Talent acquisition, talent retention, talent migration, talent diversification, talent transformation, talent management নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয় আজকাল। ভারি ভারি theoryও রয়েছে এই বিষয়গুলোকে বুঝতে, apply করতে।
একবার একটা ভিডিও দেখেছিলাম Kazi IT’র অফিসের। আরেকটা দেখেছিলাম আরেকটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে যেখানে কর্মীরা ভর office hour এ দল বেঁধে music’র সাথে নাচের একটা slot করছে আর বাকিরা দাড়িয়ে মজা করছে। স্রেফ কাজের ফাঁকে একটু fun। এর সাথে talent management’র কী যোগসূত্র-ভাবছেন তো? ভেবে দেখুন। না বুঝলে লেখার পরের অংশে যান।
Talent বা মেধা। এমন এক বস্তু, যা আসলে প্ল্যান আর প্রোগ্রাম করে ইচ্ছামতো বানানো যায় না, কেনা যায় না, সৃষ্টি করা যায় না, রূপান্তর করা যায় না। মেধা আসলে ভেতর হতে, গভীর হতে সহজাতভাবে, বা বলা চলে, অনেকটা উপজাত হিসেবে উৎপত্তি হয়। মেধার উন্মেষ হয়। মেধার সন্নিবেশ হয়। ট্যালেন্ট নিজে নিজেই জন্ম নেয়।
মেধা বা talent এক সক্ষমতার নাম, যা আসলে অনেকগুলো Pre-requisite’র সম্মিলন ও সন্নিবেশ নিশ্চিত হলে, অনেকগুলো প্রক্রিয়া ও উদ্যোগের ফল হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে বিকশিত হয়। শেকড় হতে শিখরে। দুনিয়াতে talent বলতে কিছু অবশ্যই আছে। আর আছে বলেই, Art academyতে বছরের পর বছর প্রশিক্ষণ দিয়েও একজন ভ্যান গগ সৃষ্টি করা যায় না।
সেজন্যই হারভার্ড আর অক্সফোর্ড হতে প্রতি বছর একজন করে আইনস্টাইন জন্ম নেন না।
ট্যালেন্ট আসলে কী? কেউ বলেন, ট্যালেন্ট বলে কিছু নেই। পরিশ্রম, প্রচেষ্টা আর অধ্যবসায়ই সব। আমরা ট্যালেন্ট ও মগজের মধ্যে কনফিউজ করে ফেলি। আমার ভোঁতা বুদ্ধি বলে, ট্যালেন্ট আর বুদ্ধিমত্তাও এক জিনিস নয়। অশিক্ষিত আমার মতে, ট্যালেন্ট অনেকগুলো এ্যাবিলিটির সম্মিলিত রূপ।
’ট্যালেন্ট’ ও ‘কমপিটেন্সি’র একরকম থার্মাল রেডিয়েশন ও ভাইব্রেশন আছে।
একজন ট্যালেন্টেড মানুষের চোখ-মুখের দ্যুতি, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, কন্ঠ্যস্বর, পদক্ষেপে তার ইনার জিনিয়াসের ছাপ পড়ে। টিমে ও প্রতিষ্ঠানে প্রচুর ট্যালেন্টেড মানুষের উপস্থিতির একটি ভাইব্রেশন আছে। আপনি একটু খেয়াল করলেই সেই ভাইব্রেশন অনুভব করতে পারবেন।
বিস্তারিত না বলে শুধু অল্প কথায় বললে, জেনেটিক উত্তরাধিকার, সৃষ্টিশীলতা, পজিটিভ মানসিকতা, প্রবল ইচ্ছাশক্তি, স্থীর ফোকাস, অদম্য প্রচেষ্টার দৃঢ় মনোবল, জ্ঞান, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, পরিবেশের প্রভাব ও অভিজ্ঞতা-এই সব কিছু মিলে একজন মানুষের ভেতরে যে ব্যতিক্রমী এ্যাবিলিটি তৈরী হয়, সেটাকে আমি ট্যালেন্ট মনে করি।
একটি দেশে মেধা বা ট্যালেন্ট সংস্থান, বিকাশ ও বিস্তারের পন্থা আসলে কী-সেটা তো বড় বড় হাস্তিদের টকশো বয়ানের বিষয়। আমি ক্ষুদ্র মানুষ, আমি শুধু বলতে পারি, ব্যক্তি পর্যায়ে আপনি কী করতে পারেন-জ্ঞানচর্চা করুন-প্রচুর পড়ুন-বলুন-ভাবুন-এক্সপিরিমেন্ট করুন-অভিজ্ঞতা জানুন-মানুষের কথা শুনুন-বেড়ান-দর্শন করুন-অনুভব ও কল্পনা করুন-অংক, দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা চর্চা করুন।
আমি জানি না, কতজন একমত হবেন, বা, এই বক্তব্যটি কতটা জেনারেলাইজড মনে হবে। Talent অথবা, Innovation এর যেকোনো একটির বা দুটিরই ওপর সম্ভবত একটি বা একাধিক বিশ্ব র্যাংকিং হয়, যেখানে সাম্প্রতিক জরিপে বাংলাদেশ অনেক পেছনে আছে বলে দেখানো হয়েছে।
Global Innovation Index (GII) 2024–ইউনাইটেড নেশনস (WIPO) অনুসারে:
Innovation Ranking: বাংলাদেশ (132টি দেশের মধ্যে) 106 তম;
Innovation Inputs (Institution, Human Capital, R&D ইত্যাদি): 114তম;
Innovation Outputs (Technology, Creative Outputs): 89তম;
Human Capital & Research: 128 তম;
ইন জেনারেল বা ওভারঅল মেধার স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে-এমনটাই ওই রেটিংয়ে দৃশ্যমান। এই দেশে মেধাশূন্যতার ভয়াবহ অভিঘাত আপনি টের পান কি? আমি তো পাচ্ছি। না পেলে আপনি হয় বোকা, নয় তো অতি সরল বান্দা। হ্যা, অবশ্যই তাহলে আপনি সুখী মানব।
তবে, সত্যি করে ভাবুন তো, মেধার উন্মেষ ঘটাবার কয়টা প্রক্রিয়া আমরা সৃষ্টি, বিকাশ ও বিস্তার করেছি? অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হল, আমাদের একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম (কোর্স, কারিক্যুলাম, সিস্টেম, প্রাকটিস, কালচার, প্রসিডিওর সবকিছু মিলে) বুদ্ধিমত্তা ও মানবিকতাকে প্রমোট করছে না।
বরং, আমার মনে হয়, পারিবারিক বিন্যাস, কার্যক্রম, লাইফস্টাইল এবং তার সাথে একাডেমী-আমাদের শিক্ষার্থীদের জাতিগত সমষ্টিক বুদ্ধিমত্তা দিনে দিনে কমিয়ে দিচ্ছে। World Population Review (2022 সামারি) Bangladesh বিশ্বের IQ র্যাংকিং-এ ১৫০তম অবস্থানে রয়েছে, যেখানে গড় IQ 74.33 হিসেবে দেখানো হয়েছে। শীর্ষে রয়েছে জাপান, গড় IQ ১০৬.৪৮ ।
মোদ্দা কথা, যেটি বলতে চাই, তা হল, বুদ্ধিমান হোমোসেপিয়েনদের যেই মাত্রায় IQ, পার্সোনালিটি ও ক্রিয়েটিভিটি থাকার কথা, সেটি কমছে। দিনকে দিন। একাডেমি ও তার কার্যক্রম কোনো উপকার করতে পারছে না। ঠিক কী রকম অবনমন হচ্ছে, তার বিস্তারিত মনে হয়ে বলার দরকার পরে না।
একটু কান পাতলেই আর চোখ খোলা রাখলেই অনুভব করতে পারবেন। হয়তো বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে খুব অভাবনীয় তবে অসম্ভব নয়। ট্যালেন্টদের আকৃষ্ট করতে, তাদের সেরাটা আদায় করতে, তাদের ধরে রাখতে, প্রতিষ্ঠানের জন্য তাদের জান লড়িয়ে দেয়া উদ্যম নিংড়ে নিতে কী চাই? টাকা? প্রেশার, প্রমোশনের মুলা বা বন্ড? মর্মবাণী, নাকি অন্যকিছু?
আমার শ্রদ্ধেয় কনসালট্যান্ট, বিশেষজ্ঞ, প্রাজ্ঞ ক্যারিয়ার এক্সপার্টরা ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে তাত্ত্বিক ও মেথোডিকাল জ্ঞান দিতে পারবেন। আমি পারব না কারন আমার ওই লাইনে কোনো বিদ্যা একদমই নেই। অতি সাধারন পড়াশোনা করে গার্মেন্টসে ঢুকে পড়েছি। সারাক্ষন গার্মেন্টস ও HR নিয়েই থাকি।
তবে মানুষ ঠেকেও তো শেখে। আমিও একটা জিনিস শিখেছি ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও রিটেনশন নিয়ে। তা হল, ট্যালেন্ট চিনতে শেখা, কোন প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের ট্যালেন্ট দরকার সেটা ঠিক করে নেয়া, সেই ট্যালেন্টদের মেন্টালিটিকে বুঝতে শেখা ও বোঝার চেষ্টা করা।
লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হবার অনেক পরে, ২৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে আমি জনাব শিহাব সাহেবের ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে লেখা একটি আর্টিকেল লিংকডইনে পড়ি। সেই লেখায় আমার নজর কাড়া সবথেকে চুম্বক অংশটুকু তাই এখানে জুড়ে দিলাম। মূল লেখককে কৃতজ্ঞতা।
আন্তর্জাতিক জরিপ অনুযায়ী ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
১. কর্মীর সম্পৃক্ততার প্রভাব:
Gallup-এর এক জরিপ বলছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা অধিক সম্পৃক্ত, সেখানে উৎপাদনশীলতা প্রায় ২০% বেশি হয়।
২. স্বীকৃতির গুরুত্ব:
Bersin & Associates-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের স্বীকৃতি দেওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাচারী চাকরি ছেড়ে যাওয়ার হার ৩১% কম।
৩. কর্মী উন্নয়নে বিনিয়োগ:
LinkedIn-এর ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৪% কর্মী বলেন, যদি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগ করে, তাহলে তারা দীর্ঘ সময় সেই প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান।
৪. রিমোট ওয়ার্কের চ্যালেঞ্জ:
Gartner-এর ২০২০ জরিপে বলা হয়, বাসা থেকে কাজ করা ৪৯% কর্মী অনুপ্রেরণার অভাব বোধ করেন এবং ৪৬% কর্মী ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের ভারসাম্য নিয়ে সমস্যায় পড়েন।
৫. বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির প্রভাব:
McKinsey-এর “Diversity Wins” রিপোর্টে দেখা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে জাতিগত/সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বেশি, তারা গড়ে ৩৬% বেশি লাভজনক হয়।
৬. সাকসেশন প্ল্যানিং:
Corporate Leadership Council-এর গবেষণায় বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠানের সাকসেশন প্ল্যানিং কার্যকর, তারা প্রতিযোগীদের তুলনায় ২.৫ গুণ বেশি সফল।
৭. দক্ষতার ঘাটতির উদ্বেগ:
PwC-এর ২০২০ সালের CEO জরিপে ৭৯% CEO জানিয়েছেন, দক্ষ কর্মী পাওয়া নিয়ে তারা চিন্তিত।
৮. প্রশিক্ষণের প্রভাব:
IBM-এর এক জরিপে বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেয়, তাদের কর্মীপ্রতি আয় ২১৮% বেশি।
৯. দক্ষ জনশক্তির সংকট:
ManpowerGroup-এর জরিপ অনুযায়ী, ৬৯% নিয়োগদাতা ২০২০ সালে দক্ষ কর্মী খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়েছেন।
১০. চাকরির সন্তুষ্টি ও উৎপাদনশীলতা:
University of Warwick-এর গবেষণায় বলা হয়, খুশি কর্মীরা ১২% বেশি উৎপাদনশীল।
১১. প্রযুক্তি ও ট্যালেন্ট:
Deloitte-এর রিপোর্ট বলছে, ৫৩% প্রতিষ্ঠান এখন HR কার্যক্রমে দক্ষতা বাড়াতে এআই (AI) নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
১২. কর্মীদের ক্লান্তি (Burnout):
FlexJobs-এর জরিপে ৭৫% কর্মী জানিয়েছেন, ২০২০ সালে তারা বার্নআউট অনুভব করেছেন। এর মূল কারণ হলো—কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মাঝে সীমারেখা না থাকা।
১৩. রিমোট ওয়ার্কের পছন্দ:
Buffer-এর ২০২০ রিপোর্ট বলছে, ৯৮% রিমোট কর্মী তাদের ক্যারিয়ারে অন্তত কিছু সময় বাসা থেকে কাজ করতে চান।
১৪. কর্মী কল্যাণমূলক প্রোগ্রাম:
World Economic Forum জানিয়েছে, ৮৪% প্রতিষ্ঠান দ্রুত তাদের কাজ ডিজিটালাইজ করছে, যার মধ্যে রিমোট ওয়ার্ক বড় একটি অংশ।
১৫. মিলেনিয়াল কর্মীদের অগ্রাধিকার:
PwC-এর জরিপে দেখা গেছে, ৮৮% মিলেনিয়াল চান ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স হোক, এবং ৭৫% মনে করেন প্রযুক্তি এই ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
তবে সবথেকে যা বেশি দরকার তা হল, কর্মীকে মানুষ হিসেবে ট্রিট করতে শেখা, যন্ত্র বা স্রেফ কর্মচারী হিসেবে না। কর্মীকে কোন চোখে দেখা হয়-তার ভিত্তিতেই তাদের সাথে বিহ্যাভিয়র প্যাটার্ন গড়ে ওঠে। কর্মীকে আপন করে নিতে শিখলে, তাকে ওন করতে দিলে সেই নিজের প্রাণের টানে থেকে যায় আর প্রতিষ্ঠানের জন্য জান লড়িয়ে দেয়।
Money is the most over rated & mistaken factor in employee engagement & productivity aspect.
কোয়াক, বিশেষত কোয়াক HR প্রফেশনালরা চিরকালই জোর গলায় প্রচার করে এসেছেন যে, টাকার জন্যই মানুষ চাকরি ছাড়েন। বেতন কম, তাই মাইগ্রেশন বেশি।
অথচ ফ্যক্ট হল, মূখ্যত রিকগনিশন, পিস, নিরাপত্তা ও ডিগনিটির অভাব মানুষের মনে চাকরি বদলের বীজ বপন করে। অতঃপর তারা চাকরি খোঁজে এবং একদিন পেয়েও যায়। অবশই বেশি বেতনে।
তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ”কেন যাচ্ছ?”
”বেশি বেতনের একটা জব পেয়েছি।”
ব্যাস, এইচ.আর ও কোম্পানী ধরে নেয়, বেশি বেতনের আশাই চাকরি বদলের জন্য দায়ী।
অথচ, ওই চারটা নিয়ে তার বঞ্চনাবোধের জন্ম না হলে তার বেতন নিয়ে ভাবনাটার জন্মই হত না। এমনকি, বেতন নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও ওই চারটার মলম তাকে আপেক্ষিক ও তুলনামূলক সান্তনা দেয়। মানুষ তবু সেজন্য compromise করে। কিন্তু, সেগুলি যখন উঠে যায়, তখন মানুষের আর ধৈর্য থাকে না।
আগে কর্মীকে পার্টনার ভাবুন, কর্মচারী নয়, আপন ভাবুন, আপন করুন, স্রেফ পেইড ওয়ার্কার নয়। ভালোবাসার চেয়ে আকর্ষণ বা বড় বাঁধন পৃথিবীতে আর কিছু নেই। কি ব্যক্তি জীবনে, কি কর্পোরেট এরেনায়।
বন্ধুপ্রতীম মোজাহিদ ভাইয়ের ইথিক্যাল লিডারশীপ ও HR’র ওপর একটা লেখা পড়ে তাতে আরেকটু ঝাঁঝ যোগ করতে একটা মন্তব্য করেছিলাম।
”নদীভাঙ্গন এলাকায় কিছু টাউট থাকে যারা ভাঙনের শিকার অসহায় মানুষের ভিটেমাটিসহ সব জিনিসপত্র পানির দরে কেনার ধান্দায় থাকে। তো এক টাউট একবার টাউটারি করে একজন সম্ভ্রান্ত লোকের বাড়ির সব কিনল চাপে ফেলে পানির দামে। সব ভেঙেচুরে তার নিজের ঘরে এনে হাজির করল। রাতে ঘুমাতে গিয়ে দেখে তার ঘুমানোর ঘরে তিনটা কোবরা সাপের ঝাঁপি আর প্রত্যেকটাতে সেইরাম এক সাপ। ওগুলা আগের মালিকের বাড়িতে ছিল। তারে দেখেই ফোস ফোস করতে লাগল। ……অতঃপর……..”
যেসব এইচআর এক্সেঞ্চারের বিপদে পড়া ঘরভাঙা সুপারস্কিলড প্রোফেশনালদের পানির দরে কেনার চেষ্টা চরিত্র করছিলেন তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলাম। হ্যা, কোয়ালিটি মানুষতো হয়তো পাবেন পানির দরে, তবে ওই কোবরাদেরও সাথে সাথে পাবেন বাই ডিফল্ট। কলা কিনলে খোসাটাও ওই দামেই একসাথে কিনতে হয়। কিছু কিছু এইচআরের ভাইদের দেখলে সত্যিই নিজের প্রফেশনের উপর ঘেন্না হয়। লেবার ল, EHS আর WPC কমিটির ভোটই হল তাদের জন্য এইচআর।
মানুষ অহরহ বলে ”দ্যাশে যোইগ্যতার আকাল”। মানুষকে বিধাতা এমন খাসলত দিয়ে পয়দা করেছেন, যে, যতক্ষণ আপনি আমার মনের মতো কথা বলবেন, আমার হয়ে কথা বলবেন, আপনি দেবতা। যখনই আপনার কথা আমার মনের মতো হবে না-আপনি বনে যাবেন অসূর।
কয়েকদিন আগে পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট নিয়ে একটি আত্মবিশ্লেষণমূলক প্রতিকী চুটকি লিখলাম। পাবলিক এটাকে একদম নিজের মনের গল্প আর নিজের জীবনের অংশ ধরে নিয়ে ব্যাপক পেরশংসা করল। যুক্তিটা ছিল খুব সরল।
ঝাড়ুদার হতে ডিরেক্টর-চাকরিজীবিরা সবাই নিজেকে বঞ্চিত ও অত্যাচারিত ভাবে। তাই অত্যাচারিতের পক্ষ নিয়ে দুটো কথা বলে জনপ্রিয় ও স্টার হওয়া খুব সহজ। আজকে দেখি অসূর হই, নাকি দ্যাবতা।
অফিস-আদালতে আমরা যারা কামলা দিয়ে পেটের ভাত যোগাই (পিয়ন হতে শুরু করে জি.এম সাপ পর্যন্ত, কচি গুড়ো হতে ধাড়ি প্রফেশনালও), তারা আজকাল প্রায় হরেকৃষ্ণ জপের মতো করে ফেসবুক বা লিংকডইনে রোজ প্রাতঃকালে প্রাতঃনিঃসরনের মতোই রিলিজিয়াসলী একখানা এশটাটাশ প্রসব করি-”নাহ, দ্যাশটা গেল।
এই দ্যাশে যোগ্য লোক নাই। চাকরি নিয়ে বসে আছি-যোগ্য প্রার্থী নাই। প্রার্থীরা সব বদ+মাশ। একটাও কাজ জানা লোক নাই। সব মহাগাধা। সব গাড়ল। যোগ্য লোকের অভাবে দ্যাশটা আর তার মাড়োয়ারি দোকানগুলো সব গোল্লায় গেল।” মোটামুটি এই হল আহাজারির সারমর্ম। (যদিও অভিযোগ একদম বায়বীয় ও অমূলক না।)
তবে, আজ একটু অন্যদিকটা দেখাই। যোগ্য, দক্ষ, মেধাবী-তিন গুনে গুনান্বিত উপযুক্ত পাত্রকে ঘরে আনার মতো কাবেলিয়াত আপনার প্রতিষ্ঠানের সত্যিই কি আছে? ধরুন, আপনার আহবানে সাড়া দিয়ে স্টিফেন হকিনস আপনার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে ভিসা নিয়ে চলে এলো। আপনি তাকে পালতে পারবেন? তাকে মূল্য দিতে পারবেন? তাকে মূল্যায়ন করতে পারবেন? তাকে প্রতিদান দিতে পারবেন?
থাক, এত কিছু লাগবে না। শুধু বলুন, আপনি তাকে ব্যবহার করতে পারবেন? তাকে কাজ করতে দিতে পারবেন তো?
এবার একটু এসেজর ও ইন্টারভিউয়ার কাম চাকরিদাতা হুজুর ও আলমপানাদের দেখি।
দ্যাশে তো যোগ্য লোক নেই। সব ধইঞ্চা। উত্তম। তা, আপনাকে যদি বলি, যোগ্যতা কাকে বলে, আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ডিল করার জন্য কী ধরনের যোগ্যতা সত্যিই থাকা দরকার, সেই যোগ্যতা কার আছে বা নেই-তার মূল্যায়নের উপযুক্ত পদ্ধতি-এগুলো কি সত্যিই আপনি জানেন? বা, আপনারা কি সত্যিই সেগুলো আগে হতেই উপযুক্ত গবেষনা করে ঠিক করে নিয়েছেন?
আমি মাঝেমধ্যে একটি কথা বলি, যে, HR পেশাজীবি হিসেবে আপনি যদি আপনার কর্মক্ষেত্রে খুব বেশি কিছু পরিবর্তন ও উন্নয়ন করবার সুযোগ খুব একটা না পান, কিংবা সফলতার সম্ভাবনা কোনো কারনে না দেখেন, বা সৃষ্টি করতে না পারেন, অন্তত দুটো কাজ করবার চেষ্টা করে যেতে পারেন। তাতে, অনেক না হলেও, মৌলিক ও দীর্ঘমেয়াদী কিছু বিপ্লব ঘটে যাবে।
সে দুটো হল-Competency based talent acquisition চালু করুন, এবং, একটি আধুনিক Performance ও Reward Management চালু করে দিয়ে তারপর চলে যান। এই দুটো সদকায়ে জারিয়ার মতো, কিংবা বলা চলে, Ripple effect, Domino Effect এ নিজেরাই অনেক পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটিয়ে যাবে। অনেকটা Atomic fusion এর মতো।
আমাদের HR টিম, HR পেশাজীবি এবং Corporate প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বড় সীমাবদ্ধতা রয়েছে মূল্যায়ন সক্ষমতায়।
এই মূল্যায়ন নতুন কর্মী Hire করবার সময়কার Talent ও Competency যাচাইয়েও, আবার, বিদ্যমান কর্মীদের Contribution, Performance ও Value addition যাচাইয়েও। বলতে শরম নেই, আমরা Judgement এ খুব, খুব কাঁচা। খুবই আনাড়ি ও অপেশাদার।
কীভাবে সঠিকভাবে রেজুমে স্ক্রীনিং ও স্ক্যানিং করতে হয়, কীভাবে অনলাইন পোর্টালে রেজুমে চেক, স্ক্রীন ও বাছাই করতে হয়, সেখানে কী কী ভুল হতে পারে, কী করলে হেড হান্টারের সাকসেস রেট বাড়ে-এই বিষয়টা অতি অতি অতি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ, সম্ভবত এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জুনিয়রদের খুব বেশি ওরিয়েন্টেশন ও কোচ না দিয়েই বসিয়ে দেয়া হয়। তারাও তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজে যা বোঝেন, নিজের মতো করে কাজটা করতে থাকেন। মনে মনে ভাবেন, ভালই করছি।
ফলাফল হল, উপযুক্ত ও সম্ভাব্য ট্যালেন্ট হারান তার একটা দারুন অপরচুনিটি। একটি ভাল প্রতিষ্ঠান হারায় একজন ভাল ট্যালেন্ট।
রেজুমে স্ক্রীনিং একটি খুবই জটিল, ইনটেনস ও ভাইটাল স্কিল। টিমের সিনিয়ররা এই বিষয়ে জুনিয়র প্লেসমেন্ট অফিসারদের একদম হাতেকলমে না শিখিয়ে কাজে বসিয়ে দিলে উভয় পক্ষের ক্ষতি।
বিশেষ একটা কারনে আমি হঠাৎ করেই আমার সহকর্মী Mr. Sk Shafiqul Islam Shawon, Ms. Taposhi Magdelina Mondol, Ms. Sabrin Zakia Pushpa কে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে ও সিস্টেমের সামনে বসিয়ে জানার চেষ্টা করলাম, তারা এর কতটা ডিটেল জানে। কোন আসপেক্টে ও এপ্রোচ নিয়ে তারা স্ক্রীনিং করে। বিডিজবসে যে একজন চাকরি প্রত্যাশীর ৩ রকম প্রোফাইল বা রেজুমে থাকে, প্রতিটা যে আলাদা ধরনের ও আলাদা কাজের/আসপেক্টের-সেটি তারা জানে কিনা, সেটা জেনে স্ক্রীনিং করে কিনা, স্ক্রীনিংয়ে কী দেখে, কীভাবে ফিল্টার করে, কোন রেজুমেটা তারা ডাউন করে, ফিল্টারিং কতটা কার্যকর-এসব নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করলাম।
তাদের প্রোফাইল মেকিং মেকানিজমের সীমাবদ্ধতা জানালাম, কী করলে হেড হান্টিং/গুড রেজুমে পাবার সফলতা বাড়বে, কী করলে কমবে-তা দেখালাম।
আমাদের টিমটা ওয়েল গ্রুমড, তারপরও একটা ইস্যু মাথায় আসামাত্র তাদের আবার গোড়া হতে মূল্যায়ন করালাম। কিছু ডেভেলপমেন্ট এরিয়া বের হল। কন্টিনিউয়াস অবজার্ভেশন, কন্টিনিউয়াস চেইঞ্জ ও চেক ব্যাক, কন্টিনিউয়াস ডেভেলপমেন্ট-একটি এইচ.আর টিমের ব্রত হওয়া উচিত।
চিন্তা করছিলাম, এই যে তিন রকম রেজুমে বা প্রোফাইল থাকা ও ডাউন করবার আলাদা সিগনিফিক্যান্স ও ইমপ্লিকেশন-সেটা নিয়ে অন্তত কোনো গ্রুমিং জুনিয়র প্লেসমেন্ট অফিসাররা পান কিনা (আশা করি পান)। না পেয়ে থাকলে তাদের হাতে পড়ে না জানি কত সম্ভাবনাময় মানুষ বঞ্চিত হন। আহা।
মোদ্দা কথা হল, আমাদের মূল্যায়নের উৎকর্ষ খুবই দুর্বল। তাতে করে যেটি হয়, আমরা মেধা ও যোগ্যতাকে চিনি না, Performerকে চিনে বের করতে পারি না। হ্যা, চিনলেও যে Talentদেরকে Hiringয়ে অগ্রাধিকার দেয়া ও Reward’র সময় Performerদের অগ্রাধিকার দেবার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে ও Compromising, সেটিও সত্যি।
তবে হ্যা, এই অসঙ্গতির যায়গাতে এককভাবে আপনি যদি HR বিভাগকে শাপশাপান্ত করেন, তাহলে ভুল হবে। এখানে অনেক আপেক্ষিক ব্যাখ্যা রয়েছে। সেগুলোও জানতে ও মানতে হবে। যাহোক।
Pharma company তাদের HR কর্মী নেবে কেবলমাত্র ফার্মা ব্যাকগ্রাউন্ড হলেই, অথচ তার এইচ.আর কর্মী হাঁটে-মাঠে মায়াবড়ি বেচবে না।
FMCG কোম্পানীর এইচ.আর নাখালপাড়ায় বিস্কুট, চানাচুর, বিড়ি, পাউরুটি কিংবা লেইসফিতার বিল রিসিট কাটতে যাবে না। অথচ, তাদের এইচ.আর ক্যানডিডেট হতে হবে সাবেক কোনো FMCG
সিমেন্ট কোম্পানীর এইচ.আর জীবনেও ফ্লাইঅ্যাশ আর ক্লিংকারের সুষম মিশ্রন কী করে বানাতে হয়-সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হবে না। অথচ, একটা সিমেন্ট কোম্পানী, এমনকি, রেডিমিক্স কংক্রিট বিক্রেতা কোম্পানীও তাদের এইচ.আর নেবার জন্য সাবেক সিমেন্ট কোম্পানী হবার বাধ্যবাধকতা ফলো করে।
এর বাইরে নয় RMGও।
কথা হল, সব প্রফেশনে সংশ্লিষ্ট ধরনের বিজনেস বা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবার অভিজ্ঞতা একদমই জরুরী না। বিষয়টা থাকলে ভাল, না থাকলেও ক্ষতি নেই। এইচ.আর প্রফেশনে সবরকম শিল্প, সবরকম বিজনেসেই একই চরিত্র, একই কাজের প্যাটার্ন, একই স্কিল, একই নলেজ দরকার পড়ে। এমন না, যে, ট্যানারির এইচ.আর আর পোলট্রির এইচ.আর ভিন্ন ভিন্ন। তাহলে রেলেভ্যান্সের ফাঁদে ফেলা কেন? আর, এই যে সুপার রেলেভ্যন্স খোঁজা, সেটা যে ট্যালেন্টদেরকে একটা খাঁচায় বন্দী করে দিচ্ছে, তাদের প্রফেশনাল টেরিটরিকে কনফাইন করে তাদের ক্ষতি করছে-তার দায় কে নেবে?
অথচ, আমাদের অপরিপক্ক ইন্ডাস্ট্রি, এমপ্লয়ার ফ্যাটারনিটি আর তাদের ততোধিক চালাক এইচ.আর ‘রেলেভ্যন্স’কে এমন একটা হাস্যকর লেভেলে নিয়ে গেছে, যে, চায়ের দোকানে এইচ.আর নিতে হলেও এখন বলছে, প্রার্থীকে আগের ৫ বছর চায়ের টঙে এইচ.আরি করে আসতে হবে।
বুঝলাম, কালচারাল অ্যাকিউমেন ম্যাটারস। কিন্তু, সেটা কতটা ওজন ধারন করে? তাদের আচরন বলছে, আপনাদের কাছে ওটাই সব। একজন এইচ.আর ম্যানেজার বা জি.এম এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিজনেসে দীর্ঘ ওরিয়েন্টেশন থাকলে তারা কী এমন বেনেফিট পাবেন? না থাকলে তাদের কী আসবে যাবে-আদৌ সেটা তারা জানেন? নাকি বিষয়টা স্রেফ আভিজাত্য আর ঘাউরামি? বাংলাদেশের মানুষ পড়ালেখা করে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে, কিন্তু বিশ্বাস করে কবিরাজের ঝাড়ফূঁকে। এঁরা SHRM/AIHR হতে বড় এইচ.আর ডিগ্রী নেবে, কিন্তু, এইচ.আরের পলিসি বানাবে দুনিয়া ডিগ্রী কলেজের বিদ্যা ফলো করে।
বলছিলাম, আমাদের ভুল মূল্যায়ন নিয়ে। মেধা চিনতে আমরা ভুল করি। ভুল জিনিসকে মেধা ভাবি। New hiringয়ে, Existing কর্মীদের Performance Ratingয়ে আমরা ভুল মূল্যায়ন করি। ভুল Parameterকে Competency ও Performance হিসেবে গণ্য করে ভুল Judgement করি।
অস্বীকার করে লাভ নেই। এই গণভুল আমরা করি। ব্যাপক হারেই করি। বিশ্বাস না হলে একটি নিয়মতান্ত্রীক Employee satisfaction survey করে দেখুন। আপনার ‘Right hiring‘ Metrics’র Score দেখুন।
ভুল Judgement’র অন্যতম হল যুগের চাহিদার সাথে, বাজারের সাথে, প্রতিযোগীদের সাথে Aligned ও At per থেকে প্রতিষ্ঠানের কাঙ্খিত Competency benchmark তৈরী করতে না পারা, প্রত্যাশিত বা required Competencyকে Define না করে ভুল Aspect ও Parameterকে Competency হিসেবে Back of the mind রেখে ভুল প্রার্থীকে নিয়োগ করা।
আমরা একটি উপযুক্ত Competency benchmark দাড়া করাতে পারি না। এমনকি, Back of the mind, Hire করবার সময়ে (শুধু HR না, সবাই) আমাদের মধ্যে যেসব বিষয় Competency ও Employability determinant হিসেবে কাজ করে, সেগুলোর কিছুটা ধরন যদি বলি, তাহলে বলব-
-আনুগত্য করবে কিনা
-বিনয়াবনত থাকবে কিনা
-দেখতে শুনতে কেমন
-বিশাল কোনো Conglomerate হতে এসেছে কিনা
-বিশাল কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিনা
-অনেক বছর কাজ করেছে কিনা
-Relevant sector হতে এসেছে কিনা
-সততা আছে কিনা
-গাঁধার মতো খাটতে পারবে কিনা
-বশ মানানো যাবে কিনা
-Office politics এ আমার দলে যোগ দেবার সম্ভাবনা কতটা
-আমার quorum’র কেউ কিনা
-সুন্দরী কিনা
-বড় বড় Degree আছে কিনা
-কোনো পীর সাহেব Refer করেছেন কিনা
ব্যস, আমাদের অবচেতনেই আমরা এসব Bias ও বাখোয়াজকেই competency হিসেবে treat করে কাউকে qualify বা disqualify করে বসি। (#সবাই১না) (সততাকে বাখোয়াজ বলায় আমি কতজন Follower হারাবো ঈশ্বর জানেন।)
এই ভুল শুধু HR একা করে না। সকল Stakeholder deptই করে। একটা ভুল Hiringয়ের Cost ও Impact কত জানেন?
Competency নিয়ে আমাদের ভুল ভাবনার একটি খুব Common উদাহরণ বলি।
আপনি যদি দায়ীত্বপ্রাপ্ত HR হয়ে, আদিষ্ট হয়ে, এবং, অবশ্যই যথাযথ মূল্যায়ন ও সংশোধনের যথেষ্ট চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে একজন অনেক পুরোনো কর্মীকে Job হতে Eliminate করবার উদ্যোগ নেন, আপনাকে একটি Common অভিযোগ শুনতেই হবে-”লোকটা অযোগ্য হলে এত বছর কাজ করল কীভাবে? এতদিনে তার যোগ্যতা তো আরও বাড়বার কথা।”
সেই Common ভুল। আমরা মনে করি, অভিজ্ঞতা মানেই যোগ্যতা। ঠিক যেমনটা আমরা ভাবি, সততা হল একটি Skill। (সততা স্কিSkill নয়, এটি একটি Human trait।)
এই ভুল প্রশ্নের মুখোমুখি যখনই হই, তখন প্রযোজ্য বিশ্লেষনের ফাঁকে আমি একটি চুটকি বা টোটকাও বলি।
সেটি হল, দেখুন, মানুষ যদিও জড় বস্তু নয়, তার বছর বছর Upgradation হবারই কথা। কিন্তু, সেটি সবার হয় না। অনেকের ক্ষেত্রেই বিষয়টা দাড়ায় আপনার ১০ বছর বয়সে পরা সবচেয়ে সুন্দর ও প্রিয় জামাটার মতো। সেটি ১০ বছর বয়সে তখনকার দিনের সেরা Fashion ছিল। কিন্তু আজ ৪০ বছর বয়সে, সেটি আর আপনার শরীরের মাপে খাটবে না। আর সেটি এখনকার জন্য Old fashion ও হয়ে পড়েছে। তার মানে, ১০ বছর বয়সে যেটা বেস্ট, সেটােই ৪০ বছর বয়সে worst হতেও পারে।
যেই কর্মী আপনার কোম্পানীর জন্য আজ best, তিনি নানা কারনে ১০ বছর পরে obsolete হয়ে বসতেই পারেন। বিষয়টা অসম্ভব না। তাছাড়া, আপনাকে বুঝতে হবে, যে, একটি Business organization’র সার্বিক প্রেক্ষাপটে তার কর্মীদের সাযুজ্য নির্ধারিত হয়।
৩ বছর আগের তখনকার ’বাস্তবতায়’ একটি টিমে হয়তো একজন মানুষ Appropriate ছিলেন। ৩ বছর পরের বাস্তবতায় তিনিই হয়তো আর Fit নন।
Upskilling ও Re-skilling’র কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন। সেটি একজনের মধ্যে ক্রমাগত না ঘটে গেলে আজকের Best লোকটিই কাল Last হতে পারে।
আবার, তার ভেতরে কিছুই হল না, কিন্তু, আপনার প্রতিষ্ঠান বা একটি Team’র বাস্তবতা বদলে গেল, Skill ও Talent’র Requirement অনেক High হয়ে গেল। তখন আপনারই ঘরে থাকা পুরোনো ও পরীক্ষিত লোকটিই Obsolete ও Removable হতে পারেন। শুধু মানুষের দোষেই না, সময় ও বাতাসের বদলের কারনেও চাহিদা ও বাস্তবতা বদলে যেতে পারে।
বিশেষত দুনিয়া যেভাবে Drastically বদলে যাচ্ছে।
যোগ্যতার স্বরুপ ও সলুক কি নির্ধারন করা আছে আপনার প্রতিষ্ঠানে? আপনার HR এ? ওই যাকে আমরা ’হুদাই রাকচে ডিপারমেন’ বা HRD এর লোকেরা বলি Competency mapping? আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে, ওটা আপনাদের নাই। সবা গড়ে হরিবোল করছেন।
আর ইন্টারভিউয়ের সময় মাছকে জিজ্ঞেস করেন, ”গাছে উঠতে পারো?” না পারলেই, ’দ্যাশে একটাও যোগ্য লোক নাই।’
ভাল ইন্টারভিউ কী করে দিতে হয়-তার হাজারও উপায়, সবক, ওয়াজ অসংখ্য মাধ্যমে পাবেন। কিন্তু, ভাল ইন্টারভিউ কী করে নিতে হয়-সেই সবক প্রায় কখনো আপনার চোখে পড়বে না।
অথচ, একটি সফল ট্যালেন্ট এ্যকুইজিশনের জন্য ওটাও অত্যন্ত জরুরী। যেভাবেই দেখি না কেন, দেশে প্রতিভা ও দক্ষতার মিশেলে যোগ্য কর্মী দিনকে দিন দুস্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা এমপ্লয়ার ব্র্যান্ডিংয়ে একদম ওপরের সারিগুলোতে বিরাজ করেন না, তাদের জন্য কাঙ্খিত মানুষটিকে পাওয়া নানা কারনে কঠিন হয়ে পড়ছে।
একজন নিয়োগকারী হিসেবে জব মার্কেট ও ট্যালেন্ট মার্কেটের সাপ্লাই/স্টাফ/প্রডাক্ট/প্রার্থীদের যোগ্যতা উন্নয়নে কিছু করবার দায় অবশ্যই আপনার থাকে।
Mass স্কেলে আপনারা কিছু করতে যদি সমর্থ না-ও হন, একটি ছোট্ট কাজ কিন্তু অবশ্যই চাইলেই করতে পারেন।
আপনাদের যোগ্যতা মূল্যায়নের সব পর্যায় শেষ হলে চুড়ান্ত সাক্ষাতকারে (বা ফিডব্যক মেইলে) ওই চাকরি প্রত্যাশীর Development area (বা দুর্বলতা তথা আপনাদের দৃষ্টিতে দেখা অযোগ্যতাগুলো) সংক্ষেপে বলে দিতে পারেন।
তাতে ওই ব্যক্তি আপনার চাকরিটি না পেলেও পরের প্রতিষ্ঠানের জন্য নিজের মেধা, জ্ঞান, দক্ষতার ঘাটতিটা জেনে প্রস্তুতি/recovery initiative নিতে পারবেন।
এভাবে পরোক্ষভাবেও আপনি বাজারের capacity development এ কাজ করতে, অবদান রাখতে পারেন।
এই বিষয়ে বিস্তারিত আগেও লিখেছি। নতুন করে উপন্যাস লিখব না।
মনে করুন, আপনি একজন খুব সিনিয়র HR প্রফেশনাল। এ যাবত ৩টি সেক্টরের মোট ৫টি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ১৮ বছর চাকরি করেছেন। আপনি চাকরি বদলের পরিকল্পনা করে বিভিন্ন স্থানে এ্রপ্রোচ করতে শুরু করলেন।
৩টি পছন্দের স্থান হতে ডাক এলো।
প্রায় সবগুলোতেই আপনার ইন্টারভিউ নিতে বসবেন এমন একজন ব্যক্তি বা একদল ব্যক্তি, সাধারনত টপ বিজনেস লিডার, যারা আপনার হতে র্যাংকে সমান বা বড় (এবং, খুব ব্যতিক্রম না হলে,) তাদের কেউই, স্বভাবতই HR প্রফেশনাল নন। কোন কোন বিভাগের হতে পারেন-সেটির একটি খুব পরিচীত ট্রেন্ড আমি জানলেও, ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে চেপে গেলাম।
কারন, আপনার মতো টপ পজিশনের একজন HR কর্মী অনেক প্রতিষ্ঠানেই থাকে না। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই Manager বা বড়জোর Sr. Manager পজিশনের কর্মীরাই বিভাগ লিড করেন। এখন ম্যানেজার তো আর আপনার ইন্টারভিউ নিতে বসবার কথা নয়। বসলেও তিনি খুব একটা এ্যকটিভলি পারটিসিপেট করার সম্ভাবনা কম।
এখন বিপদ হল, Non-HR প্রফেশনাল যদি আপনার ইন্টারভিউ নেন, তাহলে আপনার প্রপার জাজমেন্ট হবার সুযোগ কতটা?
হ্যা, আপনার ইন্টারভিউয়ের একটি অংশ হল স্ট্রাটেজিক ও লিডারশিপ এপটিচুড। কিন্তু, তার বাইরের যেসব কোর ও সাবজেকটিভ প্রফেশনাল নলেজ, এ্যবিলিটি ও স্কীলের বিষয় আছে-সেগুলোর যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আপনি কতটা প্রপার জাজমেন্ট প্রত্যাশা করতে পারেন?
হ্যা, আপনি বেশ কিছু IFs & BUTs এখানে যোগ করতে পারেন।
বোর্ডে এক্সটারনাল HR এক্সপার্ট থাকতে পারে।
অনেক সিনিয়র ম্যানেজার হয়তো স্ট্র্যাটিজিক্যালী আপনারই সমমর্যাদার।
ওইসব সিনিয়র বিজনেস লিডাররা ব্যসিক এইচ.আর জানেন।
আপনাকে লিখিত প্রশ্নপত্র ধরে ধরে প্রশ্ন করে মেকআপ করা যেতে পারে।
কোম্পানীর বোর্ড সদস্যরা ইন্টারভিউ করলে A2Z এমনিতেই কভারড হয়।
ইত্যাদি ইত্যাদি।
এবার আপনি বলুন।
আপনার, বা, আপনার মতো একজন সিনিয়র মোস্ট HR প্রফেশনাল আসলে সার্বিক বিচারে কতটা সুচারু মূল্যায়ন ড্রাইভ এবং সূক্ষ্ণ জাজমেন্ট প্রত্যাশা করতে পারেন?
মোদ্দা কথা হল, যথাযথভাবে ও স্মার্টলি ইন্টারভিউ কনডাক্ট করবার ক্ষেত্রেও আমাদের এখানে অনেক বড় শূন্যতা রয়েছে। চাকরি প্রত্যাশীর মেধা ও সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করবার মতো কাবেলিয়াত অনেক ইন্টারভিউয়ারেরই থাকে না।
ফলাফল, “দ্যাশে ম্যাদাবী ও যোইগ্য লোক নাই।”
ইন্টারভিউয়ার দেখেছি, বিরক্ত।
ইন্টারভিউয়ার দেখেছি, অনিচ্ছুক।
ইন্টারভিউয়ার দেখেছি, আনকালচারড।
ইন্টারভিউয়ার দেখেছি, অজ্ঞ।
ইন্টারভিউয়ার দেখেছি, কী করে যোগ্যতা যাচাই করতে হয়-তা নিজেরই জানা নেই। কী খুঁজছেন, সেটাও জানেন না।
একই দশা পারফরম্যান্স ইভ্যালুয়েশনে। পারফরম্যান্স কী, পারফরম্যান্স কোনগুলো এবং, কীভাবে পারফরম্যান্স যাচাই করতে হয়-তা না জেনে বসে থাকে, কিন্তু, দিন শেষে রায় দিয়ে দেবে-”Sakib kela pare na.”
দু’রকম এপ্রোচ নিয়ে ইন্টারভিউ করা যায়-
এক; আমি, অর্থাৎ এমপ্লয়ামেন্ট সেলার, আমার যা চাই বা যা খুঁজছি, তা চাকরি প্রত্যাশী বা এমপ্লয়াবিলিটি সেলারের কাছে আছে কিনা-সেটা বোঝার চেষ্টা।
দুই, চাকরি প্রত্যাশী বা এমপ্লয়াবিলিটি সেলার যা বিক্রী করতে নিয়ে এসেছেন, সেটি আমার দরকার কিনা, কিংবা, আমার সরাসরি কাজে না লাগলেও তাকে ট্রান্সফরম করে আমার কাজের উপযোগী বানানো সম্ভব কিনা, অথবা, দরকার না থাকলেও, ভবিষ্যতের বিবেচনায় কিনে রাখা উচিত কিনা।
হ্যা, এমপ্লয়মেন্ট ও এমপ্লয়াবিলিটিকে আমি বিকিকিনিই বলে থাকি। জব সিকার বা এ্যাপ্লিক্যান্ট টাকা, ডিগনিটি, রিকগনিশন-এসবের বিনিময়ে এমপ্লয়াবিলিটি বিক্রী করতে আসেন। আর এমপ্লয়ার টাকা দিয়ে এমপ্লয়াবিলিটি, পোটেনশিয়াল, ক্রিয়েটিভিটি কেনেন।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, যে, আমাদের প্রচুর wrong hire হয়।
এই ভুলটি হবার অন্যতম মুখ্য কারন হল, আমাদের wrong approach in job assessment. Viva তে ঠাস ঠাস করে সব প্রশ্নের নিখূঁততম উত্তর দিতে পারাই হল topmost employability feature-এই ভুল এপ্রোচটাই ভুল বাছাইয়ের অন্যতম বড় কারন।
একজন এমপ্লয়ারকে চিনতাম, যিনি একটি বিশেষ ডিগ্রীধারী ও বিশেষ প্রতিষ্ঠান হতে ‘ছনদপ্রাপ্ত’ চাকরি প্রত্যাশীদের প্রতি একরকম ‘অবসেজড’ই ছিলেন। ওই বিশেষ ছাপ্পামারা কাগজ নিয়ে এলে কোনো কথা নেই। চাকরিপ্রত্যাশীর ইচ্ছে অনুযায়ী চাকরি বেছে নিতে দেয়া হত। স্বয়ম্বরার মতো। এরকম অবসেশন অসংখ্য এমপ্লয়ার বা তাদের HR কর্তাদের মধ্যে থাকে। বিশেষ ডিগ্রী, বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ অঞ্চল অথবা বিশেষ ভাবাদর্শের অনুসারী-ব্যাস, সেটাই হয়ে দাড়ায় একমাত্র ও চুড়ান্ত এমপ্লয়্যাবিলিটি। এই অবসেশন কার্যত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপকার করে না। বরং ধ্বংস ডেকে আনে। কনটেক্সট: এখানে অবসেজড ব্যক্তি নয়, অবসেশনটা ফোকাস। ব্যক্তিপূজা ও ব্যক্তিঘৃনা-কোনোটাই নয়।
আজ একটি পুরোনো সত্য, নতুন করে অনুধাবন করলাম।
আপনি যখন চাকরির ইন্টারভিউয়ার; তখন সামনে বসা চাকরি প্রত্যাশীকে প্রশ্ন তো করবেন।
কিন্তু প্রশ্নোত্তর পর্বের আদলে না হয়ে সেটি ডায়ালগ, বা আড্ডা বা ঘরোয়া বৈঠকের আদলে হলে আপনার লাভ বেশি।
টাস টাস করে প্রশ্ন করে তার সঠিক উত্তরের জন্য হেডমাস্টারের মতো সিনা টান করে বসে না থেকে বরং ইন্টারভিউইকে উত্তরটি সাজাতে, বানাতে সামান্য সাহায্য করলে আপনার লাভ বেশি।
১০০ ভাগ প্রশ্নের ১০০ ভাগ সঠিক উত্তরদাতার চেয়ে আপনার তাকে বেশি দরকার, যে ১০০ ভাগ প্রশ্নের ১০০ ভাগই নিজের মতো ব্যাখ্যা করে উত্তর দিতে পারে। গৃহশিক্ষকের মতো ছাত্রের পড়া মুখস্ত ধরা নয়, বরং কৌতুহলি ছাত্রের মতো করে তার সাথে কথা বললে, প্রশ্ন করলে আপনার লাভ বেশি।
আপনি কথা কম বলে তাকে বেশি বলতে দিন। আপনি যা খুঁজছেন, তা তার মধ্যে না থাকলেও, তার মধ্যে যা আছে যা আপনি খুঁজছেন না, সেটা তাকে প্রকাশ করতে দিন।
আপনার প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য এ্যসেসমেন্টে হাজির হওয়া চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে আপনার/আমার অনেক প্রত্যাশা থাকে। তাকে এটা পারতে হবে, সেটা পারতে হবে, এটা জানতে হবে, সেটা জানতে হবে, এটা মনে রাখতে হবে, সেটা মনে রাখতে হবে। খুবই স্বাভাবিক।
এই যে, আপনি ১০ পাতার (তথাকথিত JDসহ) জব এ্যডভারটাইজমেন্ট দিতে পারছেন, প্রার্থীকে এই হতে হবে, ওই হতে হবে, এই করতে হবে, ওই করতে হবে, এভাবে নাচতে হবে, ওভাবে গাইতে পারতে হবে, ডিম পাড়তে হবে, আকাশে উড়তে হবে, ২ লাখ টাকার সনদ থাকতে হবে-এত এত এত চাহিদা সব মেনশন করতে পারছেন; অথচ
তাকে কত বেতন দেবেন-সেই সামান্য সংখ্যাটা মেনশন করতে পারছেন না। (নানা কারনে, মানছি)। এই না পারাটা কেন? সবসময় না হয় পারা যায় না, তাই বলে, কখনোই মেনশন করবেন না কেন? মানে, মেনশন না করবার নীতি কেন?
তার মধ্যে আবার আছে ”এ রেপুটেড রিনাউনড কংলোমারেট মুল্টিন্যশনাল” ইজ লুকিং ফর অমূক-টাইপের বেনামা, ভূতের বাড়ির বিজ্ঞাপন। কেন রে ভাই? আপনার কোম্পানীর নামটা প্রকাশ্যে বলতে পারেন না-আপনি কেমন কংলোমারেট?
মানছি, ভেতরে কাউকে রিপ্লেস করবেন, তাকে জানতে দিতে চান না। হয়তো প্রকাশ্যে নাম বললে লবিংয়ে নিতে বাধ্য হন। কিন্তু, সেটা কি আজীবন? সবসময়? আপনার ১টা কাজ দিয়ে বিচার করব না। সব মিলিয়েেই আমরা। কিন্তু, বিষয়টা একটা একক কাজ না হয়ে যদি দেখি আপনার খাসলতই এমন, তাহলে কী ভাবব? নিজের নামটা জোর গলায় বলতেও অক্ষমতা? এ্যপ্লিক্যন্টরা কি তবে ভূতের বাড়ির জন্য এপ্লাই করবে?
সবচেয়ে হাস্যকর হল, জব লোকেশনে লেখা ’এনিহোয়্যার ইন বাংলাদেশ’। এর মানে কী? তিনি জব পেলে তাকে ভুরুঙ্গামারীতেও অফিস করতে হতে পারে? সেই প্রস্তুতি নিয়ে তিনি সময় খরচ করে এপ্লাই করবেন? আর, তারপর প্রত্যেকবার ৫/৬ ঘন্টা খরচ করে ৩ বার ইন্টারভিউ দেবেন? তারপর শুনবেন, তার জব লোকেশন তালতলি দ্বীপ?
এই প্রত্যাশার মধ্যে অন্যতম হল, ভাইবা দিতে আসার আগে তিনি যেন এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে এবং তার কাঙ্খিত পজিশন সম্পর্কে খোঁজখবর করে আসেন। (সত্যি বলতে, প্রত্যাশা করা হয় তিনি যেন স্ট্যাডি করে আসেন।)
এই প্রত্যাশা মূলক নাকি অমূলক আজ সে আলোচনা থাক।
আমি জানতে চাইছি, একজন চাকরি প্রত্যাশী আপনার বা আমার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ও কাঙ্খিত পজিশনটি সম্পর্কে কী কী জেনে আসুক ও কতটা জেনে আসুক বলে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি? আর, প্রত্যাশার বিপরীতে তারা ওই তথ্য বা বিষয়গুলো যাতে জানতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমরা কতজন এমপ্লয়িং প্রতিষ্ঠান/HR আগে হতে সুন্দর করে করে রেখেছি? প্রত্যাশীদের জানার স্কোপ সত্যিই কি আমরা রাখি?
কাউকে একটা নির্দিষ্ট জুতো পরবার আগে আমরা নিজেরা কি একবার ট্রায়াল দিয়ে দেখি, যে, ওটা সত্যিই পরবার যোগ্য কিনা? নিজেদেরকে অন্য ভূমিকায় রেখে কি কখনো আমরা ভেবে দেখি, যে, আমরা যা চাইছি, সেটা আমার বিপরীতে বসা মানুষগুলোর জন্য কেমন হয়ে দেখা দিচ্ছে? ভাল কথা, কখনো কি আমরা এইচ.আরের লোকেরা নিজেদের লঞ্চ করা সিস্টেম ও মেকানিজমগুলোতে নিজেরা একবার একদম বাইরের অর্ডিনারী মানুষ হয়ে লগ ইন করে, ট্রাই করে দেখেছি, যে, সেটা সত্যিই কতটা হিউম্যান ফ্রেন্ডলী? সত্যিই কতটা যৌক্তিক ও ম্যনেজিবল?
INTERVIEW কোনো INTERROGATION নয়।
ইন্টারভিউ (ভাইবা)কে ইনটারোগেশনে রুপান্তর করবেন না। ভাল ইন্টারভিউ না দিলে যেমন চাকরি পাব না; তেমনি ভাল ইন্টারভিউ না নিলে ভাল লোক পাব না। ভাল ইন্টারভিউ না দেবার, তথা ভাল ইন্টারভিউই না পাবার প্রচুর পোস্টতো আমরা দেখি। ভাল ইন্টারভিউয়ার না পাবার, তথা ভাল ইন্টারভিউ না পাবার পোস্ট কি আমরা খুব দেখি? দেখি না মানে কিন্তু এই নয়, যে জিনিসটা নেই। দেখি না, কারন, চাকরিপ্রত্যাশীদের সাহস হবে না, প্রকাশ্যে তার ইন্টারভিউয়ারদের নিয়ে লেখার, আর লিখে মার্কেটে তার বাদবাকি সম্ভাব্য এমপ্লয়ারকে চটানোর।
ভাল ইন্টারভিউ নেয়ার ওপর রীতিমতো একটা বই লেখা যাবে।
ভাল ইন্টারভিউয়ের জন্য সেট প্রশ্ন থাকা দরকার। ইন্টারভিউ (ভাইবা) বোর্ডে একেকজন ইন্টারভিউয়ার নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে প্রশ্ন করেন। কোন প্রশ্ন দরকার আছে, কোনটা নেই, কোনটা করা যায়, কোনটা অনুচিত-তার কোনো কোচিং নেই। সবই ইন্টারভিউয়ারের মর্জি। অভিজ্ঞ ও বড় পদাধিকারী-মানেই তিনি ডিফল্ট ইন্টারভিউয়ার ও তুখোড়-এই হল আমাদের ভাবনা।
আমি তো মনে করি, কীভাবে, কীসের ভিত্তিতে জাজমেন্ট হবে তাও ইন্টারভিউয়ারকে সময় নিয়ে আগে শেখাতে হবে।
আপনার ইন্টারভিউ ফাইন্ডিংস, অবজারভেশন ও পারসেপশন সামারি আকারে আপনার ক্যানডিডেটকে ব্রিফ করবার প্রাকটিস আপনার হায়ারিং সাকসেস বৃদ্ধি করবে।
এমনকি, এতে করে আপনার জাজমেন্টে যদি কোনো ভুল থাকে বা গ্যাপ থাকে, সেটা যেমন ক্রস চেক করা যাচ্ছে, তেমনি ভুল সংশোধন করা যাচ্ছে। মানুষকে জাজ করা চাট্টিখানি কথা না। বিষয়টা এত সহজ না। আধাঘন্টার একটি আলোচনা হতে একজন স্ট্রাটেজিস্ট, একজন পলিসি মেকার, ডিরেকশন মেকারের কাবেলিয়াত মেপে ফেলা খুবই দূরহ। তাই, যদি আপনার মূল্যায়ন শেয়ার করেন, বোর্ডেই, তাহলে যদি কোথাও ভুল বোঝাবুঝি বা গ্যাপ অব জাজমেন্ট হয়, সেটাও পুষিয়ে বা সংশোধন করে নেয়ার সুযোগ থাকে।
সবচেয়ে বড় কথা হল, প্রতিষ্ঠানের হায়ারিং সিস্টেম (আসলে এইচ.আরের সবকিছুই) অসংখ্যবার চেক-ব্যাক, ব্যাকফোর্থ, ফিডব্যাক-রিভাইজ-এসবের ভেতর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এইচ.আর কোনো ল্যাবোরেটরি সায়েন্স না। এটা একটা প্রাকটিসিং আর্ট। ঠেকে, করে, ভুল করে, রি-এ্যসেস করে করে একটা পারফেক্ট এইচ.আর সিস্টেম ও কালচার গড়ে ওঠে।
ইন্টারভিউ ফেল করাতে নয়, পাশ করাতে বসুন। তাতেই আপনার লাভ।
ইন্টারভিউয়ার হিসেবে নিজেকে লর্ড নয়, জজ নয়, বরং বিপরীতের প্রার্থীকে লর্ড ভাবুন। সে জবের জন্য ঠেকা নয়, বরং আপনি তার সার্ভিস, ট্যালেন্ট পাবার জন্য ঠেকা-এমন মানসিকতা নিয়ে বসুন। আপনারই লাভ হবে।
যোগ্যতা, নিয়োগযোগ্যতা, যোগ্যতার মূল্যায়ন, ট্যালেন্ট ইভ্যালুয়েশন, বেস্ট হায়ার-এই নিয়ে আমাদের প্রচলিত ধ্যানধারনা, কনসেপ্ট, থটস এবং চেনা জগতটা আসলে একটা মিথ মাত্র।
অনেক আগে দীর্ঘ একটি প্রবন্ধে আমি বলেছিলাম, যে, এক কোম্পানীতে ডাহা ফেল ক্যনডিডেট তার চেয়েও ভাল পজিশনে ভাল কোম্পানীতে ছক্কা পেটানোর অভিজ্ঞতা আমার আছে।
তো, এই যে, ক্যানডিডেটদেরকে রেজুমে স্ক্রিনিং হতে শুরু করে অনবোর্ডিং তক দীর্ঘ একটা পথ আমরা রাউট করাই, তাদেরকে আঁতশ কাঁচের নিচে রেখে হাজার রকমের পরীক্ষা ও নিরীক্ষা আমরা করে অতঃপর ১০০ তে ৯৯ জনকে ‘অযোগ্য’ বলে বাতিল করে দিই, আর ১ জনকে ‘সুপারম্যান’ বা ‘সুপারফিট’ ঘোষনা করে তাকে মাল্যদান করি, মানে অনবোর্ড করি সহাস্যে ও তৃপ্তির সাথে, মনে করি, তিনি সবদিক হতে যোগ্য লোক হলেন।
কথা হল, এই প্রক্রিয়াটা ছাড়া আমাদের হয়তো বিকল্প নেই। তবে এটাও সত্যি, যে, যোগ্যতা ও অযোগ্যতার এই পথপরিক্রমাটাই একটা গোটা মিথ।
কেন বলছি সে কথা? দুটো উদাহরন মনে করুন।
১. বাংলাদেশ ব্যাংকে এক ভদ্রলোকের জব হয়েছিল। সব প্রক্রিয়া মেনে যেহেতু তিনি নিয়োজিত হয়েছিলেন, তার মানে তিনি যোগ্য। কিন্তু, ১২ বছর পরে জানা গেল, যিনি যোগ্য প্রতিপন্ন হয়েছিলেন, তিনি কাজে যোগ দেন নাই ওই সময়। তার স্থলে দিব্যি জব করে গেছেন আরেকজন। আরেকজন, যিনি যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে ’যোগ্য’ হিসেবে সনদ পাননি, অথচ তিনি দিব্যি অফিসের সব কাজ করে গেছেন। কোথাও আটকান নাই।
২. আরেকজন। বাংলাদেশের মানুষ হয়ে এখানকার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিয়োগ অযোগ্য’ প্রতিপন্ন হয়ে বৃটেন গিয়ে সেখানকার অক্সফোর্ডে জব পেলেন। কিছু বছর সেই জব করার পরে বাংলাদেশের শীর্ষ আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ পরীক্ষায় পাশ করে তিনি শিক্ষকতার জব অফার পেলেন। তিনি ওখানকার জব ছেড়ে জয়েনের প্রস্তুতি নিলেন। জয়েনের কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় তার ওই জব অফার বাতিল করে দেয়। (কারন অজানা, তবে যতটা জানা গেছে, সেটা হল, ওই ব্যক্তির মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড নাকি ছিল এর একটা কারন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কোনো ব্যাখ্যা আমি দেখিনি।) যাহোক, তার কয়েকদিন বাদে আবার অক্সফোর্ড তাকে রিহায়ার করে নিল।
এই দুটো উদাহরণ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, যে, যোগ্যতা, নিয়োগযোগ্যতা, কোয়ালিটি আর জব রেডিনেসসহ, ডুয়িং জব-সব কিছু নিয়ে আমাদের প্রচলিত ধারনা, বিশ্বাস ও প্রাকটিস আসলে সত্যি নয়, মিথ মাত্র। এই ঘটনা দুটো আমাদের বলে দেয়, আমাদের হায়ারিং কালচার নিয়ে বিপুল মাত্রার চেইঞ্জ ড্রাইভ ও গবেষনার দরকার আছে। আমাদের হায়ারিং কালচার আসলে একটা স্কুলের পরীক্ষার মতো। এটাকে ঢেলে সাজানোর দরকার। প্রথম উদাহরণে দেখুন, নিয়োগযোগ্যতার মধ্যে দিয়ে না এসেও সে দিব্যি অফিসের কাজ কিন্তু ঠিকই করে গেছে। তার মানে, কাজ করবার দরকারী সক্ষমতা যাচাইয়ের যে পথ আমরা অবলম্বন করে লোক নিই-সেখানে প্রশ্ন করার আছে।
আবার, বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাকে হায়ার অযোগ্য মনে করে, তাকে অক্সফোর্ড হায়ার করার যোগ্য মনে করে। আমাদের যোগ্যতার চাহিদা নিশ্চয়ই অক্সফোর্ডের চেয়েও উঁচু না। (হ্যা, হতে পারে)। আবার, আমরা যাকে চাকরি দিয়েও বাতিল করার উপযোগী মনে করি, তাকে সেই একই বিশ্ববিদ্যালয় দায়ীত্ব নিয়ে রি-হায়ার করে, মানে, তাকে তারা একটা অ্যাসেট মনে করে রিহায়ারকে বিজনেস ভায়াবল মনে করে, অথচ, আমরা একই কাজ করতে পারি না।
আমাদের ভাবতে হবে নতুন করে। অনেক কিছু নতুন করে সাজাতে হবে। আমাদেরকে পেছনে তাকিয়ে দেখতে হবে, আমাদের তথাকথিত ট্যালেন্ট ইভ্যালুয়েশন সিস্টেম মেধাকে প্রমোট করছে, নাকি ব্যুরোক্রেসিকে। আমাদের তথাকথিত সিস্টেম কতটা ব্যুরোক্রেটিক ও কতটা ডায়নামিক; কতটা রেজাল্ট বেইজড, কতটা রিজিড ও থিমেটিক-সেটা গভীরভাবে ভাবতে হবে।
এই যে, প্রথম উদাহরনে বলেছি, যে, যোগ্যতার পরীক্ষা না দিয়েও, বা, ফেল করেও কেউ দিব্যি সেই পজিশনে ১২ বছর কাজ চালিয়ে গেছেন, সেটা আমাদেরকে একটা বড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়, যে, তাহলে চাকরি করবার জন্য, কাজ করবার জন্য কাম্য যোগ্যতা আসলে কী? আমাদের সিস্টেম কি সেই যোগ্যতা সত্যিই ফোকাস করছে? নাকি দুটো দুই মেরুতে বসে আছে?
তার আগে একটা দিক পরিষ্কার হোন।
আমাকে সারাজীবনই একটা কথা শুনতে হয়েছে, যে, আমি যে কঠোর সিস্টেম্যাটিক ও কমপিটেন্সি বেজড হায়ারিংয়ের কথা বলি ও ফলো করি, সেটি অতিরিক্ত মেথডিক এবং সেটা ছাড়াই মানুষ দিব্যি কাজ করতে পারে। ওয়েল, প্রাথমিক বিচারে সেটি সত্যি। দেখা গেছে, অ্যাসেসমেন্টে প্রার্থী পাশ করেন নাই, কিন্তু, বাস্তবে তিনি দারুন কাজের মানুষ হয়ে গেছেন। এমনকি, একবার এমনও হয়েছে, যে, এক ক্যানডিডেটকে রিজেক্ট করার ২ মাস পরে সে মেইল করেছে, “আমাকে আপনাদের এই দুই পয়সার বেতনের চাকরিতে রিজেক্ট করেছেন, অথচ, আমি আজকে সরকারী জবে জয়েন করেছি। লাগবে না আপনাদের ভূয়া জব।” আমি নিজে বেশ ক’জনকে চিনি, যারা ইন্টারভিউতে রিজেক্ট হয়েও আজকে বেশ জমিয়ে চাকরি করছেন। এই অভিজ্ঞতা দেখে অবশ্য বলা যাবে না, যে, মেথডিক ইন্টারভিউ তাহলে কেন? এ নিয়ে আমি খুব বিস্তারিত একটা লেখা আগেই লিখেছি, যে, কেন সবকিছুর পরও ভাল ইন্টারভিউ হতে হবে।
তো, যা বলছি। কেন মানুষ ইন্টারভিউ ফেইল হয়েও ভাল কর্মী বনে যায়? অন্য সব কারনে সাথে আমাদের একটি দৃষ্টিভঙ্গির গলদও দায়ী এর সাথে। সেটা হল, আমরা একজন কর্মীর কাছ থেকে ঠিক কী কী আউটপুট ও কোন গুনগত মানের আউটপুট এবং সেটির ধারাবাহিক কেমন অগ্রগতির গ্রাফ আমরা প্রত্যাশা করতে পারি বা করা উচিত-সেটি নিয়ে খোদ অ্যাসেজররাই অন্ধকারে থাকি। কার্যত, সত্যি কথা বলতে, আমাদের বিজনেস কালচার, কর্পোরেট কালচার ও এইচ.আর কালচারে এখনো কর্মীর জব ও পারফরম্যান্স ওয়েল ডিফাইনড ও ডিজাইনড এখনো বলা চলে না। ঠিক কোনটা কর্মীর পারফরম্যান্স, ঠিক কোনটা ও কতটা তার থেকে প্রত্যাশিত-সেটি খুব সংগঠিতভাবে ডিফাইনড ও ডিজাইনড বলা যাবে না। ফলে, গড়পড়তা এখনো, পারফরম্যান্স আসলে রয়ে গেছে চোখের দেখা কিছু ফ্লোটিং জাজমেন্টের ওপর।
আমরা সাধারনত কর্মীর আরলি স্টেজের প্রথম ২-৩-৪ বছরের ক্লারিক্যাল, ফিল্ড, এক্সেকিউটিং জবকেই তার চুড়ান্ত আউটপুট ধরে নিই। কিন্তু, বছর বছর সিনিয়রশিপ অর্জনের সাথে সাথে, তার যে আউটপুটের ধরন ও ওজনও বাড়তে হবে ও বাড়তি ওজনদার হতে হবে-সেটি আমরা খুব একটা বুঝি না। এমনিতে আমরা পারফরম্যান্স ও কমপিটেন্সিকেই ভালভাবে বুঝি না। ঘামে ভেজা শরীর আমাদের কাছে পারফরম্যান্সের নামান্তর। তো, কর্মীর ওই আরলি স্টেজের ক্ল্যারিক্যাল বা এক্সেকিটিভ জবের সক্ষমতা দেখে আমরা ভুলে যাই, যে, বছর বছর তিনি সিনিয়র হয়েছেন। তখন তার কাছ হতে শুধু ওটুকু প্রাপ্য না। তার কাছ হতে যত সময় যাবে, ততই ওজনদার ও গভীরতর আউটপুট কাম্য, বিশেষ করে মোর অফ ইনটেলেকচুয়াল, ইনসাইট, আইডিয়া, ক্রিয়েটিভিটি, স্ট্রাটেজিক, পলিসি, লিডারশিপ, ভিশনারি গ্রোথ দরকার তার কাজে।
শুরুর দিকে প্রপার কমপিটেন্সি যাচাইয়ের সেটা একটা বড় তাৎপর্য। কমপ্রোমাইজড হায়ার ক্ল্যারিক্যাল কাজে ভাল করতেও পারেন। তবে সিনিয়র হয়ে হায়ার স্যালারিড হলে, কিংবা ম্যানেজারিয়াল রোলে যাবার সময়ে তার স্ট্রাটেজিক আউটপুট ও ভ্যালু অ্যাডিশন ম্যাটারস মোর। তখন তিনি আর পারবেন না। কারন, ক্ল্যারিক্যাল বা ফিল্ড অপারেশন একটা স্কিলের বিষয়, যেটা প্রাকটিস, অবজারভেশন, রিপিটেশন, সুপারভিশন হতে শিখে নেয়া যায়। ধীরে বা দ্রূত। কিন্তু, লিডারশিপ ও স্ট্রাটিজিক ক্যালিবার সেভাবে আসবে না। সেটার জন্য ভেতরে জিনিয়াস থাকতেই হবে। সেখানে গিয়ে তখন তারা ডাব্বা মারেন। কিন্তু, আমাদের দেশে সিনিয়র হবার পরে কর্মীদের এই অংশের আউটপুট খুব একটা নজরে আনা হয় না, খোঁজা হয় না, মূল্যায়ন হয় না, কোম্পানী ও তার বসরা এটা দেখার জন্য খুব একটা সক্ষমও থাকেন না। ফলে, মনে হয়, তিনি ঠিকই আছেন। আসলে নেই। আপনাকে মনে রাখতে হবে, আজকে যাকে অ্যাপ্রেনিটিস হিসেবে নেয়া হল, সেই একজন ভবিষ্যত ডিরেক্টর।
সেই ভবিষ্যতরা ডেলিগেটেড অপারেশনের বাইরে একজন গ্রোয়িং লিডার হিসেবে কতটা থট লিডার হয়ে বড় হচ্ছেন, কতটা গভীরে ভাববার সক্ষমতা নিজের মধ্যে অর্জন করছেন, তার স্ট্রাটেজিক, ইনটেলেকচুয়াল কাজ করবার সক্ষমতা গ্রো করছে কিনা সময়ের সাথে, তিনি কোয়ান্টিটেটিভ ওয়ার্ক হতে কতটা কোয়ালিটেটিভ কাজ করবার দিকে ধাবিত হচ্ছেন-সেই বিচারগুলো উপেক্ষিত থেকে যায়। যে কারনেই, আমাদের কাছে প্রতিভাত হয়, যে, ডিগ্রী ছাড়া, তুখোড় ইন্টারভিউ ফেল করেও, দৃশ্যমান অযোগ্যতার মার্ক নিয়েও মানুষ দিব্যি চাকরি চালিয়ে যেতে পারে, কাজ করে যেতে পারে। আসলে, প্রত্যাশিত কাজ ও তার গুনগত মানের চাহিদাটি ভিজুয়ালাইজ করতে পারার অক্ষমতা ও অনিহাই আমাদেরকে কমপিটেন্সির প্রেক্ষাপটকে দেখতে দেয় না।
একটা গাধা যদি একাদিক্রমে বহু বছর একটা ঘোড়সওয়ার বাহিনীতে দিব্যি ঘোড়া হিসেবে চাকরি পেতে ও চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে সেই গাধার চেয়ে দোষ বেশি ঘোড়সওয়ার বাহিনীর সিলেকটর ও ক্যাপ্টেনের। গাধাকে চিনতে না পারার ব্যর্থতা, গাধাকে আটকাতে না পারার ব্যর্থতা, গাধাকে দিয়ে ঘোড়ার কাজ হবে-সেই বিবেচনাবোধ থাকার মতো গাধামোর জন্য তাদের বিচার হওয়া উচিত। ওহ, ওই ঘোড়সওয়ার বাহিনী যদি কোনো বার্ষিক কুচকাওয়াজ করে থাকে, তাহলে গোটা দেশই দায়ী। কারন, ঘোড়সওয়ার বাহিনীর মধ্যে একটা গাধাকে তারা আইডেন্টিফাই করতে পারেনি, অথবা, গাধাটাকে ওখানে দেখেও তারা প্রশ্ন করেনি, প্রতিবাদ করেনি।
”বাজারে আইজকাইল যোইগ্য লোকজন নাই।”-বলে হা ও হুতাশ করা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের ৯৩.৯৩ শতাংশ আসলে যোগ্য লোক ডিজার্ভই করেন না।-[আমি বলিনি, শ্রী মাও জে দংয়ের উক্তি।]
কারন, তারা যোগ্যতাকে সংজ্ঞায়িত করতে অক্ষম।
কারন, তারা যোগ্যতা যাচাই করতে অক্ষম।
কারন, তারা যোগ্যতার রিকগনিশন ও রিওয়ার্ড দিতে অক্ষম।
প্রিয় HR, ১৯৫৩ সালের চোখ দিয়ে মানুষকে দেখা বন্ধ করতে হবে। আপনাদের দুটো স্যাম্পল কেস বলি। এ থেকে আন্দাজ করতে পারবেন, যে, এমনকি ব্র্যান্ডেড এইচ.আরের ভেতরে তক কী হতে পারে।
ঘটনা-১:
দেশের একটি বিশাল ও ’সুনামধন্য’ প্রতিষ্ঠান। HR এর একটি জুনিয়র পজিশনের জন্য ২০-২৫ জন ক্যানডিডেটকে ব্যাপক যাচাই বাছাই শেষে, স্ক্রিনিং শেষে অন দ্য স্পট অফিসে ডেকেছে ইন্টারভিউয়ের জন্য। সবাইকে একই সাথে, একই সময়ে। সবাইকে একসাথে একটা হলঘরে বসিয়েছে। অতঃপর একজন HR অফিসার এসে একজনের রেজুমে দেখিয়ে তাকে বললেন,
”আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড তো এ্যডমিনের। আমরা এ্যডমিন হলে তার ইন্টারভিউ নেব না। আপনি চলে যান।”
ঘটনা-২:
আরেক জায়ান্ট। একজন আনপেইড ইনটার্ন। নিজের গরজে, তবে নিজের খরচে যাতায়াত ও অন্য ব্যয় মেইনটেইন করে ইন্টার্নশিপ করবেন। তাকে অনবোর্ড করবার সময় বলা হল-
”আপনার চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, নমিনির ছবি, নমিনির NID’র কপি লাগবে।” (আরও ডকুমেন্ট ছিল, সামান্য রিজনেবল মনে হওয়ায় বলছি না। ইনটার্ন কেন নমিনির ডকুমেন্ট আনবে, আর নিজের NID দেবার পরও এই যুগে কেন চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট লাগবে-কেউ ভাববার নেই।
দুটি ঘটনা সমালোচনা কিংবা ক্ষোভ থেকে লেখা নয়। বিশ্বাস করুন। আমি কখনোই একটি কাজ দিয়ে বিচার করি না। একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করি না। আমার ফোকাস হল সিস্টেমে। সিস্টেম নিয়ে বলা এবং যতটা পারা যায় মডিফাই করা।
জায়ান্ট ‘সুনামধন্য’ হবার পরও প্রান্তিক পর্যায়ে এরকম হাজারও অসঙ্গতি বাসা বাঁধতে পারে আমাদের HR এর অন্দরে।
আমরা একটু পাওয়ার হাতে পেলেই নিজেকে বাদশাহ ভাবতে শুরু করি। নিজের ব্যবস্থাটা হয়ে গেলেই নিজের সহ্য করা অসঙ্গতি নিয়ে কাজ করতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়ি। নিজের ভাল থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেলেই নিজের অধীনস্থ সিস্টেমের রুট লেভেলের দিকে আন্তরিক ও সতর্ক নজর রাখতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়ি। তার জন্যই এসব ঘটে।
একটু নজর দিন। আপনার HR হয়তো খুবই ব্র্যান্ডেড। আপনি নিজেও হয়তো পেশাজীবি জগতে একজন স্টার। তবে আপনার, আমার ঘরের মধ্যেও থাকতে পারে মধ্যযুগীয় ব্যবস্থাপনা। খলিফা হারুনুর রশীদের মতো একটু ছদ্মবেশে ঘুরতে হবে। ভেতরের, প্রান্তের সত্যিকার খবর জানতে হবে। আমার HR এর সকল ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল কাস্টমারদের ফিডব্যাক প্রচুর নিতে হবে।
নিজের পেশাটাকে সিরিয়াসলি ওউন এবং দারুন বেতনটাকে হালাল করতে হবে।
সেম ফর মি, আস এ্যন্ড আওয়ারস।
এই যে, আপনি মাস্টার্সকে আপনার প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাবার ন্যুনতম যোগ্যতা হিসেবে ধরে মানুষ খুঁজছেন, বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, শর্ট লিস্টিং করছেন, সেটি কি ঠিক করছেন? ঠিক কী যুক্তিতে পোস্ট-গ্রাজুয়েশন ন্যুনতম এমপ্লয়েবিলিটি ফ্যক্টর হবে? যেখানে মাস্টার্সের মূল থিম ও কনটেক্সটিই ভিন্ন। সারা পৃথিবীতে মাস্টার্স হল গ্রাজুয়েশনের বর্ধিত পড়াশোনা, যা মূলত একাডেমিশিয়ান, গবেষক বা ওই ধরনের কাজের জন্য করা/করানো হয়। গ্রাজুয়েশনে যা পড়ানো হয়, সেটারই অনেকটা রিপিটেশন হয় ওখানে। অলরেডি আমাদের দেশেও গণহারে গ্রাজুয়েশনের পরে মাস্টার্স ডিগ্রী দেবার ও নেবার মড়ককে নিরুৎসাহিত করছেন বিজ্ঞরা। উন্নত বিশ্বে শিক্ষার্থীরাই সচেতন হয়ে সেটা করেন না। মাস্টার্স করেন তখনই, যখন সেটার স্পেশাল নিড দেখা দেয়।
অফিস আদালতে কলম পেষার জন্য মাস্টার্স করানোই হয় না। সেখানে ক্ল্যারিক্যাল বা ডেস্ক জবে কেন মাস্টার্স না হয়ে গ্রাজুয়েশন এনাফ হবে না? সবচেয়ে বড় কথা, একটা বিশাল সংখ্যক জবে এবং সেই জবের স্কিল রিকয়ারমেন্টে গ্রাজুয়েশনেরও কোনো ভূমিকা নেই। দরকারও নেই। সেখানে মাস্টার্স। সত্যি বলতে, বেসরকারি চাকরির সিংহভাগেই যে কমপিটেন্সি বেঞ্চমার্ক, সেখানে একাডেমিক ডিগ্রীর স্টেক খুবই কম। বেশিরভাগই এপ্লাইড স্কিল, হার্ড স্কিল ও ইউনিভার্সাল সফট স্কিলের দরকার। আমি যদি পারতাম, গ্রাজুয়েশনের লেভেলও তুলে দিতাম। তবে যেহেতু সবটা আমার একার হাতে না, তাই এখনো ওটা রাখি।
আরেকদিকে, এই যে, আমরা ২০ হাজার, ২৫ হাজার টাকা বেতনের জুনিয়র পজিশনের জবের জন্য ন্যুনতম ১টি ‘C’ তথা সার্টিফায়েড……………. নর্মস চেয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছি, সেটা কী হিসেব করে দিচ্ছি? ‘C’ কাদের করবার কথা? দুধের বাচ্চাদের? আর, যে ’সার্টিফিকেট’ নিতে ১.৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়, একজন মানুষ সেই ১.৫ লাখ টাকা খরচ করে আপনার ২৫ হাজার টাকার জবের জন্য কোয়ালিফাই করবেন?
বুগিনা। সত্যি বুগিনা। আপনারা কী চান?
এই যে, আপনি ১০ পাতার (তথাকথিত JDসহ) জব এ্যডভারটাইজমেন্ট দিতে পারছেন, প্রার্থীকে এই হতে হবে, ওই হতে হবে, এই করতে হবে, ওই করতে হবে, এভাবে নাচতে হবে, ওভাবে গাইতে পারতে হবে, ডিম পাড়তে হবে, আকাশে উড়তে হবে, ২ লাখ টাকার সনদ থাকতে হবে-এত এত এত চাহিদা সব মেনশন করতে পারছেন; অথচ
তাকে কত বেতন দেবেন-সেই সামান্য সংখ্যাটা মেনশন করতে পারছেন না। (নানা কারনে, মানছি)। এই না পারাটা কেন? সবসময় না হয় পারা যায় না, তাই বলে, কখনোই মেনশন করবেন না কেন? মানে, মেনশন না করবার নীতি কেন?
তার মধ্যে আবার আছে ”এ রেপুটেড রিনাউনড কংলোমারেট মুল্টিন্যশনাল” ইজ লুকিং ফর অমূক-টাইপের বেনামা, ভূতের বাড়ির বিজ্ঞাপন। কেন রে ভাই? আপনার কোম্পানীর নামটা প্রকাশ্যে বলতে পারেন না-আপনি কেমন কংলোমারেট?
মানছি, ভেতরে কাউকে রিপ্লেস করবেন, তাকে জানতে দিতে চান না। হয়তো প্রকাশ্যে নাম বললে লবিংয়ে নিতে বাধ্য হন। কিন্তু, সেটা কি আজীবন? সবসময়? আপনার ১টা কাজ দিয়ে বিচার করব না। সব মিলিয়েেই আমরা। কিন্তু, বিষয়টা একটা একক কাজ না হয়ে যদি দেখি আপনার খাসলতই এমন, তাহলে কী ভাবব? নিজের নামটা জোর গলায় বলতেও অক্ষমতা? এ্যপ্লিক্যন্টরা কি তবে ভূতের বাড়ির জন্য এপ্লাই করবে?
সবচেয়ে হাস্যকর হল, জব লোকেশনে লেখা ’এনিহোয়্যার ইন বাংলাদেশ’। এর মানে কী? তিনি জব পেলে তাকে ভুরুঙ্গামারীতেও অফিস করতে হতে পারে? সেই প্রস্তুতি নিয়ে তিনি সময় খরচ করে এপ্লাই করবেন? আর, তারপর প্রত্যেকবার ৫/৬ ঘন্টা খরচ করে ৩ বার ইন্টারভিউ দেবেন? তারপর শুনবেন, তার জব লোকেশন তালতলি দ্বীপ?
আমাদের নিয়োগকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজের জন্ম, স্থিতি, বিকাশ ও উৎকর্ষের স্বার্থেই গতানুগতিক ভাবনা ও নিয়ম হতে বের হতে হবে, নন-অর্থডক্স হতে হবে, ডায়নামিজম আনতে হবে তাদের ভাবনা, বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি, অপারেশনাল কালচার, পিপল কালচার, বিজনেস কালচার ও স্টাইলে।
বিশেষ করে তাদের ট্যালেন্ট এ্যকুইজিশন ও ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট কালচারে। এখানে তাদের গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে একটু নন-অর্থডক্স না হলে তারা ট্যালেন্ট পাবেন না। জব মার্কেট ও ট্যালেন্ট মার্কেটের দৌড়ে তারা পেছনে পড়বেনই।
কেন বলছি?
কারন, প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বৈচিত্রপূর্ণ, জটিল ও ডায়নামিক রিসোর্স হল তার ওয়ার্কফোর্স বা Human Resource । তাই তার ম্যানেজমেন্ট এর জন্য তাদের ও তাদের HR বিভাগের ওভারঅল ডায়নামিজম এপ্লাই করার বিকল্প নেই।
তাদেরকে গতানুগতিকভাবে পিপলকে দেখা, মূল্যায়ন করা, বাছাই করার সংস্কৃতি হতে বের হতে হবে।
তাদের সাথে, মানে পিপলের সাথে ডিলিংয়ের ক্ষেত্রে তাদের স্মার্ট ও মডার্ন হতে হবে। HR কে নিজেকে প্রভূ নয়, নিয়ন্ত্রক নয়, প্রতিষ্ঠানে HR এর ভূমিকা হতে হয় Facilitator ফ্যাসিলিটেটর এর। সে সবকিছু নিজে করবে না, নিজের হাতে রাখবে না। বরং সবগুলো টিমকে কাজটি ভাগ করে দেবে। একজন বিদগ্ধ ভদ্রমহিলা Amanda Hudson বলেছেন, The best HR people create managers, systems, and organizations that don’t need them. অর্থাৎ, এইচ.আর গেমটা প্রোগ্রাম করে দিয়ে, চালু করে দিয়ে টিম পিপল ও টিম লিডারদের এমনভাবে ক্যাপাসিটেট ও এমপাওয়ারড করে ছেড়ে দেবে, যাতে শো টা তারাই রান করে। এইচ.আরকে দরকারই না পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এইচ.আর নিজের হাতে ব্যাটনটা রাখতে চায়, এ কারনেই এইচ.আর ফেইল করে। HR বিভাগ ও HR কর্মীরা নিজেকে যতদিন ‘প্রশাসক’ মনে করবেন, ততদিন তাদের টিমের সত্যিকার লক্ষ্য অর্জিত হবার কোনো আশা নেই। মিরাকল হলে ভিন্ন কথা।
প্রতিষ্ঠানে HR এর ভূমিকা প্রশাসকের নয়। অমোঘ, অচ্ছ্যুৎ, অসূর্যস্পর্শা হয়ে, ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে কোনো জলদগম্ভীর প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া তার কাঙ্খিত এ্যভাটার নয়।
প্রতিষ্ঠান ও তার বিজনেস অপারেশন যদি হয় কোনো শিল্প, HRকে হতে হবে সেই শিল্পী ও কারিগরদের মায়েস্ত্রো। HR কোনো ’অথরিটি’ নয়, বরং ফ্যাসিলিটেটর, কোর্ডিনেটর, মডারেটর, মেডিয়েটর হতে হবে।
কর্মীদের ‘ওয়াচম্যান’ নয়, ‘ফ্রেন্ড’ হবে, ‘মন্ত্রণাদাতা’ হবে, ‘কাউন্সেলর’ হবে।
যেকোনো বিচারে HR যত ভুল ডিরেকশনে যেতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম মারাত্মক হল IR ও ER কে অবজ্ঞা করা। অন্যসব কাজে অল্প-বিস্তর বিকাশ ঘটলেও সম্পর্ক ও ভরসা বিনির্মানে আমাদের HR এর ড্রাইভ অতি যৎসামান্য। ইনভেস্টমেন্টও কম। ৫ হাজার লোকের জন্য ১০ জন HR এই ড্রাইভের জন্য কিছুই না। যদিও সংখ্যার বিচারে না গিয়ে HR এরও উচিত ছিল মিডল ম্যানেজমেন্টকে HR কাউন্সেলর হিসেবে ট্রান্সফরম করা। সেটাও করার সদিচ্ছা কম। সব নিজের হাতে রাখতে হবে যে।
ফলত, কর্মীরা HR কে তাই এখনো এ্যডমীন হিসেবেই দেখে। অথরিটি হিসেবেই দেখে।
“ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয়না”- যতদিন পর্যন্ত এমপ্লয়িং প্রতিষ্ঠান বা তার HR এর এমন এ্যটিচুড বহাল থাকবে, ততদিন তক সেই প্রতিষ্ঠানকে কাক নিয়েই চলতে হবে, কোকিল আর তার পাওয়া হবে না।
আর ততদিন তাদেরকে আম্মাজান এ্যন্ড কোং হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে, এ্যমাজন আর হওয়া হবে না।
ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্টের বোদ্ধারা একটা কথা বলেন, যে, জিনিয়াস কর্মীরা কখনো ডিসিপ্লিনড হবে না। তাদেরকে কখনো নিয়ম ও কানুনের বেড়াজালে আটকানো যাবে না। আটকাতে গেলে তাদের জিনিয়াস কখনো স্ফূরিত হবে না। অর্থাৎ, জিনিয়াস কর্মীর সেবা বা ভ্যালু এ্যডিশন চাইলে তাকে বা তাদেরকে সামান্য আশকারা, সামান্য আহ্লাদ, সামান্য ওয়াকওভার দিতেই হবে।
জিনিয়াসরা শেন ওয়ার্নের মতো, সাকিব আল হাসানের মতো, ক্রিস গেইলের মতো, ব্রায়ান লারার মতো, স্টিভ জবসের মতো, এলন মাস্কের মতো, নজরুলের মতো হবেন। ঘাড় ত্যাড়া, বেয়াদব, বাঁধনহারা, বাউন্ডুলে, ছন্নছাড়া। তাদেরকে চাইলে তাদের মতোই চলতে দিতে হবে। নদীকে যেমন বাঁধা যায় না, জিনিয়াসকেও না।
জিনিয়াসকে আপনি দশটা-পাঁচটা অফিস, ড্রেসকোড, এ্যটেনড্যন্স পাঞ্চ, আচড়ানো চুল, বিনয়াবনত জেশচার-এই অবতারে পাবেন না। আর জোর করে পেতে গেলে তার জিনিয়াসের সন্ধান পাবেন না। তাকে মাটি করবেন বরং।
ব্যুরোক্র্যাসি ও রেড টেপ নামে দুটো বিষয়ের সাথে আমরা কম-বেশি পরিচীত। তার সাথে রয়েছে নিয়মতান্ত্রীকতার যোগ।
যেকোনো অফিসে, কাজে, প্রক্রিয়ায় নিয়ম ও কানুন থাকবেই। সেটা মেনে চলাটা ইন জেনারেল প্রত্যাশিতও।
তবে, একই সময়ে, মনে রাখা ভাল, যে, আধুনিক অফিসগুলোতে, প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত নিয়ম, প্রথা, প্রসেস, কানুনের চাপাচাপি আর ওয়েলকাম করা হয় না। বরং, অফিসগুলো এখন লিবারেলিজম, ফ্লেক্সিবিলিটি, পারমিসিভনেস এপ্লাই করে। নিয়মের শৃঙ্খলে বেঁধে মানুষের হতে প্রোডাকটিভিটি আদায় এখন অতীত। বরং, মানুষকে যতটা সম্ভব সহায়ক পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরী করে দিয়ে কাজ আদায় করে নেয়া এখনকার স্টাইল।
আমরা ব্যুরোক্র্যাসী ও লাল ফিতার নিয়মতান্ত্রীকতাকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রেখে, ন্যুনতম রেখে আরও খোলামেলা, স্বচ্ছ, সহজ, ইনটারেকটিভ ওয়ার্ক কালচারে অভ্যস্ত হই। নিয়ম ও আনুষ্ঠানিকতার বেড়াজালে আমাদের ইফিশিয়েন্সী ও প্রোডাকটিভিটি ডাউন না হয়-সেদিকে লক্ষ্য রাখি।
গুরুলোক জেমসকে আপনার পছন্দ বা অপছন্দ-দুইই হতে পারে। কিন্তু, তার আজকের একটা ছবি দেখে এই কথাগুলো মনে এলো আর সাথে সাথে লিখে ফেললাম।
জেমসের মতো জিনিয়াসরা আপনার আমার চিরাচরিত প্রোটোকলের মধ্যে নিজেকে বাঁধবেন না। বাঁধতে গেলে তাদের গলা ও গিটার হতে “আমার সোনার বাংলা” পয়দা হবে না। মনে রাখবেন, শৃঙ্খলিত প্রমিথিউস হতেও পারে, কিন্তু, শৃঙ্খলিত জিনিয়াস প্রমিথিউস হবে না।
HR,
you have to be non-orthodox,
you have to be non-conventional,
you have to be dynamic,
you have to be smart,
you have to change your feudal attitude.
ট্যালেন্টেড এইচ.আর এবং ট্যালেন্টদের এইচ.আর:
আমার কথাকে খুব বিতর্কিত, পক্ষপাতদুষ্ট, বর্ণবাদী ও অতিকল্পিত মনে হতে পারে। সহ্য বা হজম না হলে ক্ষ্যামা দিন, পড়বেন না প্লিজ।
বলতে চাচ্ছিলাম, প্রতি বছর বাংলাদেশের সব ধরনের, সব পর্যায়ের, সব মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (আসলে সার্টিফিকেট প্রোভাইডিং প্রতিষ্ঠান) হতে যেই শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হন, মানে, পেশায় যোগ দেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে ট্যালেন্ট মার্কেট ও এমপ্লয়মেন্ট মার্কেটে যোগ দেন, তাদের একটি শ্রেনীবিন্যাস করবার কথা কি কখনো ভেবেছেন?
সম্প্রতি ও অতীত মিলিয়ে যা দেখেছি, তাতে, বাংলাদেশের বেকারের সংখ্যা নিয়ে ৩টি খবর খুব জনপ্রিয়-
দেশে বেকার *২৬ লাখ,
দেশে বেকার *৮ লাখ,
দেশে বেকার *৪ কোটি ৮০ লাখ।
সঠিক, সত্য ও উপযুক্ত ডাটা ও তথ্য পাবার সফলতা যেখানে প্রায় শুন্য, সেখানে সংখ্যাটাকে যা মনে চায় ধরে নিন। কারন, এই লেখায় সংখ্যা খুব বড় বিষয় নয়।
সত্যি যেটাই হোক, বা, সংজ্ঞা যা-ই হোক, বেকার তো আছে, বেকার তো বাড়ছে।
এখন, যারা বেকার না থেকে কোনো না কোনো পেশায় বা ক্যরিয়ারে ঢুকে যাচ্ছেন, তাদেরসহ, (আপাতত) বেকার থেকে যাওয়া জনগোষ্ঠীর একটি বিশেষ ধরণের শ্রেণীবিন্যাস যদি করতে যাই, তাহলে কী দেখব? বিন্যাসটি কর্মসংস্থান বাছাইয়ের ওপর ভিত্তি করে করতে চাই। (যদিও নিজ পছন্দে ও ইচ্ছায় কর্ম ও কর্মস্থল বাছাই করতে পাবার সুযোগ উন্নত ওরফে উন্নয়নশীল ওরফে দরিদ্র একটি দেশে আকাশ কুসুম।
তবুও পছন্দ ও প্রায়োরিটির একটি অলিখিত ও অঘোষিত রেখা আছে। সেটা কেমন?
ধরে নিচ্ছি, প্রতি বছর দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্রাজুয়েট তৈরী হন মোট ৯ লক্ষ। মানে, কর্মসংস্থানের বাজারে নতুন ৯ লাখ উমেদার। নতুন ৯ লাখ প্রতিযোগী। দেশে প্রতি বছর নতুন তৈরী হওয়া কর্মসংস্থান কত-তার হিসেবে শুধুমাত্র ফেরেশতা মিকাঈল (আ.) এর বালামে আছে। তাই ও পথে হাঁটলাম না। তবে সংখ্যাটা যে ৯ লাখের কম-সেটা চোখ বুজে বলা যায়।
তো, যারা পেশায় ঢুকতে পারছেন, যারা চেস্টা করে যাচ্ছেন, যারা ব্যর্থ হচ্ছেন, তাদের সবার লক্ষ্য, পছন্দ, বাছাই, বিকল্প-এগুলোকে যদি আমলে নিই, তাহলে, আমি যদি বলি, সেখানে নিচের ট্রেন্ডটি দেখতে পাব-সেটা কি খুব বেশি গালগল্প, বা, কল্পনাপ্রসূত, বা বর্ণবাদমূলক হয়ে যাবে? মাইন্ড না খেলে অথবা, নবনির্মিত সাইবার আইনে মামলা খাবার বিষয়ে অভয় দিলে বলি?
টাইপ-১: পাস করা, বা বিদ্যমান প্রতিযোগীদের সবথেকে টপ, চৌকষ, চালাক ও ক্রিম অংশটি (মানে মেধায় বা যোগ্যতায়) বিদেশ চলে যান, বা যাবার চেষ্টা করেন, বা আসলে সত্যি বললে ’পালাবার’ স্বপ্ন দেখেন।
টাইপ-২: টাইপ-১ এর ব্যর্থরা, কিংবা, মেধায় এর পরের লেয়ারে যারা, তারা চেষ্টা করেন, বি.চি.এচ অথবা যেকোনো রাজকীয় চাকরিতে ঢুকতে।
টাইপ-৩: ওপরের দুই ধাপের ড্রপ আউট যারা-তারাসহ বাকিদের নিয়ে ভাবলে দেখব, এরপর তারা চেষ্টা করেন বেসরকারীতে, প্রধানত মাল্টিন্যাশনাল, সুপার ব্র্যান্ডেড ভাল ভাল বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে। সেটি কোন সেক্টর বা টাইপ বা ক্যাটেগরি অব জব-সেটা বিষয় না। (হ্যা, সেই চয়েজে HR এর স্থান খুব বিরল।)
টাইপ-৪: এর পরের স্তরে চয়েজে থাকে দেশীয় কিন্তু মোটামুটি নামকরা ও বড় বড় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়া।
টাইপ-৫: তার পরে যারা রয়ে যান, তারা ওই সবগুলোতে ফেইজ আউট হয়ে থাকলে চেষ্টা করেন, দেশীয় নানারকম ও সর্বরকম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে (কেতাবী নাম প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী), যে কোনো রকম জবে ঢুকতে। এই লেয়ারে এসে চয়েজ, স্বপ্ন ও লক্ষ্য জিনিসটা পুরোপুরি মরে না গেলেও, সে অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। তবুও আশার বাতি টিমটিম জ্বলে।
টাইপ-৬: ওপরের ৫টি স্তরে যাদের কপাল খোলেনি, সেই *অভাগারা ও মেধার চালুনিতে সবথেকে ওঁচাবৃন্দ তখন দেশীয়, স্থানীয় ’পারসোনাল লিমিটেড কোম্পানী’তে জব পেতে যুদ্ধ শুরু করেন। সেখানে কোম্পানী কেমন, যে বিভাগে ঢুকবেন-তার ভবিষ্যত কী, কেমন বেতন, স্ট্যাটাস সিম্বল কেমন-কিছুই মুখ্য বা এমনকি বিবেচ্য না। শুধু চাকরিটা পেয়ে গেছি বেলা শুনছ?
তো, চালুনির একদম নিচের এই স্তরে কারা বিরাজ করেন, আর তাদেরকে বরণ করে নেন কারা-উভয়ের গুনগত মান ও স্থান বুঝে নিন।
এসবেরই কানাগলিতে কেউ কেউ অবশ্য ব্যবসা ও রাজনীতি নামের দুটো ঐশ্বরিক পেশায় নিযুক্ত হয়ে যান। তাদের হিসেব ভিন্ন। আর পছন্দ ও রুচির এই ৬টি ধাপের কোনটাতে আমাদের তথাকথিত ‘বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা আনয়নকারী সেক্টর’ বিরাজমান-সেটি গবেষনার বিষয়।
তো, আমি ভাবছিলাম, টাইপ-৫ ও ৬ এর প্রতিষ্ঠান বা সেক্টর বা ইন্ডাস্ট্রি বা ট্রেড নিয়ে।
এই লেয়ারে যেসব প্রতিষ্ঠান নিয়োগদাতা বা কোম্পানী হিসেবে জব মার্কেটে বিলং করেন, তাদের এইচ.আর বিভাগের ফ্রাস্ট্রেশন, স্ট্রাগল, চ্যালেঞ্জ ও নাকানিচুবানি নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছেন?
Jonathan Swift এর গালিভার’স ট্রাভেলস গল্পটি কখনো পড়া হয়েছে?
মনে করুন, আপনি লিলিপুট কিংবা বেলেফুসকো রাজ্যের হেড অব ট্যালেন্ট অ্যাকুইজিশন ও চিফ হেড হান্টার নিযুক্ত হলেন।
আপনাকে দায়ীত্ব দেয়া হল, ট্যালেন্ট বাজার হতে সবচেয়ে দীর্ঘদেহী মানুষদের বেছে বেছে লিলিপুশিয়ান আর্মির সৈন্য হিসেবে নিয়োগ করার।
আপনি আদেশমতো, নীতি মোতাবেক, আপনার সর্বোচ্চটা দিয়ে লিলিপুশিয়ান ট্যালেন্ট ও জব মার্কেট হতে তাদের সবচেয়ে দীর্ঘকায়দের নিয়োগ করলেন। আপনি খুশি, চাকরিপ্রার্থীরা খুশি, আপনার এমপ্লয়ার খুশি।
বাট স্টিল, তারা কি ক্ষুদ্রকায় বা বামন নন? তারা হয়তো ওই কনটেক্সটের সবচেয়ে সেরা, কিন্তু, হলিস্টিক ও ম্যাক্রো কনটেক্সটে তারা অতি খর্বকায়।
এবার কনটেক্সটাকে বৃহৎ আঙ্গিকে আমাদের কর্পোরেটে নিয়ে আসুন। আপনার বাছাই করা সেরা মানুষটি হতে পারেন বাজারের গড়পড়তা কেউ। অবাক হচ্ছেন? হোন। এইচ.আরে চাকরি করলে প্রচুর অবাক ও হতবাক হতেই থাকবেন।
চাকরি প্রার্থীদের গুনাগুন ও যোগ্যতা নিয়ে গ্রীভ্যান্সের পাশাপাশি সময় হয়েছে বাজারের বাস্তবতা ও যোগানের গুনগত মান নিয়েও একইসাথে কথা বলার। সেটাকে বিবেচনায় নেবার।
আপনি যদি এমন একটা জব ও ট্যালেন্ট মার্কেটে অপারেট করেন, যেখানে সাপ্লাই হল লো-ক্যালিবারের প্রোডাক্ট, আপনার পক্ষে কাঙ্খিত ট্যালেন্ট যোগান দেয়া সম্ভব না। খেয়াল করুন, আবারও বলছি, আপনি বাজারের সেরাটা কিনতে পারেন, কিন্তু, সেই সেরাটা আপ টু মার্ক হবেই-সেই গ্যারান্টি ডিফল্ট না।
সেরা আর পারফেক্ট-এক না। মনে করুন, এই বছর আমাদের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেল ‘জরিমন বিবির কিচ্ছা’ নামের একটা চলচ্চিত্র, যেটাতে অভিনয় করেছেন মি. সাবেক খান আর মিজ বাবলি। পরিচালনায় মি. তলোয়ার শাহান মন্টূ।
এবার আপনি এই দেশসেরা ও বছর সেরা জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমাটিকে মুঘলই আযম, কিংবা রোমান হলিডে লাগবে না, স্রেফ জীবন হতে নেয়া সিনেমার সাথে তুলনা করুন। গুনগত মান, দর্শকপ্রিয়তা, গভীরতায় দুটোর তফাৎ দেখুন। আপনার তখন মনে হবে, আরেহ, এটা আন্তর্জাতিক বিচারে তো দূর, দেশের গড়পড়তা ইতিহাসেই তো পেছনে পড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু, কিছু কি করারও আছে? রিসোর্স, ব্যাকগ্রাউন্ড ও মার্কেট অ্যাকসেস যতটা, ফাইনাল প্রোডাক্ট তো তার মধ্যে হতেই সৃষ্টি হবে, তাই না?
তাই বলছি, রিয়েলিটি নিয়ে কথা বলতে হবে। শুধু এককভাবে প্রার্থীদের দোষ দিলে ভুল হবে। সেরা হায়ার করে বগল বাজালে ভুল হবে। ঠ্যাকা উদ্ধার নামে একটা জিনিস আছে-সেটা ভুলে গেলে ভুল হবে। মন্দের ভাল বলে কিছু ছিল-মনে রাখতে হবে। বাজারের ওভারঅল সিচুয়েশন ও সাপ্লাই চ্যানেল নিয়ে কথা বলতে হবে। শীতকালে বাজারে ফজলি আম পাওয়া না গেলে আপনার সাপ্লায়ার আম কোথায় পাবেন?
কর্মী ও উড বি কর্মীদের যোগ্যতা নিয়ে তিনটি স্থির সিদ্ধান্ত এমপ্লয়ারকে আগাম ঠিক করে রাখতে হবে-ক. তাদের বিজনেসের জন্য কর্মীদের রিকয়ার্ড কমপিটেন্সির ডিটেলটা কী। খ. তাদের বিদ্যমান কর্মীদের এই চাহিদার বিপরীতে এক্সিসটিং স্ট্যাটাস কী। গ. ট্যালেন্ট বাজারে এই কাম্য কমপিটেন্সির বিপরীতে অ্যাভেলেবল সাপ্লাই কী।
আজকাল এমপ্লয়ারদের একটি বড় সংখ্যককেই দেখা যায়, তারা তাদের চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে মেনশন করছেন, ”আমরা DEIB প্রমোট করি এবং এই এক্সপোজার আছে, এমন ক্যনডিডেট প্রেফার করছি।”
কিন্তু, বাস্তবতা হল, বাংলাদেশের মার্কেটে DEIB অ্যাপ্রোচের ক্যনডিডেট রেয়ার। বাঙালিরা এমনিতেই জাতিগতভাবে বৈচিত্রের সমর্থক না। ভুল বুঝবেন না, তাদের মধ্যে বৈচিত্র আছে, কিন্তু, তারা এমনিতে ইন জেনারেল মানসিকতায় ডাইভারসিটির সমর্থক না। বরং, তাদের বলা চলে ইউনিফর্মিটির সমর্থক। এই বাজারে ডাইভারসিটিতে বিশ্বাসী মানুষ কম। মানে, মন হতে ডাইভারসিটিতে বিশ্বাস করে-এমন মানুষ রেয়ার। অধিকাংশ মানুষ এখানে তার আশপাশের সব মানুষকে, বিশেষ করে যাদের সে কন্ট্রোল করতে পারে, তাদের বিষয়ে, ইউনিফর্মিটি মেইনটেইন করতে চায়। মোদ্দা কথা, চাওয়া হল, সবকিছু একই রকম হোক। কোনো ভিন্নতা বাঙালিরা জাতিগতভাবে নিতে পারে না। সেখানে DEIB প্রমোটিং ক্যনডিডেট! যেখানে মার্কেট ডাইভারসিটি সাপোর্টিভ না, সেখানে ক্যানডিডেটকে যদি প্রচন্ড প্রো-ডাইভারসিটি পান, তাহলে হয় সেটা মিরাকল, না হয় সেটা অভিনয় মাত্র।
বাজার বিশ্লেষণ করুন। বাজারের রিয়েলিটি কনসিডারেশনে রেখে আপনার স্ট্রাটেজি সাজান। হ্যা, একটি খটকা তবু অমিমাংসিত রাখছি। আপনার দরকার কফি, বাজারে পাওয়া যায় শুধু চা। এখন, আমি রিয়েলিটি মেনে আপনাকে যদি বলি, চা দিয়ে কাজ চালান, সেটা খুব যুৎসুই পরামর্শ নয়।
কনসালট্যান্ট ইশতিয়াক সাহেবের একটি লেখা পড়ে এই লেখাটি কলমে আনার চিন্তা মাথায় এলেও, এই ভাবনাটা বহুদিন হতেই আমি আমার কাছের মানুষদের বলে আসছি। ইশতিয়াক সাহেবের মূল লেখাটি পাবেন এখানে [https://rb.gy/yxbxv1]
তো, তিনি মূলত ট্যালেন্ট একুইজিশন প্রসেসে AI এবং আরও কিছু অত্যাধুনিক বিষয় ব্যবহার করে স্মার্ট অপারেশন নিয়ে বলেছেন। আমি তারই লেখার ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে অন্য কথার মধ্যে এ-ও বলেছিলাম, যে,
”বাংলাদেশের খুব ওপরের দিকের, বড় ও নামজাদা প্রতিষ্ঠানই কেবলমাত্র তাদের পরিকল্পিত ও ডিজাইনকৃত পদ্ধতিতে ম্যানপাওয়ার হায়ার করায় কৃতিত্ব ও সফলতা পায়। এর বাইরে বাকিরা, বিশেষত নিচের দিকের প্লেয়াররা, সফিসটিকেটেড নিয়ম ও প্রক্রিয়া চালু করলে তাতে এ্যপ্লিকেন্টরা রেসপন্ড করেন না, সেটা ফলো করেন না। ফলে, ভালমতো ফিল্টার, প্রি-এসেসমেন্ট, অথবা, প্রাইমারী এ্যসেসমেন্ট নিতে চাইলে ৯৮% প্রার্থীই ড্রপ আউট হয়ে যাবে। আমাদের কাছে আসা প্রার্থীরা এমনকি ১০টি তথ্যের সামান্য গুগল ফরমও পূরণে আগ্রহী বা দক্ষ হয় না।”
হ্যা, **নামজাদা ও বিশাল বড় প্লেয়ারদের কথা ভিন্ন (নাম নেব না)। তাদের কাছে অন্তত টপ না হলেও তুলনামূলক ওপরের সারির মন্দের ভাল মেধারা এপ্রোচ করে। সেখান হতেই তারা সফল হয়ে যায়। কিন্তু, বাজারের নিচের সারির প্রতিষ্ঠানের কাছে কারা আসেন জবের জন্য? কারা এপ্রোচ করেন করিম মিয়া এ্যন্ড গং কোম্পানীর জবের জন্য? নিশ্চয়ই বাজারের সেরা মেধারা নন।
তাতে করে, করিম মিয়া এ্যন্ড গং বা ওরকম প্রতিষ্ঠানের এইচ.আরে যারা চাকরি করেন, যারা ট্যালেন্ট একুইজিশন নিয়ে কাজ করেন, তারা এইচ.আর বালাম বা এ্যলম্যনাক বা বাইবেলে সংযোজিত নতুন নতুন বা পুরোনো প্রচলিত সব প্রথা, পন্থা, পদ্ধতি, প্রক্রিয়া, নিয়ম, কানুন, টেকনিকের প্রয়োগ করবার জন্য কতটা সুযোগ ও সমর্থ পান? মানে, তাদের প্লেয়িং ফিল্ডটা কতটা চওড়া?
আমি বলি, তারা তাদের সব অস্ত্র প্রয়োগের সুযোগ তেমন পান না। কারন, ওই লেভেলের প্রতিষ্ঠানে সামান্য চুজি হলে ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়’ দশা হয়।
এমনিতেই আমরা সেই সুদূর প্রাচীনকাল হতে নিজেরা নিজেদের জমিদারের পরম্পরাহ বলে বিশ্বাস করি। ফলে, সামান্য আপারহ্যান্ড হলেই আমরা নিচের দিকের কোনোকিছুকে গ্রাহ্যই দিই না। ফলে, আমার হতে সামান্য নিচে মনে হলে সেই প্রতিষ্ঠানের জন্য আমার ইন্টারভিউ দেয়াকেই পরম বদান্যতা ধরে নিই। আর তাতে প্রতিষ্ঠানগুলো বা তাদের এইচ.আর ক্যান্ডিডেটদের ওপর কোনোরকম ফিলট্রেশন বা SOP প্রয়োগ করবেন-সেই সুযোগ কই? ওনাদের পেয়েই তো তারা ধন্য। আর, তার বাইরে তারা পান বাজারের তলানী। তলানী মানে সেই লেভেলের তলানী। তারা কাদের নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন, তার একটা নমুনা ছবিতে দিলাম।
তো, এহেন অখ্যাত, ক্ষ্যাত, নমোঃশুদ্র লেয়ারের প্রতিষ্ঠানের এইচ.আর কাদের হায়ারিং নিয়ে কাজ করেন? কাদেরকে উমেদার হিসেবে পান? আর, তাদের ওপর ’টেকনিক’ প্রয়োগের স্কোপই বা কই? আর, তারপর যারা তাদেরকে জব নিয়ে ধন্য করেন, তাদের হাত ধরে কতটুকু উৎকর্ষ সেখানে পদার্পন করে?
হ্যা, কথার পিঠে কথা বলবার জন্য আপনিও বলতে পারেন, ওসব কোম্পানীর এইচ.আর সুযোগ কাজে লাগাতে কতটা সক্ষম ও যোগ্য?” হ্যা, সেটাও ইনভ্যালিড লজিক নয়। গুরুত্ব আছে প্রশ্নের। এমনিতেও লোকে এইচ.আরকে আদর করে ডাকে ‘হুদাই রাকচে ডিপারমেন’।
কোম্পানী ভাল না, তাই ভাল লোক আসে না; আবার, ভাল লোক আসে না, তাই কোম্পানী ভাল হয় না-এই দুষ্টচক্রে আটকে থাকে পুরো চক্রটা। AI সেখানে দূর কি বাত।
এমনিতেই বাজারে একটা কু-কথা খুব প্রচলিত। ”দেশে নাকি ৮০ লাখ বেকার, অথচ, বিডিজবসে কমপ্লিট প্রোফাইল মাত্র ১০% ও না।”
এইচআরে কাজের সুবাদে আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এইচআর প্রাকটিস, এইচআর সিস্টেম আর অসংখ্য প্রোফেশনালের সাথে পরিচয় হয়ে যায়। তার সুবাদে নানারকম ইন্টারেস্টিং বা ডিসগাসটিং তথ্য জানার দুর্ভাগ্য হয়। তারই একটা বলছি। বাংলাদেশের মধ্যম সারির এমনকি হাই প্রোফাইল অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড এইচআর বলতে সত্যিকার অর্থে কিছু নেই।
তারপরও যতটুকু আছে, সেটার বদৌলতে বা না থাকাগুলোতে ট্যালেন্টেড মানুষ নিয়োগে তাদের এক হাস্যকর প্রাকটিস আছে। একটা বড় সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বোর্ডে থাকেন নন-এইচআর মানুষেরা যারা নিজেরাই জানে না, কিভাবে ইন্টারভিউ করতে হয়, কিভাবে ট্যালেন্টদের প্রতিষ্ঠানে ইনকর্পোরেট করতে হয়। ইন্টারভিউ হয় ডাক্তারের। তারা প্রশ্ন করে, “বলতে পারেন, ডক্টরেট ডিগ্রী কী?”-এই টাইপের। এলেবেলে প্রশ্ন করে প্রার্থীকে বিদায় করে। তারপর তাকে বাতিল করে এই বলে, “ক্যান্ডিডেট স্মার্ট ও শার্প না।” এইসব বোদ্ধা ইন্টারভিউয়ারের জন্য বড় সংখ্যক প্রতিষ্ঠান যোগ্য ও ট্যালেন্টেড কর্মী একুইজিশন হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
আবার এইচআর আছে। তারা ইন্টারভিউও করেন। দেখা গেছে ইন্টারভিউয়ারের চেয়ে প্রার্থী বেশি কোয়ালিফাইড।
ফলে ইন্টারভিউয়ার কাজের প্রশ্ন না করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সময়ক্ষেপনমূলক সংগীতের মতো করে প্রশ্ন করেন। ফলাফল: ক্যান্ডিডেট বেশি ওভারস্মার্ট। যোগ্যতম ও উচ্চতর ট্যালেন্ট খোঁজার জন্য জীবন বরবাদ করা বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত সবার আগে তার নিজের ঘর গোছানা। ট্যালেন্টেড, ক্যালিবারড, কমপিটেন্ট কর্মীকে জায়গা দেবার মতো, কাজ করতে দেবার মতো, অবদান রাখবার মতো, টিকে থাকবার মতো, তাদের সন্তুষ্ট করার মতো পরিবেশ ও আকর্ষন তৈরী আছে কিনা-সেই দিকে আগে নজর দেয়া উচিত।
বাজার হতে ট্যালেন্ট ধরে খোঁয়াড়ে ভরলেই হবে না। বিরাট সংখ্যক প্রতিষ্ঠান ট্যালেন্টকে ডিজার্ভই করে না। [’সবাই এক না’ এই কথা না বলে দিলে আবার ঠাকুর বেজার হবে। এমনকি ঠাকুরের বিলাইটাও বেজার হতে পারে।] বহুকাল আগে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারকে এইচআর ট্রেইনী হিসেবে নিয়োগ করেছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল ১০ সদস্যের একটি এইচআর টীম হলে সেখানে যাতে টেক্সটাইলস, মার্চেন্ডাইজ, একাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, ফাইন্যান্স, আইন, এইচআরএম, ইকোনমিকস-অর্থাৎ সবরকমের শিক্ষাগত যোগ্যতার লোকজন থাকেন। মূল লক্ষ্যটি ছিল, এইচআরকে সবরকম জ্ঞানের একটি কেন্দ্রে পরিনত করা।
এইচআরের অন্যতম কাজ ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট, পারফর্ম্যান্স ম্যানেজমেন্ট, স্ট্রাটেজিক ম্যানেজমেন্ট-এগুলো করার জন্য এইচআরে সবরকম মানুষের কম্বিনেশন থাকাটা জরুরী। মূলত এইচআরকে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যসিক, এথিক্যাল, বিজনেস, স্ট্রাটেজিক ডিসকোর্স নির্ধারন নিয়ে ম্যানেজমেন্ট ও এক্সিকিউটিভ বডির মধ্যে কাজ করতে হয়।
তো তাদের যদি শুধুমাত্র এইচআরএম এমবিএ বাদে অন্যকোনো বিদ্যার লোক না থাকে বা ওই বিষয়ে ন্যুনতম কোনো ডিপ্লোমাও না থাকে সেক্ষেত্রে তারা হয় আন্দাজে কাজ করবেন কিংবা অন্যদের সাহায্য নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হবেন যেটা তাদের কাজের কোয়ালিটি নষ্ট করবে এবং তাদের বানানো স্ট্রাটেজি হবে বায়াজড। যদিও আমার সেই প্ল্যান বা ড্রিম অচীরেই বাতিল হয়ে যায় বিভিন্ন কারনে। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ওই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার প্ল্যানের ভুল, রং চয়েস, দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর ম্যানেজমেন্টের দ্বিমত।
আমার যেহেতু সুপন্ডিতদের মতো বড় বড় ডিগ্রি নেই এইচআরে, তাই আমিও বাধ্য ধরে নিয়েছিলাম হয়তো আমারই ভুল যদিও মন হতে ওই স্বপ্নকে কখনোই মুছতে পারিনি। আমি ভাবতে বাধ্য হই, হয়তো এইচআরে সব এইচআরএম ডিগ্রীধারি থাকাটাই বেটার। কিন্তু সম্প্রতি গুগলের এইচআর প্রধানের একটি ইন্টারভিউ দেখে সেই পুরোনো দুঃখ আবার তাজা হল।
গুগলের এইচআর প্রধান যদি যথেষ্ট কাবেল মানুষ বলে মনে করেন তবে তার বক্তব্যটা হল, তিনি গুগলের এইচআরে সবরকম শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ডের সমাবেশ করেছেন। যাতে সকল কর্মীদের নিয়ন্ত্রক, ভাগ্য নির্নায়ক, স্ট্রাটেজি প্ল্যানার ও গ্রোথ পার্টনার হিসেবে এইচআর কর্মীরা তাদের সকল ধরনের বিভাগ ও তার কর্মীদের সত্যিকারের পার্টনারিং করতে পারেন। তো একজন ফাইন্যান্স কর্মীকে সবচেয়ে ভাল কে বুঝবে?
আরেকজন ফাইন্যান্স ব্যাক এইচআরই তো? নাকি? তাছাড়া আরো একটি লজিক আছে এর পেছনে। প্রতিটি কর্মী যারা মোটামুটি অফিসার লেভেল হতে ম্যানেজার লেভেলে প্রবেশ করেছেন, তাদেরকে তাদের নিজস্ব ডেস্কওয়ার্ক বা এসাইনমেন্ট কমপ্লিট করার পাশাপাশি ম্যানেজারিয়াল রোল পালন করতে হয়। ম্যানেজারিয়াল রোলে তাকে প্রতি পদে পদে নিজের টেকনিক্যাল নলেজকে তার টীমের কাছে কনভার্টিবল জ্ঞানে পরিণত করতে হয়। আবার প্রতিষ্ঠানের SOP কে কর্মীদের কাছে কনভার্টিবল নলেজে পরিণত করতে হয়।
পাশাপাশি তাকে তার অধঃস্তন কর্মীদের জন্য এইচআরের প্রাথমিক কাজগুলোরও প্রতিনিধিত্ব করতে হয় যেমন:-PMS, স্ট্রাটেজিক প্লানিং, ম্যানপাওয়ার প্লানিং ইত্যাদি। এখন দেখা যায় প্রায়ই তিনি তার নিজের বা বিভাগের টেকনিক্যাল নলেজের সাথে এইচআর পারসপেকটিভকে লিংক করার যে ম্যানেজারিয়াল স্কিল বা ম্যানপাওয়ার ম্যানেজমেন্ট স্কিল-সেটা করতে পারেন না। এইজন্যই এইচআরে যদি সবরকম জ্ঞানের সমাবেশ থাকে তখন তাকে দিয়ে খুব সহজেই ওই ম্যানেজার বা লিডারের টেকনিক্যাল নলেজের সাথে প্রতিষ্ঠানের এইচআর পারসপেকটিভকে লিংকিং এর কাজটি খুব সহজে করা যায় কারন তিনি নিজেও ওই টেকনিক্যাল বিষয়ের এক্সপার্ট আর পাশাপাশি তিনি এইচআর এক্সপার্ট যেটা ওই ম্যানেজার সাহেবের ঘাটতি আছে।
তাছাড়া এইচআরে সবরকম মেধার লোক থাকলে এইচআরকে যেকোনো বিভাগ বা কর্মপ্রক্রিয়ার টেকনিক্যাল আসপেক্ট সম্পর্কে জানার বা কিছু করার দরকার হলে তাকে অন্ধের মতো বিভাগীয় প্রধানদের উপর নির্ভর করতে হয় না। অন্তত বিভাগীয় প্রধানদের ব্যস্ততার সময়ে বা তাদের অসহযোগীতা কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য’র কাছে এইচআরকে ব্লাইন্ডলী ভালনারেবল হতে হয় না।
ঠিক এই চিন্তার স্থানটি নিয়েই প্রাজ্ঞ পরামর্শক জনাব ইশতিয়াক তাহের সাহেবের “আদার ব্যাপারীর কাছেও পেতে পারেন জাহাজের খবর : মানব সম্পদ উন্নয়ন কৌশল“:
লেখাটিও পড়ুন।
আর এমপ্লয়াররা:
বছরের পর বছর ডেডিকেটেডলী কাজ করার পর, অন্য সেক্টরে কাজের দক্ষতা হারানো পর, আপনার জন্য রক্ত পানি করে দেবার পর, বুড়া বয়সে যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করছেন তাতে আপনারা আপনাদের এইচআরের কাজ দুরহ করে দিচ্ছেন। তারা এরপর ঢ্যাড়া পিটিয়েও বা রশি দিয়ে বেঁধেও আপনার কর্মীদের দীর্ঘকাল আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করাতে পারবেন না। “Grow with us and be with us for ever” এই চটকদার বিজ্ঞাপন কেউ খাবে না আর।
শুধু “ফেলো কড়ি মাখো তেল” পলিসি হবে।
ট্যালেন্ট একুইজিশনে এমপ্লয়ার ও এমপ্লয়মেন্ট সীকারদের পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি এবং সত্যিকারের গ্যাপটি বোঝার চেষ্টা:
ফেসবুক ও লিংকডইনে প্রতিদিনই অন্তত একটি পোস্ট পাবোই পাবো, যেখানে Employer/Employment provider/Employment seller বা তার HR বলছেন, বাজারে যোগ্য কর্মী মিলছে না। যোগ্য কর্মীর তীব্র অভাব জব মার্কেটে। অথবা, Job expectant/Job aspirant/Job applicant বলছেন, উপযুক্ত জব মিলছে না। এমপ্লয়াররা জব দিচ্ছেন না এবং তারা ঠিক কী চাইছেন-জব এক্সপেকট্যান্টরা সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না।
দুই পাশেই জোরালো যুক্তি আছে। দুই পক্ষেরই বৈধ গ্রীভ্যান্স এবং সীমাবদ্ধতা আছে। মাঝখান দিয়ে যেটা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠান যোগ্য ও উপযুক্ত কর্মী পাচ্ছে না। আর ওদিকে উপযুক্ত ও যোগ্য কর্মীরা ভাল জব পাচ্ছেন না। এই টাগ অব ওয়ারে পরে দুই পাশেই ক্ষতি হচ্ছে। আজকে একটা তুলনামূলক তালিকা দিচ্ছি। যা হতে বুঝতে পারবেন, গ্যপটা ঠিক কোথায় হচ্ছে। এগুলোর যেটা আপনার সাথে যায়, সেটা সংশোধন ও উন্নত করুন। রোগ ভাল হয়ে যাবে। প্রজাপতি আসবেই।
A. Employer #badpractice বা তাদের HR system এর ত্রূটিসমূহ, যা যোগ্য জব এক্সপেকট্যান্টদের দূরে সরাচ্ছে বলে করিপ্রত্যাশী, বিশেষজ্ঞ ও নেটিজেনরা মনে করেন: –
১. আগের দিন রাতে ফোন দিয়ে পরের দিন ইন্টারভিউ দিতে ডাকা।
২. গণহারে অসংখ্য প্রার্থীকে একই সময়ে ডেকে একেকজনকে দীর্ঘ সময় নষ্ট করতে বাধ্য করা।
৩. সারাদিনের অসংখ্য প্রক্রিয়া শেষ করে তারপর ফাইনাল ইন্টারভিউয়ার কর্তৃক “ওনার মতো লোক তো ডাকতে না করেছিলাম। হবে না। সিভি রেখে যান। পরে দেখব।” বলে বিদায় করা।
৪. চাকরির বিজ্ঞাপনে সম্ভাব্য বেতনসীমা উল্লেখ না করা অথবা, অন্তত প্রার্থীদের প্রত্যাশিত বেতন মেনশন করে দিতে না বলা, বা, দিলে সেটিকে বিশ্লেষণ করে কেবলমাত্র উপযোগীদেরই ডাকার চর্চা না থাকা। এর ফলে প্রচুর প্রক্রিয়ায় সময়, শক্তি ও অর্থ খরচের পরে একজন প্রার্থীকে আজগুবি বেতন অফার করা হয়, ফলত জব হয় না।
৫. নিয়োগকর্তার প্রক্রিয়াগত কারণে দীর্ঘ সময় ধরে মূল্যায়নে ব্যয় হওয়া সত্বেও লাঞ্চ, নাস্তা প্রদান না করা।
৬. চাকরির মূল্যায়নের সব ধাপ অতিক্রম করবার পরে ফলাফল, বা অন্তত Rejection Feedback ও না দেয়া।
৭. সব রকম জটিল, সময়সাপেক্ষ ও স্নায়ুক্ষয়ি প্রক্রিয়া শেষ করবার পরেও শেষতক ওই নিয়োগ বাতিল করা, অথবা আগে হতেই প্রার্থী চুড়ান্ত করে রেখে লোক দেখানো বা নিয়মরক্ষার জন্য interview করা, অথবা, সালিশ যাই হোক, বড় সাহেবের শালাকেই চাকরিতে নেয়া।
৮. ২ মাস ধরে ফলোআপের পরে জয়েন করার আগের দিন, বা জয়েন করার দিনে “আপনাকে এখন জয়েন করতে হবে না” বলে তার কপাল ভাঙা।
৯. এম.ডি সাব ও চেয়ারম্যান সাবের রেষারেষির বলি চাকরিপ্রার্থী, বিশেষত নতুন জয়েন করতে আসা মানুষটাকে বানানো। ফলে তৃতীয় দিনের মাথায় FIRE
১০. ইন্টারভিউয়ের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন বিভাগীয় ইন্টারভিউয়ার ব্যস্ত মিটিংয়ে। হয়তো দেখা গেল, তিনি আসলেনই না সেদিন, HR কে বলে দিলেন, ‘কেন্ডিডেডরে কাইলকা আইতে কও”, অথচ, ক্যান্ডিডেট ভেন্যুতে বসে আছে ৩ ঘন্টা ধরে।
১১. ইন্টারভিউইকে আগে হতে টেস্ট এর ধরণ সম্পর্কে কোনো আইডিয়া না দেয়া। ফলে, তারা এসে দেখে, রিটেন, ভাইবা, সাইকোমেট্রিক, রাইটিং, প্রেজেন্টেশন, গ্রুপ ওয়ার্ক, ম্যানেজমেন্ট মিট-হাজারটা কাজ, যার জন্য তার মানসিক প্রস্তুতি দরকার। আবার কেউ হয়তো শুধু ভাইবা হবে জেনে ১ ঘন্টা অফিস হতে ছুটি নিয়ে আসেন, এসে দেখেন ৫ ঘন্টার এক ম্যারাথন তার জন্য অপেক্ষা করছে।
১২. নতুন যোগ দিতে আসা কর্মীর ব্যাংক স্টেটমেন্ট চাওয়া, মূল সনদ জমা রাখা, চাকরি প্রত্যাশীর চলমান চাকরির বেতনের পরিমাণ জানতে চাওয়া, স্যালারি সার্টিফিকেট দেখতে চাওয়া, (বিশেষ কারন ছাড়া) জব সার্কুলারে সম্ভাব্য বেতনের রেঞ্জটুকু তক মেনশন করতে না পারা-এগুলো অপ্রয়োজনীয়, অন্যায্য ও কাউন্টার প্রোডাকটিভ HR প্রাকটিস।এই কাজগুলো করলে প্রতিষ্ঠানের ভাল তো হয়ই না, উল্টো ক্ষতিই হয়। আপনার প্রতিষ্ঠানের OD কিংবা HR development নিয়ে কিছু করতে চাইলে এগুলো ঠিক করার দিকেও গুরুত্ব সহকারে নজর দিন।
১৩. স্যালারী রেঞ্জ বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। তেল কম, ভাজা মচমচে-এমনটা হয় না।
১৪. রিকয়ার্ড ও উড বি কমপিটেন্সীর বেঞ্চমার্ক নেই অথবা থাকলেও সেটা ত্রুটিপূর্ন। সেটা ভাল হলে আবার যোগ্যতার যাচাই ত্রুটিপূর্ন।
১৫. এমপ্লয়ার ব্র্যান্ডিং এর রেটিং খুব পুওর। চাকরির বাজারে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কী ধরনের ও কতটা রেপুটেশন আছে-তা নিয়ে অনেকেই বদারড হন না। বাজারের বড় বড় জায়ান্টের সাথে নিরব অথচ তীব্র প্রতিযোগীতায় হেরে গিয়ে প্রথম সারির মেধাদের তারা বাজিয়ে দেখার জন্যও পাচ্ছেন না। তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে কম্প্রোমাইজক কোয়ালিটির ক্যান্ডিডেটদের নিয়ে।
১৬. নিয়োগের আদ্যোপান্ত প্রক্রিয়ায় নানামুখী ত্রুটি আছে। বিস্তারিত বলছি না। একটা ছোট উদাহরন বলি-ইন্টারভিউয়ার যদি প্রশ্ন করেন, আপনি এত বয়সে বিয়ে করেননি কেন?-তার পরে আপনার নিয়োগ প্রক্রিয়া কতটা মানসম্পন্ন তা বোঝাই যায়। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের টপ পারসনরাও এই ত্রুটি সম্পর্কে অবগত থাকেন না।
১৭. ১২ ঘন্টা হতে ১ দিনের নোটিশে ইন্টারভিউ দিতে ডাকা হয়, যা অবাস্তব। কিংবা, সকালে কল করে বিকাল ৩ টায় ইন্টারভিউ দিতে আসতে বলা, ৮ ঘন্টা বসিয়ে রাখা, কখনো কখনো বসিয়ে রেখে তারপর বলা যে, আজ ইন্টারভিউ হবে না।
১৮. ভুল প্রার্থীদের শর্টলিস্ট করে ডাকা হয়। অফিসে দরকার এম.বি.বি.এস ডাক্তার, ডেকে বসে আছে এম.বি.এ হোল্ডারকে। ট্যালেন্ট সোর্সিংয়ের ট্রাডিশনাল ও অবসোলেট পথে হাঁটাও একটা কারন।
১৮. ফিডব্যাক সিস্টেমের অনুপস্থিতির জন্য প্রার্থীরা আগ্রহ হারান। আর কে না জানে, আপনার ইন্টারভিউইরা আপনার বেস্ট ব্র্যান্ড অফিসার?
১৯. ইন্টারভিউ কল করার প্রক্রিয়া ও সংঘটনে নানা অসঙ্গতি। (দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা, ইন্টারভিউ না করেই বিদায় করা, ইন্টারভিউয়ার নিজেই কনফিউজড ও অজ্ঞ, ইন্টারভিউয়ের গুনগত মান নিম্ন, জুনিয়রদের দিয়ে সিনিয়রদের ইন্টারভিউ করা ইত্যাদি।)
২০. নিয়োগের প্রক্রিয়াতে জড়িত অনেকের স্বজনপ্রীতি, দূর্নীতি ও খামখেয়ালী।
২১. রিক্রুটিংয়ের কাজে জড়িত পুরো টীমের ডায়নামিজম, ফ্লেক্সিবিলিটি ও লিবারেলিজমের অনুপস্থিতি।
২২. রিক্রূটিং প্রতিষ্ঠান বা তার HR এর যথেষ্ট গ্রাউন্ড ওয়ার্ক বা ব্যাকএন্ড প্রস্তুতির অভাব থাকে। এইচ.আর যখন কাজটিকে স্রেফ অফিস জব হিসেবে নেয় তখন তার সার্বিক মান নেমে যেতে বাধ্য। ট্যালেন্ট একুইজিশন একটা আর্ট। এমপ্লয়িং প্রতিষ্ঠানের দুর্বল ও মানহীন এইচ.আর বিভাগ/সিস্টেম/কালচার ট্যালেন্ট একুইজিশনকে ব্যহত করে।
২৩. চাকরি প্রত্যাশী ও মার্কেটের কাছে আস্থা অর্জনে ব্যর্থতাও বড় কারন। চাকরিপ্রার্থী জয়েন করতে আসলে তাকে জয়েন না করানো বা বিদায় করাও দেখি আমরা। এপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে তা পরে বাতিল করাও দেখেছি।
২৪. চাকরির বাজারে চাকরি দাতার চেয়ে চাকরি প্রত্যাশী কয়েক গুন। এই সুযোগে প্রচুর ফ্রড হয়। সেটাও যোগ্য লোক না পাবার বড় কারন।
২৫. অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে বিনা নোটিশে, শর্ট নোটিশে, গোপনে ভাগিয়ে আনা ওভারঅল মার্কেটের কালচার নষ্ট করে।
২৬. মান্ধাতা আমলের হায়ারিং টেকনিক ফলো করা। যেমন ধরুন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, যে কোনো মূল্যে অনসাইট ইন্টারভিউতে বাধ্য করা, ৫ বার ইন্টারভিউ করা, কত বেতন পান তার পে স্লিপ চাওয়া-এরকম।
২৭. চাকরি প্রত্যাশী অমূক বিশাল প্রতিষ্ঠানে আগে কাজ করত-এই দেখেই তাকে এপয়েন্ট করবার মতো ভুল এপ্রোচ।
২৮. সার্বিকভাবে “ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হবে না”-এই অত্যন্ত প্রিমিটিভ ও রং এপ্রোচ নিয়ে চাকরির বাজারে গমন।
সাম্প্রতিককালে এমপ্লয়ারদের ভিতরে বাড়তে থাকা কিছু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভুল প্রবণতা, যা, তারা মনে করছেন, তাদের ভাল করছে। বাস্তবে, এগুলোতে ঝুঁকে পড়বার কারনে, তারা লং রানে নিজের প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছেন। যে কারনেই এটা করে থাকুন না কেন, যার পরামর্শেই এমনটা করে থাকুন না কেন, আলটিমেটলি ক্ষতি প্রতিষ্ঠানের।
ক. কম টাকায় নিচের র্যাংকের লোক দিয়ে সিনিয়রের পজিশন মেকআপের চেষ্টা।
খ. যোগ্যতা কমপ্রোমাইজ করে হলেও কম বেতনে লোক নেবার চেষ্টা।
গ. ওপেন সোর্সিং এর দরোজা বন্ধ করে রেফারেল বা থার্ড পার্টি হেড হান্টিংয়ের মাধ্যমে লোক নেয়া।
ঘ. যোগ্যতা যাচাই করে নেবার চেয়ে সারফেস ট্রেইট বা সিগন্যাল ট্রেইটের ওপর বেশি ফোকাস করা।
ঙ. কর্মী ছাটাই করে বাজারে টিকে থাকার চেষ্টা।
চ. বেতন নিয়ে অতিরিক্ত চাপাচাপি ও হার্ডলাইনে থেকে কম বেতনে মানুষ নেবার চেষ্টা।
ছ. ইনক্রিমেন্ট না দিয়ে, বা, যথাযথ ইনক্রিমেন্ট না দিয়ে কর্মীর বেতন বাস্তবে কমিয়ে দেয়া।
জ. সময়মতো বেতন না দিয়ে বেতন হোল্ড রেখে আর্থিকভাবে কিছু লাভ পাওয়া।
ঝ. ছক কষে কর্মীদের বয়স একটু বেশির দিকে গেলেই তাকে প্ল্যান করে এলিমিনেট করা।
ঞ. নিজ নিজ এলাকার মানুষ গণহারে নিয়োগ করা।
ট. কর্মী হায়ারের মূখ্য ক্ষমতা এইচ.আরকে না দিয়ে বিভাগীয় প্রধানদের হাতে দেয়া।
ঠ. কর্মীদের ভাগ্য ও পারফরম্যন্স যাচাই সিস্টেমে না ফেলে বসদের মর্জির হাওলা করে দেয়া।
ড. ইন্টারভিউ দিতে আসা বা আবেদন করা মানুষদের সাথে অত্যন্ত অপেশাদার ও জঘন্য বিহ্যাভ করা।
ঢ. আউটগোয়িং কর্মীদের গুরুত্বহীন মনে করে তাদেরকে হয়রানি করা।
ণ. অরগানাইজেশনের সবগুলো বিভাগের মধ্যে এইচ.আরকে সবথেকে অপাংক্তেয় ও বঞ্চিত রেখে দেয়া।
অধুনা নামজাদা ও পয়সা ওয়ালা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রেফারেল কিংবা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ওয়ার্কফোর্স হায়ার করবার একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখছি। যদিও এই প্রবণতাটার অনেকটাই “শুনলাম অমূকের ERP আছে, আমাদের কেন নাই, আজকেই বাজারে গিয়ে ERP কিনব।”-টাইপের হুজুগ ও ঝোঁককে বেস করে সৃষ্ট। তবুও। না, আমি রেফারেল বা তৃতীয় পক্ষের বিপক্ষে না। হেড হান্টিংয়ের অন্যতম কার্যকর পন্থা এটি। অবশ্যই হ্যা, সাশ্রয়ীও।
কিন্তু, রেফারেল, তৃতীয় পক্ষ অথবা আরও কিছু পন্থার ভুল প্রয়োগে প্রতিষ্ঠানগুলো রং হায়ারিংয়ের চক্রে আটকাচ্ছে। ভুলগুলো অবচেতনে হচ্ছে। আর রং হায়ারিংয়ের মাশুল অত্যন্ত চড়া এবং সুদূর প্রসারী।
ভুলগুলো কী?
ক. থার্ড পার্টিকে ক্যানডিডেট মূল্যায়নের একক দায়ীত্ব দেয়া, যেখানে প্রতিষ্ঠান মূলত রেডি প্রোডাক্ট কেনেন। কাস্টমার প্রতিষ্ঠানের সবরকম ক্যাটেগরীর কর্মীর যোগ্যতা মূল্যায়নের সবরকম সক্ষমতা বা প্রক্রিয়া তাদের আছে কিনা-সেটা না দেখেই অনেক সময় দায়ীত্বটা ডেলিগেট করে দেয়া হয়।
খ. রেফারেলের ওপর ভর করে হায়ার করা। যেখানে সবচেয়ে খারাপটা ঘটে, প্রার্থীর রেফারীর ক্ষমতা বা প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে বিনা মূল্যায়ন বা প্রতিযোগীতা ছাড়াই সরাসরি হায়ার করা।
গ. কমপিটেন্সি বেজড হায়ারিং না হয়ে ভিজ্যুয়াল, অবজারভেশনাল, টেনডেনসি এবং কমোন ফ্যাকটর বেসড হায়ারিং নির্ভর হয়ে পড়া। প্রার্থীকে ডেকে সামান্য কিছু গৎবাঁধা প্রশ্ন করা হয়, সেগুলোর উত্তর কেমন হল বা তার ওজন কত-সেটা ডকুমেন্টেড হয় না, দুয়েকটা রচনা লিখতে দেয়া, জেশচার পশচার দেখা, রেজুমির চাকচিক্য দেখে আর তার বড় বড় কমিটমেন্ট শুনেই জব দিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ মূলত ইন্টারভিউ ইমপ্রেশনই এখানে একমাত্র কমপিটেন্সি ফ্যক্টর। অনেক স্থানে আবার হেড অব এইচ.আর বসে থাকেন, যার এপ্রোচ হল, ইন্টারভিউ ভাল দিলেই ক্যানডিডেট ভাল তার কোনো গ্যারান্টি আছে? আগে কাজে দাও, পরে দেখা যাবে কেমন করে।
ঘ. কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনকি কোনো ধরনের এ্যসেসমেন্টই না করে মূলত টপ এক্সেকিউটিভ কর্তৃক অত্যন্ত দায়সারা একটি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে একদম হুইমজিক্যালী কাউকে হায়ার করা।
ঙ. ব্যাকগ্রাউন্ড চেক প্রায় কখনোই হয় না। সামান্য যেটা হয়, সেখানেও স্রেফ দায়সারা কাজ করা হয়। এতে করে সাবেক ৩টি প্রতিষ্ঠানে দূর্নীতি ও অন্যান্য অসদাচরন করা GM কেও দেখেছি অন্যত্র ক্রীম পজিশনে জব পেতে।
চ. বাজার হতে স্টার ক্যানডিডেট কেনা কিংবা Pedigree hiring করা।
প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করে, যে, তাদের বিজনেসের জন্য যোগ্য ও এনগেজড মানুষ চাই, তাহলে তাদেরকে ট্যালেন্ট মার্কেটে আরও আরও স্মার্টলি প্লে করতে হবে। গতানুগতিক কিংবা গোয়ার্তুমি মার্কা প্লেয়ার ট্যালেন্ট মার্কেট হতে ক্যাশ আপ করতে পারবে না। বিশেষত দিন যত যাচ্ছে, জেন-জেড বা তার উত্তরসুরিরা আরও বেশি চুজি হবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো ডায়নামিক আচরন ও এপ্রোচ না করলে তাদের আরও বেশি মিসম্যাচড হিসেবে পেতে থাকবে।
ইন্টারভিউতে ট্রিক করা বা ট্রিকি প্রশ্ন করা, গৎবাঁধা প্রশ্ন বা এপ্রোচ করা, ট্যলেন্ট এ্যকুইজিশন স্ট্রাটেজিতে সেঁকেলে ও রিজিড সব হাবিজাবি পলিসী ফলো করা-এগুলোর কারনে ট্যালেন্ট মার্কেটে প্রতিষ্ঠানের রিচ ও সাকসেস দিন দিন কমবে। বিশেষত প্রতিষ্ঠান বা তার এইচ.আর যদি ডায়নামিক, ফ্লেক্সিবল, লিবারেল ও স্মার্ট এপ্রোচ না দেখায়, তার দুঃখ বাড়বে বৈ কমবে না।
একটা সামান্য দিক বলি। সেক্টর টু সেক্টর ম্যাচ না করলে তাকে হায়ার না করার এপ্রোচ একটা ভুল দিক। প্রতিষ্ঠানের কোন কমপিটেন্সি প্যাকেজ চাই-সেটা না জেনে আন্দাজে গৎবাঁধা ইন্টারভিউ করে বুকিশ দক্ষতা ও জ্ঞান খোঁজার চেষ্টা, জঘন্য রকম ইন্টারভিউ ডিলিং, জঘন্য ইন্টারনাল কালচার-এসব ক্র্যাক করতে না পারা বা বাইরে দুর্নাম ছড়ানো নিয়ে গা না করা-এসব নন-ডায়নামিক এপ্রোচের ফলে যোগ্য লোক বাজার হতে নেয়া সম্ভব হবে না। তদুপরি, হায়ারিংকে ১০০ ভাগ থার্ড পার্টির হাতে দিয়ে দেয়াও একটা ভুল ও নন-ডায়নামিক স্টেপ। নির্ধারিত করে দেয়া সাবজেক্টে পড়াশোনা না থাকলে তাকে নির্দিষ্ট বিভাগে না নেয়ার পলিসীও ভুল। এরকম হাজারও ভুল প্রতিষ্ঠানের ট্যালেন্ট এ্যকুইজিশনকে গাড্ডায় ফেলছে। সেই সাথে নিজ নিজ ইন্টারভিউয়ারদের একদম খোদার ষাড়ের মতো স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী হবার সুযোগ দিয়ে তারা বাজার হতে ভাল ট্যালেন্ট নেয়াকে আরও কঠিন করে তুলছেন।
সতর্ক হোন। ডায়নামিক হোন।
আপনার প্রতিষ্ঠানের যেসব মানুষেরা জব এ্যপ্লিক্যন্টদের রেজুমে বা প্রোফাইল স্ক্রিনিং ও শর্টলিস্টিং করেন, তাদের কাজ কঠোরভাবে নজরদারী ও পুনর্মূল্যায়ন করুন।
বিশেষত এইচ.আর হতে যারা এই দায়ীত্বে আছেন-তাদের কাজ আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করুন। তাদেরকে বারংবার ট্রেনিং দিন, তাদের ডায়নামিজম শেখান। কারন, আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য বাজারের সেরা ট্যালেন্টটি বেছে নেবার শুরুটা (ও অপমৃত্যুটাও) হয় এঁদের হাতে।
এই পর্যায়টাতে ভয়ানক গড়বড় হয়। আনাড়ি, অপরিপক্ক, নতুন, অদক্ষ, অবিবেচক, নন-ডায়নামিক ও রং এপ্রোচের মানুষেরা এই পর্যায়টাতে যুক্ত হয়ে গোটা ড্রাইভটাকে কেচে দেন। এঁদের ভুলভাল বাছাইয়ের জন্য বাদ পড়ে যাচ্ছে প্রচুর ট্যালেন্টেড মানুষের প্রোফাইল। আপনার প্রতিষ্ঠান হারাচ্ছে বাজারের সেরা মানুষটির সেবা পাবার অপরচুনিটি।
রেজুমে বাছাই করতে যাকে দিয়েছেন, হোক তিনি এইচ.আরের কেউ, অথবা হোক কোনো বিভাগীয় প্রধান, তিনি রেজুমে বাছাই করতে আদৌ দক্ষ কিনা, অথবা, দক্ষ হলেও সেই কাজটা তিনি আবার কাউকে সাব-কনট্রাক্ট দিয়ে বসে আছেন কিনা তার খোঁজ কে জানে? ফলে ক্ষতিতে পড়ছেন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আমি দেখেছি, রেজুমে বাছাই করবার দায়ীত্ব পেয়েছেন ও দিব্যি বাছাই করছেন এমন মানুষ, যার ওই কাজ করবার ক্ষমতাই প্রশ্নবিদ্ধ। ভুল এপ্রোচ নিয়ে রেজুমে বাছাই করছেন-এমন ঘটনাও প্রচুর।
আপনার সুপার এইচ.আর টিমের ফিল্ড অপারেশন ফ্লিট ও টেইল এন্ডের জুনিয়ররা, যারা প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টাস্ক ও অপারেশন ডিল করে, আপনি নিজে তাদের মাঝে মাঝে অবজারভ করুন। খুব কাছে থেকে, ফাংকশনাল অবস্থায়; তাদের সাথে গভীরভাবে কথা বলুন, তাদের মাঝে বসে থাকুন।
আপনার কাস্টমার, মার্কেট সার্ভে করুন।
কেন?
আপনি হয়তো সুপারম্যান। আপনার টিমও সুপার করছে। কোম্পানীও সুপার। কিন্তু, আপনার আন্ডার টিম, সেটা ম্যানেজারই হোক, বা অ্যাপ্রেনিটিস, তারা কাস্টমার ডিল করবার সময়, ফিল্ডে কাজ করবার সময় একেকজন গোপাল ভাঁড় অথবা দুর্যোধন হয়ে উঠছে।
আমরা বহিরাগতরা সেটা টের পাই জব অ্যাডভারটাইজমেন্ট দেখে, ইন্টারভিউইদের ফিডব্যাক পোস্ট পড়ে, ফরমার এমপ্লয়িদের পোস্ট পড়ে। বিশ্বাস করুন, তারা আপনাকে পঁচাচ্ছে। আপনার সুপার এফার্ট সত্তেও।
ট্যালেন্ট এ্যকুইজিশান এক্সপার্ট ও স্পেশালিস্ট তকমা নামের শেষে লাগানোই শেষ কথা না। ট্যালেন্ট এ্যকুইজিশানের এ টু জেড প্রতিনিয়ত একশোবার রিভিউ ও রি-এ্যসেস করা দরকার। দরকার নিয়মিত রিশাফল ও রিফর্ম ও রিসেট করা। অন্যথায় গাইতে হবে-
”ট্যালেন্ট তুমি কার আকাশে ওড়ো…..
তাদের আকাশ কি আমাদের চেয়েও বড়?”
আপনার HR টিম, HR অপারেশনস, বিশেষত Talent acquisition প্রসেস যদি খুবই মেকানাইজড, অটোমেটেড ও মেথডিক হয়, তাহলে তার প্রচুর ভাল দিক রয়েছে। তবে, বিপদ হল, তার কিছু খারাপ দিকও রয়েছে।
কী বিপদ হতে পারে, যদি আপনি এরকম একটা সিস্টেমের ওপর ফুললি ডিপেনডেন্ট ও রিলাইড হয়ে পড়েন? মাঝ আকাশে দুই বিমানের, বা ট্র্যাকের মাঝখানে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ মাঝে মাঝে দেখেন না? অ্যাবসলুটলি অটোমেশন ও সিস্টেম বেজড হবার ঝুঁকি এখানেই। সব সিস্টেমের মধ্যে একটা হিউম্যানয়েড টাচ রাখতে হয়। কী ক্ষতি সিস্টেমের বাড়াবাড়িতে?
প্রথমত, বায়াস এর যত খারাপ দিক রয়েছে, আপনি সেটাতে পড়বেন।
দ্বিতীয়ত, সিস্টেম নিজেও একটা ট্র্র্যাপ। সিস্টেম বলতে রিজিড ও স্ট্যাটিক সিস্টেম। চিরস্থায়ী ও অ্যাবসলুট বলে কোনো সিস্টেম বা কালচার নেই। সিস্টেম ইজ অলওয়েজ টু বি ডায়নামিক ও চেইঞ্জিং। সেটা না হলে সিস্টেম নিজেও একটা বায়াস ও ফেইলিওর ট্র্যাপ।
আপনার সুপার সিস্টেম ও মেথড বাস্তবায়নের দায়ীত্বে রয়েছেন যে আন্ডার টিম, তাদের সক্ষমতা, আন্তরিকতা আর সত্যিকারের কার্যক্রম যদি বারংবার ও প্রায়শই চেকব্যাক না করেন, তাদের অ্যাকটিভিটি যদি চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের আওতায় না আনেন, তাহলে তারা ও তাদের কাজ আপনাকে ডুবাবে।
অনেকেই সুপার সিস্টেম বাানান ঠিকই, কিন্তু আন্ডার টিমের, এক্সেকিউশন টিমের সক্ষমতা, আন্তরিকতা, ইতিহাস ও ধারাবাহিক কাজ অবজারভ করেন না। ফলে, তারা নিজেরাও জানে না কীভাবে কী করবে। বস তো সিস্টেম চালু করেই খালাস। কাস্টমাররা মরিচ পেষা হতে থাকেন। বস ভাবেন, গরুতো কিনে দিয়েছি। দুধ তো দিচ্ছেই। ওদিকে গবেট বা শয়তানদের হাতে পড়ে গরু হয়তো ষাঁড় বনে গেছে। বা, ষাঁড় হয়তো বলদ গরুর ইফিশিয়েন্সিতে চলে গেছে। বাংলাদেশের মতো দেশ, যেখানে করাপশন, মিসঅ্যাপ্রোপ্রিয়েশন অব পাওয়ারের ভয়ানক হিস্ট্রি আছে, সেখানে গরু মাঠে ছেড়ে দিয়ে রাখালের নিশ্চিন্তে ঘুমানোর প্রশ্নই ওঠে না। আমার তো লাগে, যে, মাঝে মধ্যে ক্যালকুলেটরে দুই দু গুনে চার হিসেব করতে গেলেও চেক করে নেয়া উচিত, যে, সত্যিই চার হয় কিনা।
আবার, সিস্টেম সময়মতো ও নিয়মিত আপডেট ও চেইঞ্জ না করলে সে নিজেই ভুল ডিরেকশন দেবে। ভুল ফলাফল দেবে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যাকডেটেড বা আউটডেটেড রি-এজেন্টের মতো। ভাল এইচ.আর আউটকামের বদলে সেটা হয়ে যাবে টক্সিক সিস্টেম।
তৃতীয়ত, সিস্টেম ও সিস্টেম ম্যানেজিং টিমের অ্যাবসলুট অথরিটি ও নন-মনিটরিং হ্যাবিট অব দ্য এইচ.আর বস আরেকটা খুব খারাপ ধরনের ক্ষতি করবে। অনেক বসই সেটা করেন। সেটা হল, সিস্টেম, মেথড, প্রসেস মানুষকে একটা নম্বরে পরিণত করার প্রবণতা ধারন করে। যেমন ধরুন GPA-5. এটা একটা সংখ্যা। কিন্তু, এই সংখ্যা আমাদেরকে চেতনে বা অবচেতনে একটা ইঙ্গিত ও বিশ্বাস দেয়-যে, ছাত্র ভাল।
তেমনি আমাদের মেথডিক ও মেকানাইজড সিস্টেম (বিশেষত ট্যালেন্ট অ্যাকুইজিশন প্রসেসের) আমাদের সব কাস্টমারদের একটা নম্বর হিসেবে প্রতিপন্ন করে। আমরাও নম্বর দেখে দেখে বিচার করি। নম্বর ভিত্তিক বিচারব্যবস্থায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। প্রায়শই অন্ধভাবে নির্ভর করি। যেমন, রেজুমে স্ক্রিনিং ও শর্ট লিস্টিং স্টেইজে আমাদের জব পোর্টালের ATS সিস্টেমের কারিশমা নানা অ্যালগরিদমের ওপর বেসিস করে বেশিরভাগ প্রোফাইল ও ক্যানডিডেচার বাতিল করে দেয়, খুব ছোট একটা তালিকা সে সাজেস্ট করে। এখানে সংখ্যার খেলা। যারা সংখ্যা বা অ্যালগরিদমে কমপ্লাই করেন না, তারা বাদ পড়েন। কিন্তু, ফ্যক্ট হল, রেজুমে ও প্রোফাইলের হায়ার ATS কমপ্যটিবিলিটি একটা গুন বটে, তবে সেটা এমপ্লয়্যবিলিটির খুব ছোট একটা অংশ। অথচ, এই ছোট অংশটা, মানে হরমুজ প্রনালি পার হতে না পেরে যোগ্য ক্যনডিডেট দেখা পান না ইন্টারভিউয়ারের, এমপ্লয়ার দেখা পান না হয়তো সেরা লোকটার। সংখ্যার বিপত্তি। ATS বা এরকম স্মার্ট সিস্টেমের জগাখিচুড়িও থাকে। সেটা নিয়ে অন্যত্র লিখেছি।
আবার, এইচ.আর বসের কাছে শুধু প্রাথমিক টেস্টগুলোর নম্বরের ভিত্তিতে হায়ার স্কোরারদের ফাইলগুলোই ফাইনাল ভাইবা বা ডিসিশনের জন্য উপস্থাপিত হয়। লোয়ার নম্বর যাদের, তারা বা তাদের প্রোফাইল বা ফাইল এইচ.আর বসের চেহারা দেখারও সুযোগ পায় না। বস মনে করেন, হায়ার নম্বর যারা পেয়েছে, বিশেষ করে আমার সুপার সিস্টেম পার হয়ে, তারা নিশ্চিতভাবেই টপ ক্লাস পিপল। যারা বাদ পড়েছে, তারা ছিল লোয়ার কোয়ালিটি। মানে, নম্বর আমাকে একটা হায়ার ও লোয়ার কোয়ালিটিতে ক্লাসিফাই করে দেয়। নম্বরই হয়ে পড়ে সেখানে আমার পরিচয়, ভাগ্য নির্ধারক। আবার, রেটার, বস বা তার টিম হাইলি নম্বর নির্ভর।
কিন্তু, নম্বর নির্ভর হবার বিপদ আছে। একটু আগেই বলেছি, যে, ডিলিং টিম ও সিস্টেমের গলত ও ব্যাকওয়ার্ডনেস কী বিপদ বানায়। তারপর আরেকটা বিপদ হয়। সেটা ইউনিভার্সাল। নম্বর বিশুদ্ধভাবে একজন মানুষকে রিপ্রেজেন্ট করে না। অতিরিক্ত নম্বর নির্ভরতা একটা বায়াস। আপনি ডিল করছেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের সবথেকে বিচিত্র চিজ নিয়ে, যার নাম মানুষ। নম্বর নির্ভরতা আপনার সিস্টেম, প্রাকটিস, প্রসেস তথা ওভারঅল কালচারকে Humane করতে দেয় না। অথচ সেটা Humane হওয়াটা খুবই দরকার।
আমি একটা টাটকা চাক্ষুস উদাহরণ বলি। এক ভদ্রলোকের সাজেশনে একটা অনলাইন সাইটে একটা অ্যাপটিচুড টেস্ট দিতে বসলাম। সিচুয়েশনাল রিজনিংয়ের প্রশ্ন। ৪ টা উত্তর দেয়া থাকে। আমাকে সবচেয়ে যথাযথ একটা আর সবচেয়ে অকার্যকর একটা উত্তর টিক মার্ক করতে হবে। পাশেই আবার সঠিক উত্তরও দেখা যাবে। আমি মার্ক করে সঠিক উত্তরের সাথে ক্রসচেক করতে গিয়ে দেখি, তারা যেটা সবচেয়ে অকার্যকর বলেছেন, সেটা তাত্বিকভাবে ঠিক থাকলেও, বহু বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি দেখছি, অন্য আরেকটা সঠিক হত। এবং, আমি এত বছরের গ্রাউন্ড অভিজ্ঞতায় জানি, আমি ঠিক ভাবছিলাম। কিন্তু, স্রেফ সিস্টেমের লিমিটেডশন আমাকে জিরো পাওয়াচ্ছে। যদিও আমি ঠিক।
এখানেই বিপদ। একটা মেকানাইজড সিস্টেম, রিজিড ও স্ট্যাটিক টেস্ট (যেটা মূল্যায়ন প্রসেসের অংশ) ডিজাইন করা হয় মেকার বা ড্রিমারের মনের মতো করে। হ্যা, অনেক ভেবে চিন্তে করা হয়, তারপরও তো সেটা একটা নির্দিষ্ট মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে ক্যারি করে। আরও ভাল করে বললে, সেটা HR বস (বা তারও চেয়ে খারাপ হলে তার কোনো স্যাঙ্গাতের) মনোভাবকে রিপ্রেজেন্ট করে তৈরী। এখন সেই সিস্টেম তো কাউকে যখন বিচার করবে, তাকে লো-স্কোরার দেখাবে, কারন, তার অ্যাপ্রোচ অব সিয়িং ও মেধা ভিন্ন হতে পারে। শুধুমাত্র অ্যাপ্রোচ ও POV এর ভিন্নতা (কিছু ক্ষেত্রে প্রার্থীর এক্ষেত্রে আপার হ্যান্ড হওয়ার কারনে) একজন প্রার্থীকে লো-স্কোরড গ্রেডিং করে ফেল করাচ্ছে।
এই বিপদের নির্বান অনেক গভীরে। অনেক কিছু করতে হবে। এইচ.আর হেডকে খলিফা হারুনের মতো ছদ্মবেশে বিচরন করা হতে অনেক কিছু করতে হবে। একজন হেড অব এইচ.আর কে খলিফা হারুনুর রশিদের মতো করে ছদ্মবেশে ঘোরার গুরুত্ব কতটা? আমি মনে করি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে গোপনে ফেসবুকে, লিংকডইনে, অফিসে, অন্যত্র তার সিস্টেম, কালচার, অপারেশন নিয়ে নজরদারী করা উচিত। তার টিমের মানুষদের কাস্টমার ডিলিং দেখা উচিত। তাকে ক্যনডিডেট হয়ে তারই ইন্টারভিউ সিস্টেমে নিজেকে বাজিয়ে দেখে চাক্ষুস পরীক্ষা করা উচিত।
ফিতা কাটা, ক্লাবিং আর মিটিংয়ে কফি পানের বাইরেও তাকে ফিল্ডে সময় দিতে হবে। সারাক্ষণ নিজের ফ্ল্যাটের আর পাতায়া ট্রিপের স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি তাকে ডেভেলপমেন্ট ও ভিশনারী বিষয় নিয়ে ভাবতে সময় দিতে হবে। তাকে পড়াশোনা করতে হবে।
সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, সেটা হল, ওভারঅল এইচ.আরকে ডায়নামিক, চেইঞ্জ বেজড, এমপ্যথেটিক, কমপ্যশনেট, স্মার্ট, রেসিলিয়েন্ট হতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মী হায়ার করবার ড্রাইভের অংশ হিসেবে রেজুমে চাওয়া বা রেজুমে ড্রপ করবার দিন খুব শিগগীরই শেষ হতে যাচ্ছে-এমন একটা ভবিষ্যতবাণী দিতে পারলে আমি খুব খুশি হতাম। তবে আমি যেহেতু জোতিষী নই, তাই সেই ভবিষ্যতবাণী দিচ্ছি না।
তবে, আমি সাধুবাবা হতে তো দোষ নেই। অন্তত ১৮ বছর ধরে এইচ.আর নিয়ে প্যশনেটলি কাজ করলে আমি কিছুটা সাধুগিরি তো করতেই পারি।
তো, আমি বলতে চাই, হায়ারিং ড্রাইভের অংশে রেজুমের পার্টটা ভুলে যাওয়া বা ভুলিয়ে দেয়া যায় কিনা-একটু সিরিয়াসলি ভাবুন। প্রফেশনাল সিভি, স্মার্ট সিভি, ফরম্যাটেড সিভি, ইনফোগ্রাফিকস সিভি, সিভি ডক্টরের সিভি, সিভিঞ্জিনিয়ারের সিভি, ম্যাট সিভি, ঝাকমারি সিভি, আজমীর শরিফের সিভি, ফালতু সিভি, ওয়াও সিভি-এসব ঘাঁইকিঁচিং শেষ করে দেয়া উচিত। রেজুমে ইজ সিম্পলি এ্যন এডভারটাইজমেন্ট। ফরগেট এ্যডভারটাইজমেন্ট, ফোকাস অন দ্য প্রোডাক্ট সোললি।
কীভাবে?
রেজুমে না চেয়ে একটা দারুন গুগল ফরম করুন। অথবা, আপনার একটা সিজস্ব জব পোর্টাল যুক্ত করুন আপনার ওয়েবসাইটে। সেখানে, আপনার জব/জবসমূহের সাথে খুবই নিবিড় ও কমপ্রিহেনসিভ-এমন একটা তথ্য নেবার উইন্ডো তৈরী করুন। তথ্য উইন্ডোগুলো খুবই ভেবেচিন্তে গবেষণা করে করুন। যেই তথ্য আপনার জব/পজিশনটির বিপরীতে কাউকে নেবার জন্য প্রচন্ড হেল্পফুল হবে।
সেই গিভেন তথ্য বিশ্লেষণ করে ক্যানডিডেট ডাকুন। বেশি কাজে দেবে।
এরকম করতে পারলে রেজুমে নিয়ে যে ধুন্দুমারটা চলছে, যেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে, সেটা বন্ধ হবে। আপনিও ভাল মানুষ বেশি পাবেন, সহজে। ভাল মানুষেরাও সহজে ভাল জব বেশি বেশি পাবে।
রেজুমে শুধু একটা বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং বা বিলবোর্ড মাত্র। ওটাই সব না। এমনকি ওটা ট্যালেন্টের ১% ও না।
বাজারে বিজ্ঞাপন দেয় না, এমন সব কিছুই কিন্তু রদ্দি না। মার্সিডিসের বিজ্ঞাপন আপনার কতবার রোজ চোখে পড়ে?
এফোর্ট, সময় ও টাকা বাঁচাতে নামজাদা প্রতিষ্ঠানগুলো (ও তাদের HR) জব সিকারদের বিশ্ববিদ্যালয়, ডিগ্রী, ল্যাবেল বা ট্যাগ (সার্টিফিকেশন), এক্স এমপ্লয়ার, মার্কেট পপুলারিটি, রেফারেল পাওয়ার-এসব অক্সিলিয়ারি ফ্যাক্টরের ওপর সোললি নির্ভর করা শুরু করে।
এগুলো ওই তিন বাঁচায়। তবে যেটাতে কমপ্রোমাইজ করায়, সেটা হল কোয়ালিটি, কোয়ালিফিকেশন, কমপিটেন্সি ও ভ্যালু অ্যাডিশন। ওই তিন বাঁচানোর বিনিময়ে তারা বাজারের বেস্টকে পায় না; যেটা পায় তা হল বেস্ট অ্যাভেলেবল।
খুব শিগগীরই একটা সময় আসছে, বা, অলরেডি হয়তো সময়টা অনেকটাই শুরু হয়েও গেছে। সেটা হল, চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রী থাকার দিকটা অবসোলেট হয়ে পড়বে। এমনকি, অ্যাকাডেমিক ডিগ্রী খুঁজবার বাধ্যবাধকতাই আর থাকবে না। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সুস্পষ্ট ও সু-ডিজাইনকৃত কমপিটেন্সি ম্যাপ ও কমপিটেন্সি বেজড হায়ারিং এর আওতায় কেবলমাত্র স্কিল সেট ও ওভারঅল এমপ্লয়েবিলিটি জাজ করেই যোগ্য লোককে অনবোর্ড করতে শুরু করবে। অর্থাৎ, অচিরেই আমরা চাকরির বিজ্ঞাপনে ও চাকরির মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অ্যাকাডেমিক সাবজেক্ট এর উল্লেখ, বাধ্যবাধকতা ও মূল্যায়নকে হারিয়ে যেতে দেখতে পারি। আসলে সেটা হবার কথা আরও আগেই ছিল। এমপ্লয়্যাবিলিটি ফিচার নির্ধারনে আমরা বরাবরই কমপিটেন্সি ইন্ডিকেটর ও সোর্সকে কমপিটেন্সি হিসেবে ভুল ট্রিটমেন্ট দিয়ে আসছি বহুদিন আগে হতেই।
চাকরির কাম্য যোগ্যতার নির্নায়ক হিসেবে কখনো আমরা বলছি Trait Category’র কথা, কখনো আবার Proxy Signal Factorকে ধরে নিচ্ছি যোগ্যতা, অথচ, সেখানে আরেকটা দিক রয়ে গেছে, যাকে বলা যায় True Employability target Trait
Employer proxy signal vs true employability target trait
তারা যা দেখে (Signal) vs তারা আসলে যা খোঁজে (True Trait)
গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি/Basic cognitive skills & discipline
পূর্ব অভিজ্ঞতা/Job-readiness, responsibility
ইংরেজি ভাষাজ্ঞান/Global communication readiness
কম্পিউটার স্কিল/Efficiency & documentation skill
নামকরা ভার্সিটি/Competitiveness & exposure
কনফিডেন্স/বডি ল্যাংগুয়েজ/Client handling, presentation skill
ভালো রেজুমে/Attention to detail
ট্রেনিং/কোর্স/Growth mindset
ভলান্টারি কাজ/Teamwork & initiative
ভালো CGPA/Consistency & focus
নামকরা কোম্পানির অভিজ্ঞতা/Professional grooming
কমপিটেন্সি ডিফাইন, ডিজাইন ও ইভ্যালুয়েট করবার অক্ষমতা সামাল দিতে কমপিটেন্সি ইন্ডিকেশন বা সিগনাল ট্রেইটটাকেই কমপিটেন্সি হিসেবে ট্রিট করবার আমাদের টেনডেনসি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সেটা ঘটলে ’সুশিক্ষিত’ প্রার্থীর বদলে স্বশিক্ষিত প্রার্থীর কদর বাড়তে পারে, যা এখন একদমই নেই। কম্পিটেন্সি ইন্ডিকেটর ও সোর্স এর ওপর বায়াজড ডিপেন্ডেন্সি হতে বের হয়ে সরাসরি জব রেডি স্কিল, নলেজ ও পারসোনালিটি ট্রেইট অ্যাসেস করবার চাহিদা, সক্ষমতা ও বিবেচনা তৈরী করতে পারলে হায়ারিংয়ের ধারনাটাই আমূল বদলে যেতে পারে। আমাদের বুঝে নেবার সময় হয়েছে, যে, সৈয়দ বংশের সাথে জড়িত বংশলতিকার ইতিহাস সম্ভ্রান্ততার লক্ষণ হতে পারে, সম্ভ্রমের উৎস হতে পারে, তবে সেটা কখনোই সম্ভ্রম নয়।
কমপিটেন্সি ও এমপ্লয়্যাবিলিটি বাজিয়ে দেখার অনিহা ও অক্ষমতার কারনে তারা ভরসা করেন কমপিটেন্সি সোর্স, ইন্ডিকেটর ও একরকম রেজাল্টের ওপর। কিন্তু, মনে রাখতে হবে, কমপিটেন্সি ইন্ডিকেটর আর কমপিটেন্সি এক না। ধরুন, অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট-এটা একটা কমপিটেন্স বা কমপিটেন্সি ইন্ডিকেশন। যাদের রেজাল্ট ভাল, ভাল যায়গায় পড়াশোনা করেছেন, ভাল সাবজেক্টে-তারা ইন জেনারেল মেধাবী, বুদ্ধিমান, চৌকষ, দক্ষ হন। কিন্তু, আবার, এরকম একটি ডিগ্রী-ইটসেলফ একটা যোগ্যতা না। এটা যোগ্যতার ফ্যক্টর বা সোর্স মাত্র। মক্কা গেছে-মানেই হাজী না। লম্বা দাড়ি আছে মানেই ইমাম না। দাড়ি তো রবী ঠাকুরেরও লম্বা ছিল। কার্ল মার্কসেরও ছিল।
কমপিটেন্সি, এমপ্লয়্যাবিলিটি একক কোনো ইন্ডিকেটর বা ফ্যক্টরের বিচ্ছুরন না। ওটি একটি জটিল চলক। সবচেয়ে বড় কথা হল, কমপিটেন্সি হল একটি আপেক্ষিক ও কেস বেসিস বিষয়। একেক পজিশনের রিকয়ার্ড কমপিটেন্সি একেক রকম। গণ বা সার্বজনীন কমপিটেন্সি বলে কিছু নেই। পুলিশ আর চোরের কমপিটেন্সি কি কখনো এক হবে? তাহলে কোম্পানীর জেনেটার, ডিরেক্টর, মার্কেটিয়ার, এইচ.আর সরদার-সবার কমপিটেন্সি ম্যাট্রিক্স ও বেঞ্চমার্ক সেম হবে কেন?
বায়াস, ইন্ডিকেটর ম্যানিয়া ও পিয়ার রিভিউকে অতিরিক্ত প্রায়োরিটি দিতে গিয়ে স্বশিক্ষিত কিংবা একটু ইনট্রোভার্ট, একটু নিভৃতে থাকা ট্যালেন্টের খোঁজ ওই প্রতিষ্ঠানগুলো কখনো পান না। তারা পান সেলেবকে।
হ্যা,
দেশের বেস্ট ইউনিভার্সিটির স্টূডেন্ট,
দেশের বেস্ট কোম্পানীর ’এক্স’,
দেশের বেস্ট গুরুদের সহমত ‘ভাই’,
দেশের হাইপার রেটেড জনপ্রিয় সেলেব,
এর কোনোটাতেই দোষ নেই। ওরকম একজন মানুষ অবশ্যই যোগ্য হতে পারেন। ওগুলো হওয়া দোষের নয়। দোষ হল, যদি আপনি ওর একটাকেও যোগ্যতা ও নিয়োগযোগ্যতার ডিফল্ট ফ্যক্টর ধরে নিয়ে হায়ার করেন।
রিমেম্বার, যোগ্যতা ও নিয়োগযোগ্যতা ডিফল্ট কিছু না। ওটা খুবই ডায়নামিক একটা ফ্যক্ট, যা আপেক্ষিকভাবে সময়, পজিশন, জব, কন্ডিশন, রিকয়ারড KSA-অনেক কিছুর ওপর ভর করে।
আমাদের দেশে সাম্প্রতিককালের বাজার বিশ্লেষণ ও নেটে কান পাতলে শোনা অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্যালেন্টের ঘাটতিতে মারাত্মক রকম ভোগার নানা কারন থাকলেও; এর জন্য ট্যালেন্ট মার্কেটে ট্যালেন্টের অভাব যতটা না দায়ী, প্রতিষ্ঠানের ট্যালেন্ট আইডেন্টিফাই করবার অক্ষমতা, অনিহা এবং ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্টে সমূহ ব্যর্থতা তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী। ট্যালেন্ট পাই না, নাকি ট্যালেন্ট চাই না-সেটা আমার কাজই বলে দেয়।
ওদিকে জব সিকারদের কাছেও একধরনের ধোঁয়াশা আছে ট্যালেন্ট হাইভ খুঁজে নেবার ক্ষেত্রে।
স্টার, MNC, (কিং)কংলোমারেট, ‘সুনামধন্য’ ও ‘জায়ান্ট’ অরগানাইজেশনে কাজ করা আমাদের সবার অধরা স্বপ্ন। আমারও।
তবে, এরকম স্টার, MNC, (কিং)কংলোমারেট, ‘সুনামধন্য’ ও ‘জায়ান্ট’ অরগানাইজেশন নিয়ে আমাদের মধ্যে একধরনের অবসেশন থাকে।
স্টার, MNC, (কিং)কংলোমারেট, ‘সুনামধন্য’ ও ‘জায়ান্ট’ অরগানাইজেশনরা বাই ডিফল্ট স্বর্গীয় ফল্গুধারায় আমোদিত, সেখানে কেবলই সুখ আর সুখ, সেখানে পা রাখতে পারলেই ’দিব্যান লোকান গচ্ছাতু’ মানে নির্বান প্রাপ্তি নিশ্চিত-এরকম একটা মনসুখ আমাদের মানস জগতে নিয়ে আমরা বড় হই।
এই পর্যন্ত সব ঠিক আছে। স্বপ্ন দেখতে নেই মানা। বাংলাদেশে কেবল একটা জিনিসই মানা-কথা বলা। কেউ চায় না আপনি কথা বলুন। কথা বললেই চাকরি নেই।
তো, ঠিক নেই তাহলে কোনটা? ঠিক নেই স্টার, MNC, (কিং)কংলোমারেট, ‘সুনামধন্য’ ও ‘জায়ান্ট’ অরগানাইজেশনে চাকরি করে আসলেই সে বিশাআআআআল তালেবর ও যোগ্যতার নক্ষত্র-এই অবসেশন পোষন করা আর আসামাত্র হরিবোল হরিবোল করে বিনা বাক্য ব্যয়ে, বিনা পরীক্ষায় তাকে ঘরে তুলে নেয়া।
বিগত ৯০ দিনে আমি ওই স্টার, MNC, (কিং)কংলোমারেট, ‘সুনামধন্য’ ও ‘জায়ান্ট’ অরগানাইজেশনের অন্তত প্রনিধানযোগ্য সংখ্যার কিছু মানুষকে ঘটনাক্রমে বাজিয়ে দেখার বিরল সুযোগ পেয়েছিলাম। অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তি হরিবোল বা হরাইবোল।
তাই বলি কি, অফিসের লনে গ্রীক ভাইস্কর্য ও অ্যাকুইরিয়ামে রঙিন মৎস বিচরন করে-এসব দেখেই প্রেমে পড়ে যাবেন না। মক্কা থেকে এলেই হাজী না। চাকরি প্রত্যাশী হোন কিংবা চাকরিদাতা-যেই হোন, একটু বাজিয়ে নিন। জুব্বা দেখেই পকেটে ঢুকবেন না। বা, গোঁফ দেখেই শিকারী বেড়াল ভেবে ওয়াইল্ড কার্ড দেবেন না। খেলিয়ে, তড়পিয়ে তারপর বরশিতে গেঁথে তাকে ঘরে তুলুন।
কারন, দেশটা বাংলাদেশ।
আমি অনেকবার বলেছি, যে, খুব শিগগীরই একটা সময় আসছে, বা, অলরেডি হয়তো সময়টা অনেকটাই শুরু হয়েও গেছে। সেটা হল, চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রী থাকার দিকটা অবসোলেট হয়ে পড়বে। এমনকি, অ্যাকাডেমিক ডিগ্রী খুঁজবার বাধ্যবাধকতাই আর থাকবে না। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সুস্পষ্ট ও সু-ডিজাইনকৃত কমপিটেন্সি ম্যাপ ও কমপিটেন্সি বেজড হায়ারিং এর আওতায় কেবলমাত্র স্কিল সেট ও ওভারঅল এমপ্লয়েবিলিটি জাজ করেই যোগ্য লোককে অনবোর্ড করতে শুরু করবে। অর্থাৎ, অচিরেই আমরা চাকরির বিজ্ঞাপনে ও চাকরির মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অ্যাকাডেমিক সাবজেক্ট এর উল্লেখ, বাধ্যবাধকতা ও মূল্যায়নকে হারিয়ে যেতে দেখতে পারি। আসলে সেটা হবার কথা আরও আগেই ছিল।
বাংলাদেশের অরগানাইজেশনগুলি (#সবাই১না) ট্যালেন্ট বা কমপিটেন্সি এ্যসেস করবার নিজস্ব সক্ষমতার অভাবেই হোক, কিংবা অনিহাতেই হোক, ট্যালেন্ট ইন্ডিকেটর বা কমপিটেন্সি ইন্ডিকেটরের ওপর ভরসা করে, কমপিটেন্সি ইন্ডিকেটরের ওপর এমপ্লয়্যবিলিটি কমফারমেশনকে ছেড়ে দেয়। যেমন: একাডেমিক এক্সেলেন্স ও এক্সপোজার নিজেরা যাচাই করার রাস্তায় না হেঁটে শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা রেজাল্ট দেখে তার একাডেমিক কমপিটেন্সির নিশ্চয়তা ধরে নেয়। যেখানে, বাংলাদেশের একাডেমিক কার্যক্রম, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন কতটা হাস্যকর রকমের কমপ্রোমাইজড (#সবাই১না)-সেটা আমরা জানি।
ক্যন্ডিডেটদের কোনো একটা প্রফেশনাল স্কিলের ওপর তার দখল জানতে তাকে বাজিয়ে দেখার বদলে সহজ রাস্তায় হাঁটে, তা হল ওই স্কিলের ওপর তার কয়টা ভূবনখ্যাত C (Certified) লেবেল গায়ে আঁটা আছে। স্বশিক্ষিত কিংবা হ্যান্ডস অন Exposure কে এখানে প্রায় পাত্তাই দেয়া হয় না। এমনিতে বাঙালিদের কাগজ ও টাইটেলের ওপর মুগ্ধতা নতুন কিছু না। দখলদার বৃটিষদের দেয়া টাইটেল পেতে তাই তো আমরা মরিয়া দেখতাম সেই যুগের মহান দেবতাদের। সেই লিগ্যাছি ধরে, আজও, নামের শেষে একটা ছাপ্পর থাকাকে আমরা বেশি প্রায়োরিটি দিই একজন স্বশিক্ষিত বা কাজ করে শিক্ষিত প্রফেশনালের ওপর। বাজিয়ে দেখার অনিহা কিংবা অক্ষমতা-উভয়ই দায়ী সেজন্য।
আমার কথার প্রমাণ পাবেন, যদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (#সবাই১না) চাকরির বিজ্ঞাপনগুলোর দিকে একটু নজর দেন। সেখানে নানা রকম ইন্ডিকেটরের ছড়াছড়ি। কিছু কিছু আবার ম্যানডেটরি করে দেয়া। তারপর ইন্টারভিউতে যান। দেখবেন, তাদের মেধা যাচাইয়ের প্র্রক্রিয়া প্রায় নেই, যা আছে, তা গৎবাঁধা। (আমি বলছি না, যে, ওই ইন্ডিকেটর চাওয়া এ্যবসলুটলি খারাপ। আমি বলতে চাইছি ইন্ডিকেটরকে মাকছুদ বা মঞ্জিল ভাববার স্বভাব বদলাবার কথা। জ্বর যেমন রোগ না, এটা একটা অসুস্থতা এবং একটা মূল অসুখের ইন্ডিকেটর। তাই জ্বরের চিকিৎসা যথেষ্ট না, চিকিৎসা হতে হয় মূল রোগের। সেজন্য ডাক্তাররা জ্বর কমাবার ওষুধ দেন ঠিকই, কিন্তু, ডায়াগনসিস করতে দেন, মূল রোগ জানবার জন্য। স্পোকেন ইংলিশ ক্যন্ডিডেটের যোগ্যতা না, মূল যোগ্যতা কমিউনিকেশন স্কিলের একটা ছোট অংশ মাত্র। গ্রাজুয়েশন যোগ্যতা না, যোগ্যতার ইন্ডিকেশন মাত্র। ইন্ডিকেশন যেমন দেখবেন, তেমনি এমপ্লয়ারকে মূল যোগ্যতা যাচাই করে নিতে হবে নিজের সিস্টেম ও মেকানিজমে। বিশেষত সেই দেশে, যেখানে এমনকি PHD পর্যন্ত কেনাবেচা হয়, যেখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় হতে মিথ্যা স্টাটিসটিক প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়।
যেসব প্রতিষ্ঠান ইন্ডিকেশনকে যোগ্যতা ধরে চলেন, তারা ভুল করছেন। যারা মূল যোগ্যতাকে যাচাইয়ে অক্ষম, তারা সোললি ইন্ডিকেশন নির্ভর হয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠানের বিজনেসের বিপরীতে কমপিটেন্সি ম্যাপিং করে ক্যানডিডেটদের কমপিটেন্সি কমপ্লাই করে দেখার সক্ষমতা ক্রিয়েট না করে থাকলে ও প্রাকটিসে না থাকলে আপনি আপনার বেস্ট যে রিক্রূট-তাকেও ভুল রিক্রুটমেন্ট ধরতে পারেন। অথবা, বলতে পারেন ঝরে বক পড়বার মতো বিষয়।
B. Employee bad practice বা জব এক্সপেকট্যান্টদের অসঙ্গতি, যা তাদেরকে জব পেতে দিচ্ছে না বলে মনে করেন এমপ্লয়ার ও বিশেষজ্ঞরা: –
১. বেসরকারী সেক্টরে যে ধরনের দক্ষতা, মেধা তথা সার্বিক যোগ্যতা দরকার পরে-সেটি না থাকা, ভুল প্রস্তুতিকেই যোগ্যতা মনে করে বড় হওয়া এবং সেটিকে নিয়েই ওভার কনফিডেন্ট থাকা। বিস্তারিত বলছি না। কারন যোগ্যতার বিষয়টা বিশাল। শুধু গতানুগতিকভাবে ইংরেজি পারা, কমপিউটার চালাতে পারা আর গৎবাঁধা কয়েকটা সফট স্কীলে ভাল থাকাকে মীন করছি না।
২. সময় মতো ইন্টারভিউতে না যাওয়া, একদমই না যাওয়া এমনকি, না গেলে ইনফর্ম করার ভদ্রতাও না দেখানো।
৩. অবাস্তব ও ফ্যান্টাসীময় প্রত্যাশা থাকা। সেটা হতে পারে স্যালারী, হতে পারে পজিশন, কর্মস্থল, ফ্যাসিলিটি বা চাকরির শর্ত।
৪. অন্যসব যোগ্যতা থাকলেও ইন্টারভিউ দেবার বিষয়ে অপ্রতিভ হওয়া, নিজেকে প্রেজেন্ট করতে না পারা।
৫. ভুল এপ্রোচ। এটা হতে পারে-ভুল প্রতিষ্ঠান বা ভুল পজিশনে এপ্লাই করা; ভুল পন্থায় এপ্লাই করা যার মধ্যে আবার আছে এটাচমেন্ট বা কভারমেইল ছাড়া এপ্লাই করে বসা; এমনকি, ভুল স্থানে লবি করা এবং রেফারেল নিয়ে তুঘলকির চেষ্টাও একটা ভুল।
৬. জব সীকারদের ব্যাকগ্রাউন্ড, মার্কেট রেপুটেশান এবং সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতিতে আপত্তিকর ইস্যুর যোগ থাকা।
৭. চাকরি প্রত্যাশীদের চাওয়া ও পাওনার মধ্যে সমন্বয় ও ভারসাম্য না থাকা। যার বেতন হবার কথা বড়জোর ২৫ হাজার, সে মনে করে তার বেতন তো ১ লাখ হতেই হবে। আবার হয়তো, ব্যক্তি বড়জোর অফিসারের চাকরির যোগ্য। তিনি ধরে বসে আছেন, জি.এম পজিশন না দিলে যামুই না। অনেক সময় তারা কী চান-সেটা নিজেরাও শিওর থাকেন না।
৮. চাকরি কনফার্ম হবার পরে সময় হলে আর জয়েন না করা, জয়েন করবেন না-সেটা এমপ্লয়ারকে না জানানো, বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানে কোনোরকম নোটিশ না দিয়ে পালানো-এসবেরও জন্যও দুই পক্ষ ভুগছেন।
৯. সার্বিকভাবে, চাকরি প্রত্যাশীদের সিরিয়াসনেসের অভাব, যার মধ্যে আমি অনেক কিছুকেই যুক্ত করতে পারব, যেমন: – কার্যকর নেটওয়ার্ক না তৈরী করা, কানেকটিভিটি না থাকা, ইন্টারভিউতে পি.কে’র মতো হাজির হওয়া, মঙ্গলগ্রহের এলিয়েনদের মতো রেজুমে সাবমিট করা, রেজুমীতে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেয়া, “যা দেবেন তাই করব”-বলে ফাইনালী “এই ……….লের চাকরি মাইনষে করে”-বলে দিয়ে ফোন অফ করে রাখা।
১০. চাকরি দাতাদের প্রতি অত্যন্ত বিদ্বেষপূর্ণ ও ভুলভাল ধারনা পোষণ, যা অন্য আরো ভুলের জন্ম দেয়। নিজেকে রবিনহুডের মতো বড়লোক কিলার কিংবা মাও জে দংয়ের মতো বিপ্লবী সমাজতন্ত্রের চ্যালা ভাবা আর তার প্রকাশ করা। আর যদি এগুলোর একটাও আপনার মধ্যে না থাকে অথচ আপনি কর্মী বা চাকরি না পেয়ে জেরবার হতে থাকেন- তাহলে ধরে নিতে হবে, আপনাকে বা আপনার প্রতিষ্ঠানকে জ্বীনে পেয়েছে। ওঁঝা ডাকুন।
১১. ইন্টারভিউতে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও না যাওয়া। এমনকি এমপ্লয়ারকে কোনো রকমভাবে না জানানো।
১২. চাকরির বিজ্ঞাপন ভাল করে না পড়ে, ক্রাইটেরিয়া মিট না করা সত্বেও এপ্রোচ বা এপ্লাই করা। ফলে হাজার হাজার জাংক হতে বেছে একটি ভাল প্রাথমিক তালিকা করতে HR এর পশ্চাৎবায়ু বেরিয়ে যাওয়া।
১৩. বিজ্ঞাপনে বর্ণিত আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরন না করা। ঠিকমতো তথ্য না দেয়া বা ভুল তথ্য দেয়া। প্রায়শই, “আমিতো এফ্লাই করি নাই, আমার বন্দু মনে অয় সিবি পাডাই দিছে” বলে দায় সারা।
১৪. ১.৫ মাস ফলোআপ করার পরে জয়েন করার দিন ফোন করে জানানো, “আমি জয়েন করব না।”
১৫. ২ মাস রিলিজ টাইম নিয়ে তারপর আগের অফিসে গিয়ে এপয়েন্টমেন্ট লেটার দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বেতন/পজিশন আপগ্রেড করিয়ে নিয়ে নতুন চাকরিদাতাকে ১.৫ মাস পরে কলা দেখিয়ে দেয়া।
১৬. দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করে অতঃপর জয়েন করেও, ৮ দিনের মাথায়, “আমার তিনগুন বেতনের একটা চাকরি হয়েছে, কালই জয়েন” বলে পত্রপাঠ পরের দিন হতে হাওয়া হয়ে যাওয়া।
১৭. আগের অফিস হতে রিলিজ না নিয়ে বা তাদের কোনোরকম না জানিয়ে বেতন পাবার পরে পালিয়ে যাওয়া। নতুন অফিসে ৭ দিন গোপনে অফিস করে, যদি দেখা যায়, তারা মানুষ ভাল না, আবহাওয়া খারাপ, ব্যস, টুপ করে কেটে পড়া আর আগের অফিসে ৮ম দিনে গিয়ে স্যুত করে ঢুকে “জরুরী কাজে বাড়ি গিয়েছিলাম” বলে চাকরি হালাল করা।
১৮. ইন্টারভিউ দিতে আসার সময় ফতুয়া পরে, চপ্পল পায়ে গলিয়ে চলে আসা। কলমটা তক সঙ্গে না আনা।
১৯. কারো স্ট্রং অনুরোধে প্রার্থীকে প্রাথমিক যাঁচাইয়ের জন্য অনেক কষ্টে তালিকাভূক্ত করবার পরে যখন ইন্টারভিউয়ের শিডিউল দেবার জন্য ফোন দেয়া হয়, তখন তার ফোন না ধরা, মিসড কল ব্যক না করা। আর দশবার রিং হবার পরে ধরলেও, “আমি তো ৭ দিনের আগে ঢাকা আসতে পারব না, বেতন কত দিবেন, সকালে ইন্টারভিউ দিতে পারব না, কে আমার সিভি দিছে আমি তো জানি না, আব্বুকে জিজ্ঞেস করে নিই এই চাকরি করব কিনা”-নানা বাহানা দেয়া।
২০. রিটেন এক্সাম হবে-জেনেই “আমি কি এহনো রিডেন দেওনের মতো ছুডো পুস্টে আছিনি?” বলে ইন্টারভিউয়ারকে স্পিকার বানিয়ে ভেগে যাওয়া।
বাকিগুলো আপনারাই বলুন। তবে যে পক্ষেরই হোক, যে পরিপ্রেক্ষিতেই করা হোক, এইসব অসঙ্গতি ও অবাস্তব চর্চা বর্জন করাই কাম্য।
এখন, শুধু ট্যালেন্ট একুইজিট করলেই হবে না। তাদের ধরে রাখা এবং ব্যবহার করতে পারাও তো একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। কেন ভাল চাকুরীজীবীরা, মানে ট্যালেন্টর অন্যত্র চলে যায়-সেই প্রশ্নের সমাধানও ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও একুইজিশনের আলোচনায় আসতে হবে। আপনি যদি ভাল লোক হারাতে থাকেন তাহলে ওই লোক গুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকে খেয়াল করুন।তার নিকটস্থ কর্মকর্তারাই এর পিছনের বড় কারন। যে চলে যায় সে ওই কর্মকর্তাদের থেকেই অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আহরণ করে সরাসরি তাদের সাথেই প্রতিযোগীতায় নেমে পড়ে। প্রতিষ্ঠান হতে মানুষ চলে যাবার নানা কারন থাকে। ইন ফ্যক্ট, মানুষের চাকরি বদল একটি অবশ্যম্ভাবি বিষয়। একে একশো ভাগ জিরো কখনো করা যাবে না। উচিতও না।
একইভাবে, প্রতিষ্ঠানে মানুষ ধরে রাখারও নানা কায়দা থাকে। এর মধ্য হতে ‘কিছু’ প্রতিষ্ঠান এবং ‘কিছু’ পজিশন হোল্ডার খুব সেঁকেলে ও মান্ধাত্যার আমলের একটি কৌশল এখনো প্রয়োগ করাকে শ্রেয়তর মনে করেন। এবং, কার্যত প্রয়োগও করেন।
সেটা হল ‘দুর্বল’ ক্যানডিডেট হায়ার করা।
আর্থিকভাবে নিডি এবং যোগ্যতায় দুর্বলতর মানুষটিকে হায়ার করার পক্ষপাতি তারা। যে চিন্তাটা কাজ করে, তা হল, সে সহজে সুইচ করবার কথা ভাববে না।
মুশকীল হল, জ্যান্ত মাছটা লাফিয়ে ব্যাগ হতে পড়ে যেতে পারে, এই ভয়ে জ্যান্ত মাছ না কিনে মরা মাছ কিনলে পঁচা পড়বার ঝুঁকি থাকে। আর জ্যান্ত মাছের সেবা ও স্বাদ হতেও বঞ্চিত হতে হয়।
রিটেইন করবার আরও ভাল ও কার্যকর পন্থা রয়েছে। সেই পথে তারা হাঁটতে চান না। কারন, ওগুলো অনুসন্ধান ও বাস্তবায়ন করতে হলে কষ্ট করতে হয়। গতরের তেল চর্বি গলিয়ে খাটতে হয়। সেটা তারা করবেন না। সারাজীবন এত এফোর্ট দিয়ে যে পজিশনটা গড়ে নিয়েছেন, সেটা এনজয় করবেন কখন তাহলে?
ভাল কথা, কিছু কিছু বোকা পশ্চিমা HR চিন্তাবীদ বলে থাকেন, একটি প্রতিষ্ঠানে প্ল্যান করে এবং সুসংগঠিত পথে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নতুন ও শ্রেয়তর মাথা (সম্ভবত ১৫%) এনে রিশাফল করা উচিত। এই বাণীর সত্যতা কেউ জানেন? বা কেউ কি সেটার সাথে একমত পোষণ করেন?
মার্কস ব্যাকিংহ্যাম এবং ক্যার্ট কফম্যানের মতে, “মানুষ তাদের ব্যবস্থাপককেই ত্যাগ করে কোম্পানি কে নয়। “ভালো চাকুরীজীবী ধরে রাখার জন্য কোম্পানি তাদেরকে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেয় এবং প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে তারপরেও দিনশেষে দেখা যায় তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে”।আপনার কোম্পানিতেও যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে প্রথমেই ব্যাবস্থাপক ও সুপারভাইজারের দিকে নজর দিন। প্রথমদিকে একজন চাকুরীজীবী তার অল্প বেতনের বিপরীতে কতবেশি মূল্য পাচ্ছে ও অন্যরা তার সাথে কেমন আচরন করছে সেটাই খেয়াল করে। এইপুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর।
[একটি অনলাইন রিসোর্স পেজে এইচআর এর উপর প্রকাশিত খুবই দরকারী একটি আর্টিকেল: সঠিক লোকবল: কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখার কৌশলসমূহ-নূর লিটা। আমার অনুরোধে লেখাটি ইংরেজি হতে বাংলা অনুবাদ করেছেন আমার সহকর্মী জনাব শফিক প্রিন্স। ধন্যবাদ মিস লিটা এবং মিঃ প্রিন্স।]
অধিক দক্ষতাসম্পন্ন এবং অভিজ্ঞ জনশক্তি হচ্ছে প্রতিটি ব্যবসায়ের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। যেখানে প্রতিটি মানুষ পৃথক পৃথক মূল্যবোধ এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে থাকে, সেখানে মানব ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কাজে পরিণত হয়েছে। চাকুরীজীবী এবং চাকুরিদাতা, উভয়ের মদ্ধ্যে স্বেচ্ছাঃপ্রণোদিত ভিন্ন ভিন্ন মতোবাদজনিত কারনে চাকুরি ত্যাগের যে প্রবোণতা বিদ্যমান তা দূর করার জন্য কর্মী সংযোগ এবং কর্মী বজায় রাখার কৌশলসমূহ নিয়ে মানব সমদ ব্যবস্থাপনায় উচ্চপদস্থদের অতিসও্বর হস্তক্ষেপ করা উচিৎ।
বৈশ্বিক পৃথিবী মেধাবীদের জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাবার ব্যাপারটি খুব সহজতর করে দিয়েছে। সম্প্রতি ২০১৪ সালে গ্যালাপ আয়োজিত জরিপ অনুযায়ী, প্রাপ্তি থাকা সত্ত্বেও ইউ.এস. এর ৫১ শতাংশ লোক কাজের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। আর্থিক অবস্থানের উপরেও সামাজিক এবং মানসিক পরিপূর্ণতা একজন কর্মীর প্রতিষ্ঠানে থাকা অথবা প্রস্থানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। এই ঘটনা জোরারোপ করে যে, প্রতিটি মানব ব্যবস্থাপনা অনুশীলনকারীর জন্যই কর্মী সংযোগ এবং ধারণ পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মী উভয়ের চাহিদা পূরণেই মৌলিক ভূমিকা পালন করে।
ডেলয়েট বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা মত প্রকাশ করেন যে- উন্নয়নশীল ব্যবসায়ের চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কর্মী সংযোগ এবং ধারণ মূল ভূমিকা পালন করে।
নিচে প্রতিষ্ঠানের সঠিক কর্মীবৃন্দকে দীর্ঘদিন ধরে রাখার ব্যাপারে মানব ব্যবস্থাপকদের অনুসরনীয় কিছু মৌলিক কৌশলসমূহ আলোচনা করা হলঃ
১. কর্মবিবরণী ব্যাখ্যাকরণ: কোন ব্যক্তিই এমন কোন কাজ করতে পছন্দ করবেনা, যা অন্য কারো দায়িত্ব তালিকার অন্তর্ভূক্ত। অতএব, কর্মী অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রাথমিক পর্যায়েই প্রতিটি কর্মীকে তাদের কর্মবিবরণী পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে হবে। এটা কেবল কাজকে সঠিক উপায়ে ব্যবস্থাপনা করতেই সাহায্য করেনা, একই সাথে কর্মদক্ষতার সঠিক পূণর্বিচারেও সহযোগিতা করে। যখন একজন পরিষ্কারভাবে জানে যে তার কাছে কি চাওয়া হচ্ছে তখন তার কাজের প্রতি মনোনিবেশ আরো ঘনিষ্ঠ হবে, এবং প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলে কিছু ভূমিকা পালন করাও সম্ভব হবে।
২. প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি লালন করা: স্বাধীনতা এবং নমনীয়তা হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য সবচেয়ে পছন্দনীয় সাংস্কৃতিক বোধগুলোর মধ্যে অন্যতম। হাজার বছরের নিয়ম রীতি অনুযায়ী মেধাবীরা সবসময় তাদের নিজস্ব স্বধীন মতামত অনুযায়ী কাজ করতেই পছন্দ করে। সবকিছুকে একসাথে গুছিয়ে নেবার চেয়ে, কর্মীদের স্বাধীন এবং নমনীয়ভাবে কাজ করতে দিলেই বরঞ্চ তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
৩. প্রশিক্ষণমূলক এবং উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা: অনবরত প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন কর্মসূচী একজন কর্মীর ব্যক্তিগত এবং পেশাদারী দক্ষতা বাড়িয়ে তোলে। এটা একই সাথে তাদের পেশাগত জীবনে ক্রমাগত উন্নয়নের ক্ষেত্র বাড়িয়ে তুলে তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহী করে তোলে।
৪. সুষম কর্মক্ষেত্র এবং সামাজিক জীবন প্রতিষ্ঠা করা: কখনো কখনো কাজের চাপ এতটাই বেশি থাকে যে কর্মী তার সামাজিক জীবন রক্ষা করতে পারেনা। আর যখন একজন কাজ এবং সামাজিক জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে পাবেনা, তখন প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাবার ব্যাপারে তার উচ্চপর্যায়ের প্রবণতা দেখা যাবে। তাই উপরস্থ কর্মকর্তারদের এ ব্যাপারে নজর দেয়া উচিৎ যাতে কর্মীরা বাড়িতে অবস্থানের সময় অন্তঃত কার্যক্ষেত্রকে ভুলে থেকে পরিমিত বিশ্রামের সুযোগ পান।
৫. অর্জনসমূহ শনাক্তকরণ: কর্মীদেরকে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে অর্জন শনাক্তকরণের একটি পদ্ধতি। এটা যে কেবল শারিরীক অস্তিত্বসম্পন্ন কোন বিষয় যেমন টাকা, কোন বস্তুই হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। এটা কেবল প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের পথে কর্মীর অবদানের যথাযথ এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মূল্যায়ণ। এটা হতে পারে সাধারন অঙ্গভঙ্গি, প্রশংসা, সাধারন বাক্যবিনিময় অথবা অভিবাদনমূলক কার্ড। পুরো দলকে একটি একক হিসেবে চিন্তা করে অথবা কাজ শেষে একটু হালকা পানীয়ের মাধ্যমে তাদের কঠোর পরিশ্রমকে সাধুবাদ জানানো কিছু ভাল উপায় হতে পারে।
৬. দলবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা: সুষ্ঠু দলবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা কেবলমাত্র শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কমাবে তাই না, এর সাথে সহকর্মীদের মধ্যে একপ্রকার শান্তিপূর্ণ সুষম প্রতিযোগিতারও অবতারণা করবে। অপরপক্ষে এটা কর্মীদের মধ্যে কর্মসন্তুষ্টিও নিয়ে আসবে।
৭. পদোন্নতি প্রদান: যদিও অর্থ একটি অনুপ্রেরণামূলক উপাদান, কিন্তু এমন কিছু সময় থাকে যখন অন্য কিছুও প্রয়োজন হয়। পরবর্তী ৫ বছরে আপনার কর্মীরা কি অর্জন করতে চায়, এ ব্যাপারে তাদের সাথে ব্যক্তিগত এবং দলগত আলোচনা করুন। প্রতিষ্ঠানে কিভাবে পদোন্নতি হয় এ ব্যাপারে কর্মীদের ধারনা দিন এবং তারা তাদের কাংখিত লক্ষ্যে কিভাবে পৌঁছাতে পারে এ ব্যাপারেও যথাসাধ্য পরামর্শ প্রদান করুন।
কেন ভাল চাকুরীজীবীরা অন্যত্র চলে যায়?
কর্মীরা কেন রেজিগনেশন দিয়ে চাকরি ছেড়ে চলে যায়-তার কারন নিয়ে গবেষনা করলে এক লাখ একটা কারন দেখানো যাবে। তবে, খুব ছোট একটা কারন বলি, যেটা সাইজে খুব ছোট আর স্বভাবে নিরীহ, অথচ, তার প্রভাব বা আছড় রাইফেলের গুলির মতো মারাত্মক। সবকিছু ছিড়েখুড়ে নিয়ে যায়। কী সেটা? সেটা হল মালিকের কথা “Who are you?” মালিক বা সি.ই.ও জানেনও না, যে, তার কোনো এক দিনের এক লাইনের একটা ছোট্ট কথাই তার কোনো এক টপ এক্সেকিউটিভকে সেইদিনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিইয়ে ফেলেছে, “এখানে আর নয়।” মানসিকভাবে সেদিনই ওই কর্মী প্রতিষ্ঠানের বাইরে পা দিয়ে ফেলেছেন। বাকি দিনগুলো শুধুই আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষায়। প্রতিষ্ঠানের টপ এক্সেকিউটিভরা মালিকের ১ টা ছোট্ট কথাতেই মানসিকভাবে চাকরিটা ছেড়ে দেন।
আপনি যদি ভাল লোক হারাতে থাকেন তাহলে ওই লোক গুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকে খেয়াল করুন।
তার নিকটস্থ কর্মকর্তারাই এর পিছনের বড় কারন। যে চলে যায় সে ওই কর্মকর্তাদের থেকেই অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আহরণ করে সরাসরি তাদের সাথেই প্রতিযোগীতায় নেমে পড়ে।
মার্কস ব্যাকিংহ্যাম এবং ক্যার্ট কফম্যানের মতে, “মানুষ তাদের ব্যবস্থাপককেই ত্যাগ করে কোম্পানি কে নয়।
“ভালো চাকুরীজীবী ধরে রাখার জন্য কোম্পানি তাদেরকে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেয় এবং প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে তারপরেও দিনশেষে দেখা যায় তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে”।আপনার কোম্পানিতেও যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে প্রথমেই ব্যাবস্থাপক ও সুপারভাইজারের দিকে নজর দিন।প্রথমদিকে একজন চাকুরীজীবী তার অল্প বেতনের বিপরীতে কতবেশি মূল্য পাচ্ছে ও অন্যরা তার সাথে কেমন আচরন করছে সেটাই খেয়াল করে। এইপুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর।
Employee attrition ও Employee turnover এই দুটি বিষয় নিয়ে নিজস্ব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান এবং সুস্পষ্ট ধারনাভিত্তিক শেয়ারিংয়ের জন্য কয়েকদিন আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। কয়েকটি মেসেঞ্জারভিত্তিক প্লাটফরমেও বিষয় দুটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পেতে পোস্ট দিই। বেশ কিছু মানুষ তাদের লব্ধ ধারনা শেয়ার করে বাধিত করেছেন। উপকৃত অবশ্যই হয়েছি।
তবে, আমার আরও একটু বোঝার দরকার ছিল। তাই আমি আরও একটু ঘাঁটাঘাঁটি করি। যার ভেতরে AiHR, ইন্টারনেটের অন্যান্য সোর্স, এমনকি CHATGPT’র দারস্থ হই।
সবগুলোর সম্মিলিত পঠন হতে আমি ওই বিষয়দুটো নিয়ে নিজস্ব একটি ধারনা দাড়া করিয়েছি সেটি বলব।
অন্দরের খবর জানুন। চকচকে, ঝকমকে, ঝলমলে, জ্বলজ্বলে ইর্ষনীয় ও সুখী চাকরিস্থলের অন্দর।
বেশ কিছু বছর আগে। আলাদা আলাদাভাবে দেশের তিনটি বিশাল, নামজাদা ও ইর্ষনীয় প্রতিষ্ঠানের টপ পারসনের সামনে ভাইবা দেবার একটা সুযোগ আমার হয়। টপ মানে তাদের একদম টপ মানুষ। এদের মধ্যে ২ টা আবার বিদেশী। ১ টা দেশি হলেও তারও বিদেশে শাখা আছে। মানে, তারা ওই দেশে বিদেশী। চকচকে।
তো, তিনটা সেশনেই, তিন যায়গাতেই, তিন টপ পারসনই আমাকে একটা কমোন প্রশ্ন করেন-
What is your manpower attrition rate?
আমি প্রথমেই বলি জিরো। কারন, আমি কাজ করি গারমেন্ট সেক্টরে। আমাদের অ্যাট্রিশন হওয়া তাত্বিকভাবে সম্ভব না। যত মানুষ যায়, তা আমরা নিয়োগ করে ফেলি, ভারসাম্য থাকে। মানুষ কমার সুযোগ নেই।
তিনজনের তিনজনই মাথা নাড়ান। উহু উহু করেন। তাদের বোঝাতে পারি না। তারা বুঝতে চান না।
তারপর বলি, আপনি কি ম্যানপাওয়ার টার্নওভার বোঝাতে/বুঝতে চাইছেন? ওটা আছে। ওটা ২ থেকে ২.৫%।
প্রত্যেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, এই না বললেন, জিরো বা নেই? আমি বলি, স্যার, ওটাতো অ্যাট্রিশন না। টার্নওভার। দুটো তো এক না। তারা তিনজনের প্রত্যেকে অ্যাট্রিশনকেই সচেতনভাবে টার্নওভার জেনে ও মেনে আমাকে প্রশ্ন করছিলেন।
আমাকে তারা পাজলড করে দেন। পরের দিনগুলোতে আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মানুষজনের হতে জেনে, পড়াশোনা করে, চ্যাটজিপতির নিদান নিয়ে তারপর শিওর হই, যে, আমি ঠিক ছিলাম।
কথা হল, তিন তিনটা বিখ্যাত ও চকচকে স্থানে বিশাল পজিশনের মানুষ যদি সিনিয়র পজিশনের ইন্টারভিউতে ভুল প্রশ্ন ও থটস ক্রিয়েট করেন, আবার, সেটাতে জোরও দেন, তাহলে বাদবাকিদের ক্ষেত্রে কী হয়?
বিখ্যাত, চকচকে, জায়ান্ট, পীর, মোরশেদ হলেই আমরা ধরে নিই, যে, তারা ফেরেশতা, তারা সক্রেটিস, আইনস্টাইন। কিন্তু, সক্রেটিসকে কেউ প্রশ্ন করবার সাহস করি না, যে, ভ্রাতা, আপনি ভুলভাল প্রশ্ন করলে উত্তর দেব কী করে।
Employee attrition ও Employee turnover খুব কাছাকাছি ধারনা হলেও, দুটো কার্যত ভিন্নধর্মী দুটো বিষয়।
তবে একটি আনকনশাস বা সাবকনশাস ভুল ধারনা অনেক স্থানেই পেয়েছি, সেটি হল, Employee attrition কর্মীর সংখ্যার ধারাবাহিক অবনমনকে নির্দেশ করে, এবং হাই Employee attrition রেট মানেই আপনার সংগঠনের জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। ইন জেনারেল এই কনসেপ্টটি সঠিক নয়। আমি রীতিমতো অংক করে দেখেছি। হ্যা, কিছু ক্ষেত্রে হাই রেট জনসংখ্যা বা কর্মী সংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা দেখায় ঠিকই, তবে কর্মী যাওয়া ও আসার গতি/পরিমাণ সমান ও উভয়ে উচ্চ হলেও Employee attrition রেট হায়ার হতে পারে, অথচ সেখানে কর্মীর মোট সংখ্যা কমছে না।
Employee attrition মূলত কর্মীদের স্বাভাবিক ও নিয়মিত পন্থায় বিদায়ের প্রবণতা ও হারকে ইঙ্গিত করে, যেমন-রেজিগনেশন, রিটায়ারমেন্ট, ডিসচার্জ, ডেথ, লে-অফ, অটোমেশনজনিত ছাঁটাই ইত্যাদি। এখানে ভলান্টারি বা নন-ভলান্টারি-উভয়ই হতে পারে। সাধারনত, এ্যট্রিশনের ক্ষেত্রে এমপ্লয়ার ওই চলে যাওয়া কর্মীর রিপ্লেস দ্রূত করেন না বা, করবার চাপে থাকেন না। ফলে এখানে কর্মীর মোট সংখ্যা কমে যাবার একটি প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়, তবে সেটি সবসময়ই হবে-তা নয়।
Employee turnover মূলত স্বল্পমেয়াদে ভলান্টারি বা নন-ভলান্টারি মোডে কর্মীদের যেকোনো প্রক্রিয়া, পন্থা ও কারনে চাকরি ত্যাগের একটি প্রবণতার পাঠ, যেখানে এমপ্লয়ার দ্রুত সেই শুন্যস্থান পূরণের চাপে থাকেন, যেমন টারমিনেশন, রেজিগনেশন, এ্যবসেন্স, ডিসমিসাল-এরকম। এখানে প্রধানত প্ল্যান করেই, বা প্ল্যানের মধ্যেই কর্মী চলে যায় কিংবা বিদায় দেয়া হয় বলে দ্রুত কর্মী রিপ্লেস করা হয়, ফলে সাধারনত পজিশন খালি থাকে না। বিধায় মোট কর্মী সংখ্যা আসলে কমে যায় না। মূলত Employee attrition হল Employee turnover এর একটি উপশাখা।
টার্নওভার কথাটি আমরা সাধারনত কর্মীদের রোল অন বোঝাতে ব্যবহার করি। আর এট্রিশন কথাটি বেশি ব্যবহৃত হয় কর্মীদের সেরকম প্রস্থানকে বোঝাতে, যেখানে শূন্যস্থান পূরণ হয় না, বা হলেও তা খুব ধীর বা দীর্ঘমেয়াদে।
আপনাকে যদি একজন ইন্টারভিউয়ার প্রশ্ন করেন, যে, আপনার চলমান প্রতিষ্ঠানে এট্রিশন রেট কত-তাহলে আপনি বিপদে পড়বেন। কারন, বাস্তবে এট্রিশন এবং টার্নওভারের ধরন অনুযায়ী বিদায়ী কর্মীদের আলাদা হিসেব করা অত্যন্ত দূরহ। আমাকে একজন ইন্টারভিউয়ার অনেক আগে এই প্রশ্নটি করেছিলেন। আজ আমি অনুভব করি, প্রশ্নটি হয়তো যথাযথ ছিল না।
এট্রিশন ও টার্নওভার হিসাব করবার সূত্রটি একই। তবে প্রয়োগ ও আওতাধীন সাবজেক্টই কেবল আলাদা। আমি একটি উদাহরণ কপি করে সামান্য পরিমার্জন করে দেখালাম।
Suppose, an organization had 1,000 employees at the beginning of the year, hired 200 new employees during the year, and had 50 employees left during the year; then calculate the attrition rate for the year.
= [Total left employees-50 / {Employees at the beginning of the year-1000 + (Employees at the beginning of the year-1000 + employees hired totally in a year-200-employees left during the year-50) / 2 = average employees during the year-1075}] X 100 = 4.65%
আপনি হয়তো ভাবছেন,
আমরা বাজারের সর্বোচ্চ বেতন দিই, কিংবা
আমরা প্রতি বছর ট্যুরে নিয়ে যাই, কিংবা
আমরা প্রতি বছর বিপুল স্যালারি রেইজ দিই, কিংবা
আমরা প্রায়ই জঙ্গলে বুট ক্যাম্প করি, কিংবা
আমরা পহেলা বৈশাখে, ফাল্গুনে, ঈদে বিনোদনে ’ফাটায়া’ দিই, কিংবা
আমরা বার্থডেতে ফুলের ঝুড়ি হাতে তুলে দিই, অথবা
আমরা ফেসবুক ও লিংকডইন ছবিতে ভাসিয়ে দিই।
এতেই আমাদের কর্মীরা মহাখুশি ও মহাসুখী। এতেই তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য জানপ্রাণ লড়িয়ে দেবে, আজীবন এখানে থেকে যাবে।
ভুল।
টোটাল ওয়েলবিয়িং নামে একটা ফেনোমেনন, একটা কনসেপ্ট গ্রো করছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশনের সময়ে মানুষ ব্যাসিক নিডস ও সারভাইভাল নিয়ে ব্যাকুল ছিল।
তারপর এলো সোশ্যাল রেভ্যুলেশন। মানুষ স্ট্যান্ডার্ড লাইফ নিয়ে কনসার্ন ছিল। তা নিয়েই মাথা ঘামাতো।
তারপর এসেছে ইনফরমেশন রেভ্যুলেশন।
মানুষ এখন কোয়ালিটি অব লাইফ নিয়ে ভাবিত।
ওভারঅল মেধা ও দক্ষতার সাপ্লাই ও ডিমান্ডে একটা বড়সড় গড়বড় ও ইকুইলিব্রিয়াম ব্রেক হয়েছে-তা সত্যি।
তার পরও, মানুষ এখন অনেক নীডি, চুজি, সিলেকটিভ ও ডেলিকেট। তারা স্রেফ দুইচারটা বাড়তি টাকা, স্রেফ একটা ভূড়িভোজ, স্রেফ সেমাইয়ের প্যাকেট অথবা ঝুট ক্যাম্পে মজেন না। ভোলেন না বছর শেষে বৈশাখি পান্তায়।
টোটাল ওয়েলবিয়িং নিয়ে বড়সড় একটা নাড়া দেবার সময় বয়ে যাচ্ছে। তার মাত্রা কেন হতে পারে? ধরুন, এই রমজানে আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা, যারা রোজা রাখবেন, তাদের এই ১ মাসের সাময়িক লাইফস্টাইল, ঘুমের রুটিন, বিকেলের ছুটির টাইমিং, ইফতার ধরবার জন্য প্রপার শিডিউলিং, উপোষ থেকে কাজের চাপ নেবার বিষয়ে প্রপার রেসিলিয়েন্স-এসব নিয়ে HR হিসেবে আপনার প্রচুর কাজ করবার আছে। প্রচুর।
ঘনিষ্ঠভাবে আপনার কর্মীদের নিয়ে বিশেষ কাজ করুন।
আপনার এইচ.আর কাস্টমারদের সাথে প্রচুর ইনটার্যক্ট করে স্ট্র্যাটেজি সাজান। প্রসেস মডিফাই করে নিন। অপারেশন ও কোর্স এ্যড্যাপ্ট করুন।
সেই সাথে আরেকটা কাজ করুন। যারা নন-পারফরমিং (সেটা-ধর্মবিশ্বাস, অসুস্থতা, ব্যক্তিগত আচার-যেকোনো কারনেই হোক), তাদের জন্য একটি বিকল্প, সম্মানজনক ও সবার জন্য সুবিধাজনক বিকল্প ব্যবস্থাপনা করুন। আপনার কাজ ডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট। আপনার কাজ প্রশাসকের না। জাজমেন্টের না। প্রিচিং না।
আর যদি পারেন, আরেকটু কাজ আগ বাড়িয়ে করতে পারেন।
অফিসে একটু নিরবে খোঁজ নিন, লাগলে গোয়েন্দাবৃত্তি করুন। কেহ বা কাহারা যদি অফিসের যে কাউকে “রোজা আছেননি?” টাইপের অভদ্র ও অভব্য প্রশ্ন করবার মতো কাজ করে, তাকে খুঁজে বের করে কাউন্সেল করুন। বিশেষত, যদি এই প্রশ্নটা কোনো নারী কর্মীকে করে, তাকে ’সাইজ’ করুন।
টোটাল ওয়েলবিয়িং কাগজে থাকলে হবে না। মুখে বললে হবে না।
সেই ওয়েলবিয়িং একটা টোটাল ওয়েলবিয়িং। হোলিস্টিক ওয়েলবিয়িং। এপ্রোচ ও থটসের চেইঞ্জ তার জন্য জরুরী।
#educationalbackground #transformation #combined #dimension #whatistalent #talentmigration #talentdiversification #talentretention #talentacquisition #talentmanagement #employability #interviewdiscrepancy #interviewhassle #badpractice #interviewexperience #HR #attrition #turnover #GenerationZ #millennialgeneration #generationgap #clashofgeneration #deviationofgeneration #deviationofnation #deviationofcountry #socialdeviation #nationalinteligence #rivererosion #cheaplabor #pity #employeeretention #competency #competencymapping #judgement #talentevaluation #outofbox #unconventional #nonorthodox #jobcompetency #employabilityfeatures #competencyassessment #interviewapproach #talent&genious #approachtoHR #bureaucracy #redtapism #formality #qualityhiring #onboarding #competencymapping #competencybenchmark #filtration #wronghiringpractice #mistakesofjobseekers #DEIBinhiring #diversityinhiring #realityoftalentmarket