৃত্বই বেশি কার্যকর।
Inspirational leadership বা জনমানুষের নেতা:
এই নেতারা তাদের টিমের জন্য ক্ষুদ্রের ঈশ্বর বা ক্ষুধিতের দেবতা। পাশের বাড়ির অতি চেনা মানুষটার মতো। তাদের কোনো সিংহাসন নেই, মন্দির নেই, নেই কোনো তীর্থ। তারা পথের ধুলোয় নেমে তাদের ফলোয়ার, ভক্ত, জুনিয়র বা টিমের সাথে এক কাতারে বসেন। মিললে বিরানি খান, না মিললে তাদের সাথে একই থালায় আলু-ভাতে খেয়ে নেন।
তাদের সাথে তাদের টিমের অঙ্গাঅঙ্গি, জড়াজড়ি সম্পর্ক। তাদের গলায় মালাটা পরাবার ঘটনা কম ঘটে। বরং পরাতে গেলে সেটা খুলে টিমকেই পরান তারা। তাদেরকে তাদের টিম ভয় পায় না, ভালোবাসে, সমীহ করে না, শ্রদ্ধা করে; ভয়ে না, ভাবে; রাগে না অনুরাগে। তারা টিমের জন্য ওয়াচডগ নন, বরং অনুপ্রেরণা। তারা করিয়ে নেন না, করে দেখান।
Inspirational leader রা জনতার ভীড়ে মিশে থাকেন, জনতার সাথে চলেন। টিমের কাছে তারা অধরা নন, তাদের চেম্বার, দরবার, মাজার কখনো তালাবদ্ধ হয় না, তাদের সাথে দেখা করতে এপয়েন্টমেন্ট লাগে না, তাদের নজর কাড়তে দূর হতে গলা খাকারি দিতে হয় না, কাছে এসে চাদর ধরে টান দেয়াও চলে।
Inspirational leader রা আদেশ দেন না, নির্দেশনা দেন; নিষেধ করেন না, বিশ্লেষণ দেন। তারা কখনো সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন, যখন টিম বাঘ শিকারে যায়; কখনো বা পেছন হতে নেতৃত্ব দেন, যখন টিম ট্রফিটা আনতে যায়।
তাদের সামনেও তাদের টিম ভক্তিতে গদগদ হয়, তবে সেটা ভয় মিশ্রিত শ্রদ্ধায় নয়, তার দানবিক ব্যক্তিত্বের চাপে নয়, নেহাত অনুরাগ, ভক্তি, ভালোবাসা, মুগ্ধতা ও কৃতজ্ঞতায়।
এই নেতারা তাদের টিমের জন্য দেবতা নন, বরং বড় ভাই, বাবা, মা কিংবা বন্ধুর মতো। যেটা তাদেরকে একসময় ক্ষুদ্রের দেবতা, এমনকি ঈশ্বরের আসনে বসায়। ধুলোর মধ্যে ভক্ত পরিবেষ্টিত, অথচ তিনি আসলে ধুলোর ফকির নন, আদতে তারা হন একেকজন হৃদয়ের ঈশ্বর। এই ধরনের নেতৃত্বের উপস্থিতি আমরা খুব কমই দেখি। উন্মুক্ত মাধ্যমে এ ধরনের নেতৃত্বের বিপুল জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা গেলেও সেটা নিখাঁদ নয়। নিপাটও নয়। কারন, যারা এই নেতৃত্বকে প্রশংসা করেন, বন্দনা করেন, তারা নিজেরাও আবার ঘোঁপেঘাঁপে এই নেতাদেরকে ’ভেড়ুয়া’ অথবা ‘নপুংশক’ বলে টিটকারী দিতেও ছাড়েন না। কেহ কেহ বলেন, এই দেশে এত ভাল মানুষ হলে চলবে না।
দুটো ধরনই আমাদের এখানে উৎকটভাবে বা প্রকটভাবে বিদ্যমান। যেমনটা বলছিলাম, কোন ধরনটা ভাল বা মন্দ-তা এত সরলভাবে বলে দেবার সুযোগ নেই। সময়, পরিবেশ, পরিস্থিতিই বলে দেবে-কোনটা কাজে দেবে, কোনটা না।
আমরা কি একজন নেতা নির্বাচন করা বা ম্যানেজার প্রমোট করার সময় খুব বেশি কিছু বা খুব তলিয়ে দেখি? মনে রাখতে হবে একজন অফিসার ও একজন ম্যানেজার এর মধ্যে পার্থক্য শুধু উঁচু-নিচু অবস্থান নয়।
একজন অফিসার তার নিজের কাজটুকু ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী করতে পারলেই সে ভাল অফিসার কিন্তু একজন ম্যানেজার তা নন। তাকে নিজের কাজতো করতে হবেই আবার তার টীমের সবার কাজের আঞ্জাম দিতে হবে।
একজন অফিসার অথর্ব হলে তার একার ক্ষতি কিন্তু বস/ম্যানেজার হলে?
তাই ম্যানেজার লেভেল হতে স্টাফিং এর পুরো কনসেপ্টটিই আমূল বদলে যায়। দেখে নিই আকলমান্দ আদমীদের চোখ একজন বস/ম্যানেজার হবার অত্যাবশ্যকীয় যোগ্যতা:
১.Impartiality/নিরপেক্ষতা:
তিনি দেশ, কাল, ধর্ম, এলাকা, মতবাদ, বয়স, ব্যক্তি পছন্দ-সবকিছুর উর্দ্ধে ভাববেন।
২. Faithfulness/বিশ্বস্ততা:
অধীনস্থ ও সর্বোপরী প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাকে হতে হবে বিশ্বস্ত।
৩. Analyzing power/বিশ্লেষণ ক্ষমতা:
গোড়ামী নয়, তার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করবে বিশ্লেষণাত্মক জ্ঞান।
৪. Organizing power/সাংগঠনিক ক্ষমতা:
একা চলার জন্য তিনি ম্যানেজার নন, তার কাজ সবাইকে সংগঠিত রাখা।
৫. Controlling power/নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা:
আমার লোক আমার কথা শোনে না”-এই অভিযোগ তাকে মানায় না। তারও যোগ্যতা থাকতে হবে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার।
৬. Sense of responsibility/দায়ীত্ববোধ:
নেতা হিসেবে তাকেই দায়ীত্ব কাঁধে নিতে হবে সামনে থেকে।
৭. Decision making capability/সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ক্ষমতা:
একটি বুলেট আপনার দিকে ছোঁড়া হল, কতটা দ্রুত আপনি সরে যাবেন? সিদ্ধান্ত নিতে হবে এমনই দ্রুত। তবে হ্যা, অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত, বেঠিক নয়।
৮. Academic know how/প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা:
আপনি যতই কর্মপটু হন না কেন, প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীর একটি গুরুত্ব অবশ্যই আছে।
৯. Physical fitness/শারিরীক সক্ষমতা:
তালপাতার সেপাই কে কেন লোকে মানতে যাবে? তাই সুস্বাস্থ্যও আবশ্যক।
১০. Transparency/স্বচ্ছতা:
আপনার কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। যত ভাল কাজই করুন, গোপনীয়তা তাকে সন্দেহের তীরে বিদ্ধ করবে, অনাবশ্যক সংশয় তৈরী করবে আপনার টীমে।
১১. Patience/ধৈর্য:
প্রতিক্রীয়াশীল না হয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।
১২. Carefulness/সতর্কতা:
ক্যালাস হলে দেখবেন আপনার অজান্তেই আপনার অ্যাসাইনমেন্ট অন্যের কারিশমা প্রদর্শনের কারন হচ্ছে। ভীড়ের মধ্যে মানিব্যাগ কিভাবে সতর্ক রাখেন মনে করে দেখুন।
১৩. Team making/দলগঠন ক্ষমতা:
একলা থাকা বাঘকেও দেখেছি হায়েনারা আক্রমণ করে বসে। তাই টীমে কাজ করুন। “যদি তোর ডাক শুনে কেউ…….নাহ, রবি ঠাকুরকে আপাতত ভুলে যান।
#teambuilding #teamspirit #permissiveness প্রয়াত স্বামী বিবেকানন্দ’র একটি কথা আমার খুব দারুন লাগে, ”মহম্মদ যদি পাহাড়ের কাছে না যায়, তাহলে পাহাড় মহম্মদের কাছে যাবে।”
আধুনিক লিডারশীপ ও টিম কালচার বলে, আপনি আপনার টিমমেট, জুনিয়র, সাবোর্ডিনেটদের সাথে ইনটারেকটিভ হোন। দরকারে তারা যেমন আপনার কাছে আসবে, কখনো কখনো আপনিও নিচে নেমে তাদের সাথে কথা বলুন, তাদের কাজটি করে দিন, তাদের মতো করে, কখনো কখনো তাদের কাজটিও আপনি করুন। অর্থাৎ, কখনো আপনি ফরোয়ার্ড, কখনো সেই আপনিই নিচে নেমে গিয়ে ডিফেন্ডার। একজন লিডারকে একইসাথে লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট এবং লিডিং ফ্রম ব্যাক-দুটোই করতে হয়। সেটা কীভাবে? কেন?
সেটা হল, যখন মিশন শুরু হবে, তখন লিডিং ফ্রম দ্য এন্ড। ডিরেকশন দেবেন, সাহস দেবেন। যখন মিশন শুরু হয়ে একটা পর্যায়ে চলে এসেছে, তখন নেতা পেছন হতে অবজার্ভ করবেন ও নির্দেশনা দেবেন।
আবার, যখন সামনে হতে গুলি আসছে, তখন নেতা সামনে হতে নেতৃত্ব দেবেন। লিডিং উইদ এক্সাম্পল।
ফের যখন সামনে হতে ক্যামেরা আসছে, ফুলের জয়মাল্য আসছে, তখন নেতা পেছনে থাকবেন।
তারা আপনার কাছে যেমন আসবে, আপনিও তেমনি তাদের কাছে যান। তাদের সাথে বসে কাজ করুন। আপনার নির্দেশনাটা তাদের কাছে গিয়ে দিন। জুনিয়রদের ওয়ার্কস্টেশনে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলুন, কখনো হয়তো গল্পও করুন। আপনার রুমে তাদের চা খাওয়ান, আবার, এক মগ কফি নিয়ে তাদের স্টেশনে দাড়িয়ে তাদের নিয়ে খান।
বস ও লিডার হিসেবে আপনি বাই ডিফল্ট সবার পূজনীয় ও শ্রদ্ধার্য। সেটি এমনিতেও রক্ষিত হবে। কিন্তু, দেবতা, ঠাকুর, বস হিসেবে রথ হতে নেমে গিয়ে, পথের পাশে থাকা ভক্ত, অনুসরনকারী, জুনিয়র, টিমমেটদের সাথে দাড়িয়ে-বসে কোমড় বেঁধে কাজ করলে আপনার শ্রদ্ধা ও একসেপটিবিলিটি দশগুন বাড়বে।
বসই শুধু নয়, টিমের হিরোও বনে যাবেন।
কেবল হাথুরু নয়, টিমের মাশরাফিও বনুন না।
১৫. Acceptance/গ্রহনযোগ্যতা:
হলেন না হয় একটু লেস পারফেক্ট অথবা একটু কম ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। তাতে যদি সবার কাছে থাকা যায় তাই কি ভাল নয়? ”ভাব” নিয়েন না। আখেরে একাই থাকবেন, হাততালি দিতেও কেউ থাকবে না।
১৬. Vision/দুরদৃষ্টি:
২০১৪ সালে বসে ২০৫০ সালের পৃথিবীকে দেখুন, তাহলে দু’দিন পরে পরে নিয়ম বদলাতে হবে না আর চলমান সময়টাও সুন্দর হবে।
১৭. Generosity/বদান্যতা:
নত হোন, সম্মান আপনা থেকেই আসবে।
১৮. Observance/ন্যায়ানুগতা:
একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি একা যদি ঠিক হন আর সারা পৃথিবী ভুল পথে থাকে তবুও আপনি ঠিক।
১৯. Trouble shooting/সমস্যার সমাধানক্ষমতা:
সমস্যা নির্দেশ সবাই করতে পারে, কিন্তু সমাধান কয়জন পারে। বিশেষজ্ঞ পরে হবেন, আগে কোমর বেঁধে লেগে পড়ুন সমাধান করতে।
২০. Communicative ability/যোগাযোগের ক্ষমতা:
যোগাযোগ মানে ভাইবার আর মেইল নয়, যুক্ত থাকাটাই আসল। সঙ্গীতের দেখবেন সর্বব্যাপী একটা আবেদন আছে যেজন্য ভাষা না বুঝেও মানুষ সুন্দর গানে আপ্লুত হয়। ইচ্ছা থাকাটাই আসল।
২১. Impersonality//নৈর্ব্যক্তিকতা:
আপনার পরম শত্রুও কোনো চমৎকার আইডিয়া দিলে আপনি তা বিবেচনা করেন আবার জিগরী দোস্তের ফাইল এল তো চোখ বুজে পাশ করে দেন না-এ্টাই নৈর্ব্যাক্তিকতা
২২. Sense of humor/রসবোধ:
রামগড়ুরের ছানাকে কে পছন্দ করে বলুন। হাঁসুন এবং হাঁসান।
২৩. Customer ship/গ্রাহকসেবামূলক দৃষ্টিভঙ্গি:
আপনার বিপরীতে থাকা বিভাগের কর্মীদের আপনার কাস্টমার হিসেবে মনে করুন। দোকানদার তার কাস্টমারের সাথে কেমন মোলায়েম ব্যবহার করে তা খেয়াল করেছেন?
২৪. Temperament/দৃঢ়তা:
টেম্পার লুজ তো প্যাম্পার লুজ। দৃঢ়চেতা মানুষকে সবাই পছন্দ করে, বিনয়াবনত ভ্যগাবন্ড ইমেজ তৈরী ভাল ম্যানেজারের লক্ষন নয়।
২৫. Consistency/ধারাবাহিকতা:
একদিন বিরিয়ানী খেয়ে ৩৬৪ দিন পান্তা না খান বরং গড়ে পড়তায় সারা বছর গরম ভাত খান-তাও ভাল। যাই করবেন ধারাবাহিক হোন।
২৬. Efficiency/দক্ষতা:
এটার ব্যখ্যা আর দেব না। এটা ছাড়া ম্যানেজার ম্যানেজারই না।
২৭. Honesty/সততা:
আর্থিক, আত্মিক, ব্যবহারিক-সবক্ষেত্রে সৎ হোন। মনে রাখবেন-কিছু লোক বলে থাকে-“Honesty is not a virtue rather a matter of opportunity”। আপনিও কি তাই বিশ্বাস করেন? সততা কেবল আর্থিক ব্যাপারে নয়। চিন্তার সততা ও নিজের কাছে সৎ থাকাও সততা।
২৮. Rationality/যৌক্তিকতা:
আবেগ মানুষমাত্রই আছে তবে তা কর্মকে প্রভাবিত করলে সমস্যা। আবেগ নয়, যুক্তি দিয়ে সবকিছুকে বিচার করুন, নিজেও ভাল থাকবেন, টীম ও কোম্পানী ভাল থাকবে।
২৯. Pro-activeness/স্ব-উদ্যমী মনোভাব:
রি-এ্যকটিভ নয়, প্রো-এ্যাকটিভ হোন। আপনি তো নেতা, আপনাকে যেন কারো চালিত করার দরকার না পরে। আপনি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করবেন।
৩০. Empathy/সহমর্মীতা:
এটিতো আদী মানবীয় গুন। এটা না থাকলে তো আপনি মানুষই না। কর্মী ও অধস্তনদের সমস্যাকে মানবিক আবেগে দেখুন। মনে রাখবেন কর্তৃত্ব নয়, মন জয় করতে পারে একটু স্নেহ-মমতার, সহমর্মীতার হাত।
৩১. Flexibility/নমনীয়তা:
শাসনে যেমন আপনি খড়গহস্ত হবেন তেমনি আবার ক্ষেত্রবিশেষে নমনীয়ও হতে হবে। কঠোরতা ও নমনীয়তার মধ্যে ব্যালেন্স করুন। আরে ভাই দুনিয়াটাইতো আছে ব্যালেন্স করে।
৩২. Liberalism/ঔদার্য :
মনটাকে একটু বড় করুন না। বাইরের জগৎটাকে দেখুন, জানুন, বুঝুন। পুরানোকে আকড়ে থাকবেন না। নিজেকেও একটু বিচার করুন না যে আপনি কতটা উদারপন্থি বা আধুনিক।
৩৩. Can do, get it done attitude/লক্ষ্যে অবিচল:
ছোটবেলায় পড়েছিলাম রবার্ট ব্রুসের ধৈর্য আর বাঘের নদী পার হবার গল্প। সেই দুটি থিম একবার মনে করুন, আমার কিছু বলতে হবে না।
৩৪. Inspiration/অনুপ্রেরণাদায়ী:
টীমের জন্য আপনি হবেন অনুপ্রেরনা। বক্তৃতা নয়, নিজেই উদাহরন তৈরী করুন
৩৫. Ambition/উচ্চাশা:
আশা করতে দোষ কী? লক্ষ্য হোক অনেক দূর। তবে দুরাশা যেন আবার আপনাকে কুপথে চালিত না করে।
৩৬. Bravery/সাহস:
“Every answer is an answer. No answer is also an answer.”
উত্তর, প্রতিউত্তর ও জবাব এক নয়। একজন প্রজ্ঞাবান HR প্রফেশনাল অথবা প্রাজ্ঞ লিডারের উচিত সেই NO ANSWER এর সত্যিকারের মেসেজ ডি-কোড করা।
সব আনসারকে ডিকোড করতে পারা একজন প্রাজ্ঞ লিডারের লক্ষণ। আপনি বললেন বা দেখালেন, আর আমি শুনলাম, বুঝলাম ও দেখলাম। এটা অরডিনারি।
এক্সট্রা অর্ডিনারি হল, আপনি যা বলেননি, বা দেখাননি, আমি সেটা বুঝে নিলাম।
আনসার ইজ আনসার। দ্যট ইজ ইজি টু আন্ডারস্ট্যান্ড। সেটা লিডারের কারিশমা না।
No answer is also an answer. সেই No answer কে decode করতে পারা হল সত্যিকারের লিডারের কারিশমা।
শেকসপিয়ারের সেই উক্তি মনে আছে? “কাওয়ার্ড মরে বারে বার, বীর মরে একবার”। আপনার সাহসইতো টীমকে উদ্দীপ্ত করবে। সবশেষে বলি, নিজেকে কর্তা নয়, নেতা ভাবুন; কর্তৃত্ব নয়, নেতৃত্ব দিন; নিয়ন্ত্রণ নয়, উদ্দিপ্ত করুন; শাসন নয়, পরিচালিত করুন।
দেখবেন চমৎকার একটি টীম দাড়িয়ে গেছে আজকের কর্মী ও আগামীর সম্ভাবনাময় নেতা হয়ে।
একজন বিভাগীয় প্রধান নেবার সময় দেখতে হবে তার পিপল ম্যানেজমেন্ট ও ইনটেলেকচুয়াল ডেপথ কতটা। আমরা ধরে নিই, যে, যত অভিজ্ঞ হয়, ততই এই দুয়ের গভীরতা বাড়ে। ভুলটা সেখানেই হয়। নিয়োগকারী ও বসদের মনে রাখতে হবে, এই দুই বিদ্যা ডিফল্ট নয়। একে স্পেশাল এফোর্ট দিয়ে বাড়াতে হয়। আমাদের দেশে বেশিরভাগ বসদের এই দুই বিদ্যা কম।
[Thanks to Mostafiz, Sayed, Rakib, বিপুলকে যারা আমাকে হেল্প করেছিলেন লেখার এই অংশটুকু লিখতে।]
বস বা টপ পারসনদের নিয়ে এত কথা শুনে ও পড়েও যদি মনে করেন, যে, ব্যাটা হুদাই বকবক করল, তাহলে, বিজনেস ইনসাইডার, টাইম ম্যাগাজিন ও হিউম্যান রিসোর্স ডটকমের গবেষণা পড়ি আসুন। তাদের গবেষণা বলছে ‘খারাপ বস’-এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। নিজের সঙ্গে একঝলক মিলিয়েই দেখুন!
খারাপ বসের প্রথম এবং প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তিনি কর্মীদের প্রশংসা করতে জানেন না। উৎসাহ দেওয়াটা তাঁর অভ্যাসে নেই। . প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের কথা বলতে গেলে তিনি ‘আমি’ শব্দটা ব্যবহার করেন। আবার ব্যর্থতার কথা বলতে গেলে ‘আপনাদের’ বা ‘তোমাদের’ ব্যবহার করতে ভুল হয় না।
যদি কর্মীকে তাঁর প্রাপ্য কৃতিত্বটুকু দিতে না জানেন, তার মানে বস হিসেবে আপনি কম খারাপ নন! বস সব সময় ঠিক, এমনটা নয়। কর্মীদের মতামতও যৌক্তিক হতে পারে। সব সময় টেবিলের এক প্রান্তে বসে বস কথা বলবেন আর অন্যরা মাথা দোলাবে, এটাও দুর্বল নেতৃত্বের লক্ষণ।
আপনি যদি চান কর্মীরা প্রতি মুহূর্তে আপনার ভয়ে থরকম্প হয়ে থাকুক, তাতে আখেরে কাজেরই ক্ষতি হবে। ‘কর্মীরা আমার মতো করে ভাববে, কাজ করবে, আমার পছন্দটাই পছন্দ করবে, আমার অপছন্দে সায় দেবে’—এমন ভাবাটা মন্দ বসের বৈশিষ্ট্য।
ক্রমাগত সিদ্ধান্ত, লক্ষ্য, দৃষ্টিভঙ্গি বদলও কর্মীদের কাছে আপনাকে অজনপ্রিয় করে তুলবে। আপনি কী চান আর কী চান না, সেটা নির্দিষ্ট করে না বলে শুধু অধস্তন কর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা ভাবা ভুল।
একজন খারাপ বস কখনো কর্মীকে ‘বড় হওয়ার’ সুযোগ দেন না। কর্মীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চান না। পরিবার, স্বজনের খোঁজখবর নেন না। পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ খারাপ বসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি অফিসে আত্মীয় কিংবা কাছের মানুষদের অগ্রাধিকার দেন, ভুল করলেও ছাড় দেন।
সব কর্মীর প্রতি তাঁর আচরণ সমান হয় না। অনেকে নারী কর্মীদের কাজের ক্ষেত্রে দুর্বল মনে করেন। আবার উল্টোটাও হয়।অনেক পুরুষ বস নারী কর্মীদের প্রতি কিছুটা ‘বাড়তি আগ্রহ’ দেখান।
এসবও বসকে অপছন্দ করার কারণ হতে পারে।
প্রতিষ্ঠানের বাইরে দেখা হলে এড়িয়ে যাওয়া, প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা না করা, যখন তখন এমনকি ছুটির দিনেও ফোনে তটস্থ রাখা, সব সময় ধমকের ওপর রাখা কিংবা কথার গুরুত্ব না দেওয়া—এসবও মন্দ বসের লক্ষণ।
এবার আসি লেখার দ্বিতীয় অংশে।
যেকোনো অফিসে HR Dept. সবার পারফর্ম্যান্স মূল্যায়ন করে, ইভ্যালুয়েশন রিটার্ন করে, জনপ্রিয়তা যাঁচাই করে, ক্যান্ডিডেটদের যোগ্যতা যাঁচাই করে, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের KPI অনুযায়ী বিভাগীয় পারফর্ম্যান্স যাচাই করে।
তো বলুন, আমাদের কয়টা প্রতিষ্ঠানের HR Dept. বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে, আমাদের এইচআরের সব কর্মীর কোয়ালিফিকেশন টপমোষ্ট, আমাদের সব কর্মীর পারফর্ম্যান্স একশোতে ৭০?
আর কোন প্রতিষ্ঠানের HR এর সাহস হবে, তার সব কর্মীদের একটা করে ব্লাঙ্ক কার্ড পাঠিয়ে তাতে লিখতে বলবে, “এইচআরের প্রতি আপনার মূল্যায়ন ও সন্তুষ্টির মাত্রার উপর মার্কিং করুন ১০০ এর ভিতর। অতঃপর সেই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করবে সবার সামনে? HR এর কাজ কী, বা করণীয় কী-তাকে যদি একটা ছোট লাইনে বলে দিতে হয়, তাহলে বলা যায় এই কথাটা। কথাটি মিজ. Amanda Hudson এর। “The best HR people create managers, systems, and organizations that don’t need them.”
আমাদের ছোট্ট HR টিমটিকে গ্রুমিংয়ের সময়ে আমি প্রায়ই বলি, আপনাদের শেখার কোনো নির্দিষ্ট সীমানা বা গ্রামার নেই। সব দেখবেন। সবই লাগবে। কোনটা কবে কোন কাজে আসবে, আর কীভাবে সেটা কাজে দেবে তা ভাবতে হবে না, শুধু দেখে যান, পড়ে যান, শুনে যান, শিখে যান। শেখার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তো থাকেই। তবে সেটা ১০০ ভাগ শিক্ষণে নয়। শেখার পথে যখন চলছেন, তখন কোনটা শিখলে কী পাবেন-সেই ভাবনা ভুলে যান। শিক্ষা একটি সার্বিক বিষয়। পড়বার ক্ষেত্রে আপনাদের কখনো ভাবা ঠিক হবে না, যে, এটা পড়ে কী হবে, বা, এটা যে পড়লাম, এটা হতে কী পেলাম। টারগেট করে বই বা কনটেন্ট বাছুন, তবে কখনো বই পড়বার বা কিছু নিয়ে পড়বার সরাসরি রেজাল্ট খুঁজবেন না। পড়বার ফল বা প্রভাব কখনো এমন সরাসরি আছর করে না।
এই ভাবনাটি আরেকটু পোক্ত হল সেদিন।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোল প্রদানের একটি ভিডিও দেখছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন টোল দিলেন তখন কাউন্টার অফিসারের সাথে বাম হাত এড়িয়ে ডান হাতে টাকা ও রিসিট বিনিময়ের দৃশ্যটি আমার মাথায় নাড়া দিল। বেশ ক’বার ভিডিওটি দেখলাম। এই দৃশ্যটি আমার চিন্তায় একটি বড় ছাপ ফেলল। এবং, সেটি দুই ডাইমেনশনে।
এক; ওই যে, ওপরে বলছিলাম, যে, শিক্ষার কোনো গ্রামার ও ম্যানুয়াল নেই। সেটা আবারও প্রমাণ পেলাম। ওই ভিডিওটি কেউ কাট করে পোস্ট করেছেন, লক্ষ্য হয়তো তার পছন্দের মানুষটির বদান্যতা ও শিক্ষাকে হাইলাইট করা। যখন ভিডিওটি দেখছি, ক্যাপশন ও ডিটেল দেখে একজন দর্শক হিসেবে নিশ্চয়ই সেই অবজেকটিভ নিয়েই দেখতে শুরু করব আমরা। কিন্তু, ভিডিও দেখে ফোকাস পড়ল অন্যত্র। ইমপ্যাক্ট হল অন্যখানে। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শিক্ষা সেখান হতে নিলাম নিজের জন্য। এ হতে আমি আবারও শিখলাম, কেন সব কিছু দেখতে, শুনতে, পড়তে হবে। কারন, যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই।
দুই; ব্যক্তিগতভাবে আমি ডান হাত-বাম হাত ভেদাভেদে যাই না। কিন্তু, আমি জানি, আমাদের কমিউনিটিতে বাম হাতকে কিছুটা ট্যাবু হিসেবে দেখা হয়। বাম হাত অনেকটা অবসকিউর, অবসোলেট। বাম হাতে খাওয়া, কিছু নেয়া বা দেয়াকে এখানে অগ্রহনযোগ্য (আসলে অভদ্রচিত) মনে করা হয়। আমি সেটা মনে করি না। আমি মনে করি ও মেনে এসেছি, যে, আল্লহ’র সৃষ্ট দুটি হাতই সমান; সমান মর্যাদার ও সমান গুরুত্বের। কোনো হাতই অবসকিউর না। বরং, মানুষ তার বাম হাতের প্রতি বেশি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত (যদি হাতের জান থাকত), কারন, সে মানুষের যাবতীয় ঘৃন্য ও অশৌচ কাজ করে দেবার দায়ীত্ব নিয়েছে।
কিন্তু, তারপরও, আমার মনে হল, একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এক্সেকিউটিভ, মানে প্রাইম মিনিস্টার যদি ভাবতে পারেন, (ব্যক্তিগত বিশ্বাস যা-ই হয়ে থাকুক), যে, প্রকাশ্যে তিনি গ্রেটার কমিউনিটির সেন্টিমেন্ট, প্রথা ও প্রচলনকে সম্মান দেখাবেন, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে যা-ই ভাবি না কেন, প্রকাশ্যে যখন অন্য কারো সাথে মোয়ামালাত করছি, তখন খুব মারাত্মক কোনো কমপ্রোমাইজ না হয়ে থাকলে তার কাস্টমস, নর্মস এর প্রতি সম্মান দেখিয়ে কিছুক্ষণের জন্য নিজের অভ্যাস বা আচরনকে তো বদলাতেই পারি।
ঘটনা এক, শিক্ষা দুই। সবকিছু গোগ্রাসে গিলতে হবে-এজন্যই কই।
HR profession এর আর সব core functions এবং deliverables এ বুৎপত্তি অর্জনের তাও একটি grammar আছে। আছে কষ্ট করে হলেও সেগুলোতে সময়ের সাথে সাথে ঋদ্ধ হবার সম্ভাবনা।
কিন্তু যেটা রীতিমতো hard nut to crack, যেটা আয়ত্বে আসা, বা, যেটাতে বুৎপত্তি অর্জনে সেই অর্থে কোনো grammar বা manual বা annotation নেই, সেটা হল-Reading your PEOPLE. প্রতিটি ট্যালেন্টের চারপাশে সেই ট্যালেন্টের একটি ভাইব্রেশন থাকে, একরকম থারমাল এফেক্ট থাকে। সেই ভাইব্রেশন ও থারমাল ইফেক্টকে অনুভব করতে হবে।
আপনার People কে বোঝা, উপলব্ধি করা, অনুভব করে তাদের জন্য empathetic ও compassionate হওয়া অতি অতি জটিল, কঠিন, দুরূহ ও আয়াসসাধ্য বিদ্যা।
অথচ এটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার মানুষদের বুঝতে না পারলে, তাদের ভাবনা ধরতে না পারলে, তাদের চিন্তার জগতে ঢুকতে না পারলে বাদবাকি চমৎকার বেকার।
নিজেকে একজন উপযুক্ত ও প্রত্যাশিত পর্যায়ের HR Professional হিসেবে দেখতে চান? তাহলে-নিজেকে নারী বা পুরুষ ভাবা বন্ধ করুন। শুধু মানুষ ও প্রফেশনাল ভাবুন। নিজেকে অমুক সেক্টর আর তমুক সেক্টরের প্রফেশনাল ভাবা বন্ধ করুন। নিজেকে অমুক বা তমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের, এলাকার, কোম্পানীর ভাবা বন্ধ করুন। আপনার কোনো দেশ নেই।
নিজেকে অমুকটা HR এর সাবজেক্ট আর তমুকটা না-এমনটা ভাবা হতে বিরত করুন। চোখের সামনে যা পান-সেটাই পড়ে ফেলুন। নিজেকে জুনিয়র ও সিনিয়র ভাবা বন্ধ করুন। বড়দের এইচার বা এডাল্ট এইচার নামে কিছু নেই। নিজেকে অমুকটা শিখতে হবে আর তমুকটা দরকার নেই-ভাবানো হতে বিরত রাখুন। যেটাই শিখতে মনে চায়, শিখে ফেলুন।
সব সময় মনে রাখবেন, এইচ.আর হল একটি প্রাকটিসিং আর্ট। এটাতে বুৎপত্তি অর্জনের জন্য আপনাকে প্যাশনেট হতে হবে, এক্সপিরিমেন্টাল, ইনকুইজিটিভ, ইনোভেটিভ, ক্রিয়েটিভ, শেয়ারিং ডায়নামিক ও ডাইভারসিফাইড মানুষ হতে হবে। প্রাকটিস, স্ট্যাডি, রিসার্চ, এক্সপিরিমেন্ট ও এক্সপিরিয়েন্স করে করে, এক্সপ্লোর করে করে আপনাকে প্রফেশনাল এক্সেলেন্স নিয়ে আসতে হবে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, যে, যা দৃশ্যমানভাবে আমার পেশার সাথে সম্পর্কিত নয়-এমন বেহুদা বিষয় দিয়ে ব্রেইন ভর্তি করব কেন?
ওয়েল, আপনি একমাত্র না হলেও, সেই গুটি কয়েক প্রফেশনালের মধ্যে একজন, যে, মানুষ নিয়ে ডিল করে। তাই, মানুষকে যার সংস্পর্শে আসতে হয়-এমন যে কোনো টপিক বা ইস্যু নিয়ে আপনাকে জীবনে কখনো না কখনো কাজ করতে হতে পারে, জানতে হতে পারে। জানার দরকার হতে পারে।
আরেকটি যুক্তি হল, নলেজ হাসিল করা ও নলেজ অর্জনের পুরো প্রক্রিয়াটির ভেতর দিয়ে যাওয়া-আপনাকে ডিরেক্ট ও ইনডিরেক্ট-উভয়ভাবে রেনোভেশন, ইনোভেশন ও এক্সেলেন্সের সফলতা দেবে। যে কারনে প্লেটো একাডেমিয়া প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। বোর্ডিং স্কুলের উদাহরন হতে পারে এখানে সব থেকে যথাযথ।
তাই শুধু দরকারী বা রিলেভ্যান্ট নলেজ বা লার্নিং নয়, যে কোনো কিছু নিয়েই আগ্রহী হোন, দেখুন, জানুন, শিখুন। নলেজ হল বীজের মতো। সে আজ হয়তো আপনাকে কিছু দিল না। কিন্তু সে আপনার ভেতরে নতুন জ্ঞানের জন্ম ও পুনর্জন্ম দেয়, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘটে যায় আপনার অবচেতনেই।
নিজেকে অমুকের সাথে মেশা যাবে না আর তমুকের সাথে মেশা যাবে-এই কাজ হতে দূরে রাখুন। শয়তানের সাথেও চা খান, ফেরেশতার সাথেও কফি খান। নিজেকে অমুক উৎস হতে শিখব, তমুক উৎস কাজে লাগবে না-এমন ভাবনা হতে দূরে রাখুন। এবং, সেই সাথে মনে রাখুন-
HR এর কাজের আসলে সত্যিকারের কোনো নির্ধারিত ও সীমিত গন্ডি নেই। সবই আপনার কাজ। জুতো সেলাই হতে চটি পাঠ। (চন্ডি বলিনি, চটিই বলেছি।) HR এর জন্য লাগবে বা শিখতে হবে-এমন সীমা নেই।
আপনাকে সবই শিখতে হবে। সবই জানার যোগ্য-এই ভাবনার মুরীদ হতে হবে। HR মানেই আপনাকে একদম সুশীল গোপাল (যে কলা খায়) হতে হবে, তা ভুলে গিয়ে জেনে রাখুন, একজন সত্যিকারের HR প্রফেশনাল হয়ে উঠতে হলে আপনাকে বড় মানুষদের শিখিয়ে দেয়া সুশীল চর্চার পাশাপাশি গালি দেয়া জানতে হবে, গালি খাওয়া শিখতে হবে, মিথ্যা বলা জানতে হবে আবার মিথ্যা ধরায় দক্ষ হতে হবে, অমানবিক হওয়া শিখতে হবে, শোক ও দুঃখ সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে, আইন ভাঙা শিখতে হবে, অতি মানবিক হতে হবে, ভাবলেশহীন ও নিরাসক্ত হতে হবে, মানুষের চোখের ও শরীরের ভাষা পড়তে জানতে হবে। সাইকোলজিতে ভাল হতে হবে, শুদ্ধ ভাষাও পারতে হবে, আঞ্চলিক ও চলিত ভাষায়ও অভ্যস্ত হতে হবে।
যদি আপনি চান। না চাইলে মুড়ি খান।
একজন এইচআর কর্মী হবার স্বপ্ন দেখলে আপনাকে প্রাথমিক অবস্থায় বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নিতে হবে না। একজন ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনী হবার জন্য যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার তার সবই আপনার থাকতে হবে। এই লেখা এইচ.আর কর্মী বা পেশাজীবি হবার দরকারী যোগ্যতার বা গুনের বয়ান নয়। সেটি একটি আলাদা লেখাতে বলেছি।
এখানে বলার চেষ্টা করেছি, যদি আপনি স্বপ্ন দেখে থাকেন পড়াশোনা শেষে আপনি একজন এইচআর কর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করবেন, তাহলে যখন যেটা করতে হবে-সেটির প্রস্তুতির বয়ান নিয়ে-
১.অনার্স ও মাস্টার্সে HRM নিয়ে পড়বেন। HR মেজর নিয়ে BBA করে তারপর মাস্টার্সে মানে MBAতে HR মেজর নিতে হবে। তবে এর বাইরেও, যে কোনো বিষয়ে পড়েও এই পেশায় আসা যাবে আর আমি বৃহত্তর বিচারে সেটি সাপোর্ট করি। তবে, সার্বিক বিচারে, MBA করাটা হওয়া উচিত অন্তত ৫ বছর জব কিংবা ম্যানেজারিয়াল জবে থাকা মানুষদের।
২.ইংরেজি ও বাংলা ভাষার ৪ টি শাখা-রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং ও লিসনিং-৪টিতেই আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
৩.নিজের IQ, SQ, AQ, EQ ইমপ্রূভ করতে হবে। প্রাকটিস করলে উন্নয়ন সম্ভব।
৪.হিউম্যান সাইকোলজি বিষয়ক পড়াশোনা করুন।
৫.সফল এইচআর প্রফেশনালদের সাকসেস স্টোরী ও তার সাকসেস ফর্মূলা স্ট্যাডি করুন।
৬.কম্পিউটার লিটারেসি, স্মার্টফোনের ব্যবহার, টেকনোলজির ব্যবহারে দক্ষ হোন।
৭.সোস্যাল মিডিয়াতে জড়িত হোন, নেটওয়ার্ক বাড়ান। বিশেষত এইচআর সংশ্লিষ্ট যত সাইট বা প্লাটফরম আছে, ওগুলোর মেম্বার হোন, লিখুন, লেখা পড়ুন, লেখার ফিডব্যাক দিন, মন্তব্য করুন।
৮.ফ্রি হ্যান্ড লেখার চর্চা করুন।
৯.লেবার ল এর উপর কোর্স করতে পারলে ভাল। না পারলে অন্তত আইনটি স্ট্যাডি করুন। আইনি পরামর্শের পোষ্টগুলো পড়ুন, জানুন।
১০.কর্পোরেট পার্সোন বিশেষত এইচআর পার্সোনেলদের সাথে লিংড হোন, তাদের সাথে ইন্টার্যাক্ট করুন।
১১.যদি আপনার পড়াশোনার বিষয় management বা HRM নাও হয়ে থাকে, তবে ম্যানেজমেন্ট থিওরীর ব্যাসিক বিষয়গুলো স্ট্যাডি করুন।
১২.বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এইচআর এর ওপর ৬মাস বা ১ বছর মেয়াদী শর্ট কোর্স বা ডিপ্লোমা করায়। আপনি একটি কোর্স করে নিলে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন। তবে বাংলাদেশের পার্সপেকটিভে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রফেশনাল কোর্স চাকরীতে ঢোকার পরে করাই ভাল। হ্যা, আগে করলে ডাক পেতে প্রাধান্য পেলেও পেতে পারেন। তবে এইচ.আর জবে ৫ বছর হয়ে গেলে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন নেবার পাশাপাশি কিছু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সার্টিফিকেশন নেবার বিষয়ে সিরিয়াস উদ্যোগ নিন।
১৩.ধৈর্য, অধ্যবসায়, স্থীর বুদ্ধি, পরমত সহিষ্ণুতা, দুরদৃষ্টি, ইমপার্সোনালিজম, ইমপার্সিয়ালিজম, নন-প্রিজুডিসড এটিচুড, নন-বায়াজড এটিচুড, পজিটিভ এটিচুড, চ্যালেঞ্জিং এটিচুড এগুলো যেকোনো প্রফেশনে লাগলেও এইচআরে কাজ করতে বেশি দরকার। এগুলো কোনো বইয়ে পাওয়া যায় না বা কোনো ডিপ্লোমা করলেও সরাসরি পাওয়া না গেলেও ট্রেনিং, চর্চা, গবেষনা ও বিশ্লেষনের মধ্য দিয়ে এগুলো শানিত করা যায়।
সাধারনত আমাদের HR টীমের সদস্যদের যোগ্যতা ও দক্ষতার যেসব বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে জোর দিয়ে থাকি, সেগুলো একটু বলি:
১)ইংরেজি ও বাংলা লেখা, বলা ও বোঝায় সাবলিল সক্ষমতা।
২)একজন প্রফেশনাল এইচ আর কর্মীর মতো ম্যানার ও বাচনভঙ্গী।
৩)ডিপার্টমেন্টের প্রতি আনুগত্য এমনকি তা নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে হলেও।
৪)প্রফেশনাল জ্ঞান বাদেও বিভিন্ন বিষয়ে জানা থাকা ও জানার আগ্রহ থাকা।
৫)চমৎকার ম্যানারিজম ও বাচনভঙ্গি। একেবারে শুদ্ধ ভাষা না হলেও অন্তত স্ট্যান্ডার্ড ভাষায়।
৬)চমৎকার পারস্পরিক সম্পর্ক-ডিপার্টমেন্টের ভিতরের ও বাইরের লোকদের সাথে।
৭)ডিপার্টমেন্টের সকল নিয়ম, নতুন টেকনোলজি, নর্মস, আইডিয়া ও টেকনিকস সম্পর্কে আপডেট থাকা।
৮)অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের প্রতি ভাল সম্পর্ক ও সহযোগী মনোভাব। তবে তার মানে এই নয় যে নিজের ডিপার্টমেন্ট বাদ দিয়ে অন্য বিভাগকে প্রাধান্য দেয়া।
৯)টীমমেটদের প্রতিযোগী নয় সহযোগী মনে করা।
১০)দায়ীত্ব নেবার সদিচ্ছা। অন্য কেউ কাজ করছে নাকি করছেনা তা না দেখে “আমাকেই” দায়ীত্ব দেবার মতো আস্থা সিনিয়রদের মনে তৈরী করা।
AIHR সাইটের একটি আর্টিকেলের আলোকে HR প্রোফেশনালদের কাঙ্খিত যোগ্যতার একটি তালিকা আপনার বোঝার জন্য দিচ্ছি: –
1 Digital Proficiency
a Technological awareness
b Technology embedding
c Digital culture building
2 Data Literacy
a Data driven
b Analytics translation
3 Business Acumen
a Context interpretation
b Customer orientation
c Strategy co-creation
4 People Advocacy
a Culture building
b People practices
c Workplace champion
d Communications expert
5 A high Functional competency
a Learning & Development
b Metrics & Reporting
c Talent Acquisition
d Workforce Planning
e Talent Management
f Diversity & Inclusion
g Compensation & Benefits
h Engagement, Health & Wellbeing
i organizational Effectiveness
j HR Leadership & Strategy effective communicator who drives impact.
আমি আপনাকে অনুরোধ করব উপরের পরামর্শগুলোর সাথে সাথে আমার অত্যন্ত প্রিয় HR এক্সপার্ট মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদের এই লেখাটিও মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আমার বিশ্বাস আপনি আপনার করনীয় পেয়ে যাবেন। https://www.facebook.com/muzahidul.jahid/posts/10209253666692540https://www.facebook.com/muzahidul.jahid/posts/10209253666692540
এইচ.আর পেশায় বুৎপত্তি অর্জনের এসব গুনাগুন আমাদের কতটা আছে-তার হিসেব মেলাতে হলে এবার সার্বিকভাবে নিজেদের একটু নিন্দাই করতে হবে।
দেড় যুগ হল গার্মেন্টস এইচআর, কোম্পানী এ্যাডমিনিসট্রেশন আর কমপ্লায়েন্স নিয়ে কাজ করি। কোম্পানীর দরকারে প্রতিদিন আমার টীমের কর্মীরা কাতারে কাতারে প্রার্থীদের ইন্টারভিউ করে। তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই কী যে ভয়ঙ্কর যোগ্যতা! ইন্টারভিউয়ার অফিসার নিজের চুল ছিড়তে পারলে ছিড়ে ফেলত।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে এই ট্রেডে দেশের প্রথম সারির মেধারা এখনো কাতারে কাতারে চাকরীর জন্য আসে না। তবে আজ ওসব প্রার্থীদের নিয়ে নয়, ইন্টারভিউয়ার অর্থাৎ এইচআর এর অবস্থা নিয়ে বলব। বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টস এইচআর-এ্যাডমিন কর্মী (অফিসার হতে ম্যানেজার, এমনকি জিএম পর্যন্ত) ইন্টারভিউ করার সুযোগ (অথবা বলব দুর্যোগ) হয়েছে অনেকবার। (কিছু ব্যতিক্রম বাদে) পিওর এইচআর কিংবা মিক্সড এইচআর এ্যাডমিন কর্মীদের সার্বিক যোগ্যতার বহর দেখে বহুবার ভিড়মি খেয়েছি। কি ইংরেজি, কি অন্যান্য যোগ্যতা, কি প্রফেশনাল নলেজ, কিংবা স্মার্টনেস-ভয়াবহ অবস্থা।
এদের মধ্যে জিএম লেভেলও আছেন। ইন্টারভিউ করা ছাড়াও নানান উপলক্ষ্যে নানান মিডিয়ামে টপ লেভেল, বটম লেভেল-নানা পর্যায়ের পিওর এইচআর কিংবা মিক্সড এইচআর এ্যাডমিন কর্মীদের (কিছু ব্যতিক্রম বাদে) যোগ্যতার ভয়াবহ করুন অবস্থা দর্শন করার দুর্ভাগ্য মাঝেমধ্যেই হয়।
এমনও দেখেছি নামকরা কোম্পানী যার নাম দেখে এক কথায় সবাই চেনে-সেখানকার এইচআর বা এ্যাডমিনকে ডেকেছি ইন্টারভিউ করতে বা অন্য কোনো ছুরতে কথা হয়েছে, ইন্টার্যাক্ট হয়েছে কিংবা তার কর্মকান্ড দশ্যনের দুর্ভাগ্য হয়েছে, তেনার যোগ্যতার বহর তথৈবচ। দুর্ভাগ্য হল তেনারাই আবার কোম্পানীর হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য নির্ধারন, ভাগ্য নির্মান, ভাগ্য বদল, যোগ্যতা নির্ণয়, যোগ্যতার মূল্যায়নের মহান দায়ীত্বে আছেন।
HR একটি থ্যাংকলেস জব এবং HR পেশাজীবিদের মানুষ প্রচন্ড অপছন্দের দৃষ্টিতে দেখে-এমন একটি হাহাকার আমাদের মধ্যে প্রায়শই উচ্চারিত হয়। এই আহাজারি একেবারে অমূলক নয়। থ্যাংকস না দেয়া, বরং, সবরকম অসঙ্গতির জন্য এইচ.আরকে দায়ী করার অনুযোগ একদম পুরোটা অমূলক নয়। তবে একটা বিপরীত চিত্রও আছে। সেই চিত্রটি আত্মসমালোচনার।
ব্যক্তিগতভাবে আমি অষ্টপ্রহর যোগ্যতা যোগ্যতা যোগ্যতা করে চেঁচাতে থাকলেও কখনো কখনো আমিও মনে করি, আমি ভুল। যোগ্যতা ও মেধার আদতে খুব দরকার নেই।
কেন এই বোধোদয়?
যোগ্যতা ও মেধার আদর্শ মিশ্রন ও প্রয়োগ ছাড়াই যদি একটি খাত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিজনেস করে যেতে পারে, দীর্ঘকাল আবার সেটা টিকেও থাকে, তাহলে যোগ্যতা ধুয়ে কি পানি খাব?
বিশেষ খাতটির বিশেষ প্রফেশনের অজগর সাপ (মানে বড় বড় ষাঢ়রা) হতে কেঁচো (মানে ছোটখাটো অফিষাঢ়) পর্যন্ত যদি সামান্য দুটো কলম কথা যথাযথভাবে না লিখতে শিখে ও করেই বড় বড় ষাঢ় বনে যেতে পারে, তাহলে মেধার জন্য চিৎকার করে যেসব গাঁধা (যেমন আমি), তাদের দেশ হতে বিতাড়ন করা উচিত।
(সারকাজম ব্যাকগ্রাউন্ড: একটি কারখানা স্ট্রাটেজিক কারণে বন্ধ করে অন্যত্র ক্যাপাসিটি ডাইভার্ট করে। বন্ধ করবার সময়ে কর্মীদের আইনানুযায়ী প্রযোজ্য ও কম খরচের ছাঁটাই না করে স্বীয় গুড উইলের কারনে প্রায় দ্বিগুন টাকা তাদের দিয়ে অফিশিয়ালি সবাইকে টারমিনেট করে। এতে প্রতিষ্ঠানের আর্থিকভাবে স্যাকরিফািইস হলেও কর্মীরা খুবই খুশি ও বেনেফিটেড হন। এখন নিয়মানুযায়ী কর্মীকে সেন্ট্রাল ডেটাবেসে টারমিনেটেড দেখাবে। তেমন একজন কর্মী মূল ঘটনার বছর পাঁচেক পরে একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে গেছেন। মাঝে দুটো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে ফেলেছেন।
ইন্টারভিউয়িং HR তার সেন্ট্রাল ডেটাবেসের রেকর্ড চেক করে দেখেন তিনি টারমিনেটেড। এখন তার ভোঁতা ও দূষিত মাথায় তো আছে যে, টারমিনেট হন কেবল বদমাশরা। অন্য কেউ টারমিনেট হতে পারে-সেই ডায়নামিক চিন্তা তার ঘটে নেই। এখন তাকে তিনি নেবেন না। যদিও টেকনিক্যাল যোগ্যতায় সে ফিট।
এই ক্যনডিডেটকে হায়ার করার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করাটা যে HR এর একটা মাস্ট কাজ আর সেটা করতে তার পূর্বের কর্মস্থলে ফোন করে কথা বললে মূল রহস্যটা পরিষ্কার হয়ে যায়-সেটুকু ভাববার মতো বিদ্যা একটা HR ম্যানেজারের নেই। সেটা ছাড়াই ম্যানেজার হয়ে বসে গেছে, লোকের ভাগ্য নির্ধারন করছে। তার অপদার্থতা ও অজ্ঞতায় কোম্পানী হারাচ্ছে একজন পোটেনশিয়াল ট্যালেন্ট।)
চেনা এক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের DEIB নীতি আর স্ট্র্যাটেজিক ভাবনার অংশ হিসেবে তাদের সম্প্রতি ইচ্ছে হল তারা গতানুগতিক পথে না গিয়ে তাদের হেড অব এইচ.আর করবেন অবশ্যই একজন নারীকে। যথারীতি হায়ার হলেন।
অন্যসব চমৎকারিত্ব যেমন তেমন। টক ঝাল।
যেখানে গিয়ে গোল বাঁধল, সেটা হল তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও এপ্রোচ টু পিপল। বিস্তারিত বলব না। কিছু হিন্টস বলি।
”ওনার মটো হল, HR এর সাথে এম্পলয়িদের দূরত্ব রাখতে হবে। কোন পিকনিকে যাওয়া যাবে না। কোন প্রোগ্রাম ইনিশিয়েট করা যাবে না। ট্রেনিং বা আদারস, ডিপার্টমেন্ট হেডরা নিজেরা করবেন। ওনার সাথে কেউ কথা বলতে গেলে, উনি বসতে বলেননা। দাঁড়া করিয়ে রাখেন। ফ্লোরের জুনিয়র হতে এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার লেভেলের লোক পর্যন্ত- উনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এর উপরে হলে উনি বসতে বলেন।”
উনি একজন নারী-এটা আমার ফোকাস নয়। এটা নারী-পুরুষের ভেদের পোস্ট নয়। ভাল-মন্দ লিঙ্গভেদে হয় না। এখানে ভয়ানক দিকটি হল একজন হেড অব এইচ.আরের দৃষ্টিভঙ্গি। এমনকি, সেটি একজন নারী, যাদের আমরা ধরে নিই, অন্তত কিছুটা বাড়তি রেসিলিয়েন্স, ডায়নামিজম, এমপ্যথি থাকে। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানগুলোর বুঝতে হবে, এইচ.আর প্রফেশনালের পারসোনালিটি ট্রেইট এবং প্যাটার্ন লৈঙ্গিক ইস্যু না। নারী হলেই মমতাময়ী মাতা, পুরুষ হলেই দক্ষ প্রশাসক-এসব বায়াস মাত্র। হায়ারিংয়ের ক্ষেত্রে তাই জেন্ডার ডাইভারসিটির নীতি নতুন করে ভাববার আছে। সেটা ভিন্ন আলাপ।
আমার ফোকাস হল, আমাদেরকে যে লোকে গাল দেন-সেটা একদম শুধু শুধু নয়, অন্তত সবক্ষেত্রে তো নয়ই। আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে পঁচানোর পাশাপাশি আমার সকল এইচ.আর সহকর্মীদের কতটা পঁচাচ্ছি-সেটাও ভেবে চলা উচিত।
(আবারও বলছি, উদাহরনের নারী সদস্যের উল্লেখ শুধুমাত্র কেস প্রেজেন্টেশনের জন্য। নারী ওই পজিশনে আনফিট-এই ন্যারেটিভে নয়।)
ওনাদের প্রজাদের অর্থাৎ কর্মীদের জন্য সমবেদনা বোধ করি। (দয়া করে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। ইন জেনারেল সবার কথা এটা নয়। আর সবাই এক নয়। কঠিন যোগ্য লোকও আছেন যাদের আশির্বাদ পাবার সৌভাগ্যও হয়েছে।)
একটি দেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছে নাকি হয়নি, তার লক্ষণ বা নিদর্শন নাকি দুটো-
১. সব পুকুর ডোবা হতে কচুরিপানা নিষ্কাশনের একটা মচ্ছব চলছে কিনা।
২. দেশের সব নারকেল সুপারি গাছের গোড়ায় সাদা চুন লাল পাড় দেবার মচ্ছব চলছে কিনা-তা খেয়াল করুন।
কর্পোরাল হতে এবার কর্পোরেট।
একটি অফিসে বা তার কোনো বিভাগে নতুন বস এসেছে তা কীভাবে বুঝবেন?
সহজ, যখন দেখবেন, সেই টিমের এমনকি ১০ বছর ধরে কাজ করা লোকটাও তার JD টাইপ করতে ব্যস্ত। আর ২০ বছর ধরে কাজ করা লোকটা তার JD কী-সেটা জানার জন্য অন্যদের পেছন পেছন দৌড়ে ক্লান্ত।
এবার, সবার প্রিয় এইষাড়।
বলুন তো, কোনো অফিসে নতুন হেডপেইচার এসেছেন-সেটা কীভাবে কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন?
সহজ। যদি দেখেন হঠাৎ করে সব পায়খানার সামনে HIS & HERS নেমপ্লেট বসানো হচ্ছে, কিংবা, অফিসের পিওনদের ইউনিফরম পরিহিত দেখা যাচ্ছে, তাহলেই বিলক্ষণ নতুন হেডপেইষাঁড় নাজিল হয়ে থাকবেন।
ভাইয়েরা, ভেলকিবাজি বেচে আর কত দিন?
আসল কথায় আসি।
#HeadofHR বা HR টপারদের কাম্য ফিচারস নিয়ে এবার একটু বিশেষ আলোকপাত করি।
একজন HR Professional কে দ্বৈত চরিত্রের অধিকারী হতে হয়। ইমপারসোনাল হতে হয়।
প্রথমত, একজন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তার একটি নিজস্ব বিশ্বাস, ধরণ, চলন, ডিসকোর্স নিশ্চয়ই রয়েছে। তিনি সেই মতোই নিজেকে পরিচালিত করবেন-এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু, গোল বাধে, যখন তিনি দ্বিতীয় সত্তার, অর্থাৎ কর্পোরেট পারসনও হন।
কর্পোরেটে তিনি আর তার ব্যক্তি মানুষটি নন, সেখানে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের HR Philosopher. সেখানে তিনি একজন ’কর্পোরেট’ এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়ীত্বের মানুষ। তিনি সেখানে বিজনেসের মানুষ, অন্যের মানুষ; অন্য প্রতিষ্ঠানে বিক্রী করেছেন তার সময়, জ্ঞান, মেধা, সৃষ্টিশীলতা ও সম্ভাবনা।
তাই, সেখানে তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, ভাবনা, ধরণ, কোর্স-সবকিছুকে একপাশে রেখে প্রতিষ্ঠানের ভিশন, মিশন, ভ্যালুজ, গোল ও ডিসকোর্স অনুযায়ী এ্যক্ট ও রিএ্যক্ট করতে হয় বা হবে। সেখানে তিনি ভিন্ন একজন মানুষ। ভিন্ন চিন্তা, বিশ্বাস, ধরণ ও ডিসকোর্স বাস্তবায়নের মানুষ। সেখানে তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস উহ্য।
তিনি কর্পোরেটে যা করেন, বা, যেই থটসের বহিঃপ্রকাশ ঘটান, ধরে নেবেন না, যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবেও অমনই মানুষ। আবার, কেউ ব্যক্তিগত চৌহদ্দিতে যে বিশ্বাস ধারন করেন, ডিফল্ট ভেবে নেবেন না, যে, তিনি কর্পোরেটেও ঠিক সেরকমই একজন মানুষ।
প্রায়শই দেখা যায়, এমন একজন HR professional & philosopher তার ব্যক্তিগত চৌহদ্দিতে একরকম মানুষ, আবার কর্পোরেটে তিনি ভিন্ন রকম একজন মানুষ। দ্বৈত সত্তা।
২০২৩ সালের পৃথিবীতে, বাংলাদেশ নামক একটি দেশে বিদ্যমান বাস্তবতায়, একটি বড় কোম্পানীর হেড অব এইচআরের হেড হবার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ফিচারটি কী হওয়া উচিৎ। উত্তরটা (আমার বিবেচনায়) হল,
তাকে একজন খুব ভাল ফাইন্যান্স এনালিষ্ট এবং যে বিজনেস তার কোম্পানী করে তার বিজনেস কনসেপ্ট সম্পর্কে থরো নলেজ রাখতে হবে। সেটা যদি না থাকে তবে তার সকল এইচআর থিংকিং রং, সকল স্ট্র্যাটেজি ফাইন্যান্সিয়ালি রং এবং সকল অপারেশনও তাই রং। ফলাফল?
কেন ভাল ফাইন্যান্স এবং বিজনেস এনালিষ্ট হওয়াটাকে এত ভাইটাল বলছি? কারন অচীরেই যেকোনো বড় বিজনেস ফার্মকে যেকোনো আসপেক্টে তীব্র চ্যালেঞ্জ ও প্রতিযোগীতার মুখোমুখি হতে হবে।
সেই দিনে সুপার সফিষ্টিকেটেড এইচআর স্ট্র্যাটেজি না বানাতে পারলে এইচআর টিকবে না। আর এইচআর না টিকলে সে কোম্পানীর বাকি কোনো কিছুই না টিকবারই কথা।
আর এই দুটি বিষয়ের ঝানু একজন এইচআর হেড যদি একসময়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সিইও হন, তবে তার বিজনেস এক্সপোজারের সাথে ম্যানপাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাবিলিটির কম্বিনেশন হওয়ায় তার পক্ষে প্রতিষ্ঠানের যেকোনো স্ট্র্যাটেজি যেটা বাস্তবায়নে তার কর্মীরাই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর-তাদের বেষ্ট এফোর্টটা আদায় করার উপায়টি তিনিই বেষ্ট জানবেন।
একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও হবার জন্য ব্যক্তিকে একজন প্রোডাকশন বা মার্কেটিং বা ফাইন্যান্স এক্সপার্ট হওয়াটা জরুরী নয়। শুধু তার ওইসব বিষয়ে মৌলিক ও এসেনশিয়াল টেকনিক্যাল নলেজ থাকাটাই এনাফ।
একজন এইচআর এক্সপার্টও সিইও হবার উপযুক্ত যদি-কোম্পানীর অন্যতম বিজনেস এপ্রোচটি হয়ে থাকে-‘Manpower is one of the most vital capitals of the enterprise.”
এইচআর হতে সিইও হবার প্রচুর নজির বিশ্বে রয়েছে। আর তাছাড়া একজন সাবেক ফাইন্যান্স ডিরেক্টর যখন সিইও হন, যেটা বেশিরভাগই হয়ে থাকে, তারও তো এইচআরে বা সেলসের এক্সপোজার ততটা থাকে না। তো তিনি কিভাবে সিইও হন?
মনে পরে গেল, বহুকাল আগে আমি একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারকে এইচআর ট্রেইনী হিসেবে নিয়োগ করেছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল ১০ সদস্যের একটি এইচআর টীম হলে সেখানে যাতে টেক্সটাইলস, মার্চেন্ডাইজ, একাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, ফাইন্যান্স, আইন, এইচআরএম, ইকোনমিকস-অর্থাৎ সবরকমের শিক্ষাগত যোগ্যতার লোকজন থাকেন। মূল লক্ষ্যটি ছিল, এইচআরকে সবরকম জ্ঞানের একটি কেন্দ্রে পরিনত করা।
এইচআরের অন্যতম কাজ ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট, পারফর্ম্যান্স ম্যানেজমেন্ট, স্ট্রাটেজিক ম্যানেজমেন্ট-এগুলো করার জন্য এইচআরে সবরকম মানুষের কম্বিনেশন থাকাটা জরুরী। মূলত এইচআরকে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যসিক, এথিক্যাল, বিজনেস, স্ট্রাটেজিক ডিসকোর্স নির্ধারন নিয়ে ম্যানেজমেন্ট ও এক্সিকিউটিভ বডির মধ্যে কাজ করতে হয়।
তো তাদের যদি শুধুমাত্র এইচআরএম এমবিএ বাদে অন্যকোনো বিদ্যার লোক না থাকে বা ওই বিষয়ে ন্যুনতম কোনো ডিপ্লোমাও না থাকে সেক্ষেত্রে তারা হয় আন্দাজে কাজ করবেন কিংবা অন্যদের সাহায্য নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হবেন যেটা তাদের কাজের কোয়ালিটি নষ্ট করবে এবং তাদের বানানো স্ট্রাটেজি হবে বায়াজড।
যদিও আমার সেই প্ল্যান বা ড্রিম অচীরেই বাতিল হয়ে যায় বিভিন্ন কারনে।
যার মধ্যে অন্যতম ছিল ওই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার প্ল্যানের ভুল, রং চয়েস, দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর ম্যানেজমেন্টের দ্বিমত। আমার যেহেতু সুপন্ডিতদের মতো বড় বড় ডিগ্রি নেই এইচআরে, তাই আমিও বাধ্য ধরে নিয়েছিলাম হয়তো আমারই ভুল যদিও মন হতে ওই স্বপ্নকে কখনোই মুছতে পারিনি।
আমি ভাবতে বাধ্য হই, হয়তো এইচআরে সব এইচআরএম ডিগ্রীধারি থাকাটাই বেটার।
কিন্তু তার পরপরই হঠাৎই গুগলের এইচআর প্রধানের একটি ইন্টারভিউ দেখে সেই পুরোনো দুঃখ আবার তাজা হল। গুগলের এইচআর প্রধান যদি যথেষ্ট কাবেল মানুষ বলে মনে করেন তবে তার বক্তব্যটা হল, তিনি গুগলের এইচআরে সবরকম শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ডের সমাবেশ করেছেন।
যাতে সকল কর্মীদের নিয়ন্ত্রক, ভাগ্য নির্নায়ক, স্ট্রাটেজি প্ল্যানার ও গ্রোথ পার্টনার হিসেবে এইচআর কর্মীরা তাদের সকল ধরনের বিভাগ ও তার কর্মীদের সত্যিকারের পার্টনারিং করতে পারেন।
তো একজন ফাইন্যান্স কর্মীকে সবচেয়ে ভাল কে বুঝবে? আরেকজন ফাইন্যান্স ব্যাক এইচআরই তো? নাকি? তাছাড়া আরো একটি লজিক আছে এর পেছনে। প্রতিটি কর্মী যারা মোটামুটি অফিসার লেভেল হতে ম্যানেজার লেভেলে প্রবেশ করেছেন, তাদেরকে তাদের নিজস্ব ডেস্কওয়ার্ক বা এসাইনমেন্ট কমপ্লিট করার পাশাপাশি ম্যানেজারিয়াল রোল পালন করতে হয়।
ম্যানেজারিয়াল রোলে তাকে প্রতি পদে পদে নিজের টেকনিক্যাল নলেজকে তার টীমের কাছে কনভার্টিবল জ্ঞানে পরিণত করতে হয়। আবার প্রতিষ্ঠানের SOP কে কর্মীদের কাছে কনভার্টিবল নলেজে পরিণত করতে হয়।
পাশাপাশি তাকে তার অধঃস্তন কর্মীদের জন্য এইচআরের প্রাথমিক কাজগুলোরও প্রতিনিধিত্ব করতে হয় যেমন:-PMS, স্ট্রাটেজিক প্লানিং, ম্যানপাওয়ার প্লানিং ইত্যাদি। এখন দেখা যায় প্রায়ই তিনি তার নিজের বা বিভাগের টেকনিক্যাল নলেজের সাথে এইচআর পারসপেকটিভকে লিংক করার যে ম্যানেজারিয়াল স্কিল বা ম্যানপাওয়ার ম্যানেজমেন্ট স্কিল-সেটা করতে পারেন না।
এইজন্যই এইচআরে যদি সবরকম জ্ঞানের সমাবেশ থাকে তখন তাকে দিয়ে খুব সহজেই ওই ম্যানেজার বা লিডারের টেকনিক্যাল নলেজের সাথে প্রতিষ্ঠানের এইচআর পারসপেকটিভকে লিংকিং এর কাজটি খুব সহজে করা যায় কারন তিনি নিজেও ওই টেকনিক্যাল বিষয়ের এক্সপার্ট আর পাশাপাশি তিনি এইচআর এক্সপার্ট যেটা ওই ম্যানেজার সাহেবের ঘাটতি আছে।
তাছাড়া এইচআরে সবরকম মেধার লোক থাকলে এইচআরকে যেকোনো বিভাগ বা কর্মপ্রক্রিয়ার টেকনিক্যাল আসপেক্ট সম্পর্কে জানার বা কিছু করার দরকার হলে তাকে অন্ধের মতো বিভাগীয় প্রধানদের উপর নির্ভর করতে হয় না। অন্তত বিভাগীয় প্রধানদের ব্যস্ততার সময়ে বা তাদের অসহযোগীতা কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য’র কাছে এইচআরকে ব্লাইন্ডলী ভালনারেবল হতে হয় না।
এক অর্থে, মোটা দাগে HR এর মূলত দুটো ডাইমেনশন-
Research & Development
Operations
আপনি কোনটাতে তাকে engage রাখবেন, কোনটাতে focus করাবেন-সেই choice আপনার।
যেটা বেছে নেবেন, তার trade off ও আপনাকে মেনে নিতে হবে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা দ্বিতীয়টাকেই HR ধরে নিই, আর সেটাতে মনপ্রাণ সঁপে দেয়াকেই কারিশমা মনে করি। এতে করে ফলতঃ প্রথম ও দ্বিতীয় উভয়টাই দীর্ঘমেয়াদে ধ্বংস হয়।
একটি প্রতিষ্ঠানে HR বিভাগকে তার প্রত্যাশিত চমৎকারিত্ব সৃষ্টি করতে হলে তার Research & Development (তথা Research, innovation, study, experiment, explore, experience, create) এর পেছনে প্রচুর (টাকা, সময়, শক্তি, মেধা, উদ্যোগ) invest করা দরকার।
একই সময়ে মনে রাখতে হবে, একটি প্রতিষ্ঠানের HR মূলত তার HoHR এর Brain child কিংবা Philosophical child । আপনার HR লিডার যা, আপনার HR আসলে সেটাই। সুতরাং, প্রতিষ্ঠানের HR প্রধান নেবার সময় choosy, methodic, calculative, visionary, inquisitive, process oriented, competency based হোন।
আবার নেবার পরে তাকে তার level of job বা সত্যিকারের KRA অনুযায়ী ন্যস্ত হবার সুযোগ করে দিন। বিশেষত উচ্চতর Position এ হলে তাকে চিন্তা, ভাবনা, গবেষনা, কল্পনা, পরিকল্পনা, বিশ্লেষণ, experiment, exploration এর সুযোগ তৈরী করে দিন। তিনি যদি সারাক্ষণ Operations এ ডুবে থাকেন, তাহলে স্বল্পমেয়াদে কিছু চমৎকারিত্ব দেখলেও দেখতে পারেন। সেসব চমৎকারিত্ব খুবই সাময়িক এবং non-sustainable ।
দীর্ঘমেয়াদে Research & Development এ তিনি এবং তার টিম যত বেশি engage থাকবেন, ততটাই sustainable development, success, achievement, change তথা সার্বিক growth নিশ্চিত হবে।
People Management (যার গুরুপাক বাংলা হল ’গরু চরানো’) যাদের কাজ, তাদের জন্য পিপল ম্যানেজমেন্ট অথবা কার্যোদ্ধারের সিদ্ধিলাভের কিছু টিপস দিয়েছেন সিদ্ধিদাতা গণেশ।
কয়েকদিন আগে একজন মুমীন বান্দা আমাকে ’মালু’ বলেছিল। তিনি এই গণেশের নামোল্লেখ দেখে এবার আমাকে কালু না বলেন।
যাহোক। কাজ উদ্ধার হবার, লক্ষ্য ভেদ করবার, তথা, অন্যের কাছ হতে কিছু করিয়ে নেয়া অথবা, অন্যকে কনভিন্স করে কিছু করতে হয় যাদের, তারা ফলো করুন।
সিদ্ধিদাতা গণেশ বলছেন, জগতের সবকিছু এবং সবাইকেই কেনা যায়, বা সবকিছুই বিক্রী হয় এবং সবকিছুই বিক্রী করাও যায়। (এই রে, সৎ ও জেহাদীরা এবার আমার পিন্ডি চটকাবে। আচ্ছা, ভাই ঠিকাছে, সবাই না, সবাই না, সবাই না।)
এখন, কীভাবে সবাইকে কিনবেন? মাত্র ২ লাখ পুলিশ কীভাবে ১৮ কোটি মানুষকে পাহাড়া দেয়? কেন তারপরও গণহারে চুরি, ডাকাতি হয় না? এর একটা গ্রামার আছে। সেটা হল পাওয়ার ও পানিশমেন্ট। যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে ভয়। একইভাবে যেকোনো নিয়ন্ত্রণ ও শাসন ব্যবস্থায় ছোট কিছুর দ্বারা বড় একটা স্টেককে পরিচালনারও একটা ম্যাজিক্যাল গ্রামার থাকে। সেটা ভয়, লোভ উভয়ই। আর থাকে সঠিক প্রেশার পয়েন্ট চেনা। সঠিক চিকেন নেক চেনা। সেই সাথে, কাজটাকে অনেকের মধ্যে ভাগ করে দেয়া, অথবা বলা যায়, অনেকগুলো চোখকে আপনার চোখ হয়ে ওঠানো।
সহজ-বাড়ি, গাড়ি, নারী, টাকা কাড়ি কাড়ি, শুরি (মদিরা) ও থ্রেট থুড়ি থুড়ি দিয়ে। মানে লোভের মূলা আর ভয়ের চুলা দিয়ে সবাইকেই কেনা যায়, বেচা যায়।
তারপরও কাজ না হলে, জানবেন, সবকিছুই ম্যানেজ করা যায়, সবাইকে ’ম্যানেজ’ করে ফেলা যায়। সব সাপই বশীভূত করা যায়। সব সাপেরই মন্ত্র আছে, সব সাপের বিষ নামানোর ওঝা আছে। সব সাপকেই খেলানো যায়-যদি ঠিকঠাক জানা থাকে। হ্যা, শুধু জানতে হবে, কোন সাপের কোন তাবিজ, কোন মন্ত্র আর কোন ওঝা দরকার।
তাহলে মনুষ্য সাপকে কীভাবে?
১. কাউকে ভয় দেখিয়ে কাজ উদ্ধার করবেন।
২. কাউকে লোভ দেখিয়ে কাজ উদ্ধার করবেন। (নারী, বাড়ি, গাড়ি, টাকা কাড়ি কাড়ি, শুরি।)
৩. কাউকে তথ্য ও পরিসংখ্যান ডাটা দিয়ে কাইত করবেন।
৪. কাউকে মিথ্যা বলে কাইত করবেন।
৫. কাউকে মিসলিড করে কাইত করবেন।
৬. কাউকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে কাইত করবেন।
৭. কাউকে তাবিজ দিয়ে সাইজ করবেন।
৮. কাউকে মন্ত্র দিয়ে সাইজ করবেন।
৯. কাউকে ওঝা দিয়ে সাইজ করবেন।
প্রতিটি নাগরাজ অথবা কালনাগিনীর জন্যই আলাদা আলাদা বশীকরন মন্ত্র, তাবিজ কিংবা কড়ি অথবা বীন রয়েছে।
কোন নাগ বা নাগীন কোনটাতে বশে আসবে-সেটা কেবল বুঝতে হবে।
শুধু আপনাকে জানতে ও মানতে হবে, যে, কোন তাবিজ কার জন্য, কোন মন্ত্র কার জন্য প্রযোজ্য, কার জন্য না; কাকে সাইজ করা যাবে, কাকে সহজে যাবে, কাকে কঠিনে, কাকে মন্ত্রে, কাকে তাবিজে, কাকে আবার সত্যি দিয়ে, কাকে মিথ্যা, কাকে আবার সাইজের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেকে ডিসাইজ করে রাখতে হবে;
আর কাকে সাইজ করতে গিয়ে নিজেরই সাইজ হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে;
আর কখন সাইজ করার চেষ্টা বাদ দিয়ে পালাতে হবে।
ম্যানেজমেন্ট স্টাইলের অনেকগুলো ধরন আছে। তার ভেতরে মোটা দাগে দুটো পথ বা ধারা রয়েছে, যেমন: –
পজিটিভ ধারা, অর্থাৎ ক্যারিয়ারিজম, মডার্ন এ্যমবিয়্যান্স এবং লিবার্টি-এই তিনটি বা এর যে কোনো একটি হতে পারে আপনার পিপল ম্যানেজমেন্ট ও বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ধারা।
অন্য দিকটি নেগেটিভ ধারা, অর্থাৎ ভয়, পলিটিকস আর নিয়মের বেড়ি-এই তিনটি বা যে কোনো একটিকেও পিপল ম্যানেজমেন্টের মুখ্য স্ট্রাটেজি হিসেবে নিতে পারেন।
আপনি এর যেকোনো একটিকে দর্শন হিসেবে নিয়ে পিপল ম্যানেজ ও বিজনেস ম্যানেজ করতে পারবেন। তবে ভয়, পলিটিকস, রুলসকে পিপল ম্যানেজমেন্টের ফিলোসফি হিসেবে নিলে তার পরিণতি আখেরে ভাল হয় না।
কাউকে Size করতে হলে সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র হল-
> চারিত্রিক স্খলনের ইঙ্গিত
> অসততার ইঙ্গিত
এই দুই ‘তোহমত’ মারাত্মক রকম কার্যকর। যাকে তাক করবেন, সেই ঘায়েল।
যে ‘তোহমত’ দিচ্ছে, তার প্রমাণ করবার চাপ নেই। শুধু Vibe তুলে দিলেই খালাস। যার ওপর ‘তোহমত’, তার অপ্রমাণেও মুক্তি নেই।
এ এক ব্রহ্মাস্ত্র। বাঙালি এই অস্ত্র ব্যবহারে একেকজন Maestro
ভয়ে থাকা কর্মীর নিকট হতে কখনো তার ১০০ ভাগটা পাবেন না। ডিমোটিভেটেড কর্মী প্রতিষ্ঠানের জন্য এটোম বম্ব। রুলস কখনো ইনোভেটিভ এক্সেলেন্স আনতে পারে না।
#HeadofHR দের হতে হয়-
ওঁঝার মতো-কোন সাপের বিষ কোন তাবিজ দিয়ে রদ করা যায়, তা জানতে হবে।
সাপুড়ের মতো-কোন সাপকে কোন মন্ত্রে ঘায়েল করা যায়, তা জানতে হবে।
বাঈজীর মতো-কোন হাস্তিকে কীভাবে এনটারটেইন করতে হবে, কোন দেবতা বা অপদেবতা কীসের বশ-তা জানতে হবে। (এমনিতে প্রাইভেট লিমিটেড বা পারসোনাল লিমিটেড এর জব বাঈজীর চাকরিই। যে, যেদিন, যখন, যেভাবে, ভাড়া করবে, তার জন্য সেভাবেই মুজরা করতে হবে। এভরি নাইট, নিউ নাইট, হু আর ইউ টু-নাইট?)
ডাক্তারের মতো-কার রোগ কোনটা আর কাকে কোন ওষুধ দিলে সিঁধে থাকবে-তা জানতে হবে।
জমির দালালের মতো-He or she should be a tough negotiator
প্রেমিকার মতো-কাকে কোনটা দিয়ে আনন্দ বা পেইন দিতে হবে-তা বুঝতে হবে।
(এই যেমন, আমার এক টিমমেট জুনিয়ার। তাকে পেইন দিতে হলে তাকে ডেকে ১ ঘন্টা জ্ঞান দিই। পুরোটা সময় বেচারা যন্ত্রণায়, বিরক্তিতে মনে মনে গর্জায়, কিন্তু বলতে পারে না। কারণ, আমি জানি, যদি তাকে পেইন দিতে তাকে ডেকে দশটা বাড়তি কাজ দিই, সে পেইন ফিল করবে না, বরং আরামসে অন্য কাজের সাথে মার্জ করে ফেলবে। আবার, আরেকজনকে পেইন দিতে হলে তাকে আকাশ হতে টেনে নামিয়ে আনা কোনো ইনোভেশন নিয়ে থটস জেনারেট করতে বলি। বেচারা শ্যাষ।)
হেডপেইচার’ (HoHR) হতে হলে তাকে জানতে হবে-
Who is who? কে কেমন মানুষ?
Who is for what? কে কীসের উপযুক্ত?
What is for whom? কোনটা কার জন্য?
রাস্তায় ট্রাফিক রুলস ব্রেক করবার অপরাধে রিক্সাওয়ালাকে ১০ বার কান ধরে ওঠবস করানো আর পাজেরোওয়ালাকে ৫০০ টাকা জরিমানা না করে বিষয়টা উল্টে দিন। রিক্সাওয়ালারও শাস্তিটা গায়ে লাগবে, পাজেরোওয়ালারও। ফলে সিঁধে হয়ে যাবে।
জগতের সব Phenomenon এরই হয়তো একটি প্রাথমিক Manual, Grammar ও স্বরলিপি থাকে। কিন্তু, প্রাথমিক, generic এবং সীমিত। তাকে ভর করে নিজস্ব Insight, input, thoughts, policies, directions, guidelines, norms, standards, benchmarks, innovations, philosopies এর নিজস্ব translation/version তৈরী করে নিতে হয়। হাতির মাথা শ্রী গণেষের মাথায় প্রতিস্থাপন আধ্যাত্মিক জগতে হতে পারে। কিন্তু, কর্পোরেট ও Business world এ গুগলের HRকে (HR as a concept, HR as a dept, HR as a drive) ভগলের HR হিসেবে copy করলে বড়জোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি হতে পারে। ফল লাভ হবে না। প্রাইভেট লিমিটেড বা পারসোনাল লিমিটেড জবে ইস্যু, প্রবলেম, এনগেজমেন্ট আর কাজের লোড হল যেন পুকুরের পানির মতো, বা পানির ওপরের টোপাপানার মতো। যতই সরান, সাথে সাথে চারদিক হতে হাজারটা, লক্ষটা ঝামেলা এসে ঠিকই মেক আপ হয়ে যাবে। অথবা, ফার্মেসীতে একটু পেছনের দিকে রাখা ‘রাবারের টুকরো’র প্যাকেট্রে মতো, নিচের দিক হতে একটা ছোট প্যাকেট বের করার সাথে সাথে ওপর হতে বাকি ১১ টা প্যাকেট নেমে এসে সেই জায়গা নিয়ে নেয়।
এখানে আপনাকে হতে হয় মা দূর্গার মতো দশ হাতওয়ালা, আবার গ্রেইট রাবণের মতো দশ মাথাওয়ালাও। একসাথে দশটা হাতে দশদিক সামাল দিতে হবে। আবার, রাবণের মতো দশটা চিন্তা একই সময়ে চালিয়ে যেতে হবে, সমান কোয়ালিটিতে।
সাই অব রিলিফ বলে কিছু প্রাইভেট জবের ডিকশনারিতে নেই। ধুয়ে-মুছে উঠলাম-এই জিনিস কখনো চোখেও দেখবেন না। ”ইটস আ হানড্রেড পারসেন্ট………..ফ্রি” বলে কিছু চাইলে পাবলিক লিমিটেড জবে যান। যা নেই, তা বৃথাই না খুঁজে, ঝামেলা মুক্ত হবার ধান্দা বাদ দিয়ে, বরং গায়ে একটা ঝাড়া দিন, তিনবার ইয়া মুকাদ্দেমু পড়ে বুকে ফূঁ দিন, আর বলুন ”ওকে, হু ইজ নেক্সট”?
একজন বিজনেস এ্যডমিনিসট্রেটর, একজন এ্যডমিনিসট্রেটর, একজন জাজ, একজন এইচ.আর হেড হিসেবে, আপনাকে মনে রাখতে হবে, যে, কখনো কখনো এমন কিছু কথা, কাজ বা বস্তু আপনাকে এপ্লাই করতে হবে, যেটা পাপ, যেটা ভুল, যেটা অকেজো, যেটা পুরোনো, যেটা অবসোলেট, যেটা অবসকিওর, যেটা অজনপ্রিয়, যেটা ভোঁতা, যেটা অপ্রচলিত।
যেমন:- ধরুন, কালো যাদু। আমরা জানি, যে, এটা ভুয়া আর অন্যায়। তবুও সারাক্ষণ এটা না করলেও, কখনো কখনো আমরা শেষ ওষুধ হিসেবে এটা প্রয়োগ করি তো? এর দারস্থ হই তো? যেমন ধরুন ডিলুশন। এটাকেও কাজে লাগাতে হতে পারে। যেমন ধরুন ভান, সেটাও করতে হতে পারে।
যেমন ধরুন, হ্যালো এফেক্ট। বিশুদ্ধ বিচারে এটা একটা রং এপ্রোচ অব থট প্রসেস। কিন্তু রং হলেও এটি কিন্তু, পুরোপুরি অথর্ব না। কিন্তু, আমাদের এইচ.আর প্রফেশনালদের অনেক সময় আর কিছু না পেয়ে এটার ব্যবহার করতে হয়।
তেমনি অনেক কিছুই আছে, যেখানে আপাত অন্যায়, আপাত অকেজো, আপাত খারাপটা প্রয়োগ করতে হতে পারে। প্রস্তুত থাকুন-মনের দিক হতে, ম্যাটেরিয়ালের দিক হতে, নৈতিক দিক হতে।
অনেকের ভাগ্য বাঁচাতে একজনের ঘাড় ভাঙার অন্যায়ও পবিত্র। এক জাহাজ মানুষের জীবন বাঁচাতে রবীন্দ্রনাথের দেবতার গ্রাস কবিতার মৈত্র মশাই কি রাখালকে তার মার কোল হতে ছিনিয়ে জলে নিক্ষেপ করেন নাই?
আপনাকে নির্মোহ, নির্দয়, নির্লজ্জ, নিরপেক্ষ, নিরুদ্বেগ, নিরুত্তাপ ও নৃশংসভাবে আপনার ভ্যালুজ, প্রিন্সিপাল, পলিসি, স্ট্রাটেজি, প্ল্যান, ডিরেকটিভস ও ফোকাস ফলো করে আপনার সিদ্ধান্ত বা আপনাকে দেয়া সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করতে হবে, জাজমেন্ট তৈরী ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
হ্যা,
দন্ডিতের সাথে,
দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে,
স্বর্গসম সে বিচার-
এই নীতি অনুসরন করে আপনি তার জন্য বাস্তবায়ন পরবর্তি সহানুভুতি, সহযোগিতা করতে পারেন। কিন্তু, আগে পিছিয়ে আসতে পারবেন না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক বছর ’চিফ এক্সেকিউটিং অফিসার’ (না, CEO না) ছিলাম, মানে যাকে বলে প্রধান জল্লাদ অথবা আজরাইল। আমার অন্যতম কাজ ছিল আদেশ ও নিয়ম মতো জব এলিমিনেট করা।
এমনও হয়েছে, যাকে বিকেলে ফায়ার করা হবে, মানে শিকার, তার সাথে সকালে পাশাপাশি বসে অফিস গিয়েছি, দুপুরে এক টেবিলে ভাত খেয়েছি, অতঃপর বিকেল ৫ টায় তাকে এলিমিনেট করেছি। আমার চোখের পাতা কাঁপেনি, হৃদয় নামক দুষিত যন্ত্রে খচখচ করেনি, ইতস্তত আসেনি। আমার বস আমাকে মজা করে আজরাইল নাম দিয়েছিলেন। যদিও ভূমিকাটা তারই হবার কথা ছিল। তিনি দয়াদ্র মানুষ হওয়ায় আমাকে দায়ীত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বহুবার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান কবচের সময় (মানে রিলিজ করার সময়) আমার বুক কাঁপে কিনা।
আমিও বলেছি, না। আমার এক সহকর্মী বলতেন, “আমরা সেই দুর্লভ মানুষ, যারা তার নিজ নিজ আজরাইলের সাথে গা ঘেঁষে অফিসে যাই আর আসি।”
’মানুষ’ আমাদের গালি দেয়, ‘হুদাই রাকচে ডিপারমেন’, মানে HRD .
এই সেদিনও একজন লিংকডেইনে রাগ ঝাড়লেন, “’এইছাড়’ একটা পয়সাও আর্ন করে না, খালি পটর পটর কথা।” তার রাগ অবশ্য পুরোপুরি অমূলক নয়। এইছাড় ষাড়েরাও এর জন্য দায়ী।
পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মিথস্ক্রিয়া গড়ে ওঠার জন্য প্রতিষ্ঠানে প্রচুর এনগেজমেন্ট ও এক্সচেঞ্জিং এফোর্ট থাকতে হয়। সমস্যা হল, প্রতিষ্ঠান, HR ইটসেলফ এবং বাকি বিভাগগুলো-এরকম ইনিশিয়েটিভে খুব আগ্রহী না।
বাংলাদেশে আমরা আইকন বা পীর সংস্কৃতির খুব পাবন্দ।
আমরা আজীবন স্বপ্ন দেখি, একদিন আমি বা আমরা পাহাড় হব।
আমি কারও কাছে যাব না, কারও সাথে ওপেন হব না, পার্টিসিপেটরি হব না। আমি টেবিলে, আমার দরবারে জলদগম্ভীর পীর হয়ে বসে থাকব। আর মানুষ আমার দরবারে এসে এসে কদমবুচি করে হাত কচলে করুণা ভিক্ষার মতো করে সার্ভিস ভিক্ষা করবে-আমরা নিজেদের এমন সম্রাটের ভূমিকায় দেখার অবসেশনে ভূগি। সমস্যা সেখানে।
এই চরিত্র এইচ.আরের, এই চরিত্র অন্য অনেকেরই। একচেটিয়াভাবে কোনো বিভাগ বা ব্যক্তির না।
ফলে, বিভাগে বিভাগে, অফিসে অফিসে, ডিভিশনে ডিভিশনে দ্বন্দ্ব তৈরী হয়, সমন্বয়হীনতা তৈরী হয়, অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরী হয়।
অথচ, সেই কবেই স্বামী শ্রী বিবেকানন্দ বলে গিয়েছিলেন,
”পাহাড় যদি মহম্মদের কাছে না যায়, তাহলে মহম্মদই পাহাড়ের নিকট আসবে।”
আমরা অনেকেই নিজ নিজ মেনটর, পীর, সহমত ভাইদের অধীনে বা ‘বসশিপে’ চাকরি করবার খাহেশ পোষণ করি। খোলাখুলিভাবে সেটি অনেকে বলিও।
ইন জেনারেল, মেনটর বা পীর-দরবেশকে দেখে চাকরি নিতে আমি সবসময় অনুৎসাহিত করি। অভিজ্ঞতা বেশিরভাগই নেগেটিভ।
আপনার মেনটর কে? পেশাগত মেনটর ও ব্যক্তিগত মেনটর? বলবেন?
আমাদের সারাটি জীবন আমরা নেটওয়ার্ক, রেপো, পিয়্যার, কানেকশন, ফ্রেন্ডস, মেনটরস বানাতে ও বাড়াতে এফোর্ট দিই।
বিশেষত প্রফেশনাল এরেনাতে বড় ভাই, বদ্দা, ভাইয়া, বস, ছ্যাড়-এর বহর বড় করতে আমরা সম্ভব-অসম্ভব, দৃষ্টিনন্দন ও দৃষ্টিকটু-অনেক রকম চিৎপাত চেষ্টাই করে যাই। উদ্দেশ্য একটাই-সময় হলে বদ্দা যদি দয়া করে একটু ঠুকে দেন; যদি যায়গামতো বদ্দা একটু হুকে দেন; যদি একটা মূলা উন্মুক্ত হলে ‘ভাইয়া’ সেটা আমার কপালে ফিকে দেন।
এই আশায় আমরা কত কীই না করি। পারলে বাসা হতে গরম পরোটা বানিয়ে ভাইয়াকে খাওয়ানো হতে সহমত-রহমত ভাই, এসোসিয়েশনের ভোটে ভোটাই ভাই, ফেসবুক পোস্টে লাইকাই, বিরুপ মন্তব্যকারীকে পেটাই-কত কত এফোর্ট দিয়ে আমরা কর্পোরেট বড় ভাই গড়ে তুলি আর তাকে লালন করি। দুধের গরু পালার মতো।
বাস্তবতা হল, এই বড় ‘ভাইয়া’ আপনার কাজে আসে ঘন্টাটা।
আপনার সুস্বাদু আলু পরোটা বা বাড়ি হতে আনা লাল জাম আলুর সদ্ব্যবহার আর আপনার ভোটে ক্লাব বা সমিতির পিরসিডিন হওয়ার বাইরে আপনার আর কোনো প্রাপ্তি জীবনে সত্যিই ঘটবে-সেই আশায় থাকলে আপনি অপেক্ষায়ই থাকবেন-নাজিরের মতো।
আপনাকে সত্যি সত্যি যদি কিছু বা কেউ গাছে তুলতে পারে-সেটার নাম যোগ্যতা, যা আপনাকে আত্মশক্তির বলে সমুন্নত রাখে।
বড় ভাইয়া, ভেউয়া, দাদা, সহমত ভাই, ম্যানটোর, ছিঃনিয়র আর বসরা কখনো কারো নির্বান প্রাপ্তিতে ভূমিকা রেখেছেন-এমন যদি কেউ এই লেখা পড়ে থাকেন, তাহলে কমেন্ট বক্সে সামান্য পদধুলি দিয়ে যাবেন। আমি মাদুলি কবচ করে কোমরে কাইতন দিয়ে ঝুলিয়ে রাখব।
আর অমন মাদুলির সংখ্যা যত বেশি হবে (বেশি বেশি লোকের পজিটিভ প্রাপ্তিজনিত পদধুলির আধিক্যে) আমার তত লাভ। মানে, সমাজে বিদ্যমান ‘ভাইয়া’দের প্ররোচনায় পাবলিক ক্ষেপে গিয়ে আমার লুঙ্গী ধরে টান দিলে মাদুলিগুলো তখন রক্ষাকবচ হয়ে লজ্জা বাঁচাতে পারে।
[সবাই এক না-এই কথা বলতে বলতে এশ্যাদ চাচা মরে গ্যাছে। আমার মরার কোনো সখ নাই।]
তবে, এই মেনটর বা পীরভাইয়ের টিমে কাজ করতে চাওয়ার ব্যপারটার কিছু পজিটিভ দিক আছে। সেই দিকটি নিয়ে আমার ভাবনাটি বলব।
একজন মেনটর বা আইকনের সরাসরি অধীনে কাজ করতে পারলে ইনফরমাল, নন-ইনসটিটিউশনাল, আন-অফিশিয়াল, নন-কনভেনশনাল এবং হ্যা, ফরমাল লারনিংয়ের প্রচুর সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকে।
সেই লারনিংয়ে ফটোকপি করতে পারা, মেইল লিখতে পারা যেমন আছে, যেগুলো খুব প্রনিধানযোগ্য নয়।
মূল লারনিংটি হল ওই বস বা মেনটরের নিকট হতে চিন্তা করতে শেখা, ভাবতে শেখা, যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করতে শেখা, জীবন ও জগত সম্পর্কে বোধ অর্জন করা, তার অভিজ্ঞতাগুলো জানা ও সেগুলো হতে নিজের ডিসকোর্স ঠিক করতে পারা, স্ট্রেস নিতে পারার শিক্ষা, ডিসিশন মেকিং সক্ষমতা অর্জন।
এগুলোর ভিতরে আমার কাছে সবচেয়ে দামী মনে হয় চিন্তা করতে শেখার ক্ষমতা অর্জনটি। একজন এ্যডমিনিসট্রেটর, মেনটর, কোচ, বস, লিডারের সবথেকে মূল্যবান দিক হল তার থট প্রসেস। হাউ টু থিংক। কীভাবে যৌক্তিক ও বিধিবদ্ধভাবে চিন্তা করতে হয়, কীভাবে স্তরে স্তরে মেথডিক্যালি ভাবতে হয়, সেটি শেখা যায় মেনটরের অধীনে থাকলে। এটাই মানুষে মানুষে পার্থক্য গড়ে দেয়। সিনিয়র, মেনটর ও বসের কাছ থেকে জুনিয়র ও সাবোর্ডিনেটরা কী শিখতে পারেন, বা, কী কী শেখার কথা? সবার আগে আমাদের মনে যেটা আসবে, সেটা হল, দক্ষতা। হ্যা, বিভিন্ন কাজ করবার দক্ষতা শিখে নেবার জন্য একটি বড় জিনিস। তবে আমি বলব, সেটি বরং তুলনামূলক অফিসার পর্যায়ের সিনিয়র সহকর্মীদের হতে শেখার বিষয় হিসেবে বেশি মানায়। কিন্তু, আপনার সাথে যদি একজন খুব সিনিয়র কর্মী থাকেন, ধরুন GM/Director, তার হতে আপনার টেক এ্যওয়ে কী কী হওয়া উচিত? 1. How to make decision. 2. How to handle situation. 3. How to plan team drives. 4. How to design a departmental plan. 5. Problem solving. 6. Thinking process. 7. DEIB 8. Judgement 9. Diversifies philosophy 10. Structural framework.
জানেন কিনা, আমরা অনেক অনেক কিছু হয়তো পারি না। তবে তার ভিতরে সবচেয়ে মারাত্মক অক্ষমতাটি হল আমরা যৌক্তিক ও যথাযথ তরিকায় ভাবতে বা চিন্তা করতে অক্ষম।
হয়তো আপনার খটকা লাগবে, আরেহ, ভাবনা চিন্তা করা আবার এমন কি রকেট সায়েন্স। তবে, একটু তলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন, গভীরভাবে কোনো কিছু নিয়ে ধাপে ধাপে চিন্তার ধারা সাজাতে পারা সহজ কাজ নয়। বিশেষত, যখন ক্রাইসিস আসে, যখন স্ট্রেস বা হেকটিক সিচুয়েশনে পড়ে যাই, তখনও ঠিক যেটি ভাবা দরকার, যেভাবে ভাবা দরকার, যেরকম করে ভাবলে মুশকীল আসান হবে, সেটি সেভাবে ভাববার অভ্যাস ও সক্ষমতা অর্জন খুব বড় বিষয়।
একজন পীর বা সহমত ভাই, যদি তিনি উপযুক্ত হয়ে থাকেন, তার বসশিপে কাজ করলে এই দিকটি রপ্ত করবার ভাল সুযোগ থাকে। ওই থট প্রসেসটা শেখার জন্য, র্যাশনাল থিংকিং শিখতে, জাজমেন্ট শিখতে একসাথে কাজ করতে পারা এক নেয়ামত। I am to be cruel, only to be kind.
#beinggoodboss #attributesofgoodboss #leadership #leaderNOTboss #goodbossbadboss #AttributesofHRprofessionals #competencesofbeingHRprofessional #preparationsofbeingHR #criticismonHR #grievancewithHR #icon #mentorship #fanbase #fanatic #stardom #celebrity #apetheosis #mentorship #qualification #preparation #characteristics #features #headofHR