পৃথিবীতে নিয়ম, নর্মস ও আইনের বেঁড়ি কেন উদ্ভাবন করা হয়েছিল জানেন? একটি দিক হল-মানুষকে ডিসিপ্লিনড রাখতে। তবে আরেকটি অনুচ্চারিত দিক ছিল-মানুষকে ডমিনেট করতে।
শাসন, বারন, চোখ রাঙানি, আইন, নর্মস, প্রোটোকল-একটি ওয়ার্কফোর্সকে নিয়ন্ত্রণ করতে কাজে দেয় ঠিকই। তবে নিয়মের অতিরিক্ত কড়াকড়ি মানুষের ইনোভেশন, স্বতঃস্ফূর্ততা, সৃষ্টিশীলতা কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে একটি প্রতিষ্ঠান যদি তার কর্মপরিবেশে নিয়ম ও নর্মসকে ক্রমাগত আপডেট না করে, তাহলে সেখানে গ্রোথ নেমে যেতে বাধ্য।
বাংলাদেশে ‘আইন’ খুব বিচিত্র একটি জিনিস। এর উৎস, প্রেক্ষিত, পটভূমি, প্রয়োগ ও ফেয়ারনেস এক মশকরার নাম। তো, এহেন বাংলাদেশে একটি বিশেষ সেক্টরে ‘আইন’ রীতিমতো পবিত্র বাইবেলের স্তবক বা ফরমানের মতো একটি মহান জিনিস। যে সেক্টরে সবার মুখে ও মনের ন্যারেটিভ হল, আইন ভাঙা ও মন্দীর ভাঙা এক কথা। যদিও মানসিকভাবে এই দেশের মানুষ আইন মানার পাত্র না। যতটা মানে, সেটা কেবল লাঠির ভয়ে।
তো, এই সেক্টরের একটি বিশেষ আইন আছে। মূলত শ্রম অধিকার, নিয়োগ নীতি, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধানের আইন এটা। এই আইন নিয়ে বিস্তর মারামারি হয় এখানে। ভুলে ভরা ও গোঁজামিলে ঠাসা এই আইন সেক্টরের অল্পবিস্তর ভালাই করলেও, জটিলতা ও পঙ্কিলতা কমাতে পারেনি। বরং, আইন ও আইনের বড়ি বেচে ভাত কাপড়ের যোগানের রাস্তাটা খুলেছে অনেকের। জল যত ঘোলা থাকে, তত বেশি প্রাণীর লাভ হয়।
তো, এই বিশেষ সেক্টরের মানুষেরা আইনকে বাইবেলের মতো নিয়েছে। এক চুল এদিক সেদিক হতে পারবে না। কিন্তু, মশকরাটা হল, এই সেক্টরের HR প্রফেশনালরাও যখন ‘আইন’ ‘আইন’ করেন, তখন ফরজে আইনে ঝামেলা লাগে। এইচ.আর প্রফেশনালরা ভুলে যান, যে, তাদের যে প্রধান ফোকাস-পিপল, সেই পিপল ম্যানেজমেন্টে আইনের ভূমিকা হল স্রেফ একটা প্রাথমিক বাউন্ডারি লাইন মাত্র।
পিপল ম্যানেজমেন্ট ও ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্টে আইন কোনো ডিটারমিন্যান্ট না, স্রেফ ইনফ্লুয়েন্সার ও সেফগার্ড মাত্র। বিজনেস অর্গানাইজেশনে পিপল ফার্স্ট নীতির ভিত্তিতে এইচ.আর ডিরেকট করতে হয়। আইন সেখানে মূখ্য না, ন্যুনতম মাত্র। সেখানে মূখ্য হল পিপলস চয়েজ, পিপলস সেন্টিমেন্ট, পিপলস থটস, পিপলস পারসেপশন, পিপলস সাইকলোজি। পিপল সেন্ট্রিক, লেবার ইনটেনসিভ, ম্যানুফ্যাকচারিং বেজড বিজনেসে আইন কখনোই বিজনেস ফ্রেন্ডলি পিপল ম্যানেজমেন্টের নিয়ামক হয় না। বিজনেসে আইনের চেয়ে বিজনেস ইনসাইট ও ইনটারেস্ট এবং পিপল পারসেপশন ও মাস সেন্টিমেন্টই ডিটারমিন্যান্ট হতে হবে।
(সম্ভবত) একজন তূর্কী মনিষী বলেছিলেন, “যদি তোমাদের জুমার নামাজের কাতারের পেছনের সারিতে শিশুদের হাসি, চিৎকার ও দুষ্টুমির গোলমাল না শোনা যায়, তাহলে অনুমান করে নিতে পারো, যে, কোথাও একটা সমস্যা বড় হচ্ছে।”
ওয়ার্কপ্লেসে হায়ার করবার সময় বেস্ট ফিট কর্মীকে নিন। নেবার পরে তাকে একটি স্বাধীন, মুক্ত, স্বতঃস্ফূর্ত, নিঃসংকোচ পরিবেশ দিন। তাকে কথা বলতে দিন। তাকে হাসতে দিন। তাকে নিজেকে প্রকাশ করতে দিন।তার সত্যিকারের ভেতরের সত্তাটাকে উপভোগ করতে দিন। তাকে সময় দিন। তাকে শিখতে ও বুঝতে সময় দিন। তাকে তার করণীয় নিজেই উপলব্ধি করে নেবার মতো রেসিলিয়েন্স দিন।
পদে পদে তাকে বেঁড়ি পরাতে গেলে, শাসন বারনে বাঁধতে গেলে, হাজারটা প্রোটোকল চাপিয়ে দিলে তাদের মধ্যে ওনারশিপ, ক্রিয়েটিভিটি, এনগেজমেন্ট, কোয়ালিটি, ডেডিকেশন মরে যাবে। সে একদিন পিটর হাঁস হয়ে যাবে।
নিজেও হাসুন। অন্যকেও হাসান। হাসি বিশ্বজয় করতে পারে।
হাঁসি বলে হাঁসা,
হাঁসা বলে হাঁসি,
এই নিয়ে হাঁসা হাঁসি,
করে হাসাহাসি।
#freedomofchoice #employeefreedom #ressilience #lawvspeoplemanagement #HR&law