একটি নির্দিষ্ট স্পেশালাইজেশনে বা ট্র্যাকে ক্যারিয়ার গড়বার সিদ্ধান্ত নেবার আগে সেটিতে আপনার সম্ভাবনা, লাভ, ক্ষতি কী হতে পারে-সেটি জেনে সিদ্ধান্ত নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
এমনিতে আমাদের দেশে বাই চয়েজ HR প্রফেশনালের চেয়ে বাই চান্স এর সংখ্যা বেশি। অনেকে আবার বড় ভাই-বোন, মেনটর, সেলেব্রিটিদের দেখে কিছু না ভেবেই এই পেশায় এসে পড়েন। পরে পস্তান। তাই আমি কিছুটা ধারনা দেবার চেষ্টা করছি, যে, এই পেশায় এলে আপনার লাভ ও ক্ষতি কী কী হতে পারে। লাইফ ইজ আ কমপারেটিভ চয়েজ। এ্যবসলুট ভাল বা মন্দ কোনো পেশা নেই।
১.একটি প্রতিষ্ঠানের সত্যিকারের বিজনেস পলিসী, মোড অব অপারেশন, ন্যাচার বা কালচার, ট্রেন্ড ইত্যাদি নিয়ে কাজ করার অত্যন্ত ভাল সুযোগ থাকে এইচআর বিভাগে কাজ করলে।
২.বিশেষভাবে আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বাস করে, একটি প্রতিষ্ঠানের মোষ্ট ভাইটাল বিভাগগুলোর মধ্যে একটা হল তার এইচআর বিভাগ। কোম্পানীর সবচেয়ে ভাইটাল বিভাগগুলোর একটাতে কাজ করতে পারার সুবিধা ও ডিগনিটি প্রচুর।
৩.প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নতি, ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি তথা সার্বিক অগ্রগতির জন্য নানাভাবেই এটা প্রমানিত যে, কোয়ালিফাইড, ডেডিকেটেড ও মটিভেটেড কর্মীবাহিনী সবচেয়ে প্রাথমিক এসেট ও হাতিয়ার। তাই এইচআরে কাজের মধ্য দিয়ে ওই ম্যানপাওয়ারকে বেস্ট ইফিশিয়েন্ট করার সুযোগ পাওয়া যায়।
৪.বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে উদীয়মান ক্যারিয়ারগুলোর মধ্যে এইচআর একটি।
৫.কোম্পানীর টপ ম্যানেজমেন্টের সাথে ইনটেনসিভলি কাজ করার জন্য প্রকৃষ্ট সুযোগ পাওয়া যায় এইচআরে কাজ করলে। হ্যা, যদি কারো কাজ করার ইচ্ছা আর সৎভাবে ক্রিয়েটিভ কিছু করার ইচ্ছা থাকে তবেই এই সুযোগ কাজে লাগানো যায়।
৬.হয়তো একটু কেমন শোনাবে তবু বলছি, বেশিরভাগক্ষেত্রেই এইচআরকে ক্যারিয়ার হিসেবে বাছাই করার একটা বড় কারন থাকে এই ধারনা যে, এইচআরে কাজ করলে পাওয়ার এপ্লাই করা যায়। না ভাই, ক্ষমতা চর্চা এইচআরে কাজের লক্ষ্য হতে পারেনা। তাছাড়া মনে রাখবেন, একটি আধুনিক ও উন্নত প্রতিষ্ঠানের কোনো বিভাগই এক্সট্রিম বা এবসলুট ক্ষমতা চর্চা বা কুক্ষিগত করার সুযোগ কখনোই পায়না্ যেসব কোম্পানীতে ওগুলো পাওয়া যায় সেগুলো কোনো সন্দেহ ছাড়াই বাজে ও পশ্চাৎপদ কোম্পানী। এখন আপনি যদি জেনেবুঝে বাজে কোম্পানীতে চাকরী করতে চান সেটা আলাদা কথা।
৭.সত্যি কথা বলতে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘমেয়াদে খুব ভাল বা খুব খারাপ করার সবচেয়ে বেশি সুযোগ থাকে এইচআরে।
৮.এইচআরের পেশার মার্কেট এখন বেশ বড়। আপনি যদি এইচআরে ক্যারিয়ার গড়েন তবে আপনার জন্য সুইচিং অপশন বেশি থাকবে।
৯.এইচআরে কাজের মধ্য দিয়ে আপনি ম্যানপাওয়ার হান্টিং, ট্যালেন্ট একিউজিশন, ইন্টারভিউইংসহ বিভিন্ন এইচআর রিলেটেড বিষয়ে এক্সপার্টিজ অর্জন করতে পারবেন যেটা দিয়ে পরবর্তিতে আপনি কনসালট্যান্সি, ট্রেইনার কিংবা থার্ড পার্টি হেড হান্টিং প্রতিষ্ঠান খুলে বসতে পারবেন যেটা এখন খুব প্রচলন হয়েছে।
১০.এইচআরে কাজ করার সুবাদে জব মার্কেটের ও জব অপর্চুনিটির সবচেয়ে বেশি নলেজ/তথ্য থাকবে আপনার কাছে। সততা ও আন্তরিকতার সাথে এই ক্ষমতা দিয়ে আপনি বিরাট সংখ্যক মানুষের উপকার করতে পারবেন বিশেষত বেকার জনগোষ্ঠীর।
১১.যেহেতু এইচআর টপ ম্যানেজমেন্টের সাথে সরাসরি কাজ করে তাই তাদের পক্ষে ইন্টারনাল ও এক্সটার্নাল CSR’র ভেতর দিয়ে বা দারুন সব এইচআর প্রাকটিসের ভিতর দিয়ে কোম্পানীর কর্মী ও তাদের পরিবারের ছাড়াও বাইরের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য ভাল কাজ করার বিরাট সুযোগ থাকে।
১২.যেহেতু এইচআর কর্মীদের বেতন, বোনাস, ইনক্রিমেন্ট, প্রমোশন, রিওয়ার্ডসহ সবরকম মৌলিক পেশাগত অধিকার নির্ধারনের কাজ করে, এতে একজন আপনি নিজেও কর্মী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার বেনেফিট নিশ্চিৎ করার ক্ষেত্রে সবসময় ন্যায্য ও প্রাপ্য অধিকার আদায়ে মালিকদের একদম কাছে থাকতে পারবেন।
এবার বলি ট্রেড অফের কথা। এই প্রফেশনে এলে আপনাকে কী কী হারাতে হতে পারে, অথবা, কী কী নেগেটিভ টেক এ্যওয়ে থাকতে পারে?
১. এই পেশাটির সম্মিলিত বাজার বড় হলেও প্রোপোরশনেটলি ছোট। অর্থাৎ, ধরুন, মার্কেটিং বা সেলস প্রফেশনের চাকরির বাজার হতে এটির বাজার ছোট। একটি প্রতিষ্ঠানে যদি সেলসের কর্মী থাকেন ১০০ জন, তাহলে এইচ.আরের জনবল থাকবে ২ জন। তার মানে, চাকরির সংখ্যা বাজারে তুলনামূলকভাবে কম। প্রতিষ্ঠানের বিজনেসের ধরনের ওপর ভর করে মোটামুটি বলা যায়, যে, সবচেয়ে বড় বাজার হল প্রোডাকশনের, তারপর সেলস, তারপর মার্কেটিং, তারপর সাপ্লাই চেইন, তারপর লজিস্টিক, তারপর অন্যরা। সবচেয়ে বড় কথা, টপ চয়েজ এ্যন্ড র্যাংকিং অব প্রফেশন ধরলে এইচ.আর কিন্তু ওপরের ৫টাতে থাকার সুযোগ কম।
২. ক্যারিয়ার গ্রোথ, উজ্জ্বল ভবিষ্যত, শাইনি লাইফ-এটা যতটা বলা হয় ও দেখা যায়, বাস্তবে ততটা নয়। খুব ভাগ্যবান না হলে এক্ষেত্রে আপনার প্রাপ্তি হতে পারে গড়পড়তা। সেটা মেনে নিয়ে চলতে হবে।
৩. মূল্যায়ন ও স্পটলাইট পাবার মওকা ও সৌভাগ্য তুলনামূলক কম হবে। উল্টো এটা অনেকটা থ্যাংকলেস জব। চাপ বেশি, দায় বেশি, অবহেলা ও উপেক্ষা অনেক, তার বিপরীতে প্রাপ্তি সমানে সমান না।
৪. এই পেশায় খুব ভাগ্যবান ও খুব ভাল প্রতিষ্ঠান না হলে প্রতিষ্ঠানে আপনার আপেক্ষিক ও আনুপাতিক গুরুত্ব ও মূল্যায়ন কম হবে। আমরা যেটাকে বলি হ্যাডোম, সেটা নিয়ে কাজ করবার ভাগ্য কম হবে।
৫. প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সরাসরি তত্বাবধানে কাজ করতে পারা যেমন একটি সুযোগ, তেমনি থ্রেটও। পান হতে চুন খসলেই বিপদ। আর তাদের মন পাওয়া এত সহজ না। ”ভাল হলে আল্লায় করছে, খারাপ করলে কেষ্ট।”
৬. বাংলাদেশে এইচ.আর প্রফেশনের খুব বেশি জেনারেশন এখনো রোল আউট করেনি। বিধায় এর লিগ্যাসি ও লাইফ সাইকেল নিয়ে অনেক বেশি অথেনটিক কথা বলবার সময় হয়নি। যতটা দেখা যাচ্ছে, ২০ বছরের ক্যারিয়ার হয়ে গেলে এই পেশার মানুষরা বিপদেই বেশি থাকছেন। বাজারে তারা ব্রাত্য হয়ে পড়ছেন বেশি, সুযোগও কম, চাহিদাও কমে যায় বাজারে। অন্য বিকল্প কিছু করবার সার্বিক পোটেনশিয়ালও এই পেশার মানুষদের অন্যদের তুলনায় কম।
৭. সবাইকে দিয়ে থুয়ে তারপর না আপনার মা-বউ খেতে পান। সেরকম, সবার স্বার্থ নিয়ে দৌড়ায় যে এইচ.আর, তার নিজের ঘরেই শন থাকে না। নিজের কথা বলতে গেলে মালিক বলবে, শুধু নিজের পেট ভরলে হবে? তুমি না সবার মা?
৮. এই প্রফেশনে আপনি মেনটর, গ্রুমার, আইকন যত পাবেন, তার চেয়ে বেশি পাবেন ফ্রাস্ট্রেটেড লোকজন বেশি। ফলে প্রচুর ডিমরালাইজেশন হতে পারে। মেনটর ও কোচ নামে যাদের পাবেন, তাদের মধ্যে বস্তুওয়ালা খুব কম। ফলে আপনার গ্রুমিং ও মেনটরিং নিয়ে অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হবে।
৯. এই পেশার মানুষদের বাংলাদেশে ইউনিটি বলে কিছু নেই। সবাই নেতা। লাখখানিক সংগঠন। কাজের কাজ লবডঙ্কা।
১০. ইন জেনারেল, এই পেশার মানুষদের প্রতি বাংলাদেশের সবরকম ও সকল পেশার মানুষদের তীব্র ঘৃনা, বিদ্বেষ, উন্নাসিকতা, বিরক্তি প্রবল। দায় এই পেশার মানুষদেরও আছে। আবার, অন্যদের নিষ্কাম ঘৃনা ও বিদ্বেষও আছে। সেটা আজীবন ফেস করতে হবে।
এবার আপনিই ঠিক করুন, কী করবেন।
#CareerbenefitsofHR #HRascareer #HRasachoice #careerinHR